যুক্তরাষ্ট্রের আলোচিত মধ্যবর্তী নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয় মঙ্গলবার। বাংলাদেশ সময় গভীর রাত পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলার কথা।
এই নির্বাচনের ফলাফল দেশটির নিকট ভবিষ্যতের গতি-প্রকৃতি নির্ধারণ করবে বলে মত বিশ্লেষকদের। কেননা আইনসভা কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে থাকবে, তা নির্ভর করবে এই নির্বাচনের ওপর।এবারের ভোটে জয়-পরাজয় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তাঁর পূর্বসূরি রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ঠিক করে দিতে পারে।
মধ্যবর্তী নির্বাচনে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ তথা প্রতিনিধি পরিষদের সব কটি (৪৩৫) এবং উচ্চকক্ষ বা সিনেটের ১০০ আসনের ৩৫টিতে ভোটগ্রহণ হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের গভর্নর পদেও নির্বাচন হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি দুই বছর পর পর নিম্নকক্ষের সব আসনে এবং সিনেটের এক-তৃতীয়াংশ আসনে ভোটগ্রহণ হয়।
নিম্নকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে যেকোনো দলকে পেতে হবে ২১৮ আসন। গত দুই বছরের নিম্নকক্ষে ডেমোক্রেটিকদের আসন সংখ্যা ছিল ২২২ আর রিপাবলিকানদের ছিল ২১৩। অন্যদিকে উচ্চকক্ষে বর্তমানে ১০০ আসনের মধ্যে দুই দলের আসন সংখ্যা সমান সমান। তবে এই অবস্থায় সিনেটে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের ভোটের কারণে এগিয়ে আছে ডেমোক্রেটিকরা।
মধ্যবর্তী নির্বাচনে তাই ডেমোক্রেটিক দল একটি আসন পেলেই সিনেটের দখল যাবে রিপাবলিকানদের হাতে। তাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে পেনসিলভানিয়া, জর্জিয়া ও নেভাডার মতো ‘সুইং স্টেট’ বা দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলো। এ অঙ্গরাজ্যগুলোতে একেক নির্বাচনে একেক দল জয় পায়। অর্থাৎ এখানকার বেশির ভাগ ভোটাররা কোনো বিশেষ দলের জোরালো সমর্থক নয়।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্টের চার বছর মেয়াদের সময়ের মাঝামাঝি সময়ে এই ভোট হলে তাকে মধ্যবর্তী নির্বাচন বলা হয়। এরই মধ্যে চার কোটির বেশি ভোটার ডাকযোগে বা অনলাইনে নিজেদের ভোট দিয়েছেন। বাকিরা কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেন।
রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে দুই বছর আগে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন। দুই বছরে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, গর্ভপাত আইন, সহিংসতা বৃদ্ধি, অস্ত্র আইন ও পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে সমালোচনায় মুখে পড়েছে বর্তমান প্রশাসন। এমন পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন জরিপের ফল বলছে, নিম্নকক্ষের নিয়ন্ত্রণ রিপাবলিকানদের হাতে যাবে। আর উচ্চকক্ষের ভোটে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।
কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ হারালে আগামী দুই বছর বাইডেনের জন্য কঠিন হতে চলেছে। কারণ নিম্নকক্ষেই কোনো আইনের সূচনা হয়। আর সিনেট সে বিল বাতিল করে বা অনুমোদন দিয়ে প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠায়। কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ না থাকলে বাইডেন আইন প্রণয়নে সমস্যায় পড়বেন। এমনকি বৈদেশিক নীতিও প্রভাবিত হতে পারে। এক বক্তব্যে বাইডেন নিজেই বলেছেন, ‘এই নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্রের আগামী ২০ বছরের গতি-প্রকৃতি নির্ধারণ করে দেবে। ’
প্রেসিডেন্টের কোনো বিষয়ে তদন্তের অধিকার সিনেটের হাতে থাকে। সিনেটের নিয়ন্ত্রণ রিপাবলিকানদের হাতে থাকার অর্থ, ২০২১ সালে কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল হিলে ট্রাম্প সমর্থকদের হামলায় সাবেক প্রেসিডেন্টের জড়িত থাকার বিষয়ের তদন্ত মাঝপথেই থমকে যেতে পারে।
নির্বাচনকে ঘিরে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়েছে। কারণ ডেমোক্রেটিকরা জানে, নিজেদের ঘাঁটিও এবার হাতছাড়া হতে পারে। প্রচারণায় রিপাবলিকানদের ‘চরমপন্থী’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে গেছে ডেমোক্রেটিকরা। গণতন্ত্র রক্ষার ভোট বলেও ভোটারদের নিজেদের পক্ষে আনার চেষ্টা করেছে। অন্যদিকে রিপাবলিকানরা মুদ্রাস্ফীতি, গর্ভপাত ও অস্ত্র আইনের মতো বিষয় সামনে এনেছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বছর ছাড়া অন্য যেকোনো সময়ের নির্বাচনের ব্যয়ের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে এবারের ভোট। মধ্যবর্তী নির্বাচন ঘিরে ব্যয় হয়েছে প্রায় এক হাজার ৭০০ কোটি ডলার।
এই নির্বাচনে ডেমোক্রেটিকরা হারলে সবচেয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে ইউক্রেনের ওপর। যুদ্ধের প্রথম থেকেই কিয়েভে ব্যাপক সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে ওয়াশিংটন। অর্থনৈতিক টানাপড়েনের কারণে এ নিয়ে দেশটিতে চাপা অসন্তোষও আছে। কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ রিপাবলিকানদের হাতে গেলে বিদেশের যুদ্ধে অর্থায়ন কিংবা সামরিক সহায়তা কমানো হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ছাড়া ইরান প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হতে পারে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
মধ্যবর্তী নির্বাচনের সঙ্গে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বিষয়ও যুক্ত। ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্ট কোন দল থেকে আসতে পারে তার পূর্বাভাস পাওয়া যাবে এই ভোটে। ডেমোক্রেটিকরা হারের অর্থ বাইডেন দলটি থেকে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী না-ও হতে পারেন। অন্যদিকে রিপাবলিকানদের জন্য এই নির্বাচন সুবর্ণ সুযোগ। হোয়াইট হাউসে ফেরার স্বপ্ন দেখা ট্রাম্পকে এবারের অনেক সমাবেশে দেখা গেছে। আরেক তারকা রিপাবলিকান প্রার্থী রন ডিসান্টিসও ফ্লোরিডায় বড় সমাবেশ করে নিজের উপস্থিতি জানান দিয়েছেন। তাই পুরো বিশ্বের নজর এখন এই নির্বাচনের দিকে।