এ বছর বাংলাদেশের অর্থনীতি কভিড-সংকট কাটিয়ে নতুন করে পুনর্জাগরণের জন্য তৈরি হচ্ছিল। মহামারির কারণে এমনিতেই বিশ্ব সরবরাহ চেইন নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিল। আর সারা বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকার মহামারির কারণে অর্থনীতি যাতে নিস্তেজ না হয়ে যায় সেটি খেয়াল করছিল। তাই বিপুল পরিমাণ তারল্য পাম্প করতে থাকে তারা তাদের অর্থনীতিতে।
আমরাও জিডিপির ৬ শতাংশের মতো প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় সস্তায় ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ নিই। স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে অর্থ ঢালতে সরকার ন্যায্যতই দ্বিধা করেনি। এমন বাস্তবতায় বিশ্বজুড়েই মূল্যস্ফীতি ছিল বাড়ন্ত। ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে প্রায় পাঁচ মাস আগে হঠাৎ করেই শুরু হয়ে যায় ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। এই যুদ্ধের ফলে বিশ্ব সরবরাহ চেইন আরো ভেঙে পড়ে। ইউক্রেন-রাশিয়া-বেলারুশ অঞ্চল থেকে গম, ভোজ্য তেল, সার, জ্বালানি তেল, গ্যাস সরবরাহ প্রায় বন্ধই হয়ে যায়। সবেমাত্র জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় ইউক্রেনের ওডেসা বন্দর থেকে ২৬ হাজার টন খাদ্যশস্য বোঝাই একটি জাহাজ লেবাননের পথে ছেড়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে খাদ্য মূল্যস্ফীতিসহ সার্বিক মূল্যস্ফীতি সারা বিশ্বেই বেড়ে গেছে। বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞার অংশ হিসেবে বিশ্ব লেনদেন ব্যবস্থা সুইফট বন্ধ করে দেয় পশ্চিমা বিশ্ব। পাঁচ মাস ধরে বিশ্ববাণিজ্য এক অর্থে ‘রোলার কোস্টারে’র মধ্য দিয়েই গেছে। একদিকে তারল্যের ছড়াছড়ি, অন্যদিকে সরবরাহে ঘাটতি। দুইয়ে মিলে মূল্যস্ফীতি এখনো প্রায় উড়ন্ত। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপসহ পশ্চিমে মূল্যস্ফীতি এখন ৯ শতাংশেরও বেশি।
বাংলাদেশও আমদানিজনিত এই মূল্যস্ফীতির আক্রমণের শিকার। এখন বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৭ শতাংশেরও বেশি। এর মধ্যে বন্যা ও খরা—দুই-ই আঘাত হেনেছে বাংলাদেশে। তেলের দাম বাড়ন্ত থাকায় জ্বালানিনির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহে লাগাম টানতে হয়েছে বাংলাদেশকে। এর প্রভাবে জনজীবন বা ব্যবসা-বাণিজ্য বেশ খানিকটা চাপে যে পড়ছে সে কথা তো মানতেই হবে। সবচেয়ে বড় কথা, প্রায় ১৩ লাখ সেচপাম্পের এক বিরাট অংশেও বিদ্যুৎ সরবরাহে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। অবশ্য যে চার হাজারেরও বেশি সেচপাম্প সোলারে চলছে সেগুলোর কথা আলাদা। তবে সেগুলো মোটের তুলনায় এখনো সামান্যই বলা চলে। তাই এই নিয়ন্ত্রিত বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রভাব কৃষি উৎপাদনের ওপর যে পড়বে তা অস্বীকার করার উপায় নেই। সরকার তার সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছে। এখনো তেলের দাম বাড়ায়নি। সে জন্য বিপুল পরিমাণে ভর্তুকি গুনতে হচ্ছে সরকারকে। কেননা খাদ্য উৎপাদন অক্ষুণ্ন রাখা গেলে খাদ্য আমদানি কম হবে। এরই মধ্যে কম মূল্যে খাদ্য বিক্রির জন্য এক কোটি পরিবারকে কার্ড দিয়েছে সরকার। কর্মসূচিটির বাস্তবায়নও শুরু হয়ে গেছে।
দেশের ভেতরে আমরা নানামাত্রিক উদ্যোগ নিয়ে আমাদের অর্থনীতি ও সমাজকে স্থিতিশীল রাখতে পারলেও বড় আক্রমণ আসে বাইরে থেকে। হঠাৎ করে আমদানি করা পণ্যের দাম এতটা বেড়ে যায় যে বাণিজ্য ঘাটতি বাড়তে থাকে। সরকার দ্রুত সাশ্রয়ী বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়ে মুদ্রা ও রাজস্বনীতিকে এই সংকট মোকাবেলায় দক্ষতার সঙ্গে কাজে লাগানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছে। প্রশাসনিক খরচে লাগাম টানা হচ্ছে, কম দরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন হয় স্থগিত অথবা পেছনে ঠেলে দেওয়া হয়েছে, বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ কমাতে বেশ কিছু নিয়ন্ত্রণমূলক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২৭টি বিলাস এবং প্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি কমাতে এলসি মার্জিন বাড়িয়েছে। সরকারও এসব পণ্যের ওপর শুল্ক হার বাড়িয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি ডলার-টাকার মূল্যমান নমনীয় করে বাজারনির্ভর করার উদ্যোগও বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়েছে। বিনিময় হার এখনো পুরোপুরি স্থিতিশীল না হলেও পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালোর দিকেই এগোচ্ছে।
অর্থবছর শেষে খবর পাচ্ছি যে জুলাই মাসে আমদানি মূল্য ৫.৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। জুনেও এর পরিমাণ ছিল ৭.৯৬ বিলিয়ন ডলার। জুলাই মাসে প্রবাস আয় এসেছে গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ২.০৯ বিলিয়ন ডলার। জুনে এসেছিল ১.৮৩ বিলিয়ন ডলার। আমার ধারণা, বিশ্ব সরবরাহ চেইনে বড় ধরনের কোনো ওলটপালট না হলে আমাদের আমদানির পরিমাণ আরো দ্রুত কমে আসবে।
অন্যদিকে বিনিময় হারটিকে যদি আরেকটু প্রকৃত হারের কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারি, তাহলে প্রবাস আয় ও রপ্তানি আয় দুই-ই আরো বাড়বে। ধীরে ধীরে ম্যাক্রো-অর্থনীতির স্বস্তির দিকে হাঁটলেও আমরা যে এখনো বাণিজ্য ও চলতি লেনদেনের হিসাবে বেশ চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছি, সে কথাটি ভুললে চলবে না। অর্থবছর শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, আমাদের মোট বাণিজ্যিক ঘাটতি (আমদানি ও রপ্তানির পার্থক্য) ছিল ৩৩.২ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরে প্রবাস আয়ও ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে খানিকটা শ্লথ। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা ও সরবরাহের ভেতর যে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়, তা বাগে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিনিময় হারকে বাজারমুখী করতে তার ওপর থেকে নিয়ন্ত্রণ খানিকটা শিথিল করে। ফলে টাকার মানের বড় ধরনের অবমূল্যায়ন হয়। শুধু বাংলাদেশ কেন, বিপুল রিজার্ভের অধিকার হয়েও ভারত তার রুপির অবমূল্যায়ন ঠেকাতে পারেনি। তার একটি বড় কারণ বিশ্ব আর্থিক বাজারে ডলারের প্রাধান্য এবং তার ক্রমবর্ধমান তেজি ভাব। উন্নত দেশগুলোর মুদ্রার মানের চেয়েও ডলারের দাম বিপুলভাবে বেড়ে গেছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ডলার ইনডেক্সের (১৬টি প্রধান মুদ্রা মানের সমাহারে তৈরি) মতে, বিগত এক বছরে ১৩ শতাংশ বেড়ে গেছে ডলারের মূল্যমান। যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি যেহেতু এখন ৯ শতাংশেরও বেশি, তাই তার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেড আক্রমণাত্মক হারে তার মৌলিক সুদের হার বাড়িয়ে চলেছে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বন্ডের কদর বাড়ছে। আরো বেশি করে বিকাশমান বাজার থেকে ডলারে করা বিনিয়োগ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের দিকে ছুটছে। উল্লেখ্য, গত এক বছরে ৩৮ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ বিকাশমান বাজার ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছে। এর সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকও ২০১১ সালের পর এই প্রথমবার মৌলিক সুদের হার বাড়িয়েছে। ব্যাংক অব ইংল্যান্ড তো আগে থেকেই তা বাড়াচ্ছিল। কেননা যুক্তরাজ্যে মূল্যস্ফীতি আরো বেশি। জাপান এখনো শূন্য সুদের কৌশল থেকে বের হয়নি। বাদবাকি সব দেশেই সুদের হার বাড়ানো হচ্ছে। ভারতও বাড়িয়েছে।
বাংলাদেশও তার মৌলিক রেট তথা রেপোরেট বাড়িয়েছে। কিন্তু এই রেট বৃদ্ধি আর্থিক বাজারে তেমন প্রভাব ফেলতে পারছে না সুদের হার সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেওয়ার কারণে। যিনি খুদে উদ্যোক্তা তিনিও সর্বোচ্চ ৯ শতাংশে ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছেন, আবার যিনি মার্সিডিজ গাড়ি কিনছেন তিনিও একই হারে ঋণ পাচ্ছেন। ফলে মূল্যস্ফীতি কমানোর যে কৌশল সুদের অস্ত্রের মাধ্যমে ব্যবহার করার কথা তা অনেকটাই অকেজো হয়ে আছে। তবে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক প্রণোদনা প্যাকেজের মাধ্যমে খুদে ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ৪-৫ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। সর্বশেষ বাংলাদেশ ব্যাংক ২৫ হাজার কোটি টাকার একটি উপযুক্ত রিফাইনান্সিং তহবিল চালু করেছে কুটির, ক্ষুদ্র ও মধ্যম উদ্যোক্তাদের জন্য। এর সঙ্গে সহসাই যুক্ত হচ্ছে ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম। এই স্কিমের আওতায় এ ধরনের ঋণের ৭০ শতাংশের গ্যারান্টি দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। দুইয়ে মিলে ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে ব্যাংকগুলোকে স্বস্তি ও সাহস জোগাবে আশা করি।
কিন্তু পুরো বাজারকে চাহিদা ও সরবরাহের কাঠামোতে সচল না করা গেলে বিশ্ব অর্থনৈতিক এই সংকটকালে এসব উদ্যোগ সত্ত্বেও অর্থনীতিতে টানাপড়েন লেগেই থাকে। বিশেষ করে বৈদেশিক মুদ্রার বাজারকে গতিশীল করতে হলে মুদ্রার বিনিময় হার ও সুদের হারকে নমনীয় রেখে বাজারভিত্তিক বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো খুবই জরুরি হয়ে পড়ে। বিদেশি মুদ্রাবাজারকে স্থিতিশীল করতে হলে আন্ত ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রাবাজারকে খুবই গতিশীল রাখতে হবে। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক যে হারটি বেঁধে দিচ্ছে সেই হারে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সরকারি আমদানি এলসির দায় মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডলার কিনতে পারে। কিন্তু অন্যান্য ব্যাংক এই হারে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডলার সেভাবে কিনতে পারে না। বিদেশি বা দেশি এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো প্রবাসীদের কাছ থেকে কেনা বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকায় অনুরূপ দাম হাঁকে। তাই অসুস্থ প্রতিযোগিতায় ডলারের দাম অস্থিতিশীল হয়ে থাকে। সে জন্যই আন্ত ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের একটি ভিত্তিরেখা বা বেঞ্চমার্ক তৈরি করা খুব জরুরি। এই হারের আশপাশেই যেন থাকে ডলারের দাম, সেটিই কাম্য। ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই হার নির্ধারণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। একটি পোর্টালে সব ব্যাংককেই ডলারের সম্ভাব্য বিনিময় হার উল্লেখ করতে বলে আরবিআই। দিনের শেষে সব উদ্ধৃতি দেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি গড়পড়তা রেট স্থির করে। সেটিই পরের দিন গ্রহণযোগ্য রেট হিসেবে চালু হয়ে যায়। এটিই হয়ে যায় বেঞ্চমার্ক রেট।
আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। কার্ব মার্কেটের আকার কিন্তু মোট বিদেশি মুদ্রার বাজারের ২ শতাংশের বেশি হবে না। কভিডের পরে অনেকেই বিদেশে যাচ্ছেন, চিকিত্সা ও শিক্ষার জন্য অনেক তরুণ বাইরে যাচ্ছে। তাই নগদ ডলারের চাহিদা বেড়েছে। মানি চেঞ্জারদের কারসাজিও আছে। সব মিলেই এই মার্কেটে বিনিময় হার বেশি করে ওঠা-নামা করছে। যেহেতু এটি মূল বাজার নয়, তাই তাকে নিয়ে গণমাধ্যমের এই মাতামাতি মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। আর এদের কারসাজি ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংক ত্বরিত ব্যবস্থাও নিয়েছে, নিচ্ছে।
বৈদেশিক মুদ্রাবাজারের এই অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে আমাদের স্বনামধন্য কিছু বিশেষজ্ঞ বলতে চাইছেন যে ২০২৪-২৬ সাল নাগাদ বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার মতো ঋণ সংকটে পড়তে যাচ্ছে। অথচ বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ-জিডিপি অনুপাত ২০ শতাংশের কম, আর শ্রীলঙ্কার তা ১০৪ শতাংশ। এমন আতঙ্ক যাঁরা ছড়াচ্ছেন তাঁরা কিন্তু কোনো গ্রহণযোগ্য তথ্য বা ক্যাশফ্লো বিশ্লেষণ দিচ্ছেন না। আগামী দুই বছর কি তাহলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুমিয়ে থাকবে? আমাদের রপ্তানি বা প্রবাস আয় কি আর বাড়বে না? আমাদের রিজার্ভ এই কয়েক দিনে পুরোপুরি উবে যাবে? তাহলে মুডিস বা আইএমএফ কেন বলছে, বাংলাদেশের ‘ডিফল্ট রিস্ক’ নেই। যে দেশের বেশির ভাগ ঋণই আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে নেওয়া, যে ঋণের সুদ সামান্য, যার শোধের সময়সীমা ৩০ বছরেরও বেশি, যে দেশ গত বছরই আট বিলিয়ন ডলারের এমন ঋণ ছাড় করতে পেরেছে, যার দৃশ্যমান মেগাপ্রকল্পগুলো বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সৃজনে লক্ষ্যভেদী, যার কৃষি ও ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পের প্রবৃদ্ধি চোখ-ধাঁধানো, যে দেশের দারিদ্র্য কমতির দিকে, দম্পতিপ্রতি গড় সন্তান সংখ্যা দুই, সাক্ষরতার হার ৭৮ শতাংশ, যে দেশে রয়েছে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির অনন্য সাফল্যের ইতিহাস—সেই দেশটি নিয়ে এমন করে আতঙ্ক ছড়ানো কি উচিত হচ্ছে?
তার মানে এই নয় যে আমাদের সমস্যা নেই। নিশ্চয় আছে অনিয়ম, দুর্নীতি, প্রকল্পের শ্লথ বাস্তবায়ন এবং বৈষম্য। কিন্তু এ কথাও স্বীকার করতে হবে যে বিপর্যয় মোকাবেলার ইতিহাসও আমাদের সমৃদ্ধ। আমাদের নেতৃত্বের চোখও সর্বদাই তীক্ষ ও জনবান্ধব। এই পরিস্থিতিতে হতাশা না ছড়িয়ে আসুন, আমরা সবাই বিশ্ব অর্থনৈতিক এই সংকটকালে ঐক্যবদ্ধভাবে চিন্তা ও কর্মের সমাবেশ ঘটাই, যাতে বাইরে থেকে আসা এই সংকটের ধাক্কা মোকাবেলা করতে পারি। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, জাহাজের খোলের নোংরা পানি সিচে ফেলাটাই উত্তম। সমুদ্রের পানির চাপের তীব্রতা তাহলে বরং কমবে। বঙ্গোপসাগরে সুনামি হলে কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকতে উঁচু ঢেউ আছড়ে পড়বেই। ভয় না পেয়ে নিজেদের ঘরকে সুদৃঢ় করাই শ্রেয় এমন সময়ে। ’ রবীন্দ্রনাথ আরো বলেছেন, ‘দেশে জন্মালেই দেশ আপন হয় না। তাকে জানতে হয়। তাকে ভালোবাসতে হয়। ’ সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই বলছি, আসুন, যার যার অবস্থান থেকে স্বদেশকে চলমান বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকট থেকে সুরক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করি। সংকট মোকাবেলায় আমরা যে ‘রেজিলিয়েন্স’ বা টিকে থাকার সক্ষমতার প্রমাণ অতীতে দিয়েছি, এবারও তার ব্যত্যয় ঘটবে না বলে আমার বিশ্বাস।