দেশীয় ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের কারণে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে বিদ্যমান সংকট আরও বাড়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। একই সঙ্গে আরও নতুন তিনটি সংকট মোকাবিলার মুখোমুখিও হতে হবে।
তিন. এলসি ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। একই সঙ্গে বাড়ছে বকেয়া বৈদেশিক ঋণ পরিশোধও। এতে বৈদেশিক মুদ্রা ও বিনিময় হারে সংকট আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এসব মিলে আগামীতে অর্থনীতি আরও চাপে পড়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, এখন সরকারকে অত্যন্ত সতর্কতা ও দক্ষতার সঙ্গে পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দেশে খাদ্য উৎপাদন কম হয়েছে।
এছাড়া প্রতিবছর খাদ্যের চাহিদা বাড়ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দামও বেশি। যে কারণে আগামীতে খাদ্য আমদানিতে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় বেড়ে যেতে পারে। রপ্তানি কমার আভাসও মিলছে।
যা বৈদেশিক মুদ্রা বাজারকে আরও অস্থির করে দিতে পারে। এর মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট মেটাতে পারলে অনেক চাপ কমানো সম্ভব। এজন্য টাকা পাচার বন্ধ করতে হবে।
রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে হুন্ডি বন্ধ করলে আরও সুফল মিলবে। বর্তমানে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে পণ্যমূল্য বেড়ে যাচ্ছে। এতে মূল্যস্ফীতির ওপর আরও চাপ বাড়তে পারে।
এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বৈদেশিক লেনদেনে ভারসাম্য রাখতে সামনে খাদ্য আমদানি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
রপ্তানি আয় কমে গেলে তা আরও বড় বিপদের কারণ হবে। বকেয়া এলসি ও বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ায় বৈদেশিক মুদ্রা বাজারেও চাপ প্রকট আকার ধারণ করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, এই মুহূর্তে সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে চারটি পদক্ষেপ নিতে হবে।
এক. ব্যাংকিং চ্যানেলে বা এলসির মাধ্যমে টাকা পাচার বন্ধ করতে কঠোর মনিটরিং করতে হবে। ইতোমধ্যে এটি শুরু হয়েছে। তবে আরও বাড়াতে হবে।
দুই. রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে হুন্ডি কমাতে হবে। রেমিট্যান্স পাঠানোর খরচ কমাতে হবে ও সহজ করতে হবে।
তিন. বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
চার. কৃষিতে বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেশের ভেতরে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে।
সূত্র জানায়, অর্থনীতিতে এখন নতুন করে বড় সংকটের আভাস দিচ্ছে রপ্তানি আয়। গত অর্থবছরে রপ্তানি আয় সাড়ে ৩৪ শতাংশ বেড়েছিল। চলতি অর্থবছরেও এ খাতে আয় ১২ শতাংশ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। কিন্তু অর্থবছরের শুরুতেই ভিন্নচিত্র দেখা যাচ্ছে। বিদ্যমান মন্দায় ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে গেছে। এ হার ঠেকাতে তারা সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণের ঘোষণা দিয়েছে। ঋণের সুদের হার বাড়াচ্ছে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্য সংকুচিত হয়ে পড়েছে। কমে গেছে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা। ফলে অনেক ক্রেতা পোশাকের অর্ডার বাতিল করছেন। এতে রপ্তানি খাতে নতুন সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। রপ্তানিকারকরাও এ খাতে আয় কমে যাওয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন।
এদিকে রপ্তানির আদেশ কমায় এ শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কমে যাচ্ছে। এটি রপ্তানি শিল্পের জন্য অশনিসংকেত। রপ্তানি কমে গেলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় আরও সংকট বাড়তে পারে। অথচ রপ্তানি আয় ১৩ শতাংশ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। আমদানি ব্যয় কমাতে নানা ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করা হলেও খুব বেশি ঠেকানো যাচ্ছে না।
গত অর্থবছরে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৫৭ শতাংশ। তবে এলসি খোলার হার গত জুলাইয়ে কমেছে ৯ শতাংশ ও আমদানি কমেছে ১২ শতাংশ।
এদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দেশে খাদ্য উৎপাদন কম হয়েছে বলে মনে করছেন কৃষি অর্থনীতিবিদরা। যদিও সরকার থেকে বলা হচ্ছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উৎপাদন বেশি। চাহিদার চেয়ে মজুত বেশি।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে চাল ও গম উৎপাদন হয়েছিল ৩ কোটি ৮৭ লাখ টন। গত অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছে ৩ কোটি ৮৯ লাখ টন।
২০২০-২১ অর্থবছরের তুলনায় গত অর্থবছরে খাদ্যের উৎপাদন বেশি হয়েছে ১২ লাখ টন। কিন্তু চাহিদা বাড়ছে আরও বেশি। এদিকে খাদ্য আমদানি রেকর্ড পরিমাণে কমেছে।
গত ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম খাদ্য আমদানি হয়েছে গত অর্থবছরে। ২০২০-২১ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ৬৭ লাখ টন। গত অর্থবছরে আমদানি হয়েছে ৫০ লাখ টন।
আমদানিতে ১৭ লাখ টন ঘাটতি রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে চাল আমদানির শুল্ক কমানো হয়েছে। আমদানিতেও জোর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ডলারের সংকটে চালের এলসি খোলা যাচ্ছে না।
এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দামও বেড়েছে। ফলে আমদানি ব্যয়ও বেশি হবে। একই সঙ্গে গমের আমদানি ব্যয়ও বাড়বে। এতে আমদানিতে আবার চাপ পড়তে পারে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাবেক গবেষণা পরিচালক ও কৃষি অর্থনীতিবিদ এম আসাদুজ্জামান বলেন, অঞ্চলভেদে বন্যা ও খরার কারণে এবার ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম হয়েছে। এখন আমদানি বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, করোনার পর থেকে ব্যাক টু ব্যাক এলসির আওতায় অনিষ্পন্ন দেনা বাড়ছে রেকর্ড পরিমাণে। গত অর্থবছরে এর পরিমাণ ৪০৭ কোটি ডলার।
আগের ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিল ৩১২ কোটি ডলার। এ খাতে দেনা বেড়েছে ৯৫ কোটি ডলার অর্থাৎ সাড়ে ৩০ শতাংশ বেড়েছে। আমদানির ক্ষেত্রে মোট অনিষ্পন্ন এলসির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩৮৪ কোটি ডলার।
আগের অর্থবছরে ছিল ২ হাজার ৬৬৭ কোটি ডলার। আলোচ্য সময়ে দেনা বেড়েছে ৭১৭ কোটি ডলার অর্থাৎ ২৭ শতাংশ। এ খাতের দেনা আগে কখনোই এত বেশি হারে বাড়েনি। এসব দেনা আগামীতে শোধ করতে হবে। এতেও বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ বাড়বে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, জুলাইয়ে এলসি খোলার হার কমেছে। ওই মাসে এলসি খোলা হয়েছে ৫৪৯ কোটি ডলার। চলতি আগস্ট থেকে তা বেড়ে যেতে পারে।
আগস্টে ৫৫০ কোটি ডলার, সেপ্টেম্বরে ৫৫৭ কোটি ডলার হতে পারে। এদিকে রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল আমদানি আরও কমতে পারে।
জুলাইয়ে ৯৭ কোটি ডলার, আগস্টে সামান্য বেড়ে ৯৮ কোটি ডলার হতে পারে। সেপ্টেম্বরে তা আরও কমে ৮৫ কোটি ডলারে নেমে যেতে পারে। আগে এ খাতে ১১০ কোটি ডলারের বেশি এলসি হতো প্রতি মাসে।
রেমিট্যান্স গত অর্থবছরে ১৫ শতাংশ কমেছে। তবে জুলাইয়ে বেড়েছে ১২ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে রেমিট্যান্স ১২ শতাংশ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
রেমিট্যান্স বাড়ানোর জন্য হুন্ডির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারের বিভিন্ন অংশ। এতে হয়তো সুফল পাওয়া যাবে।
তবে রপ্তানি কমে গেলে শুধু রেমিট্যান্স দিয়ে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য সামাল দেওয়া যাবে না বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
সার্বিকভাবে গত দুই বছর ধরে সরকারের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের চেয়ে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রা খাতে সংকট প্রকট হয়েছে।
সরকারের বৈদেশিক মুদ্রার আর্থিক হিসাবে গত অর্থবছরে নেতিবাচক হয়েছে ৫৩৮ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরে এ খাতে উদ্বৃত্ত ছিল ৯২৭ কোটি ডলার।
দেশীয় ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের কারণে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে বিদ্যমান সংকট আরও বাড়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। একই সঙ্গে আরও নতুন তিনটি সংকট মোকাবিলার মুখোমুখিও হতে হবে।
তিন. এলসি ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। একই সঙ্গে বাড়ছে বকেয়া বৈদেশিক ঋণ পরিশোধও। এতে বৈদেশিক মুদ্রা ও বিনিময় হারে সংকট আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এসব মিলে আগামীতে অর্থনীতি আরও চাপে পড়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, এখন সরকারকে অত্যন্ত সতর্কতা ও দক্ষতার সঙ্গে পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দেশে খাদ্য উৎপাদন কম হয়েছে।
এছাড়া প্রতিবছর খাদ্যের চাহিদা বাড়ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দামও বেশি। যে কারণে আগামীতে খাদ্য আমদানিতে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় বেড়ে যেতে পারে। রপ্তানি কমার আভাসও মিলছে।
যা বৈদেশিক মুদ্রা বাজারকে আরও অস্থির করে দিতে পারে। এর মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট মেটাতে পারলে অনেক চাপ কমানো সম্ভব। এজন্য টাকা পাচার বন্ধ করতে হবে।
রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে হুন্ডি বন্ধ করলে আরও সুফল মিলবে। বর্তমানে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে পণ্যমূল্য বেড়ে যাচ্ছে। এতে মূল্যস্ফীতির ওপর আরও চাপ বাড়তে পারে।
এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বৈদেশিক লেনদেনে ভারসাম্য রাখতে সামনে খাদ্য আমদানি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
রপ্তানি আয় কমে গেলে তা আরও বড় বিপদের কারণ হবে। বকেয়া এলসি ও বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ায় বৈদেশিক মুদ্রা বাজারেও চাপ প্রকট আকার ধারণ করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, এই মুহূর্তে সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে চারটি পদক্ষেপ নিতে হবে।
এক. ব্যাংকিং চ্যানেলে বা এলসির মাধ্যমে টাকা পাচার বন্ধ করতে কঠোর মনিটরিং করতে হবে। ইতোমধ্যে এটি শুরু হয়েছে। তবে আরও বাড়াতে হবে।
দুই. রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে হুন্ডি কমাতে হবে। রেমিট্যান্স পাঠানোর খরচ কমাতে হবে ও সহজ করতে হবে।
তিন. বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
চার. কৃষিতে বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেশের ভেতরে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে।
সূত্র জানায়, অর্থনীতিতে এখন নতুন করে বড় সংকটের আভাস দিচ্ছে রপ্তানি আয়। গত অর্থবছরে রপ্তানি আয় সাড়ে ৩৪ শতাংশ বেড়েছিল। চলতি অর্থবছরেও এ খাতে আয় ১২ শতাংশ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। কিন্তু অর্থবছরের শুরুতেই ভিন্নচিত্র দেখা যাচ্ছে। বিদ্যমান মন্দায় ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে গেছে। এ হার ঠেকাতে তারা সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণের ঘোষণা দিয়েছে। ঋণের সুদের হার বাড়াচ্ছে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্য সংকুচিত হয়ে পড়েছে। কমে গেছে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা। ফলে অনেক ক্রেতা পোশাকের অর্ডার বাতিল করছেন। এতে রপ্তানি খাতে নতুন সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। রপ্তানিকারকরাও এ খাতে আয় কমে যাওয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন।
এদিকে রপ্তানির আদেশ কমায় এ শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কমে যাচ্ছে। এটি রপ্তানি শিল্পের জন্য অশনিসংকেত। রপ্তানি কমে গেলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় আরও সংকট বাড়তে পারে। অথচ রপ্তানি আয় ১৩ শতাংশ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। আমদানি ব্যয় কমাতে নানা ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করা হলেও খুব বেশি ঠেকানো যাচ্ছে না।
গত অর্থবছরে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৫৭ শতাংশ। তবে এলসি খোলার হার গত জুলাইয়ে কমেছে ৯ শতাংশ ও আমদানি কমেছে ১২ শতাংশ।
এদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দেশে খাদ্য উৎপাদন কম হয়েছে বলে মনে করছেন কৃষি অর্থনীতিবিদরা। যদিও সরকার থেকে বলা হচ্ছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উৎপাদন বেশি। চাহিদার চেয়ে মজুত বেশি।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে চাল ও গম উৎপাদন হয়েছিল ৩ কোটি ৮৭ লাখ টন। গত অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছে ৩ কোটি ৮৯ লাখ টন।
২০২০-২১ অর্থবছরের তুলনায় গত অর্থবছরে খাদ্যের উৎপাদন বেশি হয়েছে ১২ লাখ টন। কিন্তু চাহিদা বাড়ছে আরও বেশি। এদিকে খাদ্য আমদানি রেকর্ড পরিমাণে কমেছে।
গত ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম খাদ্য আমদানি হয়েছে গত অর্থবছরে। ২০২০-২১ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ৬৭ লাখ টন। গত অর্থবছরে আমদানি হয়েছে ৫০ লাখ টন।
আমদানিতে ১৭ লাখ টন ঘাটতি রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে চাল আমদানির শুল্ক কমানো হয়েছে। আমদানিতেও জোর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ডলারের সংকটে চালের এলসি খোলা যাচ্ছে না।
এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দামও বেড়েছে। ফলে আমদানি ব্যয়ও বেশি হবে। একই সঙ্গে গমের আমদানি ব্যয়ও বাড়বে। এতে আমদানিতে আবার চাপ পড়তে পারে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাবেক গবেষণা পরিচালক ও কৃষি অর্থনীতিবিদ এম আসাদুজ্জামান বলেন, অঞ্চলভেদে বন্যা ও খরার কারণে এবার ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম হয়েছে। এখন আমদানি বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, করোনার পর থেকে ব্যাক টু ব্যাক এলসির আওতায় অনিষ্পন্ন দেনা বাড়ছে রেকর্ড পরিমাণে। গত অর্থবছরে এর পরিমাণ ৪০৭ কোটি ডলার।
আগের ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিল ৩১২ কোটি ডলার। এ খাতে দেনা বেড়েছে ৯৫ কোটি ডলার অর্থাৎ সাড়ে ৩০ শতাংশ বেড়েছে। আমদানির ক্ষেত্রে মোট অনিষ্পন্ন এলসির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩৮৪ কোটি ডলার।
আগের অর্থবছরে ছিল ২ হাজার ৬৬৭ কোটি ডলার। আলোচ্য সময়ে দেনা বেড়েছে ৭১৭ কোটি ডলার অর্থাৎ ২৭ শতাংশ। এ খাতের দেনা আগে কখনোই এত বেশি হারে বাড়েনি। এসব দেনা আগামীতে শোধ করতে হবে। এতেও বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ বাড়বে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, জুলাইয়ে এলসি খোলার হার কমেছে। ওই মাসে এলসি খোলা হয়েছে ৫৪৯ কোটি ডলার। চলতি আগস্ট থেকে তা বেড়ে যেতে পারে।
আগস্টে ৫৫০ কোটি ডলার, সেপ্টেম্বরে ৫৫৭ কোটি ডলার হতে পারে। এদিকে রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল আমদানি আরও কমতে পারে।
জুলাইয়ে ৯৭ কোটি ডলার, আগস্টে সামান্য বেড়ে ৯৮ কোটি ডলার হতে পারে। সেপ্টেম্বরে তা আরও কমে ৮৫ কোটি ডলারে নেমে যেতে পারে। আগে এ খাতে ১১০ কোটি ডলারের বেশি এলসি হতো প্রতি মাসে।
রেমিট্যান্স গত অর্থবছরে ১৫ শতাংশ কমেছে। তবে জুলাইয়ে বেড়েছে ১২ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে রেমিট্যান্স ১২ শতাংশ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
রেমিট্যান্স বাড়ানোর জন্য হুন্ডির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারের বিভিন্ন অংশ। এতে হয়তো সুফল পাওয়া যাবে।
তবে রপ্তানি কমে গেলে শুধু রেমিট্যান্স দিয়ে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য সামাল দেওয়া যাবে না বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
সার্বিকভাবে গত দুই বছর ধরে সরকারের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের চেয়ে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রা খাতে সংকট প্রকট হয়েছে।
সরকারের বৈদেশিক মুদ্রার আর্থিক হিসাবে গত অর্থবছরে নেতিবাচক হয়েছে ৫৩৮ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরে এ খাতে উদ্বৃত্ত ছিল ৯২৭ কোটি ডলার।