আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিভাগীয় সভা-সমাবেশ, মিছিল, পদযাত্রা, গণঅনশনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। দিন দিন আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে কৌশলী হচ্ছে দলের হাইকমান্ড। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত বিএনপি তরুণ সমাজকে উজ্জীবিত করছে। পাশাপাশি আন্দোলনে সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করতে শ্রমজীবী মানুষকেও মাঠে নামানোর কর্মসূচির সিদ্ধান্ত হয়েছে।
কোরবানির ঈদের পরই যৌথভাবে মাঠে নামবে বিএনপির ৪ সংগঠন—শ্রমিক দল, কৃষক দল, তাঁতী দল ও মৎস্যজীবী দল। আজ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এরই মধ্যে ‘দেশ বাঁচাতে তারুণ্যের সমাবেশ’ স্লোগানে ৩টি সমাবেশ হয়েছে। ১১ দফা দাবিতে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল যৌথভাবে ‘তরুণ সমাবেশ’-এর আয়োজন করছে। সমাবেশগুলোর সাফল্য আশাবাদী করে তুলেছে বিএনপির নেতৃত্বকে।
গত ১৪ জুন চট্টগ্রামে প্রথম তারুণ্যের সমাবেশ হয়। ১৯ জুন রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের যৌথ উদ্যোগে বগুড়ায় এবং ২৪ জুন বরিশালে তারুণ্যের সমাবেশ হয়। ৯ জুলাই সিলেটে, ১৭ জুলাই খুলনায় এবং সর্বশেষ ২২ জুলাই তারুণ্যের সমাবেশ হবে ঢাকায়। তারুণ্যের সমাবেশ নিয়ে আত্মপ্রত্যয়ী বিএনপির হাইকমান্ড। দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, এরই মধ্যে যেসব সমাবেশ হয়েছে তাতে দেশের তরুণ-যুবকদের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া মিলেছে, যা আগামী নির্বাচন ও আন্দোলন কর্মসূচিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
বিএনপির তারুণ্যের সমাবেশ নিয়ে নোয়াখালী জেলা বিএনপির উপদেষ্টা প্রকৌশলী আমিরুল মোমিন বাবলু বলেন, বিএনপির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তরুণ প্রজন্মের ওপরই নির্ভর করছে। সেজন্যই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তারুণ্যনির্ভর নেতৃত্ব গড়তে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। দলের বিভিন্ন পর্যায়ে অপেক্ষাকৃত তরুণ তথা ছাত্রদলের সাবেক নেতৃবৃন্দকে দায়িত্বে আনছেন। এ নিয়ে কোনো পর্যায়ে মতভেদ থাকলেও তারেক রহমানের এ সিদ্ধান্ত এবং তারুণ্যের সমাবেশ করাটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এ ধরনের কর্মসূচি অব্যাহত রাখা উচিত।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান মনে করেন, তারুণ্যের সমাবেশ থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি দলমত নির্বিশেষে তরুণদের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার আন্দোলনে যুক্ত করা ও আগামীতে সমৃদ্ধির বাংলাদেশ বিনির্মাণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে উজ্জীবিত করা হচ্ছে।
‘মেহনতি মানুষের পদযাত্রা’ করবে ৪ সংগঠন : সরকারবিরোধী চলমান আন্দোলনকে আরও বেগবান ও শ্রমজীবী মানুষকে জাগ্রত করতে ‘মেহনতি মানুষের পদযাত্রা’ শীর্ষক ছয়টি কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিএনপি। যা ১২ বা ১৫ জুলাই নোয়াখালী থেকে শুরু হয়ে পর্যায়ক্রমে দিনাজপুর, রাজশাহী, যশোর, বরিশাল ও হবিগঞ্জ জেলায় হবে।
এ বিষয়ে গতকাল ঢাকায় প্রস্তুতি সভা সম্পন্ন হয়েছে। এরই মধ্যে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, ভোটাধিকার আদায়, গ্যাস-বিদ্যুৎ, পানিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য হ্রাস, শ্রমিকের ওপর জুলুম বন্ধ ও ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার প্রতিষ্ঠা, গায়েবি মামলা প্রত্যাহার, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে চলমান আন্দোলনকে বেগবান করার লক্ষ্যে শ্রমিক দলের উদ্যোগে ঢাকায় গত ১ মে, ৯ জুন ও ২৩ জুন তিনটি বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকায় এসব কর্মসূচির পর দেশের অন্যান্য শিল্পঘন এলাকায় শ্রমিক-কর্মচারীদের সমাবেশ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি আয়োজনের জন্য দেশব্যাপী প্রস্তুতি সভা চলছে। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জে শ্রমিক সমাবেশের লক্ষ্যে প্রস্তুতি সভা শেষ হয়ছে। দেশের সর্বত্র শ্রমিক-কর্মচারীদের পৃথক আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য শ্রমিক দলের সব জেলাকে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড জোরদার করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শিল্পাঞ্চল এলাকায় শ্রমিক-কর্মচারী সমাবেশের পাশাপাশি কৃষক-শ্রমিক, জেলে, তাঁতী, কামার, কুমার ও শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের চারটি সংগঠনের (শ্রমিক দল, কৃষক দল, তাঁতী দল ও মৎস্যজীবী দল) যৌথ উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘শ্রমজীবী মানুষের জাগরণের’ লক্ষ্যে পদযাত্রা কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিএনপির চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী ও খ্যাতিমান শ্রমিক নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বলেন, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে তারুণ্যের সমাবেশের পাশাপাশি শ্রমিক দল, কৃষক দল, তাঁতী দল ও মৎস্যজীবী দলের উদ্যোগে ‘শ্রমজীবী মানুষের জাগরণ’ শীর্ষক কর্মসূচি রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যুক্ত করবে। নোয়াখালীতে ওই চার সংগঠন যৌথভাবে পদযাত্রা কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে দেশব্যাপী শ্রমজীবী মানুষের নবজাগরণ ঘটাবে।
তাঁতী দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ ও মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আব্দুর রহিম জানান, তারা দেশ ও মানুষ বাঁচাতে এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষায় মেহনতি মানুষের পদযাত্রা সফল করতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।