পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে আজ শনিবার বরিশাল বিভাগের সকল সেতুর টোল মওকুফ করা হয়েছে। বরিশালসহ খুলনা ও কয়েকটি জেলার মোট ১৪ টি সেতুর টোল মওকুফ করে আদেশ জারি জারি করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। এরমধ্যে বরিশাল জোনের ৯ টি সেতুর টোল মওকুফ করা হয়েছে। এর আগে ৩ সেতুর টোল মওকুফ করেছিল কর্তৃপক্ষ।
শুধুমাত্র ২৫ জুনের জন্য এ টোল মওকুফ করা হবে।
বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের উপ-সচিব ফাহমিদা হক খান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন শুধুমাত্র ২৫ জুন খুলনা জোনের আওতাধীন খান জাহান আলী (রূপসা) সেতু ও দড়াটানা সেতু, বরিশাল জোনের আওতাধীন দোয়ারিকা-শিকারপুর সেতু, দপদপিয়া সেতু, বিভিন্ন রুটের ৬০টি লঞ্চ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। লঞ্চ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য ও বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু এ তথ্য জানিয়েছেন। বরিশাল বিভাগ থেকে মোট ১ লাখ নেতাকর্মী শিবচরের জনসভায় যাবেন বলে তিনি জানান।
এদিকে, লঞ্চ রিজার্ভের কারণে ঢাকা-বরিশালসহ বেশকিছু রুটে ২৪ ও ২৫ জুন রাজধানীর সঙ্গে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকবে।
বরিশাল নৌবন্দরের ট্রাফিক পরিদর্শক কবির হোসেন বলেন, ঢাকা-বরিশাল রুটের ৯টি লঞ্চ এ পর্যন্ত রিজার্ভ করা হয়েছে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য। আরও লঞ্চ রিজার্ভ হতে পারে।
বরিশাল বন্দর কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, রিজার্ভ লঞ্চ ২৪ জুন রাত ১০টায় বরিশাল থেকে সেতুর দিকে যাত্রা করবে। ২৫ জুন রাতে ফিরবে। লঞ্চ রিজার্ভের কারণে ২৪ ও ২৫ জুন ঢাকা-বরিশাল রুটে লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক থাকবে কিনা, সে বিষয়ে নিশ্চিত নন তিনি।
বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা লঞ্চ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য সাইদুর রহমান রিন্টু জানিয়েছেন, মহানগরের নেতাকর্মীদের জন্য ১০টি লঞ্চ তাঁরা রিজার্ভ করেছেন। এ ছাড়া প্রত্যেক উপজেলা থেকে একটি করে লঞ্চ নেতাকর্মীদের নিয়ে সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যাবে।
বিআইডব্লিউটিএর পটুয়াখালী বন্দর কর্মকর্তা মামুন অর রশিদ জানান, ঢাকা-পটুয়াখালী রুটে মোট লঞ্চ ৯টি। সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠানের জন্য তিনটি লঞ্চ রিজার্ভে যাচ্ছে। এ রুটে দৈনিক তিনটি করে লঞ্চ চলাচল করলেও ২৩ ও ২৫ জুন একটি করে লঞ্চ সার্ভিসে থাকবে জানান বন্দর কর্মকর্তা।
ঝালকাঠি প্রতিনিধি জানান, ঢাকা-ঝালকাঠি রুটে প্রতিদিন দুই প্রান্ত থেকে একটি করে লঞ্চ চলে। সেতু উদ্বোধনের জন্য দুটি লঞ্চই রিজার্ভ করা হয়েছে। যে কারণে ২৪ ও ২৫ ঢাকা-ঝালকাঠি রুটের লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকবে বলে নিশ্চিত করেছেন সুন্দরবন-১২ লঞ্চের সুপারভাইজার আবু হানিফ।
পিরোজপুর প্রতিনিধি জানান, পিরোজপুর থেকে ছয়টি বড় দোতলা লঞ্চে ১৫ হাজার মানুষ যাবেন পদ্মাপাড়ে। জেলা পরিষদের প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন মহারাজের নেতৃত্বে দলীয় নেতাকর্মী, জনপ্রতিনিধি, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ সমাবেশে যোগ দেবেন।
সেতু উদ্বোধন ঘিরে বর্ণিল সাজে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে সিরাজদীখান (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন ঘিরে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে। শোভা পাচ্ছে ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ড।
সরেজমিন দেখা গেছে, ঢাকার পোস্তগোলা থেকে শুরু করে পদ্মা সেতু পর্যন্ত ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের দুই পাশে নেতাকর্মীদের বরণ করে নিতে এবং প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার সাঁটিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা। সড়কের মোড়ে মোড়ে তৈরি হয়েছে তোরণ। এই প্রচারে পিছিয়ে নেই বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও। লৌহজং, শ্রীনগর ও সিরাজদীখান উপজেলার শহর ও আশপাশের এলাকায়ও শোভা পাচ্ছে এমন তোরণ, বিলবোর্ড ও ব্যানার। এসব ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ডে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সঙ্গে পদ্মা সেতুসহ বর্তমান সরকারের উন্নয়ন অগ্রগতিসহ দেশের উন্নয়নের বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
সিরাজদীখান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বঙ্গবন্ধুর মতো ভিশনারি লিডার। তিনি পদ্মা সেতু শুধু স্বপ্নেই দেখেননি, বাস্তবেও দেখতে চেয়েছিলেন। তাই নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু তৈরি করে তিনি শুধু ইতিহাসই সৃষ্টি করেননি, বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্নও পূরণ করেছেন।