ফাইনালে ফ্রান্সকে টাইব্রেকারে হারিয়ে দীর্ঘ ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপ জিতেছে আর্জেন্টিনা। লিওনেল মেসিরা কাঙ্ক্ষিত বিশ্বকাপ জয়ের উদ্যাপনটাও করেছেন দীর্ঘদিন ধরে। তবে উদ্যাপন শেষ করে আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়েরা আবার ফিরে গেছেন নিজ নিজ ক্লাবে। ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন ক্লাব ফুটবলে। এতদিন পর এসে বড় একটা দুঃসংবাদ পেলেন মেসি ও তার বিশ্বকাপজয়ী সতীর্থরা।
বিশ্বকাপের ফাইনালে আর্জেন্টিনা দলের ‘আক্রমণাত্মক আচরণে’র তদন্তে নেমেছে বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা (ফিফা)। শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগের পাশাপাশি ‘ভাঙচুর’ এবং ‘সম্পদ নষ্টের’ অভিযোগও উঠেছে মেসির আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে।
এসব অভিযোগের ভিত্তিতে এরই মধ্যে তদন্ত শুরু করে দিয়েছে ফিফা। তদন্তের পর মেসি ও তার দলের ওপর নেমে আসতে পারে বড় শাস্তি। বিশ্বকাপ জয়ের উদ্যাপন করতে গিয়ে অধিনায়ক মেসির নেতৃত্বেই আর্জেন্টিনা দল ‘সীমা লঙ্ঘন’ করেছে—এমন অভিযোগও উঠেছে। তদন্তের পাশাপাশি আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে ‘শাস্তিমূলক কার্যক্রম’ও শুরু করে দিয়েছে ফিফা।
বিশ্ব ফুটবলের মুরুব্বি সংস্থা ফিফা মনে করছে, আর্জেন্টিনা দল আক্রমণাত্মক আচরণ, ফেয়ার প্লে নীতিমালা লঙ্ঘন এবং ‘খেলোয়াড় ও অফিশিয়ালদের বাজে আচরণ’ সম্পর্কিত নীতিমালা ভেঙেছে। তাই শৃঙ্খলা কমিটি ১১ ও ১২তম ধারায় তদন্ত শুরু করেছে।
অভিযোগপত্রে ফিফা জানিয়েছে, বিশ্বকাপ জয়ের পর স্টেডিয়ামের যে স্থানটিতে মেসিদের সাক্ষাত্কার দেওয়ার কথা ছিল, সেখানে তারা ভাঙচুর করেছেন, সম্পদ নষ্ট করেছেন। অধিনায়ক মেসির নেতৃত্বে আর্জেন্টিনার পুরো দলই নাকি এই অপরাধে শামিল। এছাড়া মেসিরা গণমাধ্যমের সামনে সাক্ষাত্কারও দেননি।
অভিযোগের এখানেই শেষ নয়। বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার গোল্ডেন গ্লাভস হাতে আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজের অশ্লীল ভঙ্গিতে উদ্যাপন, ড্রেসিংরুমে গিয়ে ফাইনালে হ্যাটট্রিক করা ফ্রান্সের তরুণ ফরোয়ার্ড কিলিয়ান এমবাপ্পেকে ব্যঙ্গ করে গান গাওয়া এবং দেশ আর্জেন্টিনায় ফিরে ছাদখোলা বাসে এমবাপ্পের পুতুল নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক উদ্যাপন-এসবও ফিফার অভিযোগের খাতায় যুক্ত হয়েছে। তদন্তে নামার আগে অভিযোগের বিষয়টি আর্জেন্টিনার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনকে (এএফএ) জানিয়েও দিয়েছে ফিফা। পাশাপাশি এএফএ-কে তদন্তে সহযোগিতার করার নির্দেশও দিয়েছে ফিফা।
শুধু আর্জেন্টিনার দল নয়, আর্জেন্টিনার ফুটবল সংস্থার বিরুদ্ধেও তদন্ত করবে ফিফা। এএফএ-র বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা মিডিয়া ও মার্কেটিং নীতিমালা ভঙ্গ করেছে। ফিফা মনে করছে এর মাধ্যমে এএফএ ডিসিপ্লিনারি নীতিমালার ৪৪ নম্বর ধারা ভেঙেছে।
আর্জেন্টিনার দল এবং দেশটির ফুটবল সংস্থার পাশাপাশি ফিফা তদন্তে নেমেছে তৃতীয় হওয়া ক্রোশেয়ার বিরুদ্ধেও। ক্রোয়াটদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, মরক্কোর বিপক্ষে তৃতীয়স্থান নির্ধারণী ম্যাচ শেষে একটা বিতর্কিত গানে গলা মিলিয়েছেন লুকা মডরিচরা। যেটিকে সম্ভাব্য ‘বৈষম্য’ এবং ‘ম্যাচের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ভঙ্গ’ ধারায় তদন্ত হচ্ছে।
এদিকে মেক্সিকো, ইকুয়েডর ও সার্বিয়ার ফুটবল ফেডারেশনকে এরই মধ্যে শাস্তি দিয়েছে ফিফা। কাতার বিশ্বকাপে উল্লেখিত দলগুলোর সমর্থকরা আচরণবিধি ভাঙায় তিনটি দেশকেই জরিমানা করা হয়েছে। মেক্সিকান ফুটবল ফেডারেশনকে জরিমানা করা হয়েছে ১ লাখ সুইস ফ্রা, ইকুয়েডর ফুটবল ফেডারেশনকে ২ হাজার সুইস ফ্রা এবং সার্বিয়ার ফুটবল ফেডারেশনকে জরিমানা করা হয়েছে ৫০ হাজার সুইস ফ্রা।
অপরাধের যে লম্বা ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়েছে, তাতে মেসিদের আর্জেন্টিনার জন্য হয়তো বড় শাস্তিই অপেক্ষা করছে।