প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ নিয়ে একটি ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। এখন পর্যন্ত তাঁর পদত্যাগপত্রের কোনো অনুলিপি কোনো মিডিয়ায় প্রদর্শন করা হয় নি। এখন আমরা দেখি বাংলাদেশের সংবিধানমতে প্রধানমন্ত্রী কিভাবে পদত্যাগ করতে পারেন।
- সংবিধানের ৫৭ অনুচ্ছেদ অনুসারে প্রধানমন্ত্রীর পদ শূন্য হবে, যদি তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র পেশ করেন, অথবা সংসদ সদস্য না থাকেন। সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন হারালেও তিনি পদত্যাগ করে সংসদ ভেঙ্গে দেবার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে “লিখিতভাবে” আবেদন জানাবেন। একই ধারায় আরো আছে, “প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকে স্বীয় পদে বহাল থাকিতে এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই অযোগ্য করিবে না।” অর্থাৎ নতুন প্রধানমন্ত্রী না আসা পর্যন্ত তিনি স্বীয় পদে বহাল থাকতে পারবেন। সংবিধানের এই ধারা অনুসারে, সংসদ এখনো বহাল না থাকার কোনো আইনি কারণ নেই। কারণ, সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী লিখিতভাবে রাষ্ট্রপতিকে কোনো অনুরোধ করেন নাই। আর প্রধানমন্ত্রী যদি রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র দাখিলও করে থাকেন, তাহলেও পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী না আসা পর্যন্ত তিনিই দায়িত্বরত থাকবেন। মাঝখানে উড়ে এসে কারো জুড়ে বসার অধিকার বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে নেই।
- অনেকে বলাবলি করছে, যেহেতু এটা নরমাল কেস না, একটি “অভ্যুত্থানের” মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করা হয়েছে, সেহেতু সংবিধান স্থগিত করলেই সব ল্যাঠা চুকে গেলো। তারপর যা ইচ্ছা তা-ই করা সম্ভব। বিষয়টি এতো সরল নয়। সংবিধানের ৭ক অনুচ্ছেদ অনুসারে, “কোন ব্যক্তি শক্তি প্রদর্শন বা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বা অন্য কোন অসাংবিধানিক পন্থায়” সংবিধানের কোনো অংশ রদ, স্থগিত বা বাতিল করলে “তাহার এই কার্য রাষ্ট্রদ্রোহিতা হইবে এবং ঐ ব্যক্তি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে দোষী হইবে।” যারা এই কাজে সহযোগিতা, উষ্কানি প্রদান বা অনুমোদন করবে, “তাহার এইরূপ কার্যও একই অপরাধ হইবে।” শাস্তির কথাও বলা আছে, “এই অনুচ্ছেদে বর্ণিত অপরাধে দোষী ব্যক্তি প্রচলিত আইনে অন্যান্য অপরাধের জন্য নির্ধারিত দণ্ডের মধ্যে সর্বোচ্চ দণ্ডে দণ্ডিত হইবে।” বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শাস্তি যেহেতু মৃত্যুদণ্ড, সেহেতু সংবিধান স্থগিতকারীর শাস্তিরও মৃত্যুদণ্ড। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ৭খ। “সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, সংবিধানের প্রস্তাবনা, প্রথম ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, দ্বিতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, নবম-ক ভাগে বর্ণিত অনুচ্ছেদসমূহের বিধানাবলী সাপেক্ষে তৃতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ এবং একাদশ ভাগের ১৫০ অনুচ্ছেদসহ সংবিধানের অন্যান্য মৌলিক কাঠামো সংক্রান্ত অনুচ্ছেদসমুহের বিধানাবলী সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন, রহিতকরণ কিংবা অন্য কোন পন্থায় সংশোধনের অযোগ্য হইবে।” এই ধারা কেন উল্লেখ করলাম, তা পরের অনুচ্ছেদে পরিষ্কার করে বলবো।
- সংবিধানের ১৪২ নম্বর অনুচ্ছেদে আছে সংবিধানের কোনো ধারা কিভাবে সংযোজন, বিয়োজন করা যায়। এটা শুধুমাত্র সংসদের আইন দ্বারা করা সম্ভব। অন্য যে কোনো উপায়ই অসাংবিধানিক। তবে সংসদেও সবকিছু পরিবর্তন করা যাবে না, যেটা উপরে ৭খ-এ বলা হয়েছে। অর্থাৎ সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোর খাটিয়েও সংবিধানের মৌলিক বিষয়সমূহ পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।
- সংবিধানের সবগুলো ধারা প্রায় সবসময়ই কার্যকর। তবে জরুরী অবস্থায় কিছু কিছু ধারা সাময়িক স্থগিত করা সম্ভব। এটা কোন পরিস্থিতিতে, কিভাবে করা যাবে এবং কোন ধারাগুলো এর আওতায় এবং আওতার বাইরে থাকবে, তা বলা আছে। “রাষ্ট্রপতির নিকট যদি সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হয় যে, এমন জরুরী-অবস্থা বিদ্যমান রহিয়াছে, যাহাতে যুদ্ধ বা বহিরাক্রমণ বা অভ্যন্তরীণ গোলযোগের দ্বারা বাংলাদেশ বা উহার যে কোন অংশের নিরাপত্তা বা অর্থনৈতিক জীবন বিপদের সম্মুখীন, তাহা হইলে তিনি [অনধিক একশত কুড়ি দিনের জন্য] জরুরী-অবস্থা ঘোষণা করিতে পারিবেন। তবে শর্ত থাকে যে, অনুরূপ ঘোষণার বৈধতার জন্য ঘোষণার পূর্বেই প্রধানমন্ত্রীর প্রতি-স্বাক্ষর প্রয়োজন হইবে। অর্থাৎ, প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষর শর্তে রাষ্ট্রপতি বড়জোর ১২০ দিনের জন্য খুবই চরম পরিস্থিতিতে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করতে পারবেন, যখন সংবিধানের কিছু কিছু বিষয় সাময়িক স্থগিত করা সম্ভব। জরুরি অবস্থায় চলাফেরার স্বাধীনতা, সমাবেশ, সংগঠন, বাক-স্বাধীনতা, পেশা ও সম্পত্তির উত্তরাধীকারজাতীয় কিছু বিষয়ের ওপর প্রভাব পড়বে। জরুরী অবস্থার দোহাই দিয়ে সংবিধানকে স্থগিত করে নতুন সরকার ঘোষণার কোনোই অধিকার সংবিধানে নেই।
- বাংলাদেশের বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে যে সরকার গঠিত হয়েছে, বাংলাদেশের সংবিধানমতে তা পুরোপুরি বেআইনী। এবং এই কাজে জড়িত প্রত্যেকেই সংবিধানমতে দেশদ্রোহী ও সর্বোচ্চ শাস্তি (মৃত্যুদণ্ড) প্রাপ্তির মতো অপরাধী। সংবিধানমতে এখনো শেখ হাসিনাই প্রাইমমিনিস্টার (যদি পদত্যাগ না করে থাকেন) অথবা “অ্যাক্টিং প্রাইমমিনিস্টার” (যদি রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগ করে থাকেনও)। সংবিধান অনুযায়ী সংসদও এখনো আইনত বহাল। সংসদ ভেঙ্গে দিতে রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রীর লিখিত অনুরোধ আবশ্যক।
রাষ্ট্র থাকলে সংবিধানও থাকবে। এটাই আধুনিক রাষ্ট্রের অত্যাবশ্যকীয় শর্ত। জোর-জবরদস্তি করে ক্ষমতা দখল করা দেশদ্রোহীতা। এবং কেউই আইনের ঊর্ধে নয়।…
# The A Team.
প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ নিয়ে একটি ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। এখন পর্যন্ত তাঁর পদত্যাগপত্রের কোনো অনুলিপি কোনো মিডিয়ায় প্রদর্শন করা হয় নি। এখন আমরা দেখি বাংলাদেশের সংবিধানমতে প্রধানমন্ত্রী কিভাবে পদত্যাগ করতে পারেন।
- সংবিধানের ৫৭ অনুচ্ছেদ অনুসারে প্রধানমন্ত্রীর পদ শূন্য হবে, যদি তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র পেশ করেন, অথবা সংসদ সদস্য না থাকেন। সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন হারালেও তিনি পদত্যাগ করে সংসদ ভেঙ্গে দেবার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে “লিখিতভাবে” আবেদন জানাবেন। একই ধারায় আরো আছে, “প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকে স্বীয় পদে বহাল থাকিতে এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই অযোগ্য করিবে না।” অর্থাৎ নতুন প্রধানমন্ত্রী না আসা পর্যন্ত তিনি স্বীয় পদে বহাল থাকতে পারবেন। সংবিধানের এই ধারা অনুসারে, সংসদ এখনো বহাল না থাকার কোনো আইনি কারণ নেই। কারণ, সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী লিখিতভাবে রাষ্ট্রপতিকে কোনো অনুরোধ করেন নাই। আর প্রধানমন্ত্রী যদি রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র দাখিলও করে থাকেন, তাহলেও পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী না আসা পর্যন্ত তিনিই দায়িত্বরত থাকবেন। মাঝখানে উড়ে এসে কারো জুড়ে বসার অধিকার বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে নেই।
- অনেকে বলাবলি করছে, যেহেতু এটা নরমাল কেস না, একটি “অভ্যুত্থানের” মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করা হয়েছে, সেহেতু সংবিধান স্থগিত করলেই সব ল্যাঠা চুকে গেলো। তারপর যা ইচ্ছা তা-ই করা সম্ভব। বিষয়টি এতো সরল নয়। সংবিধানের ৭ক অনুচ্ছেদ অনুসারে, “কোন ব্যক্তি শক্তি প্রদর্শন বা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বা অন্য কোন অসাংবিধানিক পন্থায়” সংবিধানের কোনো অংশ রদ, স্থগিত বা বাতিল করলে “তাহার এই কার্য রাষ্ট্রদ্রোহিতা হইবে এবং ঐ ব্যক্তি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে দোষী হইবে।” যারা এই কাজে সহযোগিতা, উষ্কানি প্রদান বা অনুমোদন করবে, “তাহার এইরূপ কার্যও একই অপরাধ হইবে।” শাস্তির কথাও বলা আছে, “এই অনুচ্ছেদে বর্ণিত অপরাধে দোষী ব্যক্তি প্রচলিত আইনে অন্যান্য অপরাধের জন্য নির্ধারিত দণ্ডের মধ্যে সর্বোচ্চ দণ্ডে দণ্ডিত হইবে।” বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শাস্তি যেহেতু মৃত্যুদণ্ড, সেহেতু সংবিধান স্থগিতকারীর শাস্তিরও মৃত্যুদণ্ড। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ৭খ। “সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, সংবিধানের প্রস্তাবনা, প্রথম ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, দ্বিতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, নবম-ক ভাগে বর্ণিত অনুচ্ছেদসমূহের বিধানাবলী সাপেক্ষে তৃতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ এবং একাদশ ভাগের ১৫০ অনুচ্ছেদসহ সংবিধানের অন্যান্য মৌলিক কাঠামো সংক্রান্ত অনুচ্ছেদসমুহের বিধানাবলী সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন, রহিতকরণ কিংবা অন্য কোন পন্থায় সংশোধনের অযোগ্য হইবে।” এই ধারা কেন উল্লেখ করলাম, তা পরের অনুচ্ছেদে পরিষ্কার করে বলবো।
- সংবিধানের ১৪২ নম্বর অনুচ্ছেদে আছে সংবিধানের কোনো ধারা কিভাবে সংযোজন, বিয়োজন করা যায়। এটা শুধুমাত্র সংসদের আইন দ্বারা করা সম্ভব। অন্য যে কোনো উপায়ই অসাংবিধানিক। তবে সংসদেও সবকিছু পরিবর্তন করা যাবে না, যেটা উপরে ৭খ-এ বলা হয়েছে। অর্থাৎ সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোর খাটিয়েও সংবিধানের মৌলিক বিষয়সমূহ পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।
- সংবিধানের সবগুলো ধারা প্রায় সবসময়ই কার্যকর। তবে জরুরী অবস্থায় কিছু কিছু ধারা সাময়িক স্থগিত করা সম্ভব। এটা কোন পরিস্থিতিতে, কিভাবে করা যাবে এবং কোন ধারাগুলো এর আওতায় এবং আওতার বাইরে থাকবে, তা বলা আছে। “রাষ্ট্রপতির নিকট যদি সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হয় যে, এমন জরুরী-অবস্থা বিদ্যমান রহিয়াছে, যাহাতে যুদ্ধ বা বহিরাক্রমণ বা অভ্যন্তরীণ গোলযোগের দ্বারা বাংলাদেশ বা উহার যে কোন অংশের নিরাপত্তা বা অর্থনৈতিক জীবন বিপদের সম্মুখীন, তাহা হইলে তিনি [অনধিক একশত কুড়ি দিনের জন্য] জরুরী-অবস্থা ঘোষণা করিতে পারিবেন। তবে শর্ত থাকে যে, অনুরূপ ঘোষণার বৈধতার জন্য ঘোষণার পূর্বেই প্রধানমন্ত্রীর প্রতি-স্বাক্ষর প্রয়োজন হইবে। অর্থাৎ, প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষর শর্তে রাষ্ট্রপতি বড়জোর ১২০ দিনের জন্য খুবই চরম পরিস্থিতিতে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করতে পারবেন, যখন সংবিধানের কিছু কিছু বিষয় সাময়িক স্থগিত করা সম্ভব। জরুরি অবস্থায় চলাফেরার স্বাধীনতা, সমাবেশ, সংগঠন, বাক-স্বাধীনতা, পেশা ও সম্পত্তির উত্তরাধীকারজাতীয় কিছু বিষয়ের ওপর প্রভাব পড়বে। জরুরী অবস্থার দোহাই দিয়ে সংবিধানকে স্থগিত করে নতুন সরকার ঘোষণার কোনোই অধিকার সংবিধানে নেই।
- বাংলাদেশের বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে যে সরকার গঠিত হয়েছে, বাংলাদেশের সংবিধানমতে তা পুরোপুরি বেআইনী। এবং এই কাজে জড়িত প্রত্যেকেই সংবিধানমতে দেশদ্রোহী ও সর্বোচ্চ শাস্তি (মৃত্যুদণ্ড) প্রাপ্তির মতো অপরাধী। সংবিধানমতে এখনো শেখ হাসিনাই প্রাইমমিনিস্টার (যদি পদত্যাগ না করে থাকেন) অথবা “অ্যাক্টিং প্রাইমমিনিস্টার” (যদি রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগ করে থাকেনও)। সংবিধান অনুযায়ী সংসদও এখনো আইনত বহাল। সংসদ ভেঙ্গে দিতে রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রীর লিখিত অনুরোধ আবশ্যক।
রাষ্ট্র থাকলে সংবিধানও থাকবে। এটাই আধুনিক রাষ্ট্রের অত্যাবশ্যকীয় শর্ত। জোর-জবরদস্তি করে ক্ষমতা দখল করা দেশদ্রোহীতা। এবং কেউই আইনের ঊর্ধে নয়।…
# The A Team.