ভারতের মাটিতে চলতি বিশ্বকাপ দারুণ ভাবে কাটাচ্ছে যুদ্ধবিধস্ত দেশ আফগানিস্তান। চলতি বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ছয়টি ম্যাচ খেলে তিনটি জয় এবং তিনটি হারে ৬ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের ৬ নম্বরে অবস্থান করছে আফগানিস্তান। নিজেদের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের কাছে ৬ উইকেটে হারের পর ঘুরে দাঁড়ায় আফগানিস্তান। নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হারিয়ে এ স্বপ্নের যাত্রা শুরু করেন আফগানরা। এরপর নিজেদের পঞ্চম ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়ে তো সব আসরের বড় দলদের খানিকটা চোখ রাঙানি দিয়ে দেন মুজিব-রশিদরা। পরের ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকেও ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়ে সেমিফাইনালের দৌড়ে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছেন তারা।
অপরদিকে এক যুগ পরে বিশ্বকাপ খেলতে এসে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে আসরে উড়তে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে অঘটনের জন্ম দেয় নেদারল্যান্ডস। এছাড়া নিজেদের সর্বশেষ ম্যাচে ইডেন গার্ডেন্সে বাংলাদেশের বিপক্ষে আগে ব্যাট করতে মেনে ২২৯ রান করে নেদারল্যান্ডস। জবাবে ব্যাট করতে মেনে বাংলাদেশ ১৪২ রানে অলআউট হয়। ফলে ৮৭ রানের বিশাল জয় পান ডাচরা। বাংলাদেশকে হারিয়ে ফুরফুরে মেজাজে আছে নেদারল্যান্ডস। এখন পর্যন্ত চলতি বিশ্বকাপে ছয় ম্যাচ খেলে চার হার এবং দুই জয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের ৮ নম্বরে অবস্থান করছে নেদারল্যান্ডস। সমীকরণের হিসেবে এখনো সেমিফাইনালের খেলার আসা বেঁচে আছে আফগানিস্তান এবং নেদারল্যান্ডসের। তাই বলা যায় লখনৌয়ের শুক্রবারের লড়াইটা দুই দলের জন্য এই মহাগুরুত্বপূর্ণ। ম্যাচটি আজ বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা ৩০মিনিটে একানা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে।
চলমান বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত এই মাঠে চারটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। আসরের প্রথম খেলায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টস জিতে আগে ব্যাট করে ৩১১ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকা। যা চলতি বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত এই মাঠের সর্বোচ্চ রান। সেই ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ১৩৪ রানের বিশাল ব্যবধানে হারে অস্ট্রেলিয়া। এছাড়া আসরে এর আগে এই মাঠে খেলতে নেমেছিলেন ডাচরা। সেই ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাঠে নেমে পাঁচ উইকেটে হেরেছিলেন তারা। এই ম্যাচে সর্বশেষ ম্যাচে মুখোমুখি হয় স্বাগতিক ভারত এবং গত আসরের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। সেই ম্যাচে আগে ব্যাট করতে নেমে স্কোর বোর্ডে ২২৯ রান তোলে স্বাগতিক ভারত। জবাবে ব্যাট করতে মেনে মাত্র ১২৯ রান অলআউট হয় ইংল্যান্ড। চলতি আসরে যা এই মাঠে সর্বনিম্ন রান।
তবে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের মতে, একানা স্টেডিয়ামের পিচে সুবিধা পাবেন ব্যাটাররাই। কিন্তু স্পিনাররাও এখানে বেশ সাহায্য পাবেন। অর্থাত্ ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারেন আফগান স্পিন ইউনিট। রশিদ-মুজিব-নবী-নুরদের ঘূর্ণিতে অল্পতেই আটকে যেতে পারেন ডাচরা। এছাড়া ৫০ হাজার ধারণ ক্ষমতার এই স্টেডিয়ামে সমর্থকদের গর্জন থাকতে পারে আফগানদের পক্ষেই। আগের ম্যাচগুলোতেও ভারতীয়দের দেখা গিয়েছে তাদের জন্য গ্যালারি থেকে গলা ফাটাতে। অবশ্য এর কারণও রয়েছে দলটির বেশ কিছু ক্রিকেটার আইপিএলের নিয়মিত মুখ।
এদিকে এখন পর্যন্ত এক দিনের ক্রিকেটে মোট ৯ বার মুখোমুখি হয় আফগানিস্তান এবং নেদারল্যান্ডস। সেই ম্যাচগুলোতে জয়ের পাল্লা ভারী আফগানিস্তানের। আফগানদের সাত জয়ের বিপরীতে নেদারল্যান্ডেস জয় দুইটি। আজকের আগে ওয়ানডে ফরম্যাটে এই দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল গেল বছরের (২০২২) শুরুতে। কাতারে দ্বিপাক্ষিক ওয়ানডে সিরিজ খেলে তারা যেখানে ডাচদের হোয়াইটওয়াশ করেন আফগনারা। তবে বিশ্বকাপে এই বারই প্রথম মুখোমুখি হবে এই দুই দল। কারণ নেদারল্যান্ডস সব শেষ বিশ্বকাপ খেলেছে ২০১১ সালে আর আফগানদের বিশ্বকাপে অভিষেকই হয়েছে ২০১৫ সালে। মধ্যে দুই আসরে ডাচরা খেলেননি আর সেই সময়ই এসেছে রশিদরা। তাই বিশ্বকাপে কোন দল এগিয়ে যায়, সেইটাই এখন দেখার বিষয়। তবে বলাই যায় যে এই ম্যাচটিতে ফেবারিট হিসেবেই নামবে আফগানিস্তান।