অনন্ত জলিলের ছবি ‘দিন দ্য ডে’ নিয়ে আলোচনা সমালোচনা যেনো থামছেই না। সর্বশেষ ছবিটির বাজেট প্রসঙ্গ নিয়ে শুরু হয় চর্চা। শুরু থেকেই অনন্ত জলিল দাবি করে এসেছেন ছবিটির বাজেট ১০০ কোটি টাকা। তবে সম্প্রতি সিনেমার ইরানি নির্মাতা মোর্তজা অতাশ জমজমের এক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে বিষয়টি নিয়ে নতুন তথ্য সামনে আসে। তিনি জানান, সিনেমাটির বাজেট ৫ লাখ মার্কিন ডলার। ২০১৮ সালে হওয়া চুক্তি অনুসারে সিনেমাটির বাজেট বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪ কোটি টাকার কিছু বেশি।
বাংলাদেশ-ইরান যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ‘দিন দ্য ডে’ সিনেমার বাজেটসহ অন্য বিষয় নিয়ে সিনেমাটির সহ-প্রযোজক ও ইরানি পরিচালক মুর্তজা অতাশ জমজমের অভিযোগের প্রসঙ্গে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন অনন্ত জলিল। সম্প্রতি ফেসবুকে নিজের পেজে এই ব্যাখ্যা দেন তিনি। এ সময় অনন্ত জলিল বলেন ‘অনন্ত জলিলকে আপনারা মেরে ফেলেছেন।’
অনন্ত ফেসবুকে প্রকাশিত ওই বিবৃতির একটি কপি দর্শকদের জন্য প্রকাশ করা হলো:
প্রিয় বন্ধুগণ, কিছুদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়াতে ‘দিন দ্য ডে’র বাজেট নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। মিস্টার মুর্তজা অতাশ জমজম, ইরানি ডিরেক্টর এবং প্রডিউসার, ‘দিন দ্য ডে’ মুভির। তিনি বাংলায় একটি এগ্রিমেন্ট পোস্ট করেন যাতে দেখানো হয়েছে, আমার তাকে ৪-৫ লাখ ডলার দেওয়ার কথা, তা থেকে আপনারা নিউজ করে যাচ্ছেন মুভিটির বাজেট ৪ কোটি টাকা। বাংলায় এগ্রিমেন্ট পোস্ট করার কিছুদিন আগে তার ইনস্টাগ্রামে আরও একটি লেখা পোস্ট করেন, সেখানে তিনি বলেন, আমি তার এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী পেমেন্ট করি নাই এবং ইরানিদেরকে আমি পেমেন্ট করি নাই। এমনকি তিনি বলেছেন, মুভিটি আমি আমার মতো করে বানিয়েছি। আমি এক এক করে তার এই পোস্টের ব্যাপারে আসল সত্যটা আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।
১) এটা যৌথ প্রযোজনার মুভি, দুটি দেশের মধ্যে, সুতরাং বাংলা কোনো এগ্রিমেন্ট গ্রহণযোগ্য হয় কিনা তা আপনাদের সবারই জানা। যারা খুব উৎসাহ নিয়ে আমার সমালোচনা করছেন মিস্টার মুর্তজার সাথে কাঁধ মিলিয়ে, তাদেরই কেউ না কেউই এই কাজটি করেছেন, যা আমি হলফ করে বলতে পারি। এই এগ্রিমেন্ট সম্পূর্ণভাবে বানোয়াট।
২) এবার আসি আমার মনগড়াভাবে মুভিটি বানানোর ব্যাপারে। আপনাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি, বাংলাদেশে শুটিংয়ের সময়ও ইরান থেকে ১৭ জনের একটি টিম নিয়ে আসেন মিস্টার মুর্তজা।
আপনারা মিশা ভাই ও খোরশেদ আলম ভাইকে সবাই চেনেন, তাদের একবার ফোন করে জিজ্ঞেস করবেন, মিশা ভাইসহ অন্যান্য বাংলাদেশি আর্টিস ছিলেন, শুটিংয়ে একবারও আমি কোনো ডিরেকশন দিয়েছি কি না?
কারণ মিস্টার মুর্তজা সাহেবের সাথে আমাদের দেশের একজন গুণী ডিরেক্টর ছিলেন, তাঁর নাম মিস্টার শেখ জামাল। তিনিও এই ইন্ডাস্ট্রিতে ৩৫ বছর ধরে কাজ করেন। তারা একত্রে মিলে মিস্টার মুর্তজা ও শেখ জামাল বাংলাদেশের শুটিংটি পরিচালনা করেন।
৩) আপনারা মুভিটি দেখেছেন, কিছু অংশ বাংলাদেশ ছাড়া মুভিটির বড় অংশগুলো তিনটি দেশ মিলে শুটিং হয়েছে। সে দেশের আর্টিস্ট, টেকনিশিয়াশনসহ সমস্ত কিছু মিস্টার মুর্তজা অ্যারেঞ্জ করেছেন এবং শুটিং সম্পূর্ণ করেছেন। সাথে আমাদের বাংলাদেশের কিছু টেকনিশিয়ান কাজ করেন। আমাদের টেকনিশিয়ানরাও তাদের সাথে পারফেক্ট ভাবে কাজ করতে পারেনি, কারণ, তাদের এক একজনের এক এক ভাষা। অথচ তিনি খুব সুন্দরভাবে একটি স্ট্যাটাস দিলেন যে, আমি মুভিটি আমার মতো করে বানিয়েছি, এই কথাটা যে কতটা সত্য, কতটা যৌক্তিক তা যাচাই করার সময়ও আপনাদের নেই। ব্যস, শুরু হয়ে গেল আপনাদের সমালোচনা করা।
৪) এবার আসি মুভিটির বাজেট নিয়ে। মুভিটির শুটিং শুরু হয় ২০১৯ সালে এবং শেষ হয় ২০২০ সালের মধ্যে। আপনারা আমার ইন্টারভিউগুলো দেখতে পারেন, টেলিভিশন, নিউজ পেপার, সোশ্যার মিডিয়াতে মুভিটির রিলিজের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত এবং রিলিজের পরেও একটি ইন্টারভিউতে দেখাতে পারবেন যে আমি বলেছি এই মুভিটির ইনভেস্টর আমি, আমি সব সময় বলে এসেছি, শুধু বাংলাদেশের শুটিংয়ের ইনভেস্টর আমি। ২০২১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি লা-মেরিডিয়ান হোটেলে ‘দিন দ্য ডে’ এবং ‘নেত্রী দ্য লিডার’ মুভির একটি অনুষ্ঠান করা হয়। সেই অনুষ্ঠানে মুর্তজা, ইরানের আর্টিস্টগণ উপস্থিত ছিলেন। মুর্তজা প্রেস কনফারেন্সের সময় আমাকে বলেন শুটিংয়ে তিনি যে বাজেট নির্ধারণ
করেছিলেন তার চেয়ে তিনি অনেক বেশি অর্থ শুটিংয়ে খরচ করেন। মিস্টার মুর্তজার বলা এমাউন্টটায় প্রেস কনফারেন্সে আমি বলি এবং আমার ইন্টারভিউগুলোতেও সেইম একই কথা বলি, তিনি যে মুভির বাজেটের কথা বলেছিলেন। মিস্টার মুর্তজা তুলে ধরেছেন, আমার ৪-৫ লক্ষ ডলার তাকে শুটিং খরচের জন্য দেওয়ার কথা। এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী সম্পূর্ণ টাকা দিইনি। আপনাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, এসপার এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী বাংলাদেশের শুটিং এর সমস্ত খরচ আমার দেওয়ার কথা, সে অনুযায়ী বাংলাদেশের শুটিংয়ের সমস্ত খরচ আমি বহন করি। সেখানে ১ কোটি টাকা লাগল বা ৪ কোটি টাকা লাগল সেটা তো মিস্টার মুর্তজার দেখার বিষয় না। বালাদেশের শুটিং খরচ ছাড়া বিদেশের কোনো শুটিং খরচই আমার দেওয়ার কথা না, আমাদের ট্রাভেলিং কস্ট ছাড়া, মিনস ইয়ার টিকেট ছাড়া। সেখানে আমি তাকে ডলার দেব, এই প্রশ্ন উঠবেই বা কেন?
তাহলে মিস্টার মুর্তজা এতগুলো দেশে যে শুটিং করলেন তাতে তো তার কোনো টাকাই খরচ হয় নাই। তিনি যে এমাউন্ট বলেছেন আমার দেওয়ার কথা, সেটাই আপনারা মুভির বাজেট বলে নিউজ করেছেন। তাহলে তিনি কীভাবে বলেন তার পোস্টে যে আমি তাঁকে এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী টাকা দিইনি। আর আপনারা তা ফলোও করে প্রচার করছেন মুভিটির বাজেট ৪ কোটি টাকা। তাহলে তো মিস্টার মুর্তজার শুটিংয়ে কোনো টাকাই খরচ করেননি।
আমরা যখন বিদেশে শুটিংয়ে যাই, মুর্তজা আমাদেরকে অনেক সম্মান দিয়েছেন, ফাইভ স্টার হোটেলে রেখেছেন, এমনকি তার বাসায়ও দুদিন আমাদের ফুল টিমকে দাওয়াত দিয়েছেন। আমি ঠিক একইরকমভাবে ইরানের ১৭ জনের টিমকে সোনারগাঁও হোটেলে রাখি ১৮ দিন এবং অনুরূপ সম্মান আমরাও দিয়েছি তাদের ফুলটিমকে। মুর্তজার সাথে আমার কখনো কোনো মতভেদাভেদ বা খারাপ সম্পর্ক হয়নি। কে বা কারা নিজের স্বার্থের জন্য মুর্তজার সাথে আমার এই দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করেছেন, যেটা তারাই ভালো জানেন এবং মুর্তজাই বলতে পারবেন।
মুভি রিলিজের আগ পর্যন্ত আমার ও মুর্তজার সাথে কখনোই কোনো খারাপ সর্ম্পক ছিল না, আমি আশা করি আগামীতেও থাকবে না। যাদের স্বার্থের জন্য এই ষড়যন্ত্র করেছেন, তাঁদের মুখোশ এক দিন ঠিকই মিস্টার মুর্তজাই প্রকাশ করবেন বলে আমার আত্মবিশ্বাস।