ক্ষমতাসীন দলের জন্য এখন কিছুক্ষেত্রে লাগাম টানিয়া ধরা অতীব জরুরি হইয়া পড়িয়াছে। দেশে পুলিশ তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের প্রয়োজন রহিয়াছে নিশ্চয়ই। তাহারা অপরিহার্য; কিন্তু তাহারা কতটা সঠিকভাবে কাজ করিতে পারিতেছে অথবা করিতেছে তাহা প্রশ্নবিদ্ধই থাকিয়া যাইতেছে। আর এই প্রশ্নবিদ্ধ হইবার কারণগুলি মোটেই অস্পষ্ট নহে। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের একসময় বিরুদ্ধাচরণকারীরা এখন যেইভাবে দলটিতে ঢুকিয়া পড়িয়াছে এবং ক্রমান্বয়ে ঢুকিয়া পড়িতেছে তাহাতে দিনে দিনে এই দলের প্রকৃত কর্মীরা আরও কোণঠাসা হইয়া পড়িতেছে। রাজনৈতিক দলের মতোই প্রশাসনের চিত্রও একই রকম। আনুপাতিক সংখ্যায় ও চরিত্রগত বৈশিষ্ট্যে। সেইখানেও চতুরতার সঙ্গে, নিজেদের পরিচয়কে ঢাকিয়া ফেলিয়া আসন গাড়িয়া বসিতেছে স্বাধীনতা ও আওয়ামীবিরোধী চিন্তাধারার ব্যক্তিরা। অবস্থা যেইদিকে যাইতেছে তাহা আক্ষরিক অর্থেই আশঙ্কার কারণ হইয়া উঠিয়াছে। এই সকল স্বাধীনতাবিরোধীরা প্রশাসন ও রাজনীতির ময়দানে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের নাম ভাঙাইয়া হেন কোনো অপরাধ নাই যাহা করিতেছে না! সরকার বিশেষ প্রয়োজনের বিবেচনায় সংকোচন নীতি অবলম্বন করিয়াছে। বেশ কিছুকাল ধরিয়াই বিশ্বের অপরাপর দেশের মতো বাংলাদেশের সরকারেরও কৃচ্ছ্রসাধন অবশ্যই করণীয় হইয়া উঠিয়াছে। তাহা হইলে কী হইবে, এই নব্য অনুপ্রবেশকারীরা প্রশাসনের নিম্নপর্যায় হইতে উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত একই রকম অনুপ্রবেশকারী এবং অসৎ কিছু ব্যক্তির যোগসাজশে এমনকি কাজ না করিয়াও বিল উত্তোলন করিয়া লইতেছে! আমরা পূর্বে যে কোনো কাজের ক্ষেত্রে গুণমানের কথা বলিতাম। সেই গুণমান তো দূরের কথা, এখন কাজ না ধরিয়াই তাহারা অর্থ হাতাইয়া লইতে পারিতেছে। ক্ষমতার অপব্যবহার ইহাকেই বলে!
এই পরিস্থিতি হইতে উত্তরণের উপায় কী, তাহা আমাদের জানা নাই। তাহার কারণ, বেড়ায় যদি খেত খাইয়া ফালায় তাহা হইলে করণীয় আর কিছু থাকে না! এই সকল অন্যায়, অনিয়মের সকল দায়ভার গিয়া বর্তায় যিনি প্রধান নির্বাহী থাকেন, তাহার উপর। যাহাদের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা হইতেছে, তাহাদেরই একটি অংশ বিশ্বাসের চরম বরখেলাপ করিতেছেন, যাহা সত্যিই হতাশ হইবার মতো। দুর্ভাগ্য উন্নয়নশীল বিশ্বের। আমরা ইহাও বুঝিতে পারি, এই নব্য অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের মতো পরিস্থিতি দিনে দিনে স্তিমিত হইয়া যাইতেছে; কিন্তু বাংলায় একটি বহুল প্রচলিত প্রবাদে বলা হইয়াছে, ‘অন্ধ হইলেই প্রলয় বন্ধ থাকে না।’ তাই অন্তত চোখ খুলিয়া তাকাইয়া দেখিবার কথা আমরা বলিতে পারি। নিশ্চয়ই বিষয়টি সম্পর্কে সরকার আমাদের চাইতে অধিক অবগত আছে। এতদসত্ত্বেও এই অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের তাগিদ না থাকায় দল ও প্রশাসন উভয় ক্ষেত্রেই অনুপ্রবেশকারীরা শক্তিশালী অবস্থান হইতে পরাক্রমশালীতে পরিণত হইতেছে। ইহা কঠিন এক সত্য যে, প্রশাসন ও দলে সৎ, নিষ্ঠাবান ও আদর্শে বিশ্বাসীগণ হাল ছাড়িয়া দিতেছেন। কারণ চোখের সম্মুখেই তাহারা স্বাধীনতাবিরোধীদের আস্ফালন উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাইতে দেখিতেছেন এবং নিজেদের গুরুত্ব হারাইতে দেখিতেছেন। এমনিতেই পৃথিবী যেই দিকে যাইতেছে, অর্থনীতি ও সার্বিক পরিস্থিতির যে অধোগতি, তাহাতে আগামীর দিনগুলিতে যদি কোনো দুর্যোগ ঘনীভূত হইয়া উঠে, তাহা হইলে আশ্চর্য হইবার কিছু থাকিবে না। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আমরা বহু রকমের দুর্যোগ দেখিতে পাইতেছি। তবে ইহা নিশ্চিত করিয়াই বলিয়া দেওয়া যায় যে, এই সকল অনুপ্রবেশকারী যেইভাবে ঢুকিয়া পড়িয়াছে, ঠিক সেইভাবে সন্তর্পণে উধাও হইয়া যাইবে। নূতন খোলস ধারণ করিবে। সুতরাং অপশক্তিগুলি চিহ্নিত করিয়া এখনই এই সকল অপশক্তির গতিরোধ করিতে চেষ্টা করিলে আগামী দিনে খানিকটা হইলেও উপশম হিসাবে তাহা কাজ করিতে পারে।