দেশের ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে আমানত হারানোর শঙ্কা তৈরি হয়েছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪১ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে ছিল ৪২ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে আমানত কমেছে এক হাজার ২০৪ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৯ হাজার ৩০৬ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৬৬ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ২ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট বিতরণ করা ঋণ দাঁড়িয়েছে ৭০ হাজার ৪১৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৩২৭ কোটি ১০ লাখ। যা মোট ঋণের ২৪.৬১ শতাংশ। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১৩ হাজার ১৬ কোটি টাকা। করোনার কারণে গত ২০২০ ও ২০২১ বছরে ঋণ পরিশোধে বড় ধরনের ছাড় ছিল। চলতি বছর থেকে ঋণ পরিশোধের ছাড়ের সুবিধা উঠে যাওয়াও খেলাপি ঋণ বাড়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, চলতি বছরের জুন শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ ছিল ৬৯ হাজার ৩১৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৫ হাজার ৯৩৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা, যা মোট ঋণের প্রায় ২৩ শতাংশ। অপরদিকে, সেপ্টেম্বর শেষে মোট ঋণ বিতরণ হয়েছে ৭০ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা। তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা।
এর আগে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ সুদে আমানত নিতে পারবে বলে মৌখিক সিদ্ধান্ত দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার নির্ধারণ বেঁধে দেওয়া হয় ১১ শতাংশ। ব্যাংকগুলোর জন্য ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ঋণের সর্বোচ্চ সুদ ৯ শতাংশ নির্ধারণ করে দেয় আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির বেঁধে দেওয়া ক্যাপের মধ্যে ব্যবসা করা কঠিন বলে সাম্প্রতিক সময়ে দাবি করছিল আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এ বিষয়ে গত ১১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিএলএফসিএ) চেয়ারম্যান মোমিনুল ইসলাম। তখন তিনি আমানতের নির্ধারিত সুদের ক্যাপ তুলে নেওয়ার দাবি জানান। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি।