আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বর্তমান অনেক সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাচ্ছেন না! ৩০০ আসনের মধ্যে ৭২ আসনে দল মনোনীত একক প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দলের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে জাতীয় সংসদের ১ থেকে ৭২ পর্যন্ত সংসদীয় আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত হয়। এরমধ্যে ১২ জন বর্তমান সংসদ সদস্য বাদ পড়েছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। তবে কারা বাদ পড়েছেন সে ব্যাপারে মনোনয়ন বোর্ডের কোন সদস্য মুখ খুলছেন না। আওয়ামী লীগের হয়ে কারা ভোটের মাঠে নামবেন তা জানা যাবে আগামীকাল শনিবার। ওই দিন মনোয়নপ্রাপ্তদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের নির্বাচনে ৫৬ জন সংসদ সদস্য-মন্ত্রী দলের মনোনয়ন পাননি। এর আগে ২০১৪ সালের নির্বাচনে ৪৯ জন সংসদ সদস্য-মন্ত্রীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি।
সকাল ১০টা ১০ মিনিটে তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠক শুরু হয়। দুপুর পৌনে ২টা পর্যন্ত চলে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ শুক্রবার সকাল ১০টা পর্যন্ত বৈঠক মূলতবি করা হয়েছে।
গতকালের বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, গতকাল রংপুরের ৩৩ ও রাজশাহীর ৩৯টি মিলিয়ে মোট ৭২টি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। আমরা সব আসনে মনোনয়ন চূড়ান্ত না হওয়ার পর্যন্ত ফল প্রকাশ করব না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আজকে আমাদের মনোনয়ন বোর্ডের যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তার মধ্যে রাজনীতিকের বাইরে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে আমার জানা নেই। বর্তমান সংসদ সদস্য কয়জন বাদ পড়েছে সেই সংখ্যা এই মুহূর্তে আমি বলতে পারছি না, তবে বেশ কয়েকজন বাদ পড়েছে। প্রার্থী বাছাই ক্ষেত্রে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যদেরই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।’
বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘আগে আমরা দেখি কারা বিদ্রোহ করে, তারপর সিদ্ধান্ত নেব।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচন ঘিরে সারা দেশে একটি উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজমান। জোট হবে বিভিন্নভাবে, কার সঙ্গে কার জোট হবে, কোথায় গিয়ে ঠেকবে বলা মুশকিল। জোট হতেও পারে নির্বাচনের আগে, সময় আছে। কাজেই তালিকাও আসতে পারে। এমন হতে পারে আপনিও ভাবছেন না, আমিও ভাবছি না। এমনও কিছু হতে পারে যা কেউ ভাবছে না।’
বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ওবায়দুল কাদের, মোশাররফ হোসেন, কাজী জাফর উল্লাহ, আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ, রাশিদুল আলম, রমেশ চন্দ্র সেন, ডা. দীপু মনি উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র জানায়, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। দলটি মনে করে, টানা তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় থাকায় দলের অনেক সংসদ সদস্যই দলীয় শৃঙ্খলার কথা ভুলে গেছেন। তাদের অনেকেই স্থানীয় পর্যায়ে দাম্ভিকতা দেখান। তাদের ওপর ক্ষিপ্ত দলের হাইকমান্ড। অনেকের আমলনামা দলীয় প্রধানের কাছে এসেছে। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় ভিন্নমতাবলম্বীদের পৃষ্ঠপোষকতা, ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখা এবং দলীয় নেতাদের উপেক্ষা করে নিজের গ্রুপের পক্ষে অবস্থান নেওয়া তাদের বিতর্কিত হওয়ার মূল কারণ। তাদের এবার দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে না। বিতর্কিতদের পরিবর্তে তরুণ, জনপ্রিয় ও নিবেদিতপ্রাণ নেতারা দলীয় টিকিট পাবেন। দলের সেবা করার দীর্ঘ ইতিহাস থাকা সাবেক সংসদ সদস্যরাও মনোনয়ন পাচ্ছেন।
সূত্রগুলো দাবি করেছে, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কোন কোন নেতার জয়ের সম্ভাবনা বেশি, তা জানতে একাধিক সংস্থা দলের তৃণমূল ও জনগণের ওপর বেশ কয়েকটি জরিপ চালায়। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় ৯০ জন বর্তমান সংসদ সদস্য বিতর্কিতের তালিকায় রয়েছেন। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, আওয়ামী লীগের অনেক সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও দলীয় কমিটিতে নেতা মনোনয়নে স্বজনপ্রীতি ও পক্ষপাতিত্ব, টেন্ডারবাজি, টাকার বিনিময়ে মানুষকে চাকরি দেওয়া এবং দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল উসেক দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১০, মাগুরা-১ ও মাগুরা-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম নিয়ে নতুন করে আলোচনায় এসেছেন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। এবার তিনি দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গতকাল সন্ধ্যায় ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তবে এই বৈঠক নিয়ে আওয়ামী লীগ কিংবা সাকিব আল হাসানের পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি। জানা গেছে, সাকিব আল হাসানকে ঢাকা-১০ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
দলীয় সূত্র জানায়, আজ সকালে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের সংসদীয় আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। দুপুরের খাবারের বিরতির পর বিকালে ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগ এবং আগামীকাল শনিবার সকালে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের দল মনোনীত একক প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।