শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের দায়ের করা মামলার আইনজীবীকে ১২ কোটি টাকার বিনিময়ে সমঝোতার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেছেন, আমরা শুনেছি শ্রমিকদের আইনজীবীকে অর্থের বিনিময়ে হাত করে তাদেরকে মামলায় আপস করতে বাধ্য করা হয়েছে।
হাইকোর্ট বলেন, আদালতকে ব্যবহার করে অনিয়ম যেন না হয়ে থাকে। যদি সবকিছু আইন অনুযায়ী না হয়, তবে বিষয়টি সিরিয়াসলি দেখা হবে। আমি চাই না কোর্ট এবং আইনজীবীর সততা নিয়ে যেন কোনো প্রশ্ন ওঠে। এ সময় আদালত বিস্ময় প্রকাশ করে আরও বলেন, বাংলাদেশ কেন; উপমহাদেশের এমন কোনো আইনজীবী জন্ম নেননি যার ফি ১২ কোটি টাকা হবে। এরপর আদালত শ্রমিকরা কে কত টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন তার তালিকা দাখিল করার নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে এ সংক্রান্ত নথিও দাখিল করতে বলা হয়েছে।
শুনানির এক পর্যায়ে আদালত ড. ইউনূসের আইনজীবীকে বলেন, আপনি কত টাকা ফি নিয়েছেন? তখন আইনজীবী বলেন আমি ২০ লাখ টাকা নিয়েছি। আদালত বলেন, আপনি তো ২০ লাখ নিয়েছেন, কিন্তু চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের আইনজীবী কীভাবে ১২ কোটি টাকা নেন। এ সময় আইনজীবীরা আদালতকে জানান, চাকরিচ্যুত শ্রমিকরা এখন পর্যন্ত ৩৮০ কোটি টাকা পেয়েছেন। বাকি ৮ শ্রমিকদের মধ্যে ৪ জন দেশের বাইরে থাকায় তাদের টাকা পরিশোধ করা হয়নি। আর ৪ জন শ্রমিক মারা যাওয়ায় তাদের ওয়ারিশ জটিলতা নিরসন না হওয়ায় অর্থ পরিশোধ সম্ভব হয়নি।
আদালতে গ্রামীণ টেলিকমের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান। শ্রমিকদের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলী। পরে অভিযোগ ওঠা শ্রমিকদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলী গণমাধ্যমকে বলেন, ১২ কোটি টাকা নেওয়ার খবর একটা গুজব। অখ্যাত নিউজপোর্টাল এটা কোনো তথ্য ছাড়া নিউজ ছেপেছে।
এর আগে গত ৭ ফেব্রুয়ারি ড. ইউনূসের মালিকানাধীন গ্রামীণ টেলিকমের অবসায়ন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়। গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের পক্ষে এ আবেদন দায়ের করা হয়।
২০২০ সালের বিভিন্ন সময়ে গ্রামীণ টেলিকমে ছাঁটাইকে কেন্দ্র করে শ্রমিক অসন্তোষ চলে আসছে। শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন (বি-২১৯৪) সিবিএর সঙ্গে আলোচনা না করেই এক নোটিশে ৯৯ কর্মীকে ছাঁটাই করে গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃপক্ষ। গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আশরাফুল হাসান স্বাক্ষরিত এক নোটিশের মাধ্যমে এ ছাঁটাই করা হয়। এরপর সেই নোটিশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেন ২৮ জন কর্মী। ওই ছাঁটাইকে কেন্দ্র করে ড. ইউনূসকে তলব করেছিলেন হাইকোর্ট। এরপর ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল শ্রমিকদের পুনর্বহালের নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত।
গত ২৩ মে গ্রামীণ টেলিকমের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আইনজীবী ইউসুফ আলী বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে করা সব মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন গ্রামীণ টেলিকমের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। লভ্যাংশের অর্থ প্রদানের দাবি নিয়ে করা ১১০টি মামলার সবকটিই সমঝোতার পর আদালত থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। ১১০টি মামলার মধ্যে ১০৪টি শ্রম আদালতে ও ৬টি উচ্চ আদালতে করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, লভ্যাংশের পাওনা অর্থ দাবি নিয়ে সম্প্রতি গ্রামীণ টেলিকমের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের একটি সমঝোতা হয়। সমঝোতা অনুযায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মামলা প্রত্যাহার করে নিলে মালিকপক্ষ আইন অনুযায়ী তাদের সমুদয় পাওনা পরিশোধ করবে। ২০১০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১৭৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সর্বমোট পাওনা টাকার পরিমাণ আনুমানিক ৪৩৭ কোটি টাকা। এ অনুযায়ী মামলাগুলো না চালানোর কথা আদালতে বলা হয়। উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে সব মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।
গ্রামীণ টেলিকমের অবসায়ন চেয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের করা অবসায়ন আবেদন না চালানোর কথা হাইকোর্টের কোম্পানি বেঞ্চে জানানোর পরিপ্রেক্ষিতে ২৩ মে তা খারিজ হয়। এ ছাড়া অপর একটি দ্বৈত বেঞ্চে থাকা পৃথক পাঁচটি আবেদনও খারিজ হয়।