পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেন, এক যুগ পর জেআরসি বৈঠকের ফলে ভারতের সঙ্গে পানি আলোচনার বরফ গলেছে। এ বৈঠকের ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে হিমালয় থেকে প্রবাহিত নদীগুলোর পানি বিভিন্ন সংযোগ খালের মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলীয় শুষ্ক নদীগুলোতে সরবরাহ করে সেচ ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করে ভারত।
তবে এখন থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা না করে হিমালয় থেকে প্রবাহিত কোনো নদীর পানি সরাবে না দেশটি। বৃহস্পতিবার দিল্লিতে শেষ হওয়া যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা। দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘ ১২ বছর পর এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে দেশে ফিরে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ১২ বছর পর বৈঠকটি আন্তরিক পরিবেশে সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছে। এবার কোনো বিরতি ছাড়াই প্রতি বছর বৈঠকটি করার আশাবাদ প্রকাশ করেছে ভারত।
জাহিদ ফারুক জানান, দুই দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহমান ৫৪টি অভিন্ন নদী নিয়ে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসবে।
এ ছাড়া কুশিয়ারা নদীর ১৫৩ কিউসেক পানি সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। ছয়টি নদীর পানিবণ্টন চুক্তির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া আরও আটটি নদীর পানিবণ্টন নিয়ে আলোচনা চলছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা না করে হিমালয় থেকে প্রবাহিত নদীগুলোর পানি দক্ষিণাঞ্চলে সরিয়ে নেবে না ভারত।
তিনি বলেন, ‘এবারের বৈঠকে বন্যার বিষয়ে পাঁচ দিন আগেই পূর্বাভাস জানানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ভারত। অন্যদিকে ফেনী নদীর পানি মানবিক কারণে বণ্টনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া ভারত থেকে প্রবাহিত নদীসমূহের দূষণরোধে ব্যবস্থা নেবে দুই দেশ।
প্রতিমন্ত্রী জানান, সেপ্টেম্বরেই বাংলাদেশ সফরে আসবেন ভারতের পানিসম্পদমন্ত্রী। ভারতের পানিসম্পদমন্ত্রী গজেন্দ্র সিং সিখাওয়াতের ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি বলেন, তিনি (গজেন্দ্র সিং) খুব কর্মঠ ও আন্তরিক। আমি তাকে বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছি। হেলিকপ্টারে করে তাতে পুরো বাংলাদেশ দেখাব, কীভাবে আমাদের জীবনের সঙ্গে পানি জড়িয়ে আছে।
সে সময় যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) পরবর্তী বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী। প্রতি বছর মার্চ-এপ্রিলে জেআরসি মিটিংয়ের আশ্বাস ভারতেরই।
জাহিদ ফারুক বলেন, এক যুগ পর জেআরসি বৈঠকের ফলে ভারতের সঙ্গে পানি আলোচনার বরফ গলেছে। এ বৈঠকের ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
গত ২৩ আগস্ট পানিসম্পদ সচিব পর্যায়ে এবং ২৫ আগস্ট নয়াদিল্লিতে জেআরসির মন্ত্রিপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ব্যাক টু ব্যাক দুটি বৈঠকেই তিস্তাসহ গঙ্গা ও কুশিয়ারার পানি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, গঙ্গার পানির সবচেয়ে ভালো ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করেছি। তবে গঙ্গা চুক্তির নবায়ন নিয়ে কোনো কথা বলিনি। গঙ্গা চুক্তির মেয়াদ শেষ হতে অনেক সময় বাকি আছে। তার আগে বাংলাদেশে ভোট হবে। ভোটের পর এ বিষয়ে আলোচনা শুরু করা যাবে।
তিস্তা চুক্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তিস্তা চুক্তি দ্রুত সম্পন্ন করতে আমরা ভারতীয় পক্ষকে বলেছি। তারা চেষ্টা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। তবে তিস্তার বিষয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে আলোচনা হচ্ছে।
কুশিয়ারা সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, কুশিয়ারা থেকে ১৫৩ কিউসেক পানি বাংলাদেশ উত্তোলন করতে পারবে। চুক্তির খসড়া ভারতের মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হলে প্রধানমন্ত্রীর সফরে সই হতে পারে।