ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচেই হেরে পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার এবারের বিশ্বকাপে শুরুটা হয়েছিল ভয়াবহ। শুরুতেই খাদের কিনারায় চলে যাওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স ঘোষণা করেন, ‘এখন থেকে প্রতিটা ম্যাচই আমাদের জন্য ফাইনাল।’
অধিনায়কের এই ঘোষণা বাণীতে উজ্জীবিত হয়ে অস্ট্রেলিয়ানরা সত্যিকার অর্থেই নিজেদের প্রতিটা ম্যাচে ‘ফাইনাল’-এর মতোই খেলছে। ফল, প্রথম দুই হারের পরও পরের টানা ৫ ম্যাচ জিতে সেমিফাইনালের দ্বারপান্তে পৌঁছে গেছে অসিরা। সেমির পথে অসিদের সামনে কাগজে কলমের যে ফ্যাকড়াটুকু আছে, তা মুছে ফেলতেই আজ মাঠে নামছে অস্ট্রেলিয়া।
মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে আজ তাদের প্রতিপক্ষ এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম বড় চমক আফগানিস্তান। বাংলাদেশ সময় দুপুর আড়াইটায় শুরু হতে যাওয়া এই ম্যাচে জিতলে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই সেমিফাইনালে টিকিট নিশ্চিত হয়ে যাবে অস্ট্রেলিয়ার। আর আফগানিস্তানের? জিতলে আরো উজ্জ্বল হবে আফগানদের প্রথম বারের মতো সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন।
ক্রিকেটীয় শক্তি-সামর্থ্য ও ইতিহাস-ঐতিহ্যের বিচারে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে আফগানিস্তানের কোনো তুলনাই চলে না। অস্ট্রেলিয়া বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম পরামক্তি। বিশ্বকাপের আগের ১২ আসরের মধ্যে ৭ বারই ফাইনাল খেলেছে তারা, চ্যাম্পিয়ন হয়েছে রেকর্ড ৫ বার। বিপরীতে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত আফগানিস্তান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা-ই রেখেছে কয়েক বছর হলো। বিশ্বকাপ খেলেছে মাত্র দুই বার। ২০১৫ ও ২০১৯ বিশ্বকাপে, দুই বারই বিদায় নিতে হয়েছে গ্রুপ পর্ব থেকে।
দুই দলের মধ্যে তুলনা চলে পরিসংখ্যানের বিচারেও। এর আগে দুই দল ওয়ানডেতে মোট ৩ বার মুখোমুখি হয়েছে। সেই ৩ ম্যাচেই সহজ জয় পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া। সেই ৩ জয়ের মধ্যে দুটি আবার বিশ্বকাপে। ২০১৫ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ানরা জিতেছিল ২৮৫ রানের বিশাল ব্যবধানে। ২০১৯ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ানদের জয়টা ছিল ৭ উইকেটে। কিন্তু অসিদের দুশ্চিন্তার কারণ হলো, আগের আফগানিস্তান এবং এবারের বিশ্বকাপের আফগানিস্তান এক নয়।
প্রথম দুটি বিশ্বকাপে ১৫ ম্যাচ খেলে আফগানিস্তান জয় পেয়েছিল মাত্র একটি ম্যাচে। সেই আফগানিস্তান এবার এরই মধ্যে ৭ ম্যাচের ৪টিতে জয় উত্সব করেছে। ৮ পয়েন্ট নিয়ে সেমিফাইনালে ওঠার দৌড়ে ভালোভাবেই আছে আফগানরা। আজ জিতলে রশিদ-মুজিবদের প্রথম বারের মতো সেমির স্বপ্ন আরো উজ্জ্বল হবে।
মজার ব্যাপার হলো, অসিদের মতো আফগানরা এবারের বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচেই হেরেছিল। বাংলাদেশ ও ভারতের কাছে হারের পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জিতে ঘুরে দাঁড়ায় রশিদ খানরা। পরে একের পর এক চমক উপহার দিয়ে রশিদ খানরা জিতেছেন পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। এই তিনটি জয় আবার সর্বশেষ তিন ম্যাচে। সুতরাং অসিরা যেমন টানা ৫ জয়ে আত্মবিশ্বাসে উড়ছে, তেমনি উড়ছে আফগানিস্তানও। তবে আজ যে কোনো এক দলের সেই আত্মবিশ্বাসের পাত্র ফুটো হয়ে যাবে!