রাজধানীর মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ এলাকায় গত মঙ্গলবার বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি পালনের সময় ছাত্রলীগ-বিএনপির সংঘর্ষের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। দুই মামলায় ২২৯ জনের নাম উল্লেখসহ মোট আসামি করা হয়েছে ১ হাজার ২২৯ জনকে। ঢাকায় গ্রেফতার ১৮ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এদিকে বগুড়া, কিশোরগঞ্জ, পিরোজপুর, ফেনী ও জয়পুরহাটে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপির ৪৭৮ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে পৃথক মামলা হয়েছে। পুলিশের সংশ্লিষ্ট থানার কর্মকর্তারা বাদী হয়ে এই মামলা করেন। এসব মামলায় অন্তত ২ হাজার নেতাকর্মীকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
অন্যদিকে মামলা দায়েরের পর মঙ্গলবার গভীর রাতে বগুড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনা ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহ্বায়ক মাজেদুর রহমান জুয়েলকে তাদের নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বগুড়ায় আরও তিন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পিরোজপুরে বিএনপির ১৫ নেতাকর্মী গ্রেফতার করা হয়েছে।
গতকাল দারুস সালাম থানায় মামলা দুটি করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন দারুস সালাম জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মফিজুর রহমান পলাশ। এদিকে মঙ্গলবারের সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দারুস সালাম থানার ওসি শেখ আমিনুল বাশার।
রুবেল হোসেন নামের এক শিক্ষার্থীর করা মামলায় ১২০ জনের নাম ও অজ্ঞাতপরিচয়ের ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। যেখানে ১০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মীর আবু বক্কর ও সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন রতনসহ ১২০ জনের নাম রয়েছে। মঙ্গলবার বিএনপির নেতাকর্মীরা যখন বাঙলা কলেজের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন রুবেল হোসেনের মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ কারণে তিনি মামলাটি করেছেন। অন্যদিকে পৃথক আরেকটি মামলা করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। যেখানে ১০৯ জনের নাম উল্লেখ করে ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।
এদিকে দুই মামলায় গ্রেফতার বিএনপির ১৮ নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে আদালত।
পৃথক চার মামলায় জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা ও সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনাসহ দলের ২১১ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ১২টার পর বগুড়া সদর থানায় তিনটি ও দুপচাঁচিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।
মামলা দায়েরের পর মঙ্গলবার রাত ৩টার পর জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ বগুড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনা ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহ্বায়ক মাজেদুর রহমান জুয়েলকে তাদের নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করেছে। আলী আজগর তালুকদার হেনাকে তার শহরের সূত্রাপুর বাসা থেকে এবং মাজেদুর রহমান জুয়েলকে তার পুরান বগুড়া বাসা থেকে আটক করা হয়। পরে তাদের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এছাড়া দুপচাঁচিয়া থানায় দায়ের করা মামলায় বিএনপির কর্মী আবু বক্কর, তামিম ও রাজু গ্রেফতার হয়েছেন।
বিএনপির সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল বুধবার এসআই ফজলুর রহমান বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেন। মামলায় জেলা যুবদলের সভাপতি খসরুজ্জামান শরীফ, সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মাসুদ সুমন, সাংগঠনিক সম্পাদক তারেকুজ্জামান পার্নেল, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব আবু নাসের সুমনসহ ১৯ জনের নামোল্লেখ ছাড়াও অজ্ঞাত ৬০-৭০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার জয়পুরহাট শহরের রেলগেট এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে ৮০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৪০০-৫০০ জনকে আসামি করে জয়পুরহাট থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। জয়পুরহাট থানার এসআই রুবেল হোসেন বাদী হয়ে ঐ মামলা দায়ের করেন।
ফেনীতে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ৮৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ১৫০০-২০০০ জনকে আসামি করে পুলিশের পক্ষ থেকে দুটি পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে। বুধবার ফেনী শহর পুলিশ ফাঁড়ির এসআই হায়াত উল্লাহ বাদী হয়ে মডেল থানায় বিস্ফোরক আইন, ভাঙচুর ও পুলিশের কর্তব্যরত কাজে বাধা দেওয়ার ঘটনায় মামলা দায়ের করেন।
পিরোজপুরে বিএনপির পদযাত্রা থেকে পুলিশের ওপর হামলা ও পুলিশ সদস্যদের আহত করার ঘটনায় বিএনপির নামীয় ৮০ জন এবং অজ্ঞাতানামা আরও ৩০০ জনকে আসামি করে পিরোজপুর সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।
পুলিশের উপর হামলা করে আহত করা, বোমাবাজি, সহিংসতা ও নাশকতার অভিযোগ এনে পিরোজপুর সদর থানার এসআই মাকসুদুর রহমান বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় ১৫ জন বিএনপির নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।