বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করে বলেছেন, বিএনপি সরকারের পদত্যাগ ও তফসিল প্রত্যাখান করে রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে রয়েছে। এ অবস্থায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ছত্রছায়ায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা অগ্নিসন্ত্রাস ও সহিংসতা করছে। বিএনপি এর তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানায়। পাশাপাশি প্রতিটি সন্ত্রাসী ঘটনার সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।
মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) বিকালে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
রিজভী বলেন, রাজধানীসহ সারা দেশে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থার মাঝেও বিরোধী দলের কোনো সদস্য কোনো প্রকার সহিংসতা বা অগ্নিসংযোগের কাজে লিপ্ত বলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যে অভিযোগ করছে তা হাস্যকর। বরং আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা অগ্নিসন্ত্রাস ও পরিকল্পিত নাশকতা করছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদে জনগণের কাছে স্পষ্ট হয়েছে। বিএনপির আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করবার জন্য, রাষ্ট্রযন্ত্রকে অপব্যবহার করে, আওয়ামী লীগ যে অগ্নিসন্ত্রাস ও সহিংসতা করছে, বিএনপি তার তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানায়। আমরা প্রতিটি সন্ত্রাসী ঘটনার সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কতিপয় চিহ্নিত দলদাস সদস্য এবং ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী কর্মীদের যে যৌথ ধ্বংসযজ্ঞ দেশজুড়ে পরিলক্ষিত হচ্ছে। নিজেরাই অগ্নিসন্ত্রাসের মাধ্যমে একটি পরিকল্পিত অরাজকতা সৃষ্টি করছে জনবিচ্ছিন্ন সরকার। উদ্দেশ্য হলো, বিদ্যমান পরিস্থিতির ফায়দা লুটে, বিএনপি তথা গণতন্ত্রের পক্ষে শক্তির উপর হামলা-মামলা ও গণগ্রেপ্তার অব্যাহত রাখা।
রিজভী বলেন, প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, অধিকাংশ ঘটনা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতে বা বড় পুলিশ চেকপোস্টের কাছাকাছি ঘটছে। যেমন, গত ৬ নভেম্বর চট্টগ্রামের চাতরী চৌমহনী বাজারের ট্রাফিক পুলিশ বক্সের ঠিক পাশে দাঁড়ানো একটি বাসে অজ্ঞাতনামা কয়েকজন তথা আওয়ামী লীগ অগ্নিসংযোগ করে। গত ৩১ অক্টোবর আশেপাশে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন থাকা সত্বেও, ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের কাছে একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। ভাইরাল ছবিতে দেখা গেছে যে, ঢাকার বাংলামোটর মোড়ে পুলিশ বক্সের সামনে একটি গণপরিবহন জ্বলছে, যাকে ঘিরে অনেক পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে।
তিনি বলেন, গত ৬ নভেম্বর ফেনীতে নুরুল উদ্দিন টিপু নামে স্থানীয় এক যুবলীগ নেতা চট্টগ্রামে চিনিকলের একটি ট্রাকে আগুন দেওয়ার ঘটনায় হাতেনাতে ধরা পড়ে। গত ১৪ নভেম্বর নাটোরে তাশরীক জামান রিফাত নামে একজন আওয়ামী লীগ কর্মীকে মশাল ও মুখোশসহ পুলিশ আটক করে, সেইসঙ্গে তার পরিত্যক্ত ঘর থেকে আরও ৬টি মশাল, ৩টি মুখোশ ও একটি মোটরসাইকেল জব্দ করে। পুলিশ প্রথমে তাকে বিএনপির সঙ্গে সম্পৃক্ততার সন্দেহে গ্রেপ্তার করলেও, পরে আওয়ামী লীগের কর্মী নিশ্চিত হয়ে সঙ্গে সঙ্গে ছেড়ে দেয়।
রিজভী বলেন, বিগত দিনে শেরাটন হোটেলের সামনে গান পাউডার মেরে বাসে আগুন দেওয়াসহ এমন অজস্র দৃষ্টান্ত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রয়েছে। আওয়ামী লীগ তাদের বিদ্বেষপূর্ণ-বিভাজিত রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য সহিংসতাকে ব্যবহার করেছে। মানুষ হত্যা করে, জনগণের সহায়-সম্বল ধ্বংস করে, ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সেই দায় বিরোধী দলের ওপর চাপিয়ে, মিথ্যা মামলায় ভিন্ন দল ও মতের ওপর দমন-নিপীড়ন চালাবার যে বীভৎস রাজনীতি আওয়ামী লীগ লালন করে, আমরা তাকে ঘৃণাভরে ধিক্কার জানাই।
তিনি দাবি করেন, প্রাপ্ত তথ্যনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ৪৭৫ জনের অধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলা হয়েছে ১৫ টি, আসামি করা হয়েছে ১৭২০ জনের অধিক নেতাকর্মী (এজাহার নামীয়সহ অজ্ঞাত) এবং আহত হয়েছেন ৩৫ জনের অধিক নেতা-কর্মী।