আমরা ভালো নেই, ভালো নেই দেশের শ্রমিক, কৃষক, মেহনতি শ্রমজীবি সাধারণ মানুষ। প্রতিদিনের দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি যুদ্ধের বাজারকেও হার মানাচ্ছে। আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা লাভ। সেই যুদ্ধের সময়েও দ্রব্যমূল্য স্থীতিশীল ছিল । কারণে-অকারণে স্বাধীনতার তিপান্ন বছরে এসে এখন আমাদের দেশের সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা প্রায় প্রতিদিনই দ্রব্য মূল্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। উৎপাদনকারী কৃষক-শ্রমিকরা তার ফসল এবং শ্রমের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। তারা প্রতি পদে পদে বঞ্চিত । কোন দায়বদ্ধতা নেই, নেই কোন জবাবদিহিতা। যে যার মতো ব্যবসায়ের নামে লুটপাট করে কেটে নিচ্ছে আমাদের সাধারণের পকেট। চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া যেন আর কোন রাস্তাই আমাদের খোলা নেই।
জীবন-জীবিকায় আমরা জিম্মি হয়ে পড়েছি সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী মালিক শ্রেণির হাতে । কোথাও কোন স্বস্তি নেই। জীবনের অধিকার নেই, শিক্ষার অধিকার নেই, খাদ্যের নিরাপত্তা নেই-নিরাপদ খাদ্য নেই। আছে শুধু ভেজালের সমারোহ , ঘুষ- দুর্নীতির নানা আয়োজন। স্বাস্থ্যের অধিকার নেই, স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা নেই। বাসস্থানের অধিকার নেই। শিক্ষা আজ বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণত হয়েছে । যেখানে মানিবকতা, মূল্যবোধ, শিষ্টাচার, সহমর্মিতা, পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ বিলুপ্ত হওয়ার পথে। মানুষে-মানুষে শ্রেণি বৈষম্য , সামাজিক বৈষম্য, আয় বৈষম্য চরম ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছ্। চিকিৎসার নামে চলছে গলাকাটা বাণিজ্য্ বিভিন্ন দপ্তরের নানা অনিয়ম আর দুর্নীতির চিত্র এবং সংবাদগুলো যখন মিডিয়ার মাধ্যমে আমিাদের সামনে আসে তখন খুব আহত হই, ব্যথিত হই। এই অনিয়ম আর দুর্নীতির জন্য কি মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, জীবন দিয়ে, রক্ত দিয়ে, ইজ্জ্বত দিয়ে, সম্ভ্রম হারিয়ে দেশটাকে স্বাধীন করেছিল ? নাকি শোষণহীন, বৈষম্যহীন একটি সোনার বাংলাদেশের জন্য দেশটি স্বাধীন হয়েছিল ? যারা যুদ্ধ করেছে, জীবন দিয়েছে, রক্ত দিয়েছে তাদের উত্তরসূরীরা আজও বঞ্চিত প্রতি পদে পদে। তাদের ন্যায্য অধিকার আজও প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
সম্প্রতি দেশে নারী হত্যা, ধর্ষণ, নৃশংস নির্যাতন সাংঘাতিকভাবে বেড়ে গেছে। পরিবারের ভেতর চলছে নারীর প্রতি বৈষম্য ও নিগ্রহ। তরুণ-যুবকরা আজ দিশেহারা। জীবনের মানে খুঁজে না পেয়ে আজ তারা দিশেহারা। অন্ধকার গলিতে পা বাড়িয়ে দিচ্ছে। বাড়ছে অনাকাঙ্কিত ঘটনা। মাদকের ব্যবহার হুহু করে বাড়ছে। বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা। সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কিশোর গ্যাং , নারী অপহরণ, শিশু নির্যাতন, শিশু বলাৎকার,কোথাও কোথাও মৌলবাদী শক্তির উত্থান। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবর্তে সাম্প্রদায়িক শক্তি মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘু পরিবারগুলো আতংকিত জীবন-যাপন করে এইভেবে কখন তারা নতুন ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে হামলা-মামলা, লুটপাট- অগ্নিসংযোগের বলি হবে।
নিন্মবৃত্ত ও মধ্যবৃত্ত পরিবারগুলো জীবন থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। চারিদিকে সামাজিক অবক্ষয়ের মিছিল আর সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা। দখলদার, ঘুষখোর, পাচারকরী, দুর্নীতিবাজদের দৌরাত্বে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। বিশ্বব্যাপী যখন করোনার মহামারি চলে আমাদের দেশে তখন নতুন করে কোটিপতির সংখ্যা ৩ হাজার ৪১২ জন বেড়েছে। যদিও করোনার কারণে দেশের অনেক পরিবারের আয় কমেছে। এ বিষয়ে জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনের সহযোগিতায় প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ আয়োজিত এক ওয়েবিনারে জানানো হয়, করোনার কারণে দেশে শতকরা ৭২.৬ শতাংশ পরিবারের আয় কমেছে। আর গত এক বছরে বেড়েছে ৭ হাজার ৯৭০টি। সোমবার (২০ মার্চ) প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২০২২ সালের ডিসেম্বরভিত্তিক হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। আমাদের জন্য এক অশনিসংকেত ।
আমাদের পরিচয় আমরা বাঙালি জাতি এবং বাংলাদেশী আমাদের জাতীয়তাবাদ। আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। সংখ্যালঘু কোন পরিচয় হতে পারে না। স্বাধীনতার ৫৩বছর পূর্তি উদযাপন চলছে আর আমরা ঠিক থখনো সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের জন্য লড়াই করছি। এরচেয়ে লজ্জার আর কী হতে পারে ? তাহলে স্বাধীরতার ৫৩বছরে আমাদের অর্জনটা কি তা মূল্যায়নের মাপকাঠিটাই বা কি ? সংখ্যালঘু পরিচয়ে বার বার আমাদের ওপর অন্যায় হামলা চালানো হচ্ছে। যা কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না। রাষ্ট্রের একদল মানুষ তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য হিন্দুদেরকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। রামু থেকে পীরগঞ্জ এবং শাল্লা থেকে কুষ্টিয়া সবখানেই উগ্রসাম্প্রদায়িকতায় সাধারণের জনজীবন অতিষ্ট। আমাদের দেশ বিভক্তির পর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং সম্প্রীতির কুৎসিত ইতিহাস যতটা শক্তিশালী। দাঙ্গা এবং সম্প্রীতি দমনের ইতিহাস ঠিক ততোটাই ক্ষীন। বাংলার স্বাধীনতার ইতিহাস ব্যাপক এবং বৈচিত্রময়। এখানে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সবাই কাধেঁ কাধঁ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মহান ঝান্ডা তুলে ধরে স্বাধীনতা, সভ্যতা, শিক্ষা, ইতিহাস, ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়েছে সমান তালে। এখনো এদেশের মানুষের বড় শক্তি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির। ডঃ সলিমুল্লাহ খান বলেন ধর্ম অবমাননার জন্য সংঘাত হয়নি সংঘাত বাধঁনোর জন্যেই ধর্ম অবমননা করা হয়েছে।
সরকার চাইলে দাঙ্গা হয়, সরকার না চাইলে দাঙ্গা হয় না। কারা দাঙ্গার প্রণেতা, কারা দাঙ্গার আয়োজক, আর কারাই বা তার সংগঠক তা সরকারের অজনা নয়। বস্তুত বহু ক্ষেত্রেই নানাবিধ অপরাধের কথা-কাহিনী বিষয়ে সরকার আগেই জানা থাকার কথা কিন্তু সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে অথবা বাধ্যবাধকতায় ব্যবস্থা নেওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখে। আমাদের দেশের স্বাধীনতার পরবর্তী সরকারগুলো বিশেষ করে ৭৫পরবর্তী এই সংকীর্ণতা থেকে যদি নিজেদেরকে মুক্ত রাখতে পারতো তাহলে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কুমিল্লা, হাজিগঞ্জ, চৌমুহনি, নোয়াখালী, পীরগঞ্জসহ অন্যান্য স্থানে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো ঘটতো না।
গণআন্দোলনের ব্যাপারে সরকার অত্যন্ত দৃঢ়। গণআন্দোলনের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি অভিযোগ আনতেও তারা দ্বিধা করেন না। সারা দেশে অস্থির পরিবেশ বিরাজ করছে। একদিকে সম্প্রদায়িক হামলা, ভাংচুর, জ্বালাওপোড়াও, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনিষ্ঠ অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের অকারণে আকাশছোঁয়া উর্ধ্বগতি, সাধারণ মানুষের চরম আর্থিক সংকট ও অনিশ্চয়তা, বেকার সমস্যা, সীমাহীন দুর্নীতি, লুটপাট, দলীয়করণ, আত্মীয়করণ, স্বাস্থ্যখাতে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি, আইনের সঠিক প্রয়োগের সংকট, শিক্ষার অবস্থা শোচনীয়, ইত্যাদি। ধর্মভাবনার বাইরে সাধারণ মানুষের বহু দুর্ভাবনা আছে; দৈনন্দিন জীবিকা নির্বাহের অনিশ্চয়তা মানুষকে আজ অসহায় জীবে পরিণত করেছে। দেশের ৮০ভাগ মানুষই দিন আনে দিন খায়। দেশের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ হিন্দু।
সাম্প্রদায়িকতার কারবারিরা এ জাতীয় দুর্ভাবনাগুলো থেকে মানুষের চোখ সরিয়ে নেওয়ার জন্যেই ধর্মীয় আচ্ছন্নতার আশ্রয় নেয়। তাদের এই ঘৃণ্য বিভাজনের রাজনীতিকে প্রতিহত করতে তাদের পথে হাঁটর অর্থ তাদেরই পাতা ফাঁদে পা দেওয়া। রাজনীতির সংগে ধর্মীয় সংযোগকে বাইরে রাখতে হবে।
আমাদের দেশে ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ, অপহরণ, লুটপাট একটিরও বিচার হয় নি। ফলে সবসময়ই সাম্প্রদায়িকতার কারবারিরা বহাল তবিয়তে একের পর এক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ, অপহরণ, লুটপাট করে যাচ্ছে। প্রত্যেকটি ঘটনায় একইরকম ধর্মীয় অবমানা যার একটি শেষ পর্যন্ত প্রমাণীত হয় নি। কিন্তু প্রতিবারেই আইনিভাবে এবং প্রশাসনিকভাবে তারাই নির্যাতনের শিকার হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় অবমননার মথ্যে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনিক তৎপরতার অভাবেও আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনিষ্ট হচ্ছে। আমাদের এবারের ঘটনায় দেখলাম প্রশাসনিক গাড়িবহর পুজামন্ডব ত্যাগ করার ঠিক পরবর্তী মুহুর্তেই একদল লোক হামলা চালায় এ সময় আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদেরকে অনেকটাই নিরব থাকতেই দেখা যায়। এছাড়া ঘটনার সূত্রপাত যেখান থেকে সেখানেও তাৎক্ষণিক সময় পুলিশের নিরবতা লক্ষ্য করা যায় পুলিশের পিছন থেকে যখন লাইভ করছে এবং ঘটনাকে উস্কে দিচ্ছে পুলিশ তখন কোনভাবেই নিভৃত করার চেষ্টা করতে দেখা যায় নি। এসব দেখে মনে হচ্ছে এগুলো সবই ঐ সাম্প্রদায়িকতার কারবারীদের পূর্ব পরিকল্পনারই অংশ।
এই সাম্প্রদায়িকতার কারবারীদের চিহ্নিত করা জরুরী এবং আইনের আওতায় নিয়ে এসে সর্বোচ্চ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলেই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, হামলা, ভাংচুর, অগ্নিযোগ, ধর্ষণ, অপহরণ, লুটপাট রোধ করে সম্প্রীতি চলমান রাখা সম্ভব। এককভাবে হিংসা প্রতিহত করতে পারে না। তার প্রধান কারণ, সাম্প্রদায়িক হিংসার চরিত্রটি শুধু সশস্ত্রই নয় বরং তাকে সশস্ত্র করেছে যুক্তি-বুদ্ধি-বিবেক-মনুষ্যত্ব বর্হিভূত এক উন্মত্ততা অন্য পক্ষ নিরস্ত্র লোক, উদ্যোগ এক অমানুষিকতার বিরুদ্ধে অন্য এক নারকিয়তার আশ্রয় নিতে পারে না। সুতরাং সাম্প্রদায়িক উন্মাদনার কালে কেবল শান্তির বাণী, সম্প্রীতির মহত্ব প্রচার সশস্ত্র দাঙ্গাবাজদের নিরন্ত করতে অপারগ। নিরপেক্ষ প্রশাসনিক তৎপরতাই এখানে প্রধান ব্যাপার। দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু মেয়েদের তুলে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করা হচ্ছে, ধর্ম অবমাননা এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের নামে হিন্দু শিক্ষকদের ওপর এবং তাদের বাড়িঘরে হামলা- মামলা চালাচ্ছে অহরহ। আতঙ্কিত জীবন-যাপনের মধ্যে কোন সৃজনশীল চিন্তা , কর্মপরিকল্পনার,জীবনমানের বিকাশ সম্ভব নয়।
১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০২১,২০২২ এবং এর বাইরে মাঝে মধ্যে কিছু কিছু ঘটনা বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে বিভিন্ন দিক থেকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। সাম্প্রদায়িক কারবারীরা সংবিধান, গণতন্ত্র, স্বাধীনতাকে এতোটাই বিপন্ন করে তুলেছে সংখ্যালঘুরা তাদের ধর্মীয় পরিচয় চিহ্নগুলো রক্ষা করার জন্য রাজপথে নামতে হচ্ছে। কোন খবরটা সত্য, আর কোন খবরটা গুজব বুঝে ওঠা কঠিন তার চেয়েও দুশ্চিন্তার এই কারবারীদের গুজবের কারণেই চলমান বাস্তবতা সম্প্রীতি-সৌহার্দ্য অধিকতর বিপদসংকুলন হয়ে পড়েছে। যেখানে সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের কথা সেখানে আমারা তা না করে ধর্মীয় অবমননা, দাঙ্গা, লুটপাট, ভাংচুর, জ্বালাও-পোড়াও নিয়ে ব্যস্থ থাকছি। একজন সাধারণ মানুষ আরেকজন সাধারণ মানুষের জানমালকে মুহুতেই ধ্বংস করে ফেলছি।
জঙ্গী এবং সাম্প্রদায়িকতার কারবারীদের লক্ষ্য অভিন্ন থাকে বলেই আমরা বেশ কয়েক বছর আগে দেখেছি আইএস জঙ্গীদের উন্মত্তায় প্রাচীন এশেরীয় সভ্যতার প্রতি নিদর্শন ধ্বংস এবং বাংলাদেশে মুক্তচিন্তার লেখকদের হত্যাকান্ডের মধ্যে কোন ফারাক নেই। দুই ক্ষেত্রেই অপব্যাখ্যা দিয়ে পবিত্র ইসলামকে কালিমালিপ্ত করা হয়েছে আর মানবতা, সম্প্রীতি এবং সৌহার্দ্যকে করেছে অপমানিত। ধর্মীয় মৌলবাদীরা অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ক্ষমতার মোহে যুগ যুগ ধরে সহজ-সরল মানুষদের ধর্মান্ধ বানাতে চেষ্টা করেছে। তারা দেশটাকে তালেবানি রাষ্ট্র করার পায়তারা করছে। সম্প্রীতি নষ্টকারীরা এবং সাম্প্রদায়িক উষ্কানিদাতারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। ফলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্য ভয়ভীতি তীব্র থেকে তীব্র হচ্ছে। এই সরল মানুষদের মুক্তবুদ্ধি আর চেতনার সমস্ত দরজা বন্ধ করে দিয়েছে।
একচোখা গন্ডারের মতো অন্ধ বানিয়ে ছেড়ে দিয়েছে মানবতা এবং সভ্যতার বক্ষ বিদীর্ণ করতে। ব্যক্তিগত লাভের ফসল ঘরে তুলতে নিজ ধর্মকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করেছে। যদি ধর্মই মানি তবে মানতে হবে ধর্মীয় দৃষ্টিতে অপরাধী হলে অপরাধীর শাস্তি বিধানের মালিক একমাত্র সৃষ্টিকর্তা আর জাগতিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় প্রশাসন। অথচ অন্ধ এবং ভয়ংকর মুর্খের মতো ধর্ম রক্ষার নামাবরণে উন্মাদরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে মনে করেছে হয়তো একটি মহৎ দায়িত্ব পালন করেছে। অথচ মানবতার বিচারে এবং ধর্মে দৃষ্টিতে তারা যে ভয়াবহ পাপের কাজ করে ফেলল এসব তারা বুঝতেই পারলো না। প্রতিটি সাম্প্রদায়িক হামলায় আমরা দেখেছি খুব দ্রুততার সঙ্গে তাহওদি জনত্র ব্যানারে একদল সহজ-সরল ধর্মান্ধ মানুষ লাঠিসোঁটা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো । সবই যেন একটি পরিকল্পনার বাস্তবায়ন।
আগে থেকেই যেন প্রস্তুতি ছিল একটি অপকর্ম ঘটানোর। এবং এদের প্রতিটি ঘটনারই তাৎক্ষণিক সফল বাস্তবায়ন দেখতে পাই। এবারের দূর্গপুজায় দেশের বিভিন্ন স্থানে কয়েকদিনের লাগাতার সাম্প্রদায়িক হামলা-সন্ত্রাসের ঘটনা নতুন করে একটা প্রশ্নকে সামনে নিযে এসেছে। প্রশ্নটা বাংলাদেশের জাতিগত, ভাষাগত, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের। দূর্গাপুজায় হিন্দুদের ওপর ন্যক্কারজনক হামলা এই পরিস্থিতির সর্বশেষ দৃষ্টান্ত হলেও বহু আগে থেকেই যে বাংলাদেশের ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে হুমকির মুখে ফেলে দেওয়া হয়েছে এবং সেটা কারো অজানা থাকার কথা নয়।
সমাজে অসাম্প্রদায়িক চেতনা কোণঠাসা হওয়া আর সাম্প্রাদায়িক বিদ্বেষের বিস্তার একদিনে হয়নি। এক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় সাধারণভাবেই অনেকেরই চোখ এড়িয়ে যায়। সেটা হলো সাম্প্রদায়িক হামলা ও সন্ত্রাসের লক্ষ্য যে কেবল হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান বা অন্য কোন সংখ্যালঘুরাই হচ্ছে তা নয়; ইসলাম ধর্মানুসারী বিভিন্ন মত ও পথের গোষ্ঠী-সম্প্রদায় এবং ধর্মীয় পরিচয় নির্বিশেষে দেশের বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক ধারাগুলোও বছরের পর বছর ধরে এমন বিদ্বেষ,হামলা এবং নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। চলমান এই সংকটে নতুন মাত্র যোগ করেছে রাষ্ট্রীয় আইন-কানুনের সুযোগ নিয়ে মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ এবং প্রশাসনিক আশকারায় দুষ্টের দমনের নীতির পরিবর্তে সৃষ্টের দমন নীতি। একইভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে যারা বাউলদের চুল-দাড়ি কেটে দিচ্ছে, আস্তানা গুড়িয়ে দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, এ¦ইসব সন্ত্রাসীর বিচার হচ্ছে না। মাঝখান থেকে নিজেদের স্বার্থ না বুঝে ধর্মীয় উন্মাদনায় অন্ধ হয়ে হাজার হাজার বছরের প্রতিবেশি, স্বজাতির রক্তে নিজেদের হাত রঞ্জিত করলো এদেশের মানুষ।
পাকিস্তান আমলের তেইশ বছরের পূর্ববাংলা রাজনীতি ও সংস্কৃতি ছিল সম্পূর্ণ অসাম্প্রদায়িক। তাই মুক্তিযুদ্ধের পরে সংবিধানের একটি বড় স্তম্ভ হয়ে দাঁড়ায় ধর্মনিরপেক্ষতা। পরবর্তীতে ক্ষমতাসীন দলগুলো ক্ষমতার মোহে ধমীয় রাজনীতির সাথে আপোষ করতে থাকে। এই আপোষের সূত্র ধরেই তার সাথে যুক্ত হয় বিদেশে শক্তি। এভাবেই দেশে সাম্প্রদায়িক মানসিকতা আর রাজনীতির বিস্তার ঘটতে থাকে। এ ধরনের বিদ্বেষ ও উসকানি দেওয়ার যেসব ঘটনা ঘটে,তারা যে এটা করতে পারছে এবং সফল হচ্ছে তার কারণ হলো সমাজে অনেক রকম পশ্চাৎপদ চিন্তা টিকে আছে। অনেক মুর্খতা, অন্ধত্ব সমাজে জেঁকে বসে আছে। মানবিক মূল্যবোধ, অপর মানুষ, অপর ধর্ম, অপর সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা, পরমত সহিষ্ণুতা সেটা সমাজে জোড়দার করতে হবে। সেজন্য শিক্ষা ও সংস্কৃতি চর্চার বিস্তারে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া দরকার।
দেশে এসব সহিংসতা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে এই বিষয়ে আমরা রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিতে পারিনি তেমনি প্রতিরোধেও কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারিনি তাই দিন দিন এই ধর্মীয় সহিংতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন আমাদের সাধারণের প্রশ্ন হচ্ছে এনভিাবে সাম্প্রদায়িক কারবারীদের ঘৃনা-বিদ্বেষ, হিংসা-সহিংসতা,সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ, নির্যাতন কী মুক্তিযুদ্ধের ধর্মনিরপেক্ষ স্বাধীন বাংলাদেশে চলতেই থাকবে নাকি প্রতিকার প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে ভূমিকা পালন করবে।
দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব সম্প্রীতি রক্ষা করতে হলে যাই বলি এইভাবে সাম্প্রদায়িক কারবারীদের বিষবৃক্ষ মূলোৎপাটনের বিকল্প নেই। সাম্প্রদায়িকক কারবারিদের Lyuজে বের করতে হবে এবং তাদেরকে আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে আইনের উর্ধ্বে কেউ নয়। ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর সঠিক বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে এবং মানসিক বিকাশ সাধনের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করা সম্ভব। অপরাধী যেই হউক তাকে অবশ্যই শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে, শিক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান, সাহিত্য-সংস্কৃতি-শিল্প,খেলাধুলার ব্যাপক প্রসার ঘটাতে হবে।
ওয়াজ-মাহফিল এবং মাদ্রাসার কার্যক্রমের প্রতি আরো ব্যাপক রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করতে হবে। বিচার এবং তদন্তের নামে যেন প্রহসন না হয় সেই বিষয়ে সর্বোচ্চ সর্তকতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। জনসচেনতা বৃদ্ধির জন্য ব্যাপকভাবে সচেতনতামূল কর্মসূচী বাস্তবায়ন করতে হবে। সাম্প্রদায়িকাতা ঘটানোর পিছনে কারা আছে তাদের খুঁজে বের করে জনসম্মুখে উন্মোচন করতে হবে। সর্বেপরি রাজনৈকি, প্রশাসনিক এবং সরকারের জবাবদিহিতা ও দায়বদ্ধতাকে নিশ্চিত করার মধ্য দিয়েই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা এবং দেশের উন্নয়ন, সভ্যতা, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।
আমরা বাঙালি, বাংলাদেশী আমাদের জাতীয়তা এই হউক আমাদের আসল পরিচয়। আজকের সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতিতে হিন্দু সংস্কার আইনের চেয়েও জরুরী হিন্দু তথা সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন এবং বাস্তব প্রয়োগ করা। রাষ্ট্রের নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি ছাড়া এদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং মুক্তচিন্তা-মুক্তবুদ্ধির মানুষদের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকা অসম্ভ হয়ে পড়েছে।
২০১৬ থেকে ২০২০,৫ বছরে পাচারকারীরা ৩ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। যার মধ্যে শুধু ২০১৫ সালে ১ বছরেই দেশ থেকে পাচার হয়েছে যায় ৯৮ হাজার কোটি টাকা। অর্থপাচার থামছে না। আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অঙ্কটি বড়ই হচ্ছে। গত ১৬ বছরে দেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে অন্তত ১১ লাখ কোটি টাকা। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যানশিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে বছরে গড়ে ৬৪ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যায়। এই অর্থপাচারের বড় গন্তব্যস্থল। দেশগুলো হলো সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত, অস্ট্রেলিয়া, হংকং ও থাইল্যান্ড। আর পাচার চলছে মূলত বাণিজ্য কারসাজি ও হুন্ডির মাধ্যমে। আমাদের বার্ষিক বাজেটের চেয়েও বিদেশে পাচারকৃত টাকার পরিমাণ অনেক বেশি।
সেবা খাতে দুর্নীতির শিকার হচ্ছে প্রায় ৭১ শতাংশ খানা (পরিবার)। বিভিন্ন সেবা পেতে প্রতিটি পরিবারকে গড়ে ৬ হাজার ৬৩৬ টাকা ঘুষ দিতে হয়। ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ১২ মাসে দেশে ঘুষ দেওয়া টাকার পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ৮৩০ কোটি। মোট ১৭টি সেবা খাতে এই ঘুষের টাকা দিয়েছেন সাধারণ মানুষজন। রাজনীতিকে দুর্বৃত্তায়ন থেকে বাঁচাতে না পারলে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সামাজিকতা, দায়বদ্ধতায় কালো অন্ধকার নেমে আসবে। মানুষ প্রচন্ড লোভী হয়ে সামাজিক সর্ম্পকে ধ্বংস করে দিবে। মানুষ পারস্পারিক সহযোগিতার পরিবর্তে হিংস্র হয়ে উঠবে।
স্বাধীনতার সুখ, স্বাদ সকলের মাঝে পৌছে দিতে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমৃদ্ধ করতে,দেশের উন্নয়ন –উন্নতি ও অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে এবং উন্নয়ন- উন্নতি ও অর্থনীতির একটি শক্ত ভীত তৈরী করতে রাষ্ট্রকে জনস্বার্থে কঠোর হওয়ার বিকল্প নেই। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠীত হওয়া জরুরী। শিক্ষা, সাহিত্য- সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মধ্য দিয়ে মানুষের নৈতিক মূল্যবোধ, মানবিকতা, দেশপ্রেম,মনুষ্যত্বকে জাগিয়ে তুলতে হবে। সরকারের পাশাপাশি একটি জোড়ালো সমাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে আমরা ভালো থাকার রাস্তাটাকে প্রসস্ত করে তুলতে পারি।
প্রতিটি দপ্তরের কাজের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে এবং পাচারকৃত টাকা ফেরত এনে রাষ্ট্রের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। বস্তুনিষ্ঠ শিক্ষাকে প্রতিষ্ঠিত করার পাশাপাশি শিক্ষাকে মানবিক করে গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষাখাতে জাতীয় বাজেটের ২৫% বরাদ্ধ করতে হবে। আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে রপ্তানি বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটাতে হবে এবং সেই সাথে দেশে নতুন নতুন কর্মসংস্থানের আয়োজন করতে হবে। বন্ধ কলকারখানাগুলোকে পূণরায় চালু করতে হবে। যদি কেউ তার সম্পদের হিসাব দিতে না পারে তবে তার সম্পদকে বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রীয় কোষাগাড়ে জমা দিয়ে তা প্রান্তিক গণউন্নয়ন কাজে ব্যয় করা যেতে পারে। দেশের সাধারণ মানুষকে ভালো রাখতে হলে, দেশের উন্নয়নকে স্থিতিশীল রাখতে যে কোন মূল্যে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবিকে শক্তিশালী এবং সক্রিয় করতে হবে। বন্ধ কলকারখানা চালু করা, মাদক নিয়ন্ত্রণে কঠোরতার সাথে জিরো টলারেন্স নীতি মেনে চলা, আত্মহত্যার প্রবণতা রোধ করার জন্য সময়োপযোগী কিছু কার্যকর ক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরী এবং সেই সাথে উন্নত বিশ্ব ও প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে শিক্ষার মানকে উন্নত করতে হবে। পাশ নির্ভর লেখাপড়ার পরিবর্তে জ্ঞান ও দক্ষতা নির্ভর মাতৃভাষাকেন্দ্রিক আধুনিক বিজ্ঞান ভিত্তিক শিক্ষা পদ্ধতি চালু করা প্রয়োজন।
দেশটাকে সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে একটি নিখুঁত পরিকল্পনা করে তার বাস্তবায়নের সর্বোচ্চ ত্যাগের মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে ঘুষ ও দুর্নীতি প্রতিরোধকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। কালো টাকা, ঋণ খেলাপীর টাকা এবং বিদেশে পাচারকৃত টাকা উদ্ধার করতে পারলে আমরা ঋণমুক্ত স্বনির্ভর অর্থনীতির সমৃদ্ধ একটি দেশ গঠন করতে পারতাম, ভালো থাকতে পারেতাম। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় আমরা অধিকার বঞ্চিত হয়ে থাকতে চাই না, আমরা ভালো থাকতে চাই, আমরা আমাদের অধিকারের নিশ্চয়তা চাই। দেশের কল্যাণে আমরাও ভূমিকা রাখতে চাই। একটা সম্প্রীতির উন্নত বাংলাদেশ চাই।