বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ থেকে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণের প্রথম কিস্তি পেয়েছে বাংলাদেশ। এ কিস্তির পরিমাণ ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার। ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদের বৈঠকে বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণপ্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। ঋণ অনুমোদনের তিন দিনের মাথায় সংস্থাটি প্রথম কিস্তির অর্থ ছাড় করেছে। ঋণের বাকি অর্থ পাওয়া যাবে তিন বছরে অর্থাৎ ছয়টি সমান কিস্তিতে ৩৬ মাসে। দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়া যাবে এ বছরের ডিসেম্বরে আর শেষ কিস্তি পাওয়া যাবে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে। প্রথম কিস্তির অর্থ দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে যোগ হয়েছে। তাতে রিজার্ভও বেড়েছে। বুধবার দিন শেষে রিজার্ভ ছিল ৩ হাজার ২১৯ কোটি ডলার। বৃহস্পতিবার তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ২৬৯ কোটি ডলারে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলটি ঋণ অনুমোদনের সময় বেশ কিছু শর্ত দিয়েছে। এসব শর্ত ও আইএমএফের ঋণে দেশে সামষ্টিক অর্থনীতিতে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে এসব নিয়ে কথা বলেছেন বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, অর্থনীতিতে আইএমএফের ঋণের প্রভার দেওয়া শর্ত একই সূত্রে গাঁথা। এখানে মোটাদাগে অর্থনীতির চিত্র পালটে দিতে পারে বা বর্তমানে যে ডলার-সংকট আছে এবং উচ্চমূল্যস্ফীতি এসব নিরসনে অবদান রাখার মতো তেমন কোনো সংস্কার নেই। তিন বছরের মধ্যে কী কী করতে হবে তা বলেছে সংস্থাটি। যেমন রিজার্ভের হিসাব করতে সংস্থাটির আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে তা প্রকাশ করতে হবে। খেলাপি ঋণের সঠিক চিত্র তুলে আনতে হবে। রাজস্ব খাত সংস্কারসহ নানা শর্ত দিয়েছে তারা। তিনি বলেন, ঋণের সুদহারের সীমা তুলে দেওয়ার বিষয়টি শর্ত হিসেবে নেই। এটি বলার জন্য বলা হয়েছে। আগামী কিস্তি পেতে হলে যেসব সংস্কারের কথা বলা হয়েছে সেখানে এই শর্ত নেই। সামাজিক সুরক্ষা খাতে আওতা বাড়ানো, ভাতা বাড়ানোর কথা বলা আছে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্য দেওয়া হয়নি। যেসব শর্ত আইএমএফ দিয়েছে সেগুলো অস্বীকার করার মতো কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু মোটাদাগের সংস্কার নেই। যার কারণে প্রবৃদ্ধি, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বা মানব সম্পদের উন্নয়ন সেখানে রূপান্তরমূলক কিছু ঘটবে সেরকম কোনো সংস্কার আমার চোখে পড়েনি।
আইএমএফের দেওয়া ঋণ প্রসঙ্গে ড. জাহিদ হোসেন বলেন, এটা নিঃসন্দেহে ভালো কর্মসূচি। এখানে মোট তিনটি প্যাকেজ আছে। এর মধ্যে প্রথমটা বর্ধিত ঋণ সুবিধা (ইসিএফ)। এটা সুদমুক্ত। ইসিএফের আওতায় প্রদেয় ঋণে সাড়ে পাঁচ বছর গ্রেস পিরিয়ড পাওয়া যাবে। এর পরবর্তী ১০ বছরে এই ঋণ শোধ করতে হবে। ইএফএফ ঋণ কর্মসূচিতে সাড়ে তিন বছর গ্রেস পিরিয়ড মিলবে। আর পরিশোধ করতে হবে পরবর্তী ১০ বছরে। আরএসএফ ঋণ কর্মসূচিতে পাওয়া যাবে ১০ বছরের গ্রেস পিরিয়ড সুবিধা এবং তা পরিশোধ করা যাবে আগামী ২০ বছরে। এ মুহূর্তে এ ধরনের লম্বা সময়ে পরিশোধযোগ্য ঋণ পাওয়াটা অবশ্যই ইতিবাচক। তবে এটা ডলার-সংকট এড়াতে খুব একটা কার্যকর ভূমিকা রাখবে না। কারণ পরিমাণ খুবই কম। এখানে ছয় মাস পর পর যা পাওয়া যাবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। তবে এটা আমাদের জন্য ইতিবাচক যে, আইএমএফ এখন সংকট এড়াতে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। বড় একটা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এটা অন্যদের কাছেও এক ধরনের ইতিবাচক বার্তা দেবে। তবে ব্যাপারটা হলো, যেসব সংস্কারের কথা তারা বলেছে, সেগুলো তো আমরা অনেক আগে থেকেই বলে আসছি। কিন্তু সরকার তা করেনি। এখন তো বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়েছে। ফলে সংস্কারগুলো করতেই হবে। নইলে তো তারা ঋণের কিস্তি আটকে দেবে। আর সংস্কার কর্মসূচিগুলো কিন্তু আমাদের জন্য বেশ ভালো এবং উপযোগী। বিশেষ করে ব্যাংক খাতের কাঠামোগত সংস্কার, খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা, রাজস্ব খাতের সংস্কার ইত্যাদি। তবে এখানে একটা কথা বলা যায়, এই ঋণ অর্থনীতিতে রূপান্তরগত তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না। এখানে আরেকটা বিষয় জানা জরুরি, প্রকাশিত সংস্কার কর্মসূচিগুলোর বাইরে আরও কী ধরনের শর্ত রয়েছে সেগুলো তো এখনো অপ্রকাশিত রয়েছে। সেটার জন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে।