অস্বস্তির আগুন, বাতাস, পরিবেশ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে ব্যক্তিগত জীবনে, পারিবারিক জীবনে, সামাজিক জীবনে এবং রাষ্ট্রীয় জীবনে। দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক উর্ধ্বগতি, ক্রমাগত খেলাপী ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি, কালো টাকার পরিমাণ বৃদ্ধি, ব্যাংগুলোর দূরাবস্থা, বৃদ্ধি পেয়েছে মানব পাচার, টাকা পাচার, ঘুষ লেনদেন এবং দুর্নীতির পরিমাণ। অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে হত্যা, আত্মহত্যা, খুন, ধর্ষণ, বলাৎকার, নারী নির্যাতন, শিশু নির্যাতন, শব্দ দূষণ, পরিবেশ দূষণ, নদী দখল, খাল দখল, রাষ্ট্রীয় সম্পদ এবং সম্পত্তি দখল, ধর্মান্ততা, সাম্প্রদায়ীকতা। কিছু মানুষের অতিরিক্ত লোভ, অনৈতিকতা এবং অমানবিকতার জন্য সাধারণ মানুষ আজ বড় অসহায় হয়ে পড়েছে।
হাসপাতালসহ অন্যান্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো আজ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে এবং সেই সাথে হয়ে উঠেছে বেপরোয়া। যেখানে সেবা পাওয়ার কথা সেখানে মানুষকে গুণতে হচ্ছে মাত্রারিক্ত অর্থ। এসকল প্রতিষ্ঠানগুলো জনক্যালাণের পরিবর্তে আত্মকল্যাণকে প্রতিষ্ঠিত করতে সর্বোচ্চ শক্তি এবং সামর্থ্যের আশ্রয় নিচ্ছে। যেখানে জবাবদিহিতার কোন বালাই নেই। সিন্ডিকেটদের দৌরাত্বে জীবন আজ অতিষ্ট। বিশ্বের সুখী দেশের তালিকায় আমাদের দেশের অবস্থান ১৪৩টি দেশের মধ্যে ১২৯তম। এই অবস্থানটা আমাদেরকে যে বার্তা দিচ্ছে তা থেকে আমাদেরকে বেড়িয়ে আসতে হবে দেশ এবং দেশের জনগণের জীবনমান উন্নয়ন ও উন্নতির জন্য।
ঘুষ, দুর্নীতি , লুটপাট আজ ক্যান্সারের আকার ধারণ করছে। ঘুষ ছাড়া কোন সেবা মিলে না। আর ঘুষের কারণেই দুর্নীতিবাজ, লটপাটকারীরা পার পেয়ে যাচ্ছে মনের আনন্দে। আমাদের সাধারণ জনগণের দৈনন্দিন জীবনে যতগুলো সংকট তৈরি হয়েছে তার মূলে রয়েছে ঘুষ। ঘুষ, দুর্নীতির কারণে সরকারি, আধাসরকারি এবং স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো আজ দুর্বল হয়ে পড়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো তার সেবা জনগণের চাহিদাপূরণের কথা থাকলে স্বাধীনতার ৫৪ বছরে অনেক দূরে সরে গেছে। ৫৩ বছর আগে
অস্বস্তির আগুন, বাতাস, পরিবেশ থেকে বাঁচার জন্য, মুক্তির জন্য আমাদের দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করেছিল কিন্তু আমরা লড়াই করে জিতেও ৫৪ বছরেও আমাদের অস্বস্তির আগুন, বাতাস, পরিবেশ এতোটুকু লাঘব হয়নি। আমরা পাকিস্তানি লুটেরাদের হাত মুক্তি পেয়ে ৫৪ বছর ধরে দেশীয় লুটেরাদের হাতে বন্দি হয়ে আছি। যাদের হারভাংগা শ্রমের মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতি সচল থাকে, উন্নয়ন ও উন্নতি হয় দেশের অর্থনীতি সেই তারাই বঞ্চিত পতি পদে পদে। তবে রাষ্ট্রের অনেক অবকাঠামোগত উন্নতিও হয়েছে।
আমাদের সময়ে যারা স্বাধীন হয়েছে তারা আমাদের থেকে অনেক উন্নত হয়েছে আর জীবনমান সূচকে আমরা তাদের থেকে অনেক পিছিয়ে। আমরা আমাদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য তাদের দেশে বৈধ –অবৈধ পথে কাজ করতে পাড়ি জমাই। আমাদের শিক্ষার মান এবং শিক্ষা ব্যবস্থাও তাদের থেকে অনেক নিচে অবস্থান। আমাদের দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করে বেরিয়ে যখন চাকরিতে প্রবেশ করেন তখন তারা ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ হয়ে উঠেন। কিন্তু এ রকমটাতো হওয়ার কতা ছিল না। তবে কেন এমনটা হচ্ছে তার কারণ খুঁজে বের করতে না পারলে এবং সে অনুযায়ী পরিকল্পনা করে এগুতে না পারলে অস্বস্তির আগুন, বাতাস, পরিবেশ থেকে বাঁচার কোন পথ ও উপায় আমাদের সামনে খোলা থাকবে না। আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অস্বস্তি থেকে মুক্তি চাই, সুন্দর স্বভাবিকভাবে বাঁচতে চাই, নিরাপদ জীবন এবং জীবনের নিরাপত্তা চাই।
জীবনের অস্বস্তি থেকে মুক্তির জন্য লাখো শহীদের রক্ত এবং লাখো মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমাদের প্রাণের মাতৃভূমি বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। আর একটি স্বাধীন দেশে দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক উর্ধ্বগতি, ক্রমাগত খেলাপী ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি, কালো টাকার পরিমাণ বৃদ্ধি, ব্যাংগুলোর দূরাবস্থা, বৃদ্ধি পেয়েছে মানব পাচার, টাকা পাচার, ঘুষ লেনদেন এবং দুর্নীতি, আত্মহত্যা, খুন, ধর্ষণ, বলাৎকার, নারী নির্যাতন, শিশু নির্যাতন, শব্দ দূষণ, পরিবেশ দূষণ, নদী দখল, খাল দখল, রাষ্ট্রীয় সম্পদ এবং সম্পত্তি দখল, ধর্মান্ততা, সাম্প্রদায়ীকতা ইত্যাদি শহীদের সাথে এক ধরেনর বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
স্বাভাবিক জীবনযাপন ও জীবনের স্বস্তির জন্য রাষ্ট্রের প্রতিটি সেক্টরে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, খেলাপী
ঋণ আদায় এবং পাচারকৃত টাকা ফিরিয়ে আনতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে হবে। নৈতিকতা এবং মূল্যবোধকে জাগিয়ে তুলতে শিক্ষার্থী ও যুবসমাজের মাঝে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন( ক্ষুদিরাম, ভগৎ সিং, প্রীতিলতা, কল্পনাদত্ত, মাষ্টার দা সূর্যসেন প্রমুখ ) থেকে শুরু করে স্বাধীনতাত্তোর পরবর্তী সকল গণআন্দোলনের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে ব্যাপকভাবে। ৭২-এর সংবিধানের পুঃন প্রতিষ্ঠা করতে হবে রাষ্ট্র পরিচালনা এবং জনগণের অধিকার নিশ্চিৎ করতে আইনের সঠিক এবং সর্বোচ্চ প্রয়োগ করতে হবে। ঘুষ এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ এবং প্রয়োগ করতে হবে। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভেজালবিরোধী
অভিযান চলমান রাখতে হবে। আমলা, জনপ্রতিনিধিসহ ব্যবসায়ীদের চিকিৎসাসেবা এবং তাদের সন্তানদের লেখাপড়া দেশের সরকারি হাসপাতাল ও সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পড়ালেখা নিশ্চিৎ করতে পারলেই জীবনের স্বস্তি সম্ভব। আসুন আমরা সাবাই দেশেটাকে ভালোবেসে প্রত্যেকে প্রত্যেকের দায়িত্ব ও কর্তব্যটা ঠিকমতো পালন করে দেশটাকে গড়ি তুলি নিজের সন্তানের মতো, পিতামতার মতো।