কেরানীগঞ্জ কারাগারে থাকা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রিজভীকে সুচিকিৎসা দিতে সরকার ও কারা কর্তৃপক্ষ অবহেলা করছে বলেও অভিযোগ করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘যে কোনো বন্দিকে আদালতে আনা নেওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশ প্রবিধান ও জেল কোড বিধির বিধান মতে আরামদায়ক পদ্ধতিতে বিধান থাকা সত্বেও কারা কর্তৃপক্ষ ও দায়িত্ব পুলিশ আইন অমান্য করে যাচ্ছে। যা চরম অমানবিকতা ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন।
সোমবার (৬ মার্চ) সকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে বুকে ও পায়ে গুলিবিদ্ধ রুহুল কবির রিজভী ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, করোনায় আক্রান্ত হয়ে ফুসফুসে জটিলতা ও হার্টের অসুখসহ বিভিন্ন মারাত্মক রোগে ভুগছেন। তিনি সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠার সময় অন্যের সাহায্য ছাড়া চলতে পারেন না। তাছাড়া তাকে সবসময় লাঠির ওপর ভর করে চলতে হয়। এমন এক পরিস্থিতিতে কেরানীগঞ্জ কারাগার থেকে পুরান ঢাকার আদালতে আসার দীর্ঘ পথ প্রিজনভ্যানে তাকে আনা-নেওয়া করা হচ্ছে। এই প্রিজন ভ্যানগুলোতে বসার কোনো ব্যবস্থা নেই। এমনকি কোনো কিছু ধরে দাঁড়িয়ে থাকারও ব্যবস্থা নেই। যার জন্য অসুস্থ রিজভী আহমেদকে চরম ঝুঁকি নিয়ে প্রায় প্রতিদিনেই আদালতে আনা-নেওয়া করানো হয়।
তিনি বলেন, সরকার ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার জন্য এবং বিএনপিকে নেতৃত্বহীন করার লক্ষ্যে আবার পুরোনো খেলায় মেতে উঠেছে। মিথ্যা, গায়েবি মামলা, গ্রেফতার, ঘরে ঘরে তল্লাশি এবং হয়রানি করে নির্যাতন-নিপীড়নের মাত্রা বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। মিথ্যা মামলায় নেতা-কর্মীদের কারাগারে নিয়ে যে ধরনের নির্যাতন করে, তা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়।
তিনি আরও বলেন, ‘এই হীন পরিকল্পনায় দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীসহ অনেক সিনিয়র নেতাসহ অসংখ্য কর্মীকে গ্রেফতার করেছে এবং কারাগারে অমানবিক নির্যাতন শুরু করেছে। মিথ্যা ও হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় এবং সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে বর্তমানে কেরানীগঞ্জ কারাগারে থাকা অ্যাডভোকেট রিজভী ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ায় এবং তাকে সুচিকিৎসা প্রদানে সরকার ও কারা কর্তৃপক্ষের অবহেলায় আমি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। আমি অবিলম্বে রুহুল কবির রিজভীকে সুচিকিৎসা প্রদান এবং তার বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা প্রত্যাহারসহ বিএনপির সব কারারুদ্ধ নেতা-কর্মীর মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তির জোর আহ্বান জানাচ্ছি।
ফখরুল বলেন, ‘মিথ্যা মামলাকে এই সরকার প্রজেক্টের মতো নিয়েছে। মামলায় কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হচ্ছে। নেতারা জামিন নিয়ে যখন বের হবেন, তখনই আবার জেলগেটে গ্রেফতার করা হচ্ছে। এখানে আছে বাণিজ্যের ব্যাপার। কারণ, এখন পুলিশি রাষ্ট্র হয়ে গেছে। আমাদের প্রথম কারাগারে নেওয়ার পর কনডেম সেলে রাখা হয়েছিল কোয়ারেন্টিনের নামে, যা চরম অমানবিক। এ ক্ষেত্রে কারাবিধি মানা হয়নি। কারাগারের আচরণ ও নিপীড়ন যেন মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়। নির্বাচনের আগে সরকার আবারও বিএনপিকে মাঠশূন্য করতে চায়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘৩০ ডিসেম্বর মধ্যরাতের ভোট ডাকাতির নির্বাচনের পর বর্তমান সরকারের দুঃশাসন যেন আরও তীব্র মাত্রা লাভ করেছে। সরকার দেশকে বিএনপিশূন্য করতে এখন বেপরোয়া ভূমিকায় মাঠে নেমেছে। বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীর ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়ে চারদিকে ভীতির বিস্তার ঘটাচ্ছে, যাতে সরকারের বিরুদ্ধে কেউ আওয়াজ করারও সাহস না পায়।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘গত ২৫ ফেব্রুয়ারি পদযাত্রা ঘিরে নতুনভাবে বিভিন্ন জেলায় মোট ৮টি মামলায় ৯৩৭ জনকে আসামি ও ৫৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
