গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই ১৯৪৯ সালের ২৩শে জুন ঢাকার রোজ গার্ডেনে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি, মৌলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, সামসুল হক ও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামীলগের জন্ম হয়েছিল। জন্মলগ্ন থেকেই দলটি ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে বাংলার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করেছে। আওয়ামীলীগের নেতৃত্বেই ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। আওয়ামীলীগই দেশের মানুষকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করেছে। এমন্তব্য করেছেন আওয়ামীলীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। ২৩জুন ২০২৫ সোমবার পূর্বলন্ডনের রয়েল রিজেন্সী হলে যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগ আয়োজিত দলের ৭৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ভ্যার্চুয়ালী যুক্ত হয়ে শেখ হাসিনা আরো বলেন জঙ্গি-জামাতের সহযোগীতায় অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী ইউনুসের জুলুম নিপিড়নের শিকার বাংলার ১৮কোটি মানুষ। স্বাধীনতা বিরোধী দখলদার ইউনুস ৩০লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মুছে ফেলতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। বার বার আওয়ামীলীগের উপর আঘাত এসেছে, আদর্শকে ধারন করেই আওয়ামীলীগ তা কাটিয়ে উঠেছে। অন্যায়কারী যত শক্তিশালীই হোকনা কেন ঠিকে থাকতে পারবেনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষেরা তা সহ্য করবেনা। তিনি দলের নেতা কর্মীদের মনোবল শক্ত রেখে কাজ করে যাবার আহবান জানান।
২০২৪ যখন বাংলাদেশ ধ্বংস হলো (অধ্যায় এক- পর্ব ৩)
তিনি বলেন ১৯৪৭ সালে পূর্ব বঙ্গের মানুষের আকাঙ্খা পাকিস্তানের জন্মের পরপরই হোঁচট খায়। পাকিস্তান সৃষ্টির আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী কিছু জাতীয়তাবাদী তরুণ রাজনীতিক ঐ সময় উপলব্ধি করেন- বাংলার গণমানুষের রাজনীতিতে ক্ষমতাসীন মুসলিমলীগ আগ্রহী নয়। পূর্ববঙ্গীয় মুসলিম লীগের প্রগতিশীল ধারার এই তরুণরা ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর অনুসারী। আসাম প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সভাপতি বর্ষীয়ান নেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে সভাপতি ও আরেক তরুণ নেতা শামসুল হককে সাধারণ সম্পাদক করে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার রোজ গার্ডেনে আওয়ামী লীগের প্রথম কমিটি গঠিত হয়। যেখানে কারাবন্দী অবস্থায় শেখ মুজিবুর রহমান যুগ্ম সম্পাদকের পদ লাভ করেন। আজকের এই দিনে আমি শ্রদ্ধা জানাই আওয়ামী লীগের অন্যতম স্বপ্নদ্রষ্টা বাঙালি জাতীয়তাবাদী রাজনীতির প্রবাদপুরুষ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
শ্রদ্ধা নিবেদন করছি, কৃষক-জনতার নেতা শেরেবাংলা একে ফজলুল হক, গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরোওয়ার্দী ও মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে। অবিভক্ত বাংলার নেতা দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, নেতাজী সুভাষ বোসসহ এই মূলধারার নেতাদের উত্তরাধিকার বহনকারী বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি ছিল জন আকাঙক্ষারই ভাষা। বাঙালির মিলিত আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্নই আওয়ামী লীগের আদর্শ।
১৯৫৩ সালে বঙ্গবন্ধু সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হবার পর অসাম্প্রদায়িক সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগ অপ্রতিরোধ্য গতিতে বিস্তৃত হয়। দ্বিজাতিতত্ত্বের বিভেদ পেরিয়ে আওয়ামী লীগের হাতেই জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের বিকাশ ঘটে।
কোন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে কিংস পার্টি হিসেবে আওয়ামী লীগের জন্ম হয়নি। তৎকালীন ক্ষমতাসীনদের বিরোধিতা করে জন্ম নেওয়া এই দল তাই কখনো ক্ষমতার তোয়াক্কা না করে মানুষের অধিকার আদায়ে যেমন সোচ্চার, তেমনি জনকল্যানেও সর্বাগ্রে। ৭৬ বছরের প্রাজ্ঞ এই দলের সবচেয়ে বড় অর্জন- জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। বাংলাদেশ আর আওয়ামী লীগ সমার্থক। বাংলাদেশের মাটি থেকে কেউ আওয়ামী লীগকে মুছে ফেলতে পারবে না।
জাতির পিতার কন্যা হিসেবে, তাঁর আদর্শ ধারণ করে এই মহান সংগঠনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ পুনর্গঠন, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ, দারিদ্র্য হ্রাস, প্রযুক্তি ও অবকাঠামোতে উন্নয়নের পথ রচনা করেছি।
বেদনার সঙ্গে বলতে হয়, আজ আমরা গভীর সংকট পার করছি। একটি অসাংবিধানিক সরকার অন্যায়ভাবে আমাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে, যেমনটি ১৯৭১ সালে ইয়াহিয়া খানও করেছিল। আমাদের লক্ষাধিক নেতাকর্মীকে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করেছে, লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলায় হয়রানি করছে। এই দমন-পীড়ন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নয়, এটি জনগণের বিরুদ্ধে, গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে এক গভীর ষড়যন্ত্র। এই দুঃসময়ে আমি দলের নেতাকর্মী এবং শান্তিপ্রিয় জনগণকে বলবো- সাহস হারাবেন না। অতীতের মতো এবারও বাংলাদেশকে রাহুমুক্ত করবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধুর সাহস, ধৈর্য ও বিচক্ষণতার শিক্ষাই আমাদের যুদ্ধ জয়ের অভ্যস্ত।
যুক্তরাজ্য আওয়ামীলগের সহসভাপতি জালাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারী সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত প্রতিষ্টা বার্ষিকীর আলোচনা সভায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রহমান, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, শফিকুর রহমান চৌধুরী, স.আ. ম রেজাউল করিম, সাবেক এমপি হাবিবুর রহমান হাবিব, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জান চৌধুরী।
এছাড়াও যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা বক্তব্য রাখেন। সভার শুরুতে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন তেলাওত করেন মাওলানা মাহমুদ আলী লংলী, এছাড়া গীতা, ত্রিপিটক ও বাইবেল পাঠ করা হয়। এর পর উপস্থিত সকলে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরেবশেন করেন।
লন্ডন সময় বিকেল ৫ঘটিকায় শুরু হওয়া এই সভা শেষ হয় সন্ধ্যা আটটায়। যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহর থেকে শত শত নেতা কর্মী এই সমাবেশে যোগ দেন। দুই হাজার মানুষের ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন হলে তিল ধারনের ঠাই ছিলনা। অনেকেই হলের ভেতরে জায়গা না পেয়ে বাইরে অপেক্ষা করেন। দলের সভাপতি শেখ হাসিনা দীর্ঘ ১৮মিনিটের বক্তব্যে নেতা কর্মীদের হতাশ না হয়ে যার যার অবস্থান থেকে কাজ করার আহবান জনিয়ে তার বক্তব্য শেষ করেন।