কক্সবাজারের টেকনাফে ব্যবসায়ীকে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাত সদস্যের প্রত্যেককে সাত বছর করে সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত; এছাড়া প্রত্যেক আসামিকে এক লাখ টাকা করে জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও এক বছর করে সাজার আদেশ দেওয়া হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এর আদালত এ রায় দেন বলে জানান কক্সবাজারের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম।
সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) বহিস্কৃত উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মনিরুজ্জামান, আবুল কালাম আজাদ, সহকারি উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. ফিরোজ, গোলাম মোস্তফা ও আলাউদ্দিন এবং কনস্টেবল মো. আল-আমিন ও মোস্তফা আজম।
এর আগে সকাল ৮টায় কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে প্রিজন ভ্যানে করে আসামিদের কোর্ট হাজতে আনা হয়। পরে সাড়ে ১০ টায় সেখান থেকে আসামিদের আদালতে নেওয়া হয়।
পিপি ফরিদুল বলেন, সকাল সাড়ে ১০টায় মামলার ৭ আসামিকে আদালতে আনা হয়। এরপর ১১টায় বিচারক রায় পড়া শুরু করেন। এতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক ৭ ডিবি পুলিশকে ব্যবসায়ীকে অপহরণ ও ১৭ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের মামলায় দণ্ডবিধির ৩৬৫ ধারায় প্রত্যেককে ৫ বছর করে কারাদণ্ড ও ১ লক্ষ টাকা করে জরিমানা এবং দণ্ডবিধি ৩৮৬ ধারায় প্রত্যেককে ৭ বছর করে কারাদণ্ড ও ১ লক্ষ টাকা করে অর্থদণ্ড দেয়া হয়।
তিনি জানান, প্রত্যেক আসামিকে ৭ বছর সাজা খাটতে হবে। রায় ঘোষণার সময় সব আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী।
মামলার নথির বরাতে ফরিদুল বলেন, ‘গত ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর কক্সবাজার সদর থানার পেছনের রোড থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে সাদা পোশাকধারী একদল লোক টেকনাফের ব্যবসায়ী আব্দুল গফুরকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। এরপর ‘ক্রসফায়ারে’ মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে তার স্বজনদের কাছে এক কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এক পর্যায়ে দেন-দরবারের পর ১৭ লাখ টাকা দিতে রাজি হয় পরিবার। পরে ওই টাকা পৌঁছে দেওয়া হলে পরদিন ভোররাতে আব্দুল গফুরকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর এলাকায় ছেড়ে দেওয়া হয়’।
পিপি ফরিদুল বলেন, ‘এরপর ব্যবসায়ী গফুরের স্বজনরা বিষয়টি টেকনাফের শামলাপুরে সেনাবাহিনীর নিরাপত্তা চৌকির দায়িত্বরত সদস্যদের অবহিত করেন। রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও ত্রাণ কার্যক্রমের জন্য সেনাবাহিনীর এই নিরাপত্তা চৌকি স্থাপন করা হয়েছিল’।
মুক্তিপণ আদায়কারী ডিবি পুলিশের সদস্যরা মাইক্রোবাসযোগে মেরিন ড্রাইভ সড়কে নিরাপত্তা চৌকিতে পৌঁছালে সেনা সদস্যরা থামিয়ে তল্লাশি চালান। এতে পুলিশ সদস্যদের হেফাজত থেকে ১৭ লাখ টাকা পান।
ওই সময় এসআই মনিরুজ্জামান দৌড়ে পালিয়ে গেলেও সেনা সদস্যরা বাকি ছয়জনকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
ফরিদুল বলেন, এ ঘটনায় ব্যবসায়ী আব্দুল গফুর বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় ডিবি পুলিশের ৭ সদস্যকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। ঘটনার প্রায় ১০ মাস পর ২০১৮ সালের আগস্টে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।