ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাবে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয়েছে।জ্বালানি থেকে শুরু করে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে।বেড়েছে প্রতিটি দেশের আমদানি ব্যয়।সেই সঙ্গে দেশে দেশে মূল্যস্ফীতি চরম আকার ধারণ করছে।বাংলাদেশেও মূল্যস্ফীতি গত ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে।কিন্তু আমদানি বাড়লেও সরকারের শুল্ক আহরণ আগের মতোই রয়েছে।সংশ্লিষ্টরা বলছেন,দেশে যেসব পণ্যের আমদানি বেড়েছে সেগুলোর সিংহভাগ ডিউটি ফ্রি বা কম শুল্কে এসেছে।যে কারণে কাস্টমসের শুল্ক আদায়ে আহামরি অগ্রগতি হয়নি।উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে অন্যান্য সময়ের তুলনায় বাড়ার কথা থাকলেও গত অর্থবছরে ভ্যাট আদায়ের হার ছিল নিম্নমুখী।এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হিসেব অনুযায়ী,গত অর্থবছরে রাজস্ব আহরণ করা হয়েছে ৩ লাখ কোটি টাকা।যদিও গত অর্থবছরে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা ছিল ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।ফলে বিশাল অংকের ঘাটতি নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন অর্থবছর।
গত অর্থবছরে আগের ২০২০ – ২১ অর্থবছরের তুলনায় এলসি খোলার হার বাড়লেও শুল্ক বাড়েনি।বিদায়ী অর্থবছরের ১১ মাসে আমদানি-রপ্তানি খাতে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৭ হাজার ১৫০ কোটি টাকা।আর আদায় হয়েছে ৮০ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা।অর্থাৎ আমদানি – রপ্তানি খাতে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা।আমদানি বাড়ার পরও শুল্ক আহরণ না বাড়ার কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন,করোনাপরবর্তী সময়ে এলসি খোলার হার বেড়েছে।কিন্তু যেসব পণ্য আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছে এর বেশির ভাগ ছিল কম শুল্কে বা ক্ষেত্র বিশেষে জিরো শুল্কের পণ্য।যার কারণে এলসি বাড়লেও বাড়েনি শুল্ক আহরণ।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন,কাস্টমসে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য খালাসের পথ চিরতরে বন্ধ করে দিতে হবে।এনবিআরের সংশ্লিষ্ট বিভাগের নজরদারি আরো বাড়াতে হবে।এ বিষয়ে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ভোরের কাগজকে বলেন,দেশে আমদানি বেড়েছে।তবে সেই সুফল রাজস্বে মিলছে না।কারণ মূলধনী যন্ত্রপাতি থেকে শুরু করে রপ্তানি খাতের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানিতে শুল্ক ছাড় দেয়া আছে।তবু বিদায়ী বছরে অন্যান্য বছরের তুলনায় আমদানি খাতে রাজস্ব বাড়ার কথা।কিন্তু মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আসার কারণে অনেক ক্ষেত্রে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।এক্ষেত্রে প্রয়োজন এনবিআরের কঠোর নজরদারি।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে,প্রতি বছর রাজস্ব আহরণের প্রধান খাত হিসেবে বিবেচনায় নেয়া হয় ভ্যাট আদায়কে। কিন্তু রাজস্বে বরাবর পিছিয়ে ভ্যাট।চলতি বছরে জানুয়ারি থেকে ক্রমেই বাড়ছে মূল্যস্ফীতি।সরকারের সর্বশেষ হিসেবে গত ৯ বছরের সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে।এই কারণে পণ্যমূল্য আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে।ক্ষেত্র বিশেষে বিভিন্ন পণ্যের দাম দিগুণও হয়েছে।এক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে ভ্যাট আদায় বাড়ার পরিবর্তে পিছিয়ে রয়েছে।গত অর্থবছরের মে মাস পর্যন্ত ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২০ কোটি টাকা।আলোচ্য সময়ে ভ্যাট আদায় হয়েছে ৯২ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা।অর্থাৎ ১১ মাসে ভ্যাট আদায়ে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ৮৬ কোটি টাকা।আর এনবিআরের রাজস্ব আহরণের গড় প্রবৃদ্ধির ১৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ হলেও ভ্যাট আদায়ের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৬২ শতাংশ।এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড.জাহিদ হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন,বিভিন্ন কারণে শুল্ক খাতে কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না।তবে আমদানি বাড়লেও শুল্ক বাড়বে এমন নয়।কারণ হিসেবে এই অর্থনীতিবিদ বলেন,বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে শুল্ক অব্যাহতি দেয়া আছে।এছাড়া মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক অনেক কম।যে কারণে আমদানি বাড়লেও সরকারের রাজস্ব সেভাবে বাড়ছে না।তবে আমদানি বাড়ার প্রভাব আমদানি শুল্ক আহরণের ক্ষেত্রে কিছুটা পড়বে তা স্বাভাবিক বলেও মনে করেন তিনি।