সিলেটের দক্ষিন সুরমার কামাল বাজারের চাঞ্চল্যকর ও বর্বোরচিত কলেজ ছাত্র মারুফ হত্যার আসামী রাজু ও ফয়জুলের জামিন নাকচ করে কারাগারে পাঠিয়েন বিজ্ঞ আদালত।
ঘটনার বিবরনে প্রকাশ সিলেটের দক্ষিণ সুরমার কামালবাজার ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারী। এই নির্বাচনে কামালবাজার ইউনিয়নের ৬নং ওয়াডে মেম্বার পদপাথী হন ব্যবসায়ী ছোয়াব আলী ও তাঁর প্রতিবেশি স্থানীয় আওয়ামীগীল নেতা মাহমুদুল হাসান রাজু। নির্বাচনে মাহমুদুল হাসান রাজু পরাজিত হয়। পরাজয় মানতে না পেরে তাঁর ভাই সুফি আহমদ, জহুর আলী, ফয়জুল, সুফিয়ান, টাইগার সালেহ ও তাদের লাঠিয়াল বাহিনী বিজয়ী প্রার্থী ছোয়াব আলীর বাড়িতে মধ্যযুগীয় কায়দায় হামলা চালায়। নির্মম নিষ্টূর ও ববোরোচিত মধ্যযুগীয় হামলার শিকার হন ছোয়ার আলীর কলেজ পড়ুয়া কনিষ্ট পুত্র মারুফ আহমদ (২৫)।
মারুফের মাথার শিরা উপশিরাগুলো ছিন্ন বিছিন্ন হয়ে যায় ঘাতকদের আঘাতে। হামলার ৫দিন পর মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে ২০২২সালের ৫ ফেব্রুয়ারি মারুফ ঢাকার একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। হামলার দিন মধ্যরাতে প্রধান আসামী স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা সুফি আহমদ (২৬), হামলাকারী ২নং আসামী ফয়জুল ইসলাম (২৮) ও ৩ নং আসামী মাহমুদুল হাসান রাজুকে (৩০) পুলিশ গ্রেফতার করে। এদিকে ১ফেব্রুয়ারি ২০২২ মারুফের পিতা ছোয়াব আলী বাদী হয়ে দক্ষিণ সুরমা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে আদালত থেকে ফয়জুল ইসলাম ও মাহমুদুল হাসান ও রাজু দলীয় প্রভাব খাটিয়ে জামিনে বেরিয়ে যায়। মারুফ ৫ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করলে এই দুই আসামী আর আদালতে হাজির না হয়ে পালিয়ে যায়। দীঘ ৩ বছর ৮ মাস পর ১৫ অক্টোবর ফয়জুল ইসলাম ও মাহমুদুল হাসান রাজু আদালতে আত্মসমর্পন করে আবারও জামিন প্রার্থনা করে।
বিজ্ঞ আদালত খুনিদের জামিন না মন্জুর করে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। ২৭ অক্টোবর ২০২৫ (সোমবার) সিলেট মহানগর আদালতে শুনানি শেষে বিজ্ঞ আদালত জামিন না মন্জুর করেন। এলাকাবাসী জানান মামলার প্রধান আসামী সুফি আহমদের মামা সিলেট-৩ আসনের এমপি হাবিবুর রহমান হাবিবের বাড়ী কামালবাজার ইউনিয়নের ধরগাও গ্রামে এবং এমপির আত্মীয় ও ছাত্রলীগ ও আওয়ামীলগের দাপট দেখিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেরিয়েছে। শুধূ তাই নয় নীরিহি পরিবারটিকে মামলা প্রত্যার করে নিতে বার বার হুমকীও প্রদান করে। শুধু এই হত্যাই নয় এলাকায় এমপির প্রভাব খাটিয়ে আদিপত্য বিস্তার করে চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজি, নিরিহ মানুষকে হয়রানী সহ সকল ধরনের অপকর্মের সাথে জড়িয়ে পড়ে হত্যাকারী সুফি ও তার পরিবার। এমন কোন অপকর্ম নেই যা এই খুনিরা করেনি। খুনির মামা আওয়ামীলীগ দলীয় এমপি বিধায় বিগত সরকারের প্রভাব খাটিয়ে তারা এলাকায় এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে।
বিগত সরকারের আমলে সুফির ছোট ভাই সুফিয়ান আহমদ মহানগর ছাত্রলীগের সদস্য মারুফ হত্যা মামলার অন্যতম আসামী। তার অন্য ভাই রায়হান আহমদ ইতালীর পায়েল শাখা আওয়ামীলীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক, বড় ভাই সেলিম আহমদ যুবলীগ নেতা এভাবে সকল ভাই ও আত্মীয় স্বজন আওয়মী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হয়ে এলাকায় প্রভাববিস্তার করে এবং দলীয় প্রভাবশালী নেতা ও প্রশাসনের উচ্চপদস্থদের সাথে ফটোসেশন করে। এসব ফটো এবং এমপির প্রভাব দেখিয়ে বিভিন্ন ভাবে এলাকাবাসীকে হয়রানি করে আসছিল। প্রধান আসামী সুফি আহমদ, এমপি মামার নাম ও দলীয় পরিচয়ে বিগত সরকারের এর্টনী জেনারেল এ. এম. আমিন উদ্দিন ও অতিরিক্ত এর্টনী জেনারেল অসিম তালুকদারের সাথে তোলা ফটো সেসনের ছবি ব্যবহার করে বিচার বিভাগে প্রভাব খাটিয়ে হাইকোট থেকে ২১ এপ্রিল ২০২৪ সালে জামিন নিয়ে ২৮ এপ্রিল সিলেট কারাগারের সম্মুখ থেকে বিশাল শোটাউন করে। দলীয় স্লোগান ও এমপি মামার নামে স্লোগান দিয়ে মারুফের কবরস্থানের পাশ দিয়ে বাধ্যযন্ত্র বাজিয়ে বীরদর্পে বাড়িতে ফিরে আসে।
পরবতীতে দক্ষিণ সুরমা উপজেলার চেয়ারম্যান বদরুলের সাথে তার ফুফাত ভাই ২৬নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম শিরুলকে সাথে নিয়ে ফুলেল ফটোসেশন করে। জামিনের কয়েকদিন পরেই দলীয় নেতা কমীদেরকে নিয়ে গরু জবাই করে বাড়িতে একটি পার্টির আয়োজন করে।
বিভিন্ন সময় ঈদের নামাজ ও জুম্মার নামাজ শেষে সুফি তার বাহিনী ও অন্যান্য আসামীদেরকে নিয়ে মসজিদের ভিতরে ফটো সেশন করে এলাকায় এখনও প্রভাব বিস্তার করছে। তারা আজও দলীয় পরিচয় দিয়ে নিজদের বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দখল করার চেষ্টা করছে। এলাকার বিবেকবান মানুষ অন্তরে এদের ঘৃণা করেলেও প্রকাশ্যে খুনীদের ব্যাপারে আজও কেউ মুখ খুলার সাহস পাচ্ছে না। এমন কি মামলার বাদীও নিরাপত্তার অভাবে গ্রাম ছেড়ে পরিবার নিয়ে শহরে বসবাস করছেন। মামলার অপর আসামী জহুর আলী হত্যা মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছে এবং মামলা তুলে না নিলে বাদীর পরিবারের সদস্যদের হাত পা ভেঙে ফেলার হুমকি দিচ্ছে প্রকাশ্যে। হাইকোটের জামিন নিয়ে এই মামলার অন্যান্য আসামী কাইয়ুম আহমদ (২৮), তানভীর আহমদ শামীম (১৮), জায়েদ আহমদ (২৩) এখন দেশের বাহিরে অবস্থান করছে বলে জানা গেছে। এরা দীঘ দিন ধরে মামলায় হাজিরাও দিচ্ছে না।
এদিকে মারুফ হত্যা মামলার অন্যতম আসামী টাইগার সালেহকে গত ১ মার্চ ২০২২ তারিখে গুপ্ত‘রগাও হাফিজিয়া মাদ্রাসার ওয়াজ মাহফিলের দিনে এলাকাবাসী আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। কিন্তু বিষয়টিকে বিষয়কে বিবাদীরা অন্যভাবে সাজিয়ে টাইগার সালেহ’র মাকে দিয়ে ডাকাতি মামলা দায়ের করে। অথচ এই রাতে গুপ্ত‘রগাও হাফিজি মাদ্রাসার ওয়াজ মাহফিল চলছিল, সালেহদের বাড়ি মাদ্রাসার দুইশত গজের মধ্যে ও মূল রাস্তার পাশে ওয়াজ মাহফিলকে কেন্দ্র করে রাতভর শত শত মুসলিদের আনাগোনা ছিল এলাকায়। এর ভেতর কি করে ডাকতি হওয়া সম্ভব। এই সাজানো ডাকাতি মামলায় হত্যা মামলার প্রত্যক্ষ সাক্ষি ও বাদির পরিবারের লোকজনকে আসামী করা হয়।
শুধু দলীয় প্রভাব খাটিয়ে বারবার তদন্ত ও পুলিশি হয়রানি করা হচ্ছে। এলাকাবাসীর দাবী মারুফ হত্যার ঘাতক খুনিদের সর্বচ্চ শাস্তি হোক।








