চলমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় মুদ্রা পাচার বন্ধ,সুশাসন নিশ্চিত করা এবং সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ কঠোরভাবে বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।তাঁরা বলেছেন,বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে,তা প্রশমন খুবই জরুরি।এজন্য মুদ্রা পাচার বন্ধ,পণ্য ও জনশক্তি রপ্তানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সংকট,কতটা ঝুঁকিপূর্ণ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন।সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের সভাপতিত্বে সভা সঞ্চালনা করেন সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।ধানমন্ডি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় আরও বক্তব্য দেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম,বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ,জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম.তামিম,এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু,সিপিডির সম্মানিত ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।সংকট উত্তরণের সুপারিশ তুলে ধরতেই এ আলোচনার আয়োজন করে সিপিডি।নীতিনির্ধারকরা স্বল্প ও মধ্য মেয়াদে কী ধরনের উদ্যোগ নিতে পারেন,তা নিয়ে মতামত দেন আলোচকরা।
ফাহমিদা খাতুন বলেন,অনেকদিন ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতি স্বস্তিকর অবস্থায় ছিল।সেই স্বস্তি থেকে দেশ ক্রমান্বয়ে বের হয়ে আসছে।এখন অর্থনীতি নানান ধরনের চাপের মুখে রয়েছে।শুধু রপ্তানি ছাড়া প্রায় প্রতিটি সূচকেই নানা ধরনের চাপ দেখা যাচ্ছে।মূল্যস্ম্ফীতি,সম্পদ আহরণ,সম্পদ সঞ্চালন প্রতিটি ক্ষেত্রেই চাপ তৈরি হয়েছে।তিনি বলেন,যে মূল্যস্ম্ফীতি দেখানো হচ্ছে, বাস্তবতার সঙ্গে তার অনেক ফারাক রয়েছে।গতবছরের জুলাই থেকে চলতি জুলাইয়ের মধ্যে কোনো কোনো পণ্যের মূল্য ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।এটা সাড়ে ৭ শতাংশ মূল্যস্ম্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।মূল্যস্ম্ফীতির লাগাম টানতে অর্থের সরবরাহ কমাতে হবে।সুদহারে সীমা আরোপ থাকলে অন্য উদ্যোগ কাজে আসবে না।
তিনি বলেন,নিম্ন আয়ের মানুষ ও ছোট উদ্যোক্তাদের সহায়তা দিতে হবে।সরকারের কৃচ্ছ্রতার উদ্যোগ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।মানুষকে সহায়তা দিতে,উন্নয়ন কার্যক্রম চালিয়ে নিতে রাজস্ব আহরণ গুরুত্বপূর্ণ।জ্বালানি তেলে ভর্তুকি আরও কিছুদিন দিতে হবে।কৃষি ও ব্যক্তি খাতে এ ভর্তুকি দিতে হবে।কর জিডিপি অনুপাত বাড়াতে হবে।এজন্য স্বল্প ও মধ্য মেয়াদি পদক্ষেপ নিতে হবে।একই সঙ্গে সম্পদ পাচার বন্ধ করতে হবে।বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব উদ্যোগ নিয়েছে,তা অপ্রতুল।
রেমিট্যান্সের প্রণোদনা তুলে দেওয়ার প্রস্তাব করে তিনি বলেন,প্রণোদনা দিয়েও রেমিট্যান্স বাড়ছে না।ফলে এখনকার সংকটময় মুহূর্তে এই প্রণোদনা তুলে দেওয়ার সময় হয়েছে।তিনি বলেন,এই সংকট স্বল্প মেয়াদি নয়।এটা মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে প্রভাব ফেলবে।এই সংকট বিশ্ব সংকট।সহসাই যাচ্ছে না।ফলে শুধুমাত্র স্বল্প মেয়াদি উদ্যোগ দিয়ে এর সমাধান করা যাবে না।মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি উদ্যোগ নিতে হবে।সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতার জন্য অপচয় ও অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বন্ধ করতে হবে।