
চারদিকের পরিবেশ দেখে মনে হয় নিরাপত্তাহীনতার চাঁদরে ঢাকা পরেছে আমাদের জীবন ও জীবীকা। এই নিরাপত্তাহীনতা থেকে কেউ মুক্ত নয়। বিদেশী নাগরিক থেকে দেশের ছোট্ট শিশুটিও পর্যন্ত। এখন সত্যের চেয়ে শক্তির জোর বেশি গুরুত্বপূর্ন হয়ে উঠেছে এবং যুক্তির চেয়ে গায়ের এবং গলার জোড় বেশি গুরুত্বপূর্ন হয়ে উঠেছে। স্বার্থের কারণে মানুষ হিংস্র হয়ে উঠছে, উগ্রবাদী হয়ে উঠছে। একের পর এক খুন, ধর্ষণ, হত্যা জীবকে চরম অনিশ্চয়তা এবং নিরাপত্তাহীনতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা অনেকটাই এখন অস্বাভাবিক। ঘর থেকে বের হয়ে নিরাপদে আবার ঘরে ফেরা এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কোথাও কোন স্বস্তির সুবাতাস চোখে পড়ে না। সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম এবং সংবাদ মাধ্যমে শুধু চোখে পড়ে অনৈতিক বাস্তবতা। উগ্রতা, ধর্মান্ধতা, সহিংমতা, ডাকাতি ইত্যাদি। মনের মধ্যে চরম ভয় এবং অনিশ্চয়তা নিয়েই রাতে ঘুমাতে যেতে হয় এবং ঘুম থেকে উঠে নিজ নিজ কর্মে যেতে হচ্ছে। এমন এক সময়ে অবস্থান করছি যেখানে মানুষের অধিকার, মানবতা এবং ন্যায়ের প্রতি কোন সম্মান নেই। এসব অপরাধ এবং অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জায়গা আজ আমাদের প্রায় শূন্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতি আমাদের জীবনে এক ভীতিকর বাস্তবতা তৈরি করেছে। দিনের পর দিন এই অনিশ্চিত পরিবেশে আমরা চলতে চলতে অনেক সময় মনে করি, আমরা কি কোথাও নিরাপদ? আমাদের আশেপাশে মানুষের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সহিংসতা, প্রতিহিংসা, এবং অমানবিকতার ছাপ স্পষ্ট। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের অনুভূতি এবং চিন্তা অনেকটাই অবশ হয়ে গেছে। ই অশান্ত পরিবেশে মানুষের জীবনে শান্তি ও নিরাপত্তার ভাবনাও যেন বিলীন হয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি পদক্ষেপে এক অজানা শঙ্কা, এক অবশক্তি হানা দিয়েছে আমাদের চিন্তায়। কখনও বুঝতে পারি না, আগামীকাল আমাদের জন্য কি অপেক্ষা করছে—এমন এক অবস্থায় আমরা দিন পার করছি।
এই অনিশ্চিত এবং অশান্ত পরিবেশে আমরা সবাই যেন এক অদৃশ্য আতঙ্কের মধ্যে আটকা পড়ে আছি। প্রতিটি মুহূর্তেই মনে হয় কিছু একটা বিপদ অপেক্ষা করছে, কিন্তু কোথায় বা কখন হবে তা বুঝে ওঠা কঠিন। মানুষের মধ্যে বিবেক ও মানবিকতা হারিয়ে যাচ্ছে, এবং এর ফলস্বরূপ, সমাজে অপরাধ ও অবিচারের হার দিন দিন বাড়ছে। যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলছে, তাদেরকেও অনেক সময় নিঃশব্দে অন্যায়ের মধ্যে চাপিয়ে দেওয়া হয়। আমাদের প্রতিদিনের জীবনকে এক অদৃশ্য আতঙ্কের মধ্যে বন্দী করে ফেলছে। কোথাও কোনো নিশ্চয়তা নেই, নিরাপত্তা নেই, আর সেই কারণে সমাজে এক ধরনের বিভ্রান্তি এবং হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে। মানুষ এখন আগের মতো একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল নয়, বরং একে অপরকে সন্দেহের চোখে দেখছে। সবাই যেন নিজেকে এবং নিজের পরিবারকে রক্ষা করতে ব্যস্ত, আর এই আতঙ্কের মধ্যে মানবিকতা হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দায়িত্ব, শক্তির অবসান ঘটিয়ে শান্তি, ন্যায় ও মানবাধিকারের পক্ষে শক্তিশালী আওয়াজ তোলা। সমাজে একতা, সম্মান এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। মানবিকতা ও সহানুভূতির জায়গায় এখন শক্তি, ক্ষমতা আর শ্রেষ্ঠত্বের পটভূমি। কেউ আর একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল নয়, সবাই নিজের নিরাপত্তার জন্য ভয়ানকভাবে নিজেকে রক্ষা করতে বাধ্য হচ্ছে। মানুষের মধ্যে রাগ, প্রতিহিংসা এবং অসহিষ্ণুতা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের সকলের দায়িত্ব, এই সমাজে শান্তি এবং নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনতে একে অপরকে সহযোগিতা করা। যারা ভয়ে, অস্বস্তিতে, অন্ধকারে দিন কাটাচ্ছে, তাদের পাশে দাঁড়ানো, এবং একটা সুষম ও নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য কাজ করা। কেবল চুপ থাকার, ভয় পেয়ে থাকবার সময় আর নেই।
আর কত ঘুমাবেন? আর কত চুপ করে থাকবন? এবার না হয় জেগে উঠুন, কথা বলুন ঐক্যবদ্ধভাবে ধর্ষণ,হত্যা, খুন মব জাস্টিজের বিরুদ্ধে। এখনো কি আমরা শুধু চুপ থাকব? আমাদের যদি চুপ করে থাকার এই নিরবতা চলতে থাকে, তবে সমাজের এই অন্ধকার আরও বাড়বে। আমাদের সকলের দায়িত্ব নিজের অবস্থান থেকে এই বৈষম্য এবং অস্থিরতার বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা। অস্থিরতার বিরুদ্ধে দৃঢ়তার সঙ্গে অবস্থান নেওয়া দরকার। শুধু আইনশৃঙ্খলার পুনঃস্থাপন নয়, আমাদের উচিত সমাজে মূল্যবোধ এবং মানবিকতা ফিরিয়ে আনা। যেন মানুষ একে অপরকে সহায়তা করতে পারে, ভয় ছাড়াই রাস্তায় বের হতে পারে, এবং নিরাপদে তাদের দৈনন্দিন জীবন যাপন করতে পারে। যারা অপরাধের শিকার, তাদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের প্রতি সহমর্মিতা এবং সমর্থন জানানো আমাদের মানবিক কর্তব্য। সব ধরনের বৈষম্য, নির্যাতন ও অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। সামাজিক ন্যায়বিচার, মানবাধিকার এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। আমাদের মুখে শুধু নয়, হৃদয়ে একসাথে দাঁড়ানোর সংকল্প থাকতে হবে। রাষ্ট্রের কাছে আমাদের দাবি, আইনের শাসন এবং ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা দিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুনরুদ্ধার করতে হবে, যাতে প্রতিটি মানুষ নিরাপদে বাঁচতে পারে এবং সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। একমাত্র সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের সম্মিলিত চেষ্টায় আমরা এই অন্ধকার সময়ের বিরুদ্ধে জয়ের পথে এগিয়ে যেতে পারব। এখন আমাদের দায়িত্ব, কেবল ভীত হয়ে না থেকে, সাহসিকতার সাথে প্রতিবাদ জানানো এবং সুশাসনের জন্য কাজ করা। মানবিক মূল্যবোধ ও ন্যায়বিচারের পক্ষে দাঁড়িয়ে, একটি শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। আমাদের একটাই লক্ষ্য – শান্তি, নিরাপত্তা, এবং মানবাধিকার নিশ্চিত করা। আমাদের সব অনৈতিক, অমানবিক পরিস্থিতির বিরুদ্ধে শক্ত হাতে প্রতিবাদ করতে হবে, যাতে আগামী প্রজন্ম নিরাপদে বেড়ে উঠতে পারে। শুধু ক্ষমতার পরিবর্তন মধ্যে দিয়ে আজকের এই পরিস্থিতি সাময়িকভাবে মোকবিলা করা সম্ভব হলেও ব্যবস্থার পরিবর্তন না হলে এর স্থায়ী সমধান আদৌ সম্ভব বলে মনে হয় না। তাই ক্ষমতার পরিবর্তনের সাথে ব্যবস্থার পরিবর্তনের সংগ্রামটাকেও জাগিয়ে রাখেতে হবে। দেশটাকে এবং রাজনীতিটাকে জনমানুষের জন্য করে গড়ে তুলতে হবে।