রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শেষে ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যুক্ত করা হবে, এমন একটা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ন্যাটো সম্মেলন শেষ হলো। ন্যাটো জোটে অন্তর্ভুক্তি ইউক্রেনের জন্য কতটা লাভজনক, তা ইতিমধ্যে পরিষ্কার হয়ে গেছে। এ ছাড়া ন্যাটোর বেশির ভাগ সদস্যও ইউক্রেনকে তাদের সম্ভাব্য সদস্য হিসেবে মেনে নিয়েছে। তবে এ মুহূর্তে ন্যাটোয় ইউক্রেনের যোগ দেওয়ার যে ইচ্ছা, তা অধরাই থেকে গেল।
তবে ইউক্রেন ও ন্যাটোর বর্তমান সদস্যরাই যে কেবল ইউক্রেনের ন্যাটোয় অন্তর্ভুক্তি থেকে লাভবান হবেন, বিষয়টা তা নয়। রাশিয়াও লাভবান হতে পারে। যদিও ন্যাটো জোটের বিস্তার ঠেকানোর জন্যই মূলত রাশিয়া ইউক্রেন দখল করে নিয়েছিল। ইউক্রেন ন্যাটোয় যুক্ত হতে পারলে তা রাশিয়াকে অস্ত্রশস্ত্র উৎপাদন ও সংরক্ষণের জন্য যে সম্পদের অপচয় করতে হয়, তা বন্ধ করে দেবে। যদিও রাতারাতি ক্রেমলিন মাথা থেকে রুশ সাম্রাজ্যকে অটুট রাখার আকাঙ্ক্ষা ঝেড়ে ফেলতে পারবে না। সিদ্ধান্ত গ্রহণে এর প্রভাব ক্রমশ কমবে। ঠিক ফিনল্যান্ডের মতোই ইউক্রেনের অন্তর্ভুক্তি যখন মোটামুটি নিশ্চিত হবে, তখন আর ন্যাটোয় ইউক্রেনের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে খুব বেশি মতানৈক্য হবে না।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও তাঁর মিত্রদের জন্য ইউক্রেনের ন্যাটোয় যোগদান দুঃসংবাদ। কিন্তু রুশ নাগরিকেরা এ থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে লাভবান হতে পারেন। সাম্রাজ্যবাদকে অটুট রাখার স্বপ্নের যখন মৃত্যু ঘটবে, তখন রাশিয়ার ভবিষ্যৎ নেতারা নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখতে হৃত রাজ্য পুনরুদ্ধার কিংবা একলা চলো নীতিকে আশ্রয় করবেন না। তার ওপর মস্কোয় একটি আধুনিক, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সরকার ‘ওয়েইমার রাশিয়া’র উত্থানকে ঠেকাবে, যেখানে একটি পরাজিত, অর্থনৈতিকভাবে পর্যুদস্ত রাষ্ট্র ভবিষ্যৎ অত্যাচারী শাসকদের প্রজননক্ষেত্র হয়ে উঠবে না।
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধে কত টাকা খরচ হয়েছে, তার হিসাব পাওয়া কঠিন। রক্ষণশীল হিসাবই বলছে, এ দ্বন্দ্বের অর্থনৈতিক ক্ষতি ব্যাপক। ২০ বছর ধরে রাশিয়া শেল, ট্যাংক, যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টারের মতো সামরিক সাজসরঞ্জাম কিনতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। এই অর্থ সরকারিভাবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মতো খাতে ব্যয় করা যেত।
সাদাচোখে যে খরচটা আমরা দেখতে পাচ্ছি, তা আসলে মোট ব্যয়ের খুবই সামান্য অংশ। বছরের পর বছর পুতিন সরকার রাশিয়ার অর্থনীতিকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বাজার থেকে আলাদা রেখেছে। কাজেই ২০০০ সালের পর থেকে রাশিয়ার অর্থনীতি নিস্তেজ হয়ে পড়ে, যা লিওনিদ ব্রেজনেভের আমলের অর্থনৈতিক স্থবিরতার সময়কে মনে করিয়ে দেয়। ২০০৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত উৎপাদন ও আয় কমেছে রাশিয়ার মোট দেশজ উৎপাদনের ১০-১৫ শতাংশ। ইউক্রেন দখলের কারণে এই অর্থনৈতিক সমস্যা আরও তীব্র হয়েছে। যখন ২০২২ সালে মোট দেশজ উৎপাদন ২-৩ শতাংশের মতো কমে যায়, তখন খুচরা বিক্রি কমে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ পর্যন্ত।
উপরন্তু বিপুলসংখ্যক উচ্চশিক্ষিত মানুষের প্রস্থান, বিকল্প আমদানির পথে রাশিয়ার যে কাঠামোগত পরিবর্তন তা জিডিপির সংখ্যায় প্রতিফলিত হয় না। ইউক্রেনে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করা হচ্ছে। এর ফলে অর্থনীতির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যে ক্ষতি হচ্ছে, তা পুষিয়ে নিতে বহু বছর লেগে যাবে।
এ কথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, ন্যাটোয় ইউক্রেন যুক্ত হলে পুতিন রাশিয়ার অর্থনীতিতে যে ক্ষতি করেছেন, তা পুষিয়ে যাবে না। কিন্তু যুদ্ধের পর অর্থনৈতিক উন্নয়নকে পাশ কাটিয়ে সামরিক খাতে উৎপাদনের ব্যয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া কঠিন হবে। ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে বৈশ্বিক বাজারে রাশিয়া আরও সহজে, দ্রুততার সঙ্গে ও নিরাপদে যুক্ত হতে পারবে। দ্রুত অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং অন্য দেশ দখলের জন্য তহবিল জোগাতে বাণিজ্য সম্পর্ককে ব্যবহার করাও বন্ধ হবে।
ইউক্রেনের ন্যাটোর সদস্যপদ নিয়ে যারা সিদ্ধান্ত নেবে, সেই ইউক্রেন বা তাদের মিত্ররা রাশিয়ার স্বার্থ বিবেচনা করবে না। কিন্তু ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হলে তা রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশের নিরাপত্তা আরও জোরদার করবে। রাশিয়ার সাম্রাজ্যবাদের কফিনে শেষ পেরেকটি পড়লে রাশিয়ার নাগরিকেরা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবে। কারণ, রাশিয়ার নাগরিকেরা পুতিনের এই অমূলক উচ্চাকাঙ্ক্ষার দায় চুকিয়ে যাচ্ছেন।
জোসেফ স্তালিনের ওপর লেখা দুর্দান্ত এক জীবনীগ্রন্থে ঐতিহাসিক স্টিফেন কটকিন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখিয়েছেন, কীভাবে সোভিয়েত একনায়কেরা বহির্বিশ্বের হুমকির ভয় দেখিয়ে নিজেদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখে। বিদেশি শক্তির আগ্রাসন অত্যাসন্ন, রাজতন্ত্রের উত্থান শিগগিরই—এসব ভুয়া সতর্ক সংকেত দিয়ে তারা বিরোধী দলগুলোকে নিষিদ্ধ করেছিল, এমনকি কমিউনিস্ট পার্টির ভেতরেও ভিন্নমত দমন করেছিল। বিদেশি চরদের ধ্বংসের নামে, স্তালিন গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে বহু মানুষকে সরিয়ে দিয়ে মানুষের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করেছিলেন। কেউ তাঁকে চ্যালেঞ্জ করলেই তিনি তাঁকে বিদেশি শত্রুর চর—এমন মার্কা লাগিয়ে দিতেন।
স্তালিনের মৃত্যুর পর ১৯৫৩ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের এই পাশবিক ও দমনমূলক পরিস্থিতি কিছুটা সহজ হয়ে ওঠে। তবে তাঁর আমলের যে বিকৃত ধরন, তার ছাপ থেকে যায় প্রজন্মের পর প্রজন্ম। কারণ, তাঁর পরে যে সোভিয়েত নেতারা এসেছেন, তাঁরাও একলা চলো নীতি অনুসরণ করেছেন এবং ক্ষমতায় টিকে থাকতে সামরিক শক্তির আগ্রাসী বিস্তারে মনোযোগী হয়েছেন। এ অবস্থান ব্যর্থ হতে বাধ্য, হয়েছেও তা-ই। সামরিক খাতে বেশুমার ব্যয় ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙনের অন্যতম কারণ। যখন লাখ লাখ মানুষ রুটি, ডিম আর চিনির জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেছে, তখন সোভিয়েত ইউনিয়ন ট্যাংক আর মিসাইল নির্মাণে ব্যয় করেছে বিপুল অঙ্কের অর্থ।
পুতিন স্তালিনের এই শৈলীর সঙ্গে নতুন উপাদান যোগ করেছেন। দলের নেতাদের হাতে রাখতে স্তালিন ভয় দেখানোর নীতি নিয়েছিলেন, অন্যদিকে পুতিন সামরিক খাতকে ব্যবহার করেছেন তাঁর সঙ্গীসাথিদের বিলিয়ন ডলারের মালিক বানাতে। ইউক্রেনে যুদ্ধ পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে যাঁরা যে পর্যায়ে যুক্ত ছিলেন, পুতিন থেকে শুরু করে তাঁর প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু, নিরাপত্তা কাউন্সিল সেক্রেটারি নিকোলাই প্যাট্রুশেভ এবং মন্ত্রিসভার অন্য মন্ত্রীরা অপ্রত্যাশিত সম্পদের মালিক হয়েছেন গেল দশকে।
একইভাবে পুতিন ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা শুধু এই যুদ্ধ থেকেই অবিশ্বাস্য ধরনের লাভবান হয়েছেন। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন বলছে, প্যাট্রুশেভের ছেলে কার্লসবার্গ ও ড্যানোনের মতো খাবারের বিদেশি ফুড চেইন দখল করে নিয়েছেন। এ ছাড়া ১৯৯৯ সাল থেকে রাশিয়ার সামরিক বাজেট প্রতিবছর বেড়েছে। রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য হিসেবে সে খবর তারা কখনই প্রকাশ করেনি।
সামরিক ব্যয় নিয়ে এমন লুকোছাপার কারণে স্থানীয় সমরাস্ত্র প্রস্তুতকারকেরা প্রচুর লাভে পণ্য বিক্রি করছেন। স্বাভাবিক বাজারব্যবস্থায় যা সম্ভব ছিল না। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রথম বছরেই রাশিয়ার সামরিক-শিল্প কারখানা খাতে লাগামহীন ঘুষ আর দুর্নীতির খবর বেরিয়ে আসে।
পুতিনের সমর্থকেরা দাবি করেন, তাঁকে ছাড়া রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে হেরে যাবে। বাস্তবে রাশিয়া হারবে একজন শাসকের অন্যায্য যুদ্ধের কারণে, যে যুদ্ধ একটি অত্যন্ত ব্যক্তিগত, সামরিক শক্তিনির্ভর সরকারের তৈরি; যার একমাত্র উদ্দেশ্য ওই শাসক ও তাঁর সহযোগীদের ক্ষমতা ধরে রাখা এবং আরও ধনী হয়ে ওঠায় সহযোগিতা করা। যদি ইউক্রেন ন্যাটোয় যোগ দেয়, পুতিন ও ভবিষ্যতে তাঁর মতো যে নেতারা আসবেন, তাঁদের পক্ষে সাধারণ মানুষকে বোঝানো কঠিন হবে যে সামরিক খাতে এত ব্যয়ের প্রয়োজন আছে।
ইউক্রেনের ন্যাটোর সদস্যপদ নিয়ে যারা সিদ্ধান্ত নেবে, সেই ইউক্রেন বা তাদের মিত্ররা রাশিয়ার স্বার্থ বিবেচনা করবে না। কিন্তু ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হলে তা রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশের নিরাপত্তা আরও জোরদার করবে। রাশিয়ার সাম্রাজ্যবাদের কফিনে শেষ পেরেকটি পড়লে রাশিয়ার নাগরিকেরা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবে। কারণ, রাশিয়ার নাগরিকেরা পুতিনের এই অমূলক উচ্চাকাঙ্ক্ষার দায় চুকিয়ে যাচ্ছেন।
রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শেষে ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যুক্ত করা হবে, এমন একটা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ন্যাটো সম্মেলন শেষ হলো। ন্যাটো জোটে অন্তর্ভুক্তি ইউক্রেনের জন্য কতটা লাভজনক, তা ইতিমধ্যে পরিষ্কার হয়ে গেছে। এ ছাড়া ন্যাটোর বেশির ভাগ সদস্যও ইউক্রেনকে তাদের সম্ভাব্য সদস্য হিসেবে মেনে নিয়েছে। তবে এ মুহূর্তে ন্যাটোয় ইউক্রেনের যোগ দেওয়ার যে ইচ্ছা, তা অধরাই থেকে গেল।
তবে ইউক্রেন ও ন্যাটোর বর্তমান সদস্যরাই যে কেবল ইউক্রেনের ন্যাটোয় অন্তর্ভুক্তি থেকে লাভবান হবেন, বিষয়টা তা নয়। রাশিয়াও লাভবান হতে পারে। যদিও ন্যাটো জোটের বিস্তার ঠেকানোর জন্যই মূলত রাশিয়া ইউক্রেন দখল করে নিয়েছিল। ইউক্রেন ন্যাটোয় যুক্ত হতে পারলে তা রাশিয়াকে অস্ত্রশস্ত্র উৎপাদন ও সংরক্ষণের জন্য যে সম্পদের অপচয় করতে হয়, তা বন্ধ করে দেবে। যদিও রাতারাতি ক্রেমলিন মাথা থেকে রুশ সাম্রাজ্যকে অটুট রাখার আকাঙ্ক্ষা ঝেড়ে ফেলতে পারবে না। সিদ্ধান্ত গ্রহণে এর প্রভাব ক্রমশ কমবে। ঠিক ফিনল্যান্ডের মতোই ইউক্রেনের অন্তর্ভুক্তি যখন মোটামুটি নিশ্চিত হবে, তখন আর ন্যাটোয় ইউক্রেনের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে খুব বেশি মতানৈক্য হবে না।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও তাঁর মিত্রদের জন্য ইউক্রেনের ন্যাটোয় যোগদান দুঃসংবাদ। কিন্তু রুশ নাগরিকেরা এ থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে লাভবান হতে পারেন। সাম্রাজ্যবাদকে অটুট রাখার স্বপ্নের যখন মৃত্যু ঘটবে, তখন রাশিয়ার ভবিষ্যৎ নেতারা নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখতে হৃত রাজ্য পুনরুদ্ধার কিংবা একলা চলো নীতিকে আশ্রয় করবেন না। তার ওপর মস্কোয় একটি আধুনিক, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সরকার ‘ওয়েইমার রাশিয়া’র উত্থানকে ঠেকাবে, যেখানে একটি পরাজিত, অর্থনৈতিকভাবে পর্যুদস্ত রাষ্ট্র ভবিষ্যৎ অত্যাচারী শাসকদের প্রজননক্ষেত্র হয়ে উঠবে না।
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধে কত টাকা খরচ হয়েছে, তার হিসাব পাওয়া কঠিন। রক্ষণশীল হিসাবই বলছে, এ দ্বন্দ্বের অর্থনৈতিক ক্ষতি ব্যাপক। ২০ বছর ধরে রাশিয়া শেল, ট্যাংক, যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টারের মতো সামরিক সাজসরঞ্জাম কিনতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। এই অর্থ সরকারিভাবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মতো খাতে ব্যয় করা যেত।
সাদাচোখে যে খরচটা আমরা দেখতে পাচ্ছি, তা আসলে মোট ব্যয়ের খুবই সামান্য অংশ। বছরের পর বছর পুতিন সরকার রাশিয়ার অর্থনীতিকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বাজার থেকে আলাদা রেখেছে। কাজেই ২০০০ সালের পর থেকে রাশিয়ার অর্থনীতি নিস্তেজ হয়ে পড়ে, যা লিওনিদ ব্রেজনেভের আমলের অর্থনৈতিক স্থবিরতার সময়কে মনে করিয়ে দেয়। ২০০৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত উৎপাদন ও আয় কমেছে রাশিয়ার মোট দেশজ উৎপাদনের ১০-১৫ শতাংশ। ইউক্রেন দখলের কারণে এই অর্থনৈতিক সমস্যা আরও তীব্র হয়েছে। যখন ২০২২ সালে মোট দেশজ উৎপাদন ২-৩ শতাংশের মতো কমে যায়, তখন খুচরা বিক্রি কমে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ পর্যন্ত।
উপরন্তু বিপুলসংখ্যক উচ্চশিক্ষিত মানুষের প্রস্থান, বিকল্প আমদানির পথে রাশিয়ার যে কাঠামোগত পরিবর্তন তা জিডিপির সংখ্যায় প্রতিফলিত হয় না। ইউক্রেনে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করা হচ্ছে। এর ফলে অর্থনীতির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যে ক্ষতি হচ্ছে, তা পুষিয়ে নিতে বহু বছর লেগে যাবে।
এ কথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, ন্যাটোয় ইউক্রেন যুক্ত হলে পুতিন রাশিয়ার অর্থনীতিতে যে ক্ষতি করেছেন, তা পুষিয়ে যাবে না। কিন্তু যুদ্ধের পর অর্থনৈতিক উন্নয়নকে পাশ কাটিয়ে সামরিক খাতে উৎপাদনের ব্যয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া কঠিন হবে। ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে বৈশ্বিক বাজারে রাশিয়া আরও সহজে, দ্রুততার সঙ্গে ও নিরাপদে যুক্ত হতে পারবে। দ্রুত অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং অন্য দেশ দখলের জন্য তহবিল জোগাতে বাণিজ্য সম্পর্ককে ব্যবহার করাও বন্ধ হবে।
ইউক্রেনের ন্যাটোর সদস্যপদ নিয়ে যারা সিদ্ধান্ত নেবে, সেই ইউক্রেন বা তাদের মিত্ররা রাশিয়ার স্বার্থ বিবেচনা করবে না। কিন্তু ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হলে তা রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশের নিরাপত্তা আরও জোরদার করবে। রাশিয়ার সাম্রাজ্যবাদের কফিনে শেষ পেরেকটি পড়লে রাশিয়ার নাগরিকেরা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবে। কারণ, রাশিয়ার নাগরিকেরা পুতিনের এই অমূলক উচ্চাকাঙ্ক্ষার দায় চুকিয়ে যাচ্ছেন।
জোসেফ স্তালিনের ওপর লেখা দুর্দান্ত এক জীবনীগ্রন্থে ঐতিহাসিক স্টিফেন কটকিন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখিয়েছেন, কীভাবে সোভিয়েত একনায়কেরা বহির্বিশ্বের হুমকির ভয় দেখিয়ে নিজেদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখে। বিদেশি শক্তির আগ্রাসন অত্যাসন্ন, রাজতন্ত্রের উত্থান শিগগিরই—এসব ভুয়া সতর্ক সংকেত দিয়ে তারা বিরোধী দলগুলোকে নিষিদ্ধ করেছিল, এমনকি কমিউনিস্ট পার্টির ভেতরেও ভিন্নমত দমন করেছিল। বিদেশি চরদের ধ্বংসের নামে, স্তালিন গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে বহু মানুষকে সরিয়ে দিয়ে মানুষের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করেছিলেন। কেউ তাঁকে চ্যালেঞ্জ করলেই তিনি তাঁকে বিদেশি শত্রুর চর—এমন মার্কা লাগিয়ে দিতেন।
স্তালিনের মৃত্যুর পর ১৯৫৩ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের এই পাশবিক ও দমনমূলক পরিস্থিতি কিছুটা সহজ হয়ে ওঠে। তবে তাঁর আমলের যে বিকৃত ধরন, তার ছাপ থেকে যায় প্রজন্মের পর প্রজন্ম। কারণ, তাঁর পরে যে সোভিয়েত নেতারা এসেছেন, তাঁরাও একলা চলো নীতি অনুসরণ করেছেন এবং ক্ষমতায় টিকে থাকতে সামরিক শক্তির আগ্রাসী বিস্তারে মনোযোগী হয়েছেন। এ অবস্থান ব্যর্থ হতে বাধ্য, হয়েছেও তা-ই। সামরিক খাতে বেশুমার ব্যয় ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙনের অন্যতম কারণ। যখন লাখ লাখ মানুষ রুটি, ডিম আর চিনির জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেছে, তখন সোভিয়েত ইউনিয়ন ট্যাংক আর মিসাইল নির্মাণে ব্যয় করেছে বিপুল অঙ্কের অর্থ।
পুতিন স্তালিনের এই শৈলীর সঙ্গে নতুন উপাদান যোগ করেছেন। দলের নেতাদের হাতে রাখতে স্তালিন ভয় দেখানোর নীতি নিয়েছিলেন, অন্যদিকে পুতিন সামরিক খাতকে ব্যবহার করেছেন তাঁর সঙ্গীসাথিদের বিলিয়ন ডলারের মালিক বানাতে। ইউক্রেনে যুদ্ধ পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে যাঁরা যে পর্যায়ে যুক্ত ছিলেন, পুতিন থেকে শুরু করে তাঁর প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু, নিরাপত্তা কাউন্সিল সেক্রেটারি নিকোলাই প্যাট্রুশেভ এবং মন্ত্রিসভার অন্য মন্ত্রীরা অপ্রত্যাশিত সম্পদের মালিক হয়েছেন গেল দশকে।
একইভাবে পুতিন ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা শুধু এই যুদ্ধ থেকেই অবিশ্বাস্য ধরনের লাভবান হয়েছেন। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন বলছে, প্যাট্রুশেভের ছেলে কার্লসবার্গ ও ড্যানোনের মতো খাবারের বিদেশি ফুড চেইন দখল করে নিয়েছেন। এ ছাড়া ১৯৯৯ সাল থেকে রাশিয়ার সামরিক বাজেট প্রতিবছর বেড়েছে। রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য হিসেবে সে খবর তারা কখনই প্রকাশ করেনি।
সামরিক ব্যয় নিয়ে এমন লুকোছাপার কারণে স্থানীয় সমরাস্ত্র প্রস্তুতকারকেরা প্রচুর লাভে পণ্য বিক্রি করছেন। স্বাভাবিক বাজারব্যবস্থায় যা সম্ভব ছিল না। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রথম বছরেই রাশিয়ার সামরিক-শিল্প কারখানা খাতে লাগামহীন ঘুষ আর দুর্নীতির খবর বেরিয়ে আসে।
পুতিনের সমর্থকেরা দাবি করেন, তাঁকে ছাড়া রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে হেরে যাবে। বাস্তবে রাশিয়া হারবে একজন শাসকের অন্যায্য যুদ্ধের কারণে, যে যুদ্ধ একটি অত্যন্ত ব্যক্তিগত, সামরিক শক্তিনির্ভর সরকারের তৈরি; যার একমাত্র উদ্দেশ্য ওই শাসক ও তাঁর সহযোগীদের ক্ষমতা ধরে রাখা এবং আরও ধনী হয়ে ওঠায় সহযোগিতা করা। যদি ইউক্রেন ন্যাটোয় যোগ দেয়, পুতিন ও ভবিষ্যতে তাঁর মতো যে নেতারা আসবেন, তাঁদের পক্ষে সাধারণ মানুষকে বোঝানো কঠিন হবে যে সামরিক খাতে এত ব্যয়ের প্রয়োজন আছে।
ইউক্রেনের ন্যাটোর সদস্যপদ নিয়ে যারা সিদ্ধান্ত নেবে, সেই ইউক্রেন বা তাদের মিত্ররা রাশিয়ার স্বার্থ বিবেচনা করবে না। কিন্তু ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হলে তা রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশের নিরাপত্তা আরও জোরদার করবে। রাশিয়ার সাম্রাজ্যবাদের কফিনে শেষ পেরেকটি পড়লে রাশিয়ার নাগরিকেরা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবে। কারণ, রাশিয়ার নাগরিকেরা পুতিনের এই অমূলক উচ্চাকাঙ্ক্ষার দায় চুকিয়ে যাচ্ছেন।
রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শেষে ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যুক্ত করা হবে, এমন একটা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ন্যাটো সম্মেলন শেষ হলো। ন্যাটো জোটে অন্তর্ভুক্তি ইউক্রেনের জন্য কতটা লাভজনক, তা ইতিমধ্যে পরিষ্কার হয়ে গেছে। এ ছাড়া ন্যাটোর বেশির ভাগ সদস্যও ইউক্রেনকে তাদের সম্ভাব্য সদস্য হিসেবে মেনে নিয়েছে। তবে এ মুহূর্তে ন্যাটোয় ইউক্রেনের যোগ দেওয়ার যে ইচ্ছা, তা অধরাই থেকে গেল।
তবে ইউক্রেন ও ন্যাটোর বর্তমান সদস্যরাই যে কেবল ইউক্রেনের ন্যাটোয় অন্তর্ভুক্তি থেকে লাভবান হবেন, বিষয়টা তা নয়। রাশিয়াও লাভবান হতে পারে। যদিও ন্যাটো জোটের বিস্তার ঠেকানোর জন্যই মূলত রাশিয়া ইউক্রেন দখল করে নিয়েছিল। ইউক্রেন ন্যাটোয় যুক্ত হতে পারলে তা রাশিয়াকে অস্ত্রশস্ত্র উৎপাদন ও সংরক্ষণের জন্য যে সম্পদের অপচয় করতে হয়, তা বন্ধ করে দেবে। যদিও রাতারাতি ক্রেমলিন মাথা থেকে রুশ সাম্রাজ্যকে অটুট রাখার আকাঙ্ক্ষা ঝেড়ে ফেলতে পারবে না। সিদ্ধান্ত গ্রহণে এর প্রভাব ক্রমশ কমবে। ঠিক ফিনল্যান্ডের মতোই ইউক্রেনের অন্তর্ভুক্তি যখন মোটামুটি নিশ্চিত হবে, তখন আর ন্যাটোয় ইউক্রেনের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে খুব বেশি মতানৈক্য হবে না।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও তাঁর মিত্রদের জন্য ইউক্রেনের ন্যাটোয় যোগদান দুঃসংবাদ। কিন্তু রুশ নাগরিকেরা এ থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে লাভবান হতে পারেন। সাম্রাজ্যবাদকে অটুট রাখার স্বপ্নের যখন মৃত্যু ঘটবে, তখন রাশিয়ার ভবিষ্যৎ নেতারা নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখতে হৃত রাজ্য পুনরুদ্ধার কিংবা একলা চলো নীতিকে আশ্রয় করবেন না। তার ওপর মস্কোয় একটি আধুনিক, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সরকার ‘ওয়েইমার রাশিয়া’র উত্থানকে ঠেকাবে, যেখানে একটি পরাজিত, অর্থনৈতিকভাবে পর্যুদস্ত রাষ্ট্র ভবিষ্যৎ অত্যাচারী শাসকদের প্রজননক্ষেত্র হয়ে উঠবে না।
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধে কত টাকা খরচ হয়েছে, তার হিসাব পাওয়া কঠিন। রক্ষণশীল হিসাবই বলছে, এ দ্বন্দ্বের অর্থনৈতিক ক্ষতি ব্যাপক। ২০ বছর ধরে রাশিয়া শেল, ট্যাংক, যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টারের মতো সামরিক সাজসরঞ্জাম কিনতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। এই অর্থ সরকারিভাবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মতো খাতে ব্যয় করা যেত।
সাদাচোখে যে খরচটা আমরা দেখতে পাচ্ছি, তা আসলে মোট ব্যয়ের খুবই সামান্য অংশ। বছরের পর বছর পুতিন সরকার রাশিয়ার অর্থনীতিকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বাজার থেকে আলাদা রেখেছে। কাজেই ২০০০ সালের পর থেকে রাশিয়ার অর্থনীতি নিস্তেজ হয়ে পড়ে, যা লিওনিদ ব্রেজনেভের আমলের অর্থনৈতিক স্থবিরতার সময়কে মনে করিয়ে দেয়। ২০০৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত উৎপাদন ও আয় কমেছে রাশিয়ার মোট দেশজ উৎপাদনের ১০-১৫ শতাংশ। ইউক্রেন দখলের কারণে এই অর্থনৈতিক সমস্যা আরও তীব্র হয়েছে। যখন ২০২২ সালে মোট দেশজ উৎপাদন ২-৩ শতাংশের মতো কমে যায়, তখন খুচরা বিক্রি কমে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ পর্যন্ত।
উপরন্তু বিপুলসংখ্যক উচ্চশিক্ষিত মানুষের প্রস্থান, বিকল্প আমদানির পথে রাশিয়ার যে কাঠামোগত পরিবর্তন তা জিডিপির সংখ্যায় প্রতিফলিত হয় না। ইউক্রেনে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করা হচ্ছে। এর ফলে অর্থনীতির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যে ক্ষতি হচ্ছে, তা পুষিয়ে নিতে বহু বছর লেগে যাবে।
এ কথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, ন্যাটোয় ইউক্রেন যুক্ত হলে পুতিন রাশিয়ার অর্থনীতিতে যে ক্ষতি করেছেন, তা পুষিয়ে যাবে না। কিন্তু যুদ্ধের পর অর্থনৈতিক উন্নয়নকে পাশ কাটিয়ে সামরিক খাতে উৎপাদনের ব্যয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া কঠিন হবে। ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে বৈশ্বিক বাজারে রাশিয়া আরও সহজে, দ্রুততার সঙ্গে ও নিরাপদে যুক্ত হতে পারবে। দ্রুত অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং অন্য দেশ দখলের জন্য তহবিল জোগাতে বাণিজ্য সম্পর্ককে ব্যবহার করাও বন্ধ হবে।
ইউক্রেনের ন্যাটোর সদস্যপদ নিয়ে যারা সিদ্ধান্ত নেবে, সেই ইউক্রেন বা তাদের মিত্ররা রাশিয়ার স্বার্থ বিবেচনা করবে না। কিন্তু ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হলে তা রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশের নিরাপত্তা আরও জোরদার করবে। রাশিয়ার সাম্রাজ্যবাদের কফিনে শেষ পেরেকটি পড়লে রাশিয়ার নাগরিকেরা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবে। কারণ, রাশিয়ার নাগরিকেরা পুতিনের এই অমূলক উচ্চাকাঙ্ক্ষার দায় চুকিয়ে যাচ্ছেন।
জোসেফ স্তালিনের ওপর লেখা দুর্দান্ত এক জীবনীগ্রন্থে ঐতিহাসিক স্টিফেন কটকিন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখিয়েছেন, কীভাবে সোভিয়েত একনায়কেরা বহির্বিশ্বের হুমকির ভয় দেখিয়ে নিজেদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখে। বিদেশি শক্তির আগ্রাসন অত্যাসন্ন, রাজতন্ত্রের উত্থান শিগগিরই—এসব ভুয়া সতর্ক সংকেত দিয়ে তারা বিরোধী দলগুলোকে নিষিদ্ধ করেছিল, এমনকি কমিউনিস্ট পার্টির ভেতরেও ভিন্নমত দমন করেছিল। বিদেশি চরদের ধ্বংসের নামে, স্তালিন গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে বহু মানুষকে সরিয়ে দিয়ে মানুষের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করেছিলেন। কেউ তাঁকে চ্যালেঞ্জ করলেই তিনি তাঁকে বিদেশি শত্রুর চর—এমন মার্কা লাগিয়ে দিতেন।
স্তালিনের মৃত্যুর পর ১৯৫৩ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের এই পাশবিক ও দমনমূলক পরিস্থিতি কিছুটা সহজ হয়ে ওঠে। তবে তাঁর আমলের যে বিকৃত ধরন, তার ছাপ থেকে যায় প্রজন্মের পর প্রজন্ম। কারণ, তাঁর পরে যে সোভিয়েত নেতারা এসেছেন, তাঁরাও একলা চলো নীতি অনুসরণ করেছেন এবং ক্ষমতায় টিকে থাকতে সামরিক শক্তির আগ্রাসী বিস্তারে মনোযোগী হয়েছেন। এ অবস্থান ব্যর্থ হতে বাধ্য, হয়েছেও তা-ই। সামরিক খাতে বেশুমার ব্যয় ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙনের অন্যতম কারণ। যখন লাখ লাখ মানুষ রুটি, ডিম আর চিনির জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেছে, তখন সোভিয়েত ইউনিয়ন ট্যাংক আর মিসাইল নির্মাণে ব্যয় করেছে বিপুল অঙ্কের অর্থ।
পুতিন স্তালিনের এই শৈলীর সঙ্গে নতুন উপাদান যোগ করেছেন। দলের নেতাদের হাতে রাখতে স্তালিন ভয় দেখানোর নীতি নিয়েছিলেন, অন্যদিকে পুতিন সামরিক খাতকে ব্যবহার করেছেন তাঁর সঙ্গীসাথিদের বিলিয়ন ডলারের মালিক বানাতে। ইউক্রেনে যুদ্ধ পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে যাঁরা যে পর্যায়ে যুক্ত ছিলেন, পুতিন থেকে শুরু করে তাঁর প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু, নিরাপত্তা কাউন্সিল সেক্রেটারি নিকোলাই প্যাট্রুশেভ এবং মন্ত্রিসভার অন্য মন্ত্রীরা অপ্রত্যাশিত সম্পদের মালিক হয়েছেন গেল দশকে।
একইভাবে পুতিন ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা শুধু এই যুদ্ধ থেকেই অবিশ্বাস্য ধরনের লাভবান হয়েছেন। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন বলছে, প্যাট্রুশেভের ছেলে কার্লসবার্গ ও ড্যানোনের মতো খাবারের বিদেশি ফুড চেইন দখল করে নিয়েছেন। এ ছাড়া ১৯৯৯ সাল থেকে রাশিয়ার সামরিক বাজেট প্রতিবছর বেড়েছে। রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য হিসেবে সে খবর তারা কখনই প্রকাশ করেনি।
সামরিক ব্যয় নিয়ে এমন লুকোছাপার কারণে স্থানীয় সমরাস্ত্র প্রস্তুতকারকেরা প্রচুর লাভে পণ্য বিক্রি করছেন। স্বাভাবিক বাজারব্যবস্থায় যা সম্ভব ছিল না। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রথম বছরেই রাশিয়ার সামরিক-শিল্প কারখানা খাতে লাগামহীন ঘুষ আর দুর্নীতির খবর বেরিয়ে আসে।
পুতিনের সমর্থকেরা দাবি করেন, তাঁকে ছাড়া রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে হেরে যাবে। বাস্তবে রাশিয়া হারবে একজন শাসকের অন্যায্য যুদ্ধের কারণে, যে যুদ্ধ একটি অত্যন্ত ব্যক্তিগত, সামরিক শক্তিনির্ভর সরকারের তৈরি; যার একমাত্র উদ্দেশ্য ওই শাসক ও তাঁর সহযোগীদের ক্ষমতা ধরে রাখা এবং আরও ধনী হয়ে ওঠায় সহযোগিতা করা। যদি ইউক্রেন ন্যাটোয় যোগ দেয়, পুতিন ও ভবিষ্যতে তাঁর মতো যে নেতারা আসবেন, তাঁদের পক্ষে সাধারণ মানুষকে বোঝানো কঠিন হবে যে সামরিক খাতে এত ব্যয়ের প্রয়োজন আছে।
ইউক্রেনের ন্যাটোর সদস্যপদ নিয়ে যারা সিদ্ধান্ত নেবে, সেই ইউক্রেন বা তাদের মিত্ররা রাশিয়ার স্বার্থ বিবেচনা করবে না। কিন্তু ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হলে তা রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশের নিরাপত্তা আরও জোরদার করবে। রাশিয়ার সাম্রাজ্যবাদের কফিনে শেষ পেরেকটি পড়লে রাশিয়ার নাগরিকেরা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবে। কারণ, রাশিয়ার নাগরিকেরা পুতিনের এই অমূলক উচ্চাকাঙ্ক্ষার দায় চুকিয়ে যাচ্ছেন।
রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শেষে ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যুক্ত করা হবে, এমন একটা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ন্যাটো সম্মেলন শেষ হলো। ন্যাটো জোটে অন্তর্ভুক্তি ইউক্রেনের জন্য কতটা লাভজনক, তা ইতিমধ্যে পরিষ্কার হয়ে গেছে। এ ছাড়া ন্যাটোর বেশির ভাগ সদস্যও ইউক্রেনকে তাদের সম্ভাব্য সদস্য হিসেবে মেনে নিয়েছে। তবে এ মুহূর্তে ন্যাটোয় ইউক্রেনের যোগ দেওয়ার যে ইচ্ছা, তা অধরাই থেকে গেল।
তবে ইউক্রেন ও ন্যাটোর বর্তমান সদস্যরাই যে কেবল ইউক্রেনের ন্যাটোয় অন্তর্ভুক্তি থেকে লাভবান হবেন, বিষয়টা তা নয়। রাশিয়াও লাভবান হতে পারে। যদিও ন্যাটো জোটের বিস্তার ঠেকানোর জন্যই মূলত রাশিয়া ইউক্রেন দখল করে নিয়েছিল। ইউক্রেন ন্যাটোয় যুক্ত হতে পারলে তা রাশিয়াকে অস্ত্রশস্ত্র উৎপাদন ও সংরক্ষণের জন্য যে সম্পদের অপচয় করতে হয়, তা বন্ধ করে দেবে। যদিও রাতারাতি ক্রেমলিন মাথা থেকে রুশ সাম্রাজ্যকে অটুট রাখার আকাঙ্ক্ষা ঝেড়ে ফেলতে পারবে না। সিদ্ধান্ত গ্রহণে এর প্রভাব ক্রমশ কমবে। ঠিক ফিনল্যান্ডের মতোই ইউক্রেনের অন্তর্ভুক্তি যখন মোটামুটি নিশ্চিত হবে, তখন আর ন্যাটোয় ইউক্রেনের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে খুব বেশি মতানৈক্য হবে না।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও তাঁর মিত্রদের জন্য ইউক্রেনের ন্যাটোয় যোগদান দুঃসংবাদ। কিন্তু রুশ নাগরিকেরা এ থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে লাভবান হতে পারেন। সাম্রাজ্যবাদকে অটুট রাখার স্বপ্নের যখন মৃত্যু ঘটবে, তখন রাশিয়ার ভবিষ্যৎ নেতারা নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখতে হৃত রাজ্য পুনরুদ্ধার কিংবা একলা চলো নীতিকে আশ্রয় করবেন না। তার ওপর মস্কোয় একটি আধুনিক, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সরকার ‘ওয়েইমার রাশিয়া’র উত্থানকে ঠেকাবে, যেখানে একটি পরাজিত, অর্থনৈতিকভাবে পর্যুদস্ত রাষ্ট্র ভবিষ্যৎ অত্যাচারী শাসকদের প্রজননক্ষেত্র হয়ে উঠবে না।
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধে কত টাকা খরচ হয়েছে, তার হিসাব পাওয়া কঠিন। রক্ষণশীল হিসাবই বলছে, এ দ্বন্দ্বের অর্থনৈতিক ক্ষতি ব্যাপক। ২০ বছর ধরে রাশিয়া শেল, ট্যাংক, যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টারের মতো সামরিক সাজসরঞ্জাম কিনতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। এই অর্থ সরকারিভাবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মতো খাতে ব্যয় করা যেত।
সাদাচোখে যে খরচটা আমরা দেখতে পাচ্ছি, তা আসলে মোট ব্যয়ের খুবই সামান্য অংশ। বছরের পর বছর পুতিন সরকার রাশিয়ার অর্থনীতিকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বাজার থেকে আলাদা রেখেছে। কাজেই ২০০০ সালের পর থেকে রাশিয়ার অর্থনীতি নিস্তেজ হয়ে পড়ে, যা লিওনিদ ব্রেজনেভের আমলের অর্থনৈতিক স্থবিরতার সময়কে মনে করিয়ে দেয়। ২০০৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত উৎপাদন ও আয় কমেছে রাশিয়ার মোট দেশজ উৎপাদনের ১০-১৫ শতাংশ। ইউক্রেন দখলের কারণে এই অর্থনৈতিক সমস্যা আরও তীব্র হয়েছে। যখন ২০২২ সালে মোট দেশজ উৎপাদন ২-৩ শতাংশের মতো কমে যায়, তখন খুচরা বিক্রি কমে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ পর্যন্ত।
উপরন্তু বিপুলসংখ্যক উচ্চশিক্ষিত মানুষের প্রস্থান, বিকল্প আমদানির পথে রাশিয়ার যে কাঠামোগত পরিবর্তন তা জিডিপির সংখ্যায় প্রতিফলিত হয় না। ইউক্রেনে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করা হচ্ছে। এর ফলে অর্থনীতির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যে ক্ষতি হচ্ছে, তা পুষিয়ে নিতে বহু বছর লেগে যাবে।
এ কথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, ন্যাটোয় ইউক্রেন যুক্ত হলে পুতিন রাশিয়ার অর্থনীতিতে যে ক্ষতি করেছেন, তা পুষিয়ে যাবে না। কিন্তু যুদ্ধের পর অর্থনৈতিক উন্নয়নকে পাশ কাটিয়ে সামরিক খাতে উৎপাদনের ব্যয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া কঠিন হবে। ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে বৈশ্বিক বাজারে রাশিয়া আরও সহজে, দ্রুততার সঙ্গে ও নিরাপদে যুক্ত হতে পারবে। দ্রুত অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং অন্য দেশ দখলের জন্য তহবিল জোগাতে বাণিজ্য সম্পর্ককে ব্যবহার করাও বন্ধ হবে।
ইউক্রেনের ন্যাটোর সদস্যপদ নিয়ে যারা সিদ্ধান্ত নেবে, সেই ইউক্রেন বা তাদের মিত্ররা রাশিয়ার স্বার্থ বিবেচনা করবে না। কিন্তু ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হলে তা রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশের নিরাপত্তা আরও জোরদার করবে। রাশিয়ার সাম্রাজ্যবাদের কফিনে শেষ পেরেকটি পড়লে রাশিয়ার নাগরিকেরা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবে। কারণ, রাশিয়ার নাগরিকেরা পুতিনের এই অমূলক উচ্চাকাঙ্ক্ষার দায় চুকিয়ে যাচ্ছেন।
জোসেফ স্তালিনের ওপর লেখা দুর্দান্ত এক জীবনীগ্রন্থে ঐতিহাসিক স্টিফেন কটকিন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখিয়েছেন, কীভাবে সোভিয়েত একনায়কেরা বহির্বিশ্বের হুমকির ভয় দেখিয়ে নিজেদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখে। বিদেশি শক্তির আগ্রাসন অত্যাসন্ন, রাজতন্ত্রের উত্থান শিগগিরই—এসব ভুয়া সতর্ক সংকেত দিয়ে তারা বিরোধী দলগুলোকে নিষিদ্ধ করেছিল, এমনকি কমিউনিস্ট পার্টির ভেতরেও ভিন্নমত দমন করেছিল। বিদেশি চরদের ধ্বংসের নামে, স্তালিন গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে বহু মানুষকে সরিয়ে দিয়ে মানুষের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করেছিলেন। কেউ তাঁকে চ্যালেঞ্জ করলেই তিনি তাঁকে বিদেশি শত্রুর চর—এমন মার্কা লাগিয়ে দিতেন।
স্তালিনের মৃত্যুর পর ১৯৫৩ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের এই পাশবিক ও দমনমূলক পরিস্থিতি কিছুটা সহজ হয়ে ওঠে। তবে তাঁর আমলের যে বিকৃত ধরন, তার ছাপ থেকে যায় প্রজন্মের পর প্রজন্ম। কারণ, তাঁর পরে যে সোভিয়েত নেতারা এসেছেন, তাঁরাও একলা চলো নীতি অনুসরণ করেছেন এবং ক্ষমতায় টিকে থাকতে সামরিক শক্তির আগ্রাসী বিস্তারে মনোযোগী হয়েছেন। এ অবস্থান ব্যর্থ হতে বাধ্য, হয়েছেও তা-ই। সামরিক খাতে বেশুমার ব্যয় ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙনের অন্যতম কারণ। যখন লাখ লাখ মানুষ রুটি, ডিম আর চিনির জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেছে, তখন সোভিয়েত ইউনিয়ন ট্যাংক আর মিসাইল নির্মাণে ব্যয় করেছে বিপুল অঙ্কের অর্থ।
পুতিন স্তালিনের এই শৈলীর সঙ্গে নতুন উপাদান যোগ করেছেন। দলের নেতাদের হাতে রাখতে স্তালিন ভয় দেখানোর নীতি নিয়েছিলেন, অন্যদিকে পুতিন সামরিক খাতকে ব্যবহার করেছেন তাঁর সঙ্গীসাথিদের বিলিয়ন ডলারের মালিক বানাতে। ইউক্রেনে যুদ্ধ পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে যাঁরা যে পর্যায়ে যুক্ত ছিলেন, পুতিন থেকে শুরু করে তাঁর প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু, নিরাপত্তা কাউন্সিল সেক্রেটারি নিকোলাই প্যাট্রুশেভ এবং মন্ত্রিসভার অন্য মন্ত্রীরা অপ্রত্যাশিত সম্পদের মালিক হয়েছেন গেল দশকে।
একইভাবে পুতিন ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা শুধু এই যুদ্ধ থেকেই অবিশ্বাস্য ধরনের লাভবান হয়েছেন। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন বলছে, প্যাট্রুশেভের ছেলে কার্লসবার্গ ও ড্যানোনের মতো খাবারের বিদেশি ফুড চেইন দখল করে নিয়েছেন। এ ছাড়া ১৯৯৯ সাল থেকে রাশিয়ার সামরিক বাজেট প্রতিবছর বেড়েছে। রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য হিসেবে সে খবর তারা কখনই প্রকাশ করেনি।
সামরিক ব্যয় নিয়ে এমন লুকোছাপার কারণে স্থানীয় সমরাস্ত্র প্রস্তুতকারকেরা প্রচুর লাভে পণ্য বিক্রি করছেন। স্বাভাবিক বাজারব্যবস্থায় যা সম্ভব ছিল না। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রথম বছরেই রাশিয়ার সামরিক-শিল্প কারখানা খাতে লাগামহীন ঘুষ আর দুর্নীতির খবর বেরিয়ে আসে।
পুতিনের সমর্থকেরা দাবি করেন, তাঁকে ছাড়া রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে হেরে যাবে। বাস্তবে রাশিয়া হারবে একজন শাসকের অন্যায্য যুদ্ধের কারণে, যে যুদ্ধ একটি অত্যন্ত ব্যক্তিগত, সামরিক শক্তিনির্ভর সরকারের তৈরি; যার একমাত্র উদ্দেশ্য ওই শাসক ও তাঁর সহযোগীদের ক্ষমতা ধরে রাখা এবং আরও ধনী হয়ে ওঠায় সহযোগিতা করা। যদি ইউক্রেন ন্যাটোয় যোগ দেয়, পুতিন ও ভবিষ্যতে তাঁর মতো যে নেতারা আসবেন, তাঁদের পক্ষে সাধারণ মানুষকে বোঝানো কঠিন হবে যে সামরিক খাতে এত ব্যয়ের প্রয়োজন আছে।
ইউক্রেনের ন্যাটোর সদস্যপদ নিয়ে যারা সিদ্ধান্ত নেবে, সেই ইউক্রেন বা তাদের মিত্ররা রাশিয়ার স্বার্থ বিবেচনা করবে না। কিন্তু ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হলে তা রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশের নিরাপত্তা আরও জোরদার করবে। রাশিয়ার সাম্রাজ্যবাদের কফিনে শেষ পেরেকটি পড়লে রাশিয়ার নাগরিকেরা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবে। কারণ, রাশিয়ার নাগরিকেরা পুতিনের এই অমূলক উচ্চাকাঙ্ক্ষার দায় চুকিয়ে যাচ্ছেন।
রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শেষে ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যুক্ত করা হবে, এমন একটা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ন্যাটো সম্মেলন শেষ হলো। ন্যাটো জোটে অন্তর্ভুক্তি ইউক্রেনের জন্য কতটা লাভজনক, তা ইতিমধ্যে পরিষ্কার হয়ে গেছে। এ ছাড়া ন্যাটোর বেশির ভাগ সদস্যও ইউক্রেনকে তাদের সম্ভাব্য সদস্য হিসেবে মেনে নিয়েছে। তবে এ মুহূর্তে ন্যাটোয় ইউক্রেনের যোগ দেওয়ার যে ইচ্ছা, তা অধরাই থেকে গেল।
তবে ইউক্রেন ও ন্যাটোর বর্তমান সদস্যরাই যে কেবল ইউক্রেনের ন্যাটোয় অন্তর্ভুক্তি থেকে লাভবান হবেন, বিষয়টা তা নয়। রাশিয়াও লাভবান হতে পারে। যদিও ন্যাটো জোটের বিস্তার ঠেকানোর জন্যই মূলত রাশিয়া ইউক্রেন দখল করে নিয়েছিল। ইউক্রেন ন্যাটোয় যুক্ত হতে পারলে তা রাশিয়াকে অস্ত্রশস্ত্র উৎপাদন ও সংরক্ষণের জন্য যে সম্পদের অপচয় করতে হয়, তা বন্ধ করে দেবে। যদিও রাতারাতি ক্রেমলিন মাথা থেকে রুশ সাম্রাজ্যকে অটুট রাখার আকাঙ্ক্ষা ঝেড়ে ফেলতে পারবে না। সিদ্ধান্ত গ্রহণে এর প্রভাব ক্রমশ কমবে। ঠিক ফিনল্যান্ডের মতোই ইউক্রেনের অন্তর্ভুক্তি যখন মোটামুটি নিশ্চিত হবে, তখন আর ন্যাটোয় ইউক্রেনের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে খুব বেশি মতানৈক্য হবে না।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও তাঁর মিত্রদের জন্য ইউক্রেনের ন্যাটোয় যোগদান দুঃসংবাদ। কিন্তু রুশ নাগরিকেরা এ থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে লাভবান হতে পারেন। সাম্রাজ্যবাদকে অটুট রাখার স্বপ্নের যখন মৃত্যু ঘটবে, তখন রাশিয়ার ভবিষ্যৎ নেতারা নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখতে হৃত রাজ্য পুনরুদ্ধার কিংবা একলা চলো নীতিকে আশ্রয় করবেন না। তার ওপর মস্কোয় একটি আধুনিক, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সরকার ‘ওয়েইমার রাশিয়া’র উত্থানকে ঠেকাবে, যেখানে একটি পরাজিত, অর্থনৈতিকভাবে পর্যুদস্ত রাষ্ট্র ভবিষ্যৎ অত্যাচারী শাসকদের প্রজননক্ষেত্র হয়ে উঠবে না।
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধে কত টাকা খরচ হয়েছে, তার হিসাব পাওয়া কঠিন। রক্ষণশীল হিসাবই বলছে, এ দ্বন্দ্বের অর্থনৈতিক ক্ষতি ব্যাপক। ২০ বছর ধরে রাশিয়া শেল, ট্যাংক, যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টারের মতো সামরিক সাজসরঞ্জাম কিনতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। এই অর্থ সরকারিভাবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মতো খাতে ব্যয় করা যেত।
সাদাচোখে যে খরচটা আমরা দেখতে পাচ্ছি, তা আসলে মোট ব্যয়ের খুবই সামান্য অংশ। বছরের পর বছর পুতিন সরকার রাশিয়ার অর্থনীতিকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বাজার থেকে আলাদা রেখেছে। কাজেই ২০০০ সালের পর থেকে রাশিয়ার অর্থনীতি নিস্তেজ হয়ে পড়ে, যা লিওনিদ ব্রেজনেভের আমলের অর্থনৈতিক স্থবিরতার সময়কে মনে করিয়ে দেয়। ২০০৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত উৎপাদন ও আয় কমেছে রাশিয়ার মোট দেশজ উৎপাদনের ১০-১৫ শতাংশ। ইউক্রেন দখলের কারণে এই অর্থনৈতিক সমস্যা আরও তীব্র হয়েছে। যখন ২০২২ সালে মোট দেশজ উৎপাদন ২-৩ শতাংশের মতো কমে যায়, তখন খুচরা বিক্রি কমে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ পর্যন্ত।
উপরন্তু বিপুলসংখ্যক উচ্চশিক্ষিত মানুষের প্রস্থান, বিকল্প আমদানির পথে রাশিয়ার যে কাঠামোগত পরিবর্তন তা জিডিপির সংখ্যায় প্রতিফলিত হয় না। ইউক্রেনে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করা হচ্ছে। এর ফলে অর্থনীতির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যে ক্ষতি হচ্ছে, তা পুষিয়ে নিতে বহু বছর লেগে যাবে।
এ কথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, ন্যাটোয় ইউক্রেন যুক্ত হলে পুতিন রাশিয়ার অর্থনীতিতে যে ক্ষতি করেছেন, তা পুষিয়ে যাবে না। কিন্তু যুদ্ধের পর অর্থনৈতিক উন্নয়নকে পাশ কাটিয়ে সামরিক খাতে উৎপাদনের ব্যয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া কঠিন হবে। ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে বৈশ্বিক বাজারে রাশিয়া আরও সহজে, দ্রুততার সঙ্গে ও নিরাপদে যুক্ত হতে পারবে। দ্রুত অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং অন্য দেশ দখলের জন্য তহবিল জোগাতে বাণিজ্য সম্পর্ককে ব্যবহার করাও বন্ধ হবে।
ইউক্রেনের ন্যাটোর সদস্যপদ নিয়ে যারা সিদ্ধান্ত নেবে, সেই ইউক্রেন বা তাদের মিত্ররা রাশিয়ার স্বার্থ বিবেচনা করবে না। কিন্তু ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হলে তা রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশের নিরাপত্তা আরও জোরদার করবে। রাশিয়ার সাম্রাজ্যবাদের কফিনে শেষ পেরেকটি পড়লে রাশিয়ার নাগরিকেরা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবে। কারণ, রাশিয়ার নাগরিকেরা পুতিনের এই অমূলক উচ্চাকাঙ্ক্ষার দায় চুকিয়ে যাচ্ছেন।
জোসেফ স্তালিনের ওপর লেখা দুর্দান্ত এক জীবনীগ্রন্থে ঐতিহাসিক স্টিফেন কটকিন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখিয়েছেন, কীভাবে সোভিয়েত একনায়কেরা বহির্বিশ্বের হুমকির ভয় দেখিয়ে নিজেদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখে। বিদেশি শক্তির আগ্রাসন অত্যাসন্ন, রাজতন্ত্রের উত্থান শিগগিরই—এসব ভুয়া সতর্ক সংকেত দিয়ে তারা বিরোধী দলগুলোকে নিষিদ্ধ করেছিল, এমনকি কমিউনিস্ট পার্টির ভেতরেও ভিন্নমত দমন করেছিল। বিদেশি চরদের ধ্বংসের নামে, স্তালিন গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে বহু মানুষকে সরিয়ে দিয়ে মানুষের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করেছিলেন। কেউ তাঁকে চ্যালেঞ্জ করলেই তিনি তাঁকে বিদেশি শত্রুর চর—এমন মার্কা লাগিয়ে দিতেন।
স্তালিনের মৃত্যুর পর ১৯৫৩ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের এই পাশবিক ও দমনমূলক পরিস্থিতি কিছুটা সহজ হয়ে ওঠে। তবে তাঁর আমলের যে বিকৃত ধরন, তার ছাপ থেকে যায় প্রজন্মের পর প্রজন্ম। কারণ, তাঁর পরে যে সোভিয়েত নেতারা এসেছেন, তাঁরাও একলা চলো নীতি অনুসরণ করেছেন এবং ক্ষমতায় টিকে থাকতে সামরিক শক্তির আগ্রাসী বিস্তারে মনোযোগী হয়েছেন। এ অবস্থান ব্যর্থ হতে বাধ্য, হয়েছেও তা-ই। সামরিক খাতে বেশুমার ব্যয় ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙনের অন্যতম কারণ। যখন লাখ লাখ মানুষ রুটি, ডিম আর চিনির জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেছে, তখন সোভিয়েত ইউনিয়ন ট্যাংক আর মিসাইল নির্মাণে ব্যয় করেছে বিপুল অঙ্কের অর্থ।
পুতিন স্তালিনের এই শৈলীর সঙ্গে নতুন উপাদান যোগ করেছেন। দলের নেতাদের হাতে রাখতে স্তালিন ভয় দেখানোর নীতি নিয়েছিলেন, অন্যদিকে পুতিন সামরিক খাতকে ব্যবহার করেছেন তাঁর সঙ্গীসাথিদের বিলিয়ন ডলারের মালিক বানাতে। ইউক্রেনে যুদ্ধ পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে যাঁরা যে পর্যায়ে যুক্ত ছিলেন, পুতিন থেকে শুরু করে তাঁর প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু, নিরাপত্তা কাউন্সিল সেক্রেটারি নিকোলাই প্যাট্রুশেভ এবং মন্ত্রিসভার অন্য মন্ত্রীরা অপ্রত্যাশিত সম্পদের মালিক হয়েছেন গেল দশকে।
একইভাবে পুতিন ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা শুধু এই যুদ্ধ থেকেই অবিশ্বাস্য ধরনের লাভবান হয়েছেন। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন বলছে, প্যাট্রুশেভের ছেলে কার্লসবার্গ ও ড্যানোনের মতো খাবারের বিদেশি ফুড চেইন দখল করে নিয়েছেন। এ ছাড়া ১৯৯৯ সাল থেকে রাশিয়ার সামরিক বাজেট প্রতিবছর বেড়েছে। রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য হিসেবে সে খবর তারা কখনই প্রকাশ করেনি।
সামরিক ব্যয় নিয়ে এমন লুকোছাপার কারণে স্থানীয় সমরাস্ত্র প্রস্তুতকারকেরা প্রচুর লাভে পণ্য বিক্রি করছেন। স্বাভাবিক বাজারব্যবস্থায় যা সম্ভব ছিল না। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রথম বছরেই রাশিয়ার সামরিক-শিল্প কারখানা খাতে লাগামহীন ঘুষ আর দুর্নীতির খবর বেরিয়ে আসে।
পুতিনের সমর্থকেরা দাবি করেন, তাঁকে ছাড়া রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে হেরে যাবে। বাস্তবে রাশিয়া হারবে একজন শাসকের অন্যায্য যুদ্ধের কারণে, যে যুদ্ধ একটি অত্যন্ত ব্যক্তিগত, সামরিক শক্তিনির্ভর সরকারের তৈরি; যার একমাত্র উদ্দেশ্য ওই শাসক ও তাঁর সহযোগীদের ক্ষমতা ধরে রাখা এবং আরও ধনী হয়ে ওঠায় সহযোগিতা করা। যদি ইউক্রেন ন্যাটোয় যোগ দেয়, পুতিন ও ভবিষ্যতে তাঁর মতো যে নেতারা আসবেন, তাঁদের পক্ষে সাধারণ মানুষকে বোঝানো কঠিন হবে যে সামরিক খাতে এত ব্যয়ের প্রয়োজন আছে।
ইউক্রেনের ন্যাটোর সদস্যপদ নিয়ে যারা সিদ্ধান্ত নেবে, সেই ইউক্রেন বা তাদের মিত্ররা রাশিয়ার স্বার্থ বিবেচনা করবে না। কিন্তু ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হলে তা রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশের নিরাপত্তা আরও জোরদার করবে। রাশিয়ার সাম্রাজ্যবাদের কফিনে শেষ পেরেকটি পড়লে রাশিয়ার নাগরিকেরা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবে। কারণ, রাশিয়ার নাগরিকেরা পুতিনের এই অমূলক উচ্চাকাঙ্ক্ষার দায় চুকিয়ে যাচ্ছেন।
রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শেষে ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যুক্ত করা হবে, এমন একটা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ন্যাটো সম্মেলন শেষ হলো। ন্যাটো জোটে অন্তর্ভুক্তি ইউক্রেনের জন্য কতটা লাভজনক, তা ইতিমধ্যে পরিষ্কার হয়ে গেছে। এ ছাড়া ন্যাটোর বেশির ভাগ সদস্যও ইউক্রেনকে তাদের সম্ভাব্য সদস্য হিসেবে মেনে নিয়েছে। তবে এ মুহূর্তে ন্যাটোয় ইউক্রেনের যোগ দেওয়ার যে ইচ্ছা, তা অধরাই থেকে গেল।
তবে ইউক্রেন ও ন্যাটোর বর্তমান সদস্যরাই যে কেবল ইউক্রেনের ন্যাটোয় অন্তর্ভুক্তি থেকে লাভবান হবেন, বিষয়টা তা নয়। রাশিয়াও লাভবান হতে পারে। যদিও ন্যাটো জোটের বিস্তার ঠেকানোর জন্যই মূলত রাশিয়া ইউক্রেন দখল করে নিয়েছিল। ইউক্রেন ন্যাটোয় যুক্ত হতে পারলে তা রাশিয়াকে অস্ত্রশস্ত্র উৎপাদন ও সংরক্ষণের জন্য যে সম্পদের অপচয় করতে হয়, তা বন্ধ করে দেবে। যদিও রাতারাতি ক্রেমলিন মাথা থেকে রুশ সাম্রাজ্যকে অটুট রাখার আকাঙ্ক্ষা ঝেড়ে ফেলতে পারবে না। সিদ্ধান্ত গ্রহণে এর প্রভাব ক্রমশ কমবে। ঠিক ফিনল্যান্ডের মতোই ইউক্রেনের অন্তর্ভুক্তি যখন মোটামুটি নিশ্চিত হবে, তখন আর ন্যাটোয় ইউক্রেনের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে খুব বেশি মতানৈক্য হবে না।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও তাঁর মিত্রদের জন্য ইউক্রেনের ন্যাটোয় যোগদান দুঃসংবাদ। কিন্তু রুশ নাগরিকেরা এ থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে লাভবান হতে পারেন। সাম্রাজ্যবাদকে অটুট রাখার স্বপ্নের যখন মৃত্যু ঘটবে, তখন রাশিয়ার ভবিষ্যৎ নেতারা নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখতে হৃত রাজ্য পুনরুদ্ধার কিংবা একলা চলো নীতিকে আশ্রয় করবেন না। তার ওপর মস্কোয় একটি আধুনিক, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সরকার ‘ওয়েইমার রাশিয়া’র উত্থানকে ঠেকাবে, যেখানে একটি পরাজিত, অর্থনৈতিকভাবে পর্যুদস্ত রাষ্ট্র ভবিষ্যৎ অত্যাচারী শাসকদের প্রজননক্ষেত্র হয়ে উঠবে না।
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধে কত টাকা খরচ হয়েছে, তার হিসাব পাওয়া কঠিন। রক্ষণশীল হিসাবই বলছে, এ দ্বন্দ্বের অর্থনৈতিক ক্ষতি ব্যাপক। ২০ বছর ধরে রাশিয়া শেল, ট্যাংক, যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টারের মতো সামরিক সাজসরঞ্জাম কিনতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। এই অর্থ সরকারিভাবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মতো খাতে ব্যয় করা যেত।
সাদাচোখে যে খরচটা আমরা দেখতে পাচ্ছি, তা আসলে মোট ব্যয়ের খুবই সামান্য অংশ। বছরের পর বছর পুতিন সরকার রাশিয়ার অর্থনীতিকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বাজার থেকে আলাদা রেখেছে। কাজেই ২০০০ সালের পর থেকে রাশিয়ার অর্থনীতি নিস্তেজ হয়ে পড়ে, যা লিওনিদ ব্রেজনেভের আমলের অর্থনৈতিক স্থবিরতার সময়কে মনে করিয়ে দেয়। ২০০৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত উৎপাদন ও আয় কমেছে রাশিয়ার মোট দেশজ উৎপাদনের ১০-১৫ শতাংশ। ইউক্রেন দখলের কারণে এই অর্থনৈতিক সমস্যা আরও তীব্র হয়েছে। যখন ২০২২ সালে মোট দেশজ উৎপাদন ২-৩ শতাংশের মতো কমে যায়, তখন খুচরা বিক্রি কমে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ পর্যন্ত।
উপরন্তু বিপুলসংখ্যক উচ্চশিক্ষিত মানুষের প্রস্থান, বিকল্প আমদানির পথে রাশিয়ার যে কাঠামোগত পরিবর্তন তা জিডিপির সংখ্যায় প্রতিফলিত হয় না। ইউক্রেনে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করা হচ্ছে। এর ফলে অর্থনীতির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যে ক্ষতি হচ্ছে, তা পুষিয়ে নিতে বহু বছর লেগে যাবে।
এ কথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, ন্যাটোয় ইউক্রেন যুক্ত হলে পুতিন রাশিয়ার অর্থনীতিতে যে ক্ষতি করেছেন, তা পুষিয়ে যাবে না। কিন্তু যুদ্ধের পর অর্থনৈতিক উন্নয়নকে পাশ কাটিয়ে সামরিক খাতে উৎপাদনের ব্যয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া কঠিন হবে। ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে বৈশ্বিক বাজারে রাশিয়া আরও সহজে, দ্রুততার সঙ্গে ও নিরাপদে যুক্ত হতে পারবে। দ্রুত অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং অন্য দেশ দখলের জন্য তহবিল জোগাতে বাণিজ্য সম্পর্ককে ব্যবহার করাও বন্ধ হবে।
ইউক্রেনের ন্যাটোর সদস্যপদ নিয়ে যারা সিদ্ধান্ত নেবে, সেই ইউক্রেন বা তাদের মিত্ররা রাশিয়ার স্বার্থ বিবেচনা করবে না। কিন্তু ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হলে তা রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশের নিরাপত্তা আরও জোরদার করবে। রাশিয়ার সাম্রাজ্যবাদের কফিনে শেষ পেরেকটি পড়লে রাশিয়ার নাগরিকেরা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবে। কারণ, রাশিয়ার নাগরিকেরা পুতিনের এই অমূলক উচ্চাকাঙ্ক্ষার দায় চুকিয়ে যাচ্ছেন।
জোসেফ স্তালিনের ওপর লেখা দুর্দান্ত এক জীবনীগ্রন্থে ঐতিহাসিক স্টিফেন কটকিন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখিয়েছেন, কীভাবে সোভিয়েত একনায়কেরা বহির্বিশ্বের হুমকির ভয় দেখিয়ে নিজেদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখে। বিদেশি শক্তির আগ্রাসন অত্যাসন্ন, রাজতন্ত্রের উত্থান শিগগিরই—এসব ভুয়া সতর্ক সংকেত দিয়ে তারা বিরোধী দলগুলোকে নিষিদ্ধ করেছিল, এমনকি কমিউনিস্ট পার্টির ভেতরেও ভিন্নমত দমন করেছিল। বিদেশি চরদের ধ্বংসের নামে, স্তালিন গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে বহু মানুষকে সরিয়ে দিয়ে মানুষের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করেছিলেন। কেউ তাঁকে চ্যালেঞ্জ করলেই তিনি তাঁকে বিদেশি শত্রুর চর—এমন মার্কা লাগিয়ে দিতেন।
স্তালিনের মৃত্যুর পর ১৯৫৩ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের এই পাশবিক ও দমনমূলক পরিস্থিতি কিছুটা সহজ হয়ে ওঠে। তবে তাঁর আমলের যে বিকৃত ধরন, তার ছাপ থেকে যায় প্রজন্মের পর প্রজন্ম। কারণ, তাঁর পরে যে সোভিয়েত নেতারা এসেছেন, তাঁরাও একলা চলো নীতি অনুসরণ করেছেন এবং ক্ষমতায় টিকে থাকতে সামরিক শক্তির আগ্রাসী বিস্তারে মনোযোগী হয়েছেন। এ অবস্থান ব্যর্থ হতে বাধ্য, হয়েছেও তা-ই। সামরিক খাতে বেশুমার ব্যয় ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙনের অন্যতম কারণ। যখন লাখ লাখ মানুষ রুটি, ডিম আর চিনির জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেছে, তখন সোভিয়েত ইউনিয়ন ট্যাংক আর মিসাইল নির্মাণে ব্যয় করেছে বিপুল অঙ্কের অর্থ।
পুতিন স্তালিনের এই শৈলীর সঙ্গে নতুন উপাদান যোগ করেছেন। দলের নেতাদের হাতে রাখতে স্তালিন ভয় দেখানোর নীতি নিয়েছিলেন, অন্যদিকে পুতিন সামরিক খাতকে ব্যবহার করেছেন তাঁর সঙ্গীসাথিদের বিলিয়ন ডলারের মালিক বানাতে। ইউক্রেনে যুদ্ধ পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে যাঁরা যে পর্যায়ে যুক্ত ছিলেন, পুতিন থেকে শুরু করে তাঁর প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু, নিরাপত্তা কাউন্সিল সেক্রেটারি নিকোলাই প্যাট্রুশেভ এবং মন্ত্রিসভার অন্য মন্ত্রীরা অপ্রত্যাশিত সম্পদের মালিক হয়েছেন গেল দশকে।
একইভাবে পুতিন ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা শুধু এই যুদ্ধ থেকেই অবিশ্বাস্য ধরনের লাভবান হয়েছেন। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন বলছে, প্যাট্রুশেভের ছেলে কার্লসবার্গ ও ড্যানোনের মতো খাবারের বিদেশি ফুড চেইন দখল করে নিয়েছেন। এ ছাড়া ১৯৯৯ সাল থেকে রাশিয়ার সামরিক বাজেট প্রতিবছর বেড়েছে। রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য হিসেবে সে খবর তারা কখনই প্রকাশ করেনি।
সামরিক ব্যয় নিয়ে এমন লুকোছাপার কারণে স্থানীয় সমরাস্ত্র প্রস্তুতকারকেরা প্রচুর লাভে পণ্য বিক্রি করছেন। স্বাভাবিক বাজারব্যবস্থায় যা সম্ভব ছিল না। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রথম বছরেই রাশিয়ার সামরিক-শিল্প কারখানা খাতে লাগামহীন ঘুষ আর দুর্নীতির খবর বেরিয়ে আসে।
পুতিনের সমর্থকেরা দাবি করেন, তাঁকে ছাড়া রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে হেরে যাবে। বাস্তবে রাশিয়া হারবে একজন শাসকের অন্যায্য যুদ্ধের কারণে, যে যুদ্ধ একটি অত্যন্ত ব্যক্তিগত, সামরিক শক্তিনির্ভর সরকারের তৈরি; যার একমাত্র উদ্দেশ্য ওই শাসক ও তাঁর সহযোগীদের ক্ষমতা ধরে রাখা এবং আরও ধনী হয়ে ওঠায় সহযোগিতা করা। যদি ইউক্রেন ন্যাটোয় যোগ দেয়, পুতিন ও ভবিষ্যতে তাঁর মতো যে নেতারা আসবেন, তাঁদের পক্ষে সাধারণ মানুষকে বোঝানো কঠিন হবে যে সামরিক খাতে এত ব্যয়ের প্রয়োজন আছে।
ইউক্রেনের ন্যাটোর সদস্যপদ নিয়ে যারা সিদ্ধান্ত নেবে, সেই ইউক্রেন বা তাদের মিত্ররা রাশিয়ার স্বার্থ বিবেচনা করবে না। কিন্তু ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হলে তা রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশের নিরাপত্তা আরও জোরদার করবে। রাশিয়ার সাম্রাজ্যবাদের কফিনে শেষ পেরেকটি পড়লে রাশিয়ার নাগরিকেরা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবে। কারণ, রাশিয়ার নাগরিকেরা পুতিনের এই অমূলক উচ্চাকাঙ্ক্ষার দায় চুকিয়ে যাচ্ছেন।
রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শেষে ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যুক্ত করা হবে, এমন একটা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ন্যাটো সম্মেলন শেষ হলো। ন্যাটো জোটে অন্তর্ভুক্তি ইউক্রেনের জন্য কতটা লাভজনক, তা ইতিমধ্যে পরিষ্কার হয়ে গেছে। এ ছাড়া ন্যাটোর বেশির ভাগ সদস্যও ইউক্রেনকে তাদের সম্ভাব্য সদস্য হিসেবে মেনে নিয়েছে। তবে এ মুহূর্তে ন্যাটোয় ইউক্রেনের যোগ দেওয়ার যে ইচ্ছা, তা অধরাই থেকে গেল।
তবে ইউক্রেন ও ন্যাটোর বর্তমান সদস্যরাই যে কেবল ইউক্রেনের ন্যাটোয় অন্তর্ভুক্তি থেকে লাভবান হবেন, বিষয়টা তা নয়। রাশিয়াও লাভবান হতে পারে। যদিও ন্যাটো জোটের বিস্তার ঠেকানোর জন্যই মূলত রাশিয়া ইউক্রেন দখল করে নিয়েছিল। ইউক্রেন ন্যাটোয় যুক্ত হতে পারলে তা রাশিয়াকে অস্ত্রশস্ত্র উৎপাদন ও সংরক্ষণের জন্য যে সম্পদের অপচয় করতে হয়, তা বন্ধ করে দেবে। যদিও রাতারাতি ক্রেমলিন মাথা থেকে রুশ সাম্রাজ্যকে অটুট রাখার আকাঙ্ক্ষা ঝেড়ে ফেলতে পারবে না। সিদ্ধান্ত গ্রহণে এর প্রভাব ক্রমশ কমবে। ঠিক ফিনল্যান্ডের মতোই ইউক্রেনের অন্তর্ভুক্তি যখন মোটামুটি নিশ্চিত হবে, তখন আর ন্যাটোয় ইউক্রেনের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে খুব বেশি মতানৈক্য হবে না।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও তাঁর মিত্রদের জন্য ইউক্রেনের ন্যাটোয় যোগদান দুঃসংবাদ। কিন্তু রুশ নাগরিকেরা এ থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে লাভবান হতে পারেন। সাম্রাজ্যবাদকে অটুট রাখার স্বপ্নের যখন মৃত্যু ঘটবে, তখন রাশিয়ার ভবিষ্যৎ নেতারা নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখতে হৃত রাজ্য পুনরুদ্ধার কিংবা একলা চলো নীতিকে আশ্রয় করবেন না। তার ওপর মস্কোয় একটি আধুনিক, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সরকার ‘ওয়েইমার রাশিয়া’র উত্থানকে ঠেকাবে, যেখানে একটি পরাজিত, অর্থনৈতিকভাবে পর্যুদস্ত রাষ্ট্র ভবিষ্যৎ অত্যাচারী শাসকদের প্রজননক্ষেত্র হয়ে উঠবে না।
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধে কত টাকা খরচ হয়েছে, তার হিসাব পাওয়া কঠিন। রক্ষণশীল হিসাবই বলছে, এ দ্বন্দ্বের অর্থনৈতিক ক্ষতি ব্যাপক। ২০ বছর ধরে রাশিয়া শেল, ট্যাংক, যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টারের মতো সামরিক সাজসরঞ্জাম কিনতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। এই অর্থ সরকারিভাবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মতো খাতে ব্যয় করা যেত।
সাদাচোখে যে খরচটা আমরা দেখতে পাচ্ছি, তা আসলে মোট ব্যয়ের খুবই সামান্য অংশ। বছরের পর বছর পুতিন সরকার রাশিয়ার অর্থনীতিকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বাজার থেকে আলাদা রেখেছে। কাজেই ২০০০ সালের পর থেকে রাশিয়ার অর্থনীতি নিস্তেজ হয়ে পড়ে, যা লিওনিদ ব্রেজনেভের আমলের অর্থনৈতিক স্থবিরতার সময়কে মনে করিয়ে দেয়। ২০০৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত উৎপাদন ও আয় কমেছে রাশিয়ার মোট দেশজ উৎপাদনের ১০-১৫ শতাংশ। ইউক্রেন দখলের কারণে এই অর্থনৈতিক সমস্যা আরও তীব্র হয়েছে। যখন ২০২২ সালে মোট দেশজ উৎপাদন ২-৩ শতাংশের মতো কমে যায়, তখন খুচরা বিক্রি কমে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ পর্যন্ত।
উপরন্তু বিপুলসংখ্যক উচ্চশিক্ষিত মানুষের প্রস্থান, বিকল্প আমদানির পথে রাশিয়ার যে কাঠামোগত পরিবর্তন তা জিডিপির সংখ্যায় প্রতিফলিত হয় না। ইউক্রেনে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করা হচ্ছে। এর ফলে অর্থনীতির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যে ক্ষতি হচ্ছে, তা পুষিয়ে নিতে বহু বছর লেগে যাবে।
এ কথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, ন্যাটোয় ইউক্রেন যুক্ত হলে পুতিন রাশিয়ার অর্থনীতিতে যে ক্ষতি করেছেন, তা পুষিয়ে যাবে না। কিন্তু যুদ্ধের পর অর্থনৈতিক উন্নয়নকে পাশ কাটিয়ে সামরিক খাতে উৎপাদনের ব্যয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া কঠিন হবে। ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে বৈশ্বিক বাজারে রাশিয়া আরও সহজে, দ্রুততার সঙ্গে ও নিরাপদে যুক্ত হতে পারবে। দ্রুত অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং অন্য দেশ দখলের জন্য তহবিল জোগাতে বাণিজ্য সম্পর্ককে ব্যবহার করাও বন্ধ হবে।
ইউক্রেনের ন্যাটোর সদস্যপদ নিয়ে যারা সিদ্ধান্ত নেবে, সেই ইউক্রেন বা তাদের মিত্ররা রাশিয়ার স্বার্থ বিবেচনা করবে না। কিন্তু ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হলে তা রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশের নিরাপত্তা আরও জোরদার করবে। রাশিয়ার সাম্রাজ্যবাদের কফিনে শেষ পেরেকটি পড়লে রাশিয়ার নাগরিকেরা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবে। কারণ, রাশিয়ার নাগরিকেরা পুতিনের এই অমূলক উচ্চাকাঙ্ক্ষার দায় চুকিয়ে যাচ্ছেন।
জোসেফ স্তালিনের ওপর লেখা দুর্দান্ত এক জীবনীগ্রন্থে ঐতিহাসিক স্টিফেন কটকিন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখিয়েছেন, কীভাবে সোভিয়েত একনায়কেরা বহির্বিশ্বের হুমকির ভয় দেখিয়ে নিজেদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখে। বিদেশি শক্তির আগ্রাসন অত্যাসন্ন, রাজতন্ত্রের উত্থান শিগগিরই—এসব ভুয়া সতর্ক সংকেত দিয়ে তারা বিরোধী দলগুলোকে নিষিদ্ধ করেছিল, এমনকি কমিউনিস্ট পার্টির ভেতরেও ভিন্নমত দমন করেছিল। বিদেশি চরদের ধ্বংসের নামে, স্তালিন গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে বহু মানুষকে সরিয়ে দিয়ে মানুষের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করেছিলেন। কেউ তাঁকে চ্যালেঞ্জ করলেই তিনি তাঁকে বিদেশি শত্রুর চর—এমন মার্কা লাগিয়ে দিতেন।
স্তালিনের মৃত্যুর পর ১৯৫৩ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের এই পাশবিক ও দমনমূলক পরিস্থিতি কিছুটা সহজ হয়ে ওঠে। তবে তাঁর আমলের যে বিকৃত ধরন, তার ছাপ থেকে যায় প্রজন্মের পর প্রজন্ম। কারণ, তাঁর পরে যে সোভিয়েত নেতারা এসেছেন, তাঁরাও একলা চলো নীতি অনুসরণ করেছেন এবং ক্ষমতায় টিকে থাকতে সামরিক শক্তির আগ্রাসী বিস্তারে মনোযোগী হয়েছেন। এ অবস্থান ব্যর্থ হতে বাধ্য, হয়েছেও তা-ই। সামরিক খাতে বেশুমার ব্যয় ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙনের অন্যতম কারণ। যখন লাখ লাখ মানুষ রুটি, ডিম আর চিনির জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেছে, তখন সোভিয়েত ইউনিয়ন ট্যাংক আর মিসাইল নির্মাণে ব্যয় করেছে বিপুল অঙ্কের অর্থ।
পুতিন স্তালিনের এই শৈলীর সঙ্গে নতুন উপাদান যোগ করেছেন। দলের নেতাদের হাতে রাখতে স্তালিন ভয় দেখানোর নীতি নিয়েছিলেন, অন্যদিকে পুতিন সামরিক খাতকে ব্যবহার করেছেন তাঁর সঙ্গীসাথিদের বিলিয়ন ডলারের মালিক বানাতে। ইউক্রেনে যুদ্ধ পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে যাঁরা যে পর্যায়ে যুক্ত ছিলেন, পুতিন থেকে শুরু করে তাঁর প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু, নিরাপত্তা কাউন্সিল সেক্রেটারি নিকোলাই প্যাট্রুশেভ এবং মন্ত্রিসভার অন্য মন্ত্রীরা অপ্রত্যাশিত সম্পদের মালিক হয়েছেন গেল দশকে।
একইভাবে পুতিন ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা শুধু এই যুদ্ধ থেকেই অবিশ্বাস্য ধরনের লাভবান হয়েছেন। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন বলছে, প্যাট্রুশেভের ছেলে কার্লসবার্গ ও ড্যানোনের মতো খাবারের বিদেশি ফুড চেইন দখল করে নিয়েছেন। এ ছাড়া ১৯৯৯ সাল থেকে রাশিয়ার সামরিক বাজেট প্রতিবছর বেড়েছে। রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য হিসেবে সে খবর তারা কখনই প্রকাশ করেনি।
সামরিক ব্যয় নিয়ে এমন লুকোছাপার কারণে স্থানীয় সমরাস্ত্র প্রস্তুতকারকেরা প্রচুর লাভে পণ্য বিক্রি করছেন। স্বাভাবিক বাজারব্যবস্থায় যা সম্ভব ছিল না। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রথম বছরেই রাশিয়ার সামরিক-শিল্প কারখানা খাতে লাগামহীন ঘুষ আর দুর্নীতির খবর বেরিয়ে আসে।
পুতিনের সমর্থকেরা দাবি করেন, তাঁকে ছাড়া রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে হেরে যাবে। বাস্তবে রাশিয়া হারবে একজন শাসকের অন্যায্য যুদ্ধের কারণে, যে যুদ্ধ একটি অত্যন্ত ব্যক্তিগত, সামরিক শক্তিনির্ভর সরকারের তৈরি; যার একমাত্র উদ্দেশ্য ওই শাসক ও তাঁর সহযোগীদের ক্ষমতা ধরে রাখা এবং আরও ধনী হয়ে ওঠায় সহযোগিতা করা। যদি ইউক্রেন ন্যাটোয় যোগ দেয়, পুতিন ও ভবিষ্যতে তাঁর মতো যে নেতারা আসবেন, তাঁদের পক্ষে সাধারণ মানুষকে বোঝানো কঠিন হবে যে সামরিক খাতে এত ব্যয়ের প্রয়োজন আছে।
ইউক্রেনের ন্যাটোর সদস্যপদ নিয়ে যারা সিদ্ধান্ত নেবে, সেই ইউক্রেন বা তাদের মিত্ররা রাশিয়ার স্বার্থ বিবেচনা করবে না। কিন্তু ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হলে তা রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশের নিরাপত্তা আরও জোরদার করবে। রাশিয়ার সাম্রাজ্যবাদের কফিনে শেষ পেরেকটি পড়লে রাশিয়ার নাগরিকেরা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবে। কারণ, রাশিয়ার নাগরিকেরা পুতিনের এই অমূলক উচ্চাকাঙ্ক্ষার দায় চুকিয়ে যাচ্ছেন।
রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শেষে ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যুক্ত করা হবে, এমন একটা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ন্যাটো সম্মেলন শেষ হলো। ন্যাটো জোটে অন্তর্ভুক্তি ইউক্রেনের জন্য কতটা লাভজনক, তা ইতিমধ্যে পরিষ্কার হয়ে গেছে। এ ছাড়া ন্যাটোর বেশির ভাগ সদস্যও ইউক্রেনকে তাদের সম্ভাব্য সদস্য হিসেবে মেনে নিয়েছে। তবে এ মুহূর্তে ন্যাটোয় ইউক্রেনের যোগ দেওয়ার যে ইচ্ছা, তা অধরাই থেকে গেল।
তবে ইউক্রেন ও ন্যাটোর বর্তমান সদস্যরাই যে কেবল ইউক্রেনের ন্যাটোয় অন্তর্ভুক্তি থেকে লাভবান হবেন, বিষয়টা তা নয়। রাশিয়াও লাভবান হতে পারে। যদিও ন্যাটো জোটের বিস্তার ঠেকানোর জন্যই মূলত রাশিয়া ইউক্রেন দখল করে নিয়েছিল। ইউক্রেন ন্যাটোয় যুক্ত হতে পারলে তা রাশিয়াকে অস্ত্রশস্ত্র উৎপাদন ও সংরক্ষণের জন্য যে সম্পদের অপচয় করতে হয়, তা বন্ধ করে দেবে। যদিও রাতারাতি ক্রেমলিন মাথা থেকে রুশ সাম্রাজ্যকে অটুট রাখার আকাঙ্ক্ষা ঝেড়ে ফেলতে পারবে না। সিদ্ধান্ত গ্রহণে এর প্রভাব ক্রমশ কমবে। ঠিক ফিনল্যান্ডের মতোই ইউক্রেনের অন্তর্ভুক্তি যখন মোটামুটি নিশ্চিত হবে, তখন আর ন্যাটোয় ইউক্রেনের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে খুব বেশি মতানৈক্য হবে না।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও তাঁর মিত্রদের জন্য ইউক্রেনের ন্যাটোয় যোগদান দুঃসংবাদ। কিন্তু রুশ নাগরিকেরা এ থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে লাভবান হতে পারেন। সাম্রাজ্যবাদকে অটুট রাখার স্বপ্নের যখন মৃত্যু ঘটবে, তখন রাশিয়ার ভবিষ্যৎ নেতারা নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখতে হৃত রাজ্য পুনরুদ্ধার কিংবা একলা চলো নীতিকে আশ্রয় করবেন না। তার ওপর মস্কোয় একটি আধুনিক, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সরকার ‘ওয়েইমার রাশিয়া’র উত্থানকে ঠেকাবে, যেখানে একটি পরাজিত, অর্থনৈতিকভাবে পর্যুদস্ত রাষ্ট্র ভবিষ্যৎ অত্যাচারী শাসকদের প্রজননক্ষেত্র হয়ে উঠবে না।
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধে কত টাকা খরচ হয়েছে, তার হিসাব পাওয়া কঠিন। রক্ষণশীল হিসাবই বলছে, এ দ্বন্দ্বের অর্থনৈতিক ক্ষতি ব্যাপক। ২০ বছর ধরে রাশিয়া শেল, ট্যাংক, যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টারের মতো সামরিক সাজসরঞ্জাম কিনতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। এই অর্থ সরকারিভাবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মতো খাতে ব্যয় করা যেত।
সাদাচোখে যে খরচটা আমরা দেখতে পাচ্ছি, তা আসলে মোট ব্যয়ের খুবই সামান্য অংশ। বছরের পর বছর পুতিন সরকার রাশিয়ার অর্থনীতিকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বাজার থেকে আলাদা রেখেছে। কাজেই ২০০০ সালের পর থেকে রাশিয়ার অর্থনীতি নিস্তেজ হয়ে পড়ে, যা লিওনিদ ব্রেজনেভের আমলের অর্থনৈতিক স্থবিরতার সময়কে মনে করিয়ে দেয়। ২০০৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত উৎপাদন ও আয় কমেছে রাশিয়ার মোট দেশজ উৎপাদনের ১০-১৫ শতাংশ। ইউক্রেন দখলের কারণে এই অর্থনৈতিক সমস্যা আরও তীব্র হয়েছে। যখন ২০২২ সালে মোট দেশজ উৎপাদন ২-৩ শতাংশের মতো কমে যায়, তখন খুচরা বিক্রি কমে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ পর্যন্ত।
উপরন্তু বিপুলসংখ্যক উচ্চশিক্ষিত মানুষের প্রস্থান, বিকল্প আমদানির পথে রাশিয়ার যে কাঠামোগত পরিবর্তন তা জিডিপির সংখ্যায় প্রতিফলিত হয় না। ইউক্রেনে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করা হচ্ছে। এর ফলে অর্থনীতির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যে ক্ষতি হচ্ছে, তা পুষিয়ে নিতে বহু বছর লেগে যাবে।
এ কথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, ন্যাটোয় ইউক্রেন যুক্ত হলে পুতিন রাশিয়ার অর্থনীতিতে যে ক্ষতি করেছেন, তা পুষিয়ে যাবে না। কিন্তু যুদ্ধের পর অর্থনৈতিক উন্নয়নকে পাশ কাটিয়ে সামরিক খাতে উৎপাদনের ব্যয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া কঠিন হবে। ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে বৈশ্বিক বাজারে রাশিয়া আরও সহজে, দ্রুততার সঙ্গে ও নিরাপদে যুক্ত হতে পারবে। দ্রুত অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং অন্য দেশ দখলের জন্য তহবিল জোগাতে বাণিজ্য সম্পর্ককে ব্যবহার করাও বন্ধ হবে।
ইউক্রেনের ন্যাটোর সদস্যপদ নিয়ে যারা সিদ্ধান্ত নেবে, সেই ইউক্রেন বা তাদের মিত্ররা রাশিয়ার স্বার্থ বিবেচনা করবে না। কিন্তু ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হলে তা রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশের নিরাপত্তা আরও জোরদার করবে। রাশিয়ার সাম্রাজ্যবাদের কফিনে শেষ পেরেকটি পড়লে রাশিয়ার নাগরিকেরা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবে। কারণ, রাশিয়ার নাগরিকেরা পুতিনের এই অমূলক উচ্চাকাঙ্ক্ষার দায় চুকিয়ে যাচ্ছেন।
জোসেফ স্তালিনের ওপর লেখা দুর্দান্ত এক জীবনীগ্রন্থে ঐতিহাসিক স্টিফেন কটকিন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখিয়েছেন, কীভাবে সোভিয়েত একনায়কেরা বহির্বিশ্বের হুমকির ভয় দেখিয়ে নিজেদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখে। বিদেশি শক্তির আগ্রাসন অত্যাসন্ন, রাজতন্ত্রের উত্থান শিগগিরই—এসব ভুয়া সতর্ক সংকেত দিয়ে তারা বিরোধী দলগুলোকে নিষিদ্ধ করেছিল, এমনকি কমিউনিস্ট পার্টির ভেতরেও ভিন্নমত দমন করেছিল। বিদেশি চরদের ধ্বংসের নামে, স্তালিন গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে বহু মানুষকে সরিয়ে দিয়ে মানুষের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করেছিলেন। কেউ তাঁকে চ্যালেঞ্জ করলেই তিনি তাঁকে বিদেশি শত্রুর চর—এমন মার্কা লাগিয়ে দিতেন।
স্তালিনের মৃত্যুর পর ১৯৫৩ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের এই পাশবিক ও দমনমূলক পরিস্থিতি কিছুটা সহজ হয়ে ওঠে। তবে তাঁর আমলের যে বিকৃত ধরন, তার ছাপ থেকে যায় প্রজন্মের পর প্রজন্ম। কারণ, তাঁর পরে যে সোভিয়েত নেতারা এসেছেন, তাঁরাও একলা চলো নীতি অনুসরণ করেছেন এবং ক্ষমতায় টিকে থাকতে সামরিক শক্তির আগ্রাসী বিস্তারে মনোযোগী হয়েছেন। এ অবস্থান ব্যর্থ হতে বাধ্য, হয়েছেও তা-ই। সামরিক খাতে বেশুমার ব্যয় ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙনের অন্যতম কারণ। যখন লাখ লাখ মানুষ রুটি, ডিম আর চিনির জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেছে, তখন সোভিয়েত ইউনিয়ন ট্যাংক আর মিসাইল নির্মাণে ব্যয় করেছে বিপুল অঙ্কের অর্থ।
পুতিন স্তালিনের এই শৈলীর সঙ্গে নতুন উপাদান যোগ করেছেন। দলের নেতাদের হাতে রাখতে স্তালিন ভয় দেখানোর নীতি নিয়েছিলেন, অন্যদিকে পুতিন সামরিক খাতকে ব্যবহার করেছেন তাঁর সঙ্গীসাথিদের বিলিয়ন ডলারের মালিক বানাতে। ইউক্রেনে যুদ্ধ পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে যাঁরা যে পর্যায়ে যুক্ত ছিলেন, পুতিন থেকে শুরু করে তাঁর প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু, নিরাপত্তা কাউন্সিল সেক্রেটারি নিকোলাই প্যাট্রুশেভ এবং মন্ত্রিসভার অন্য মন্ত্রীরা অপ্রত্যাশিত সম্পদের মালিক হয়েছেন গেল দশকে।
একইভাবে পুতিন ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা শুধু এই যুদ্ধ থেকেই অবিশ্বাস্য ধরনের লাভবান হয়েছেন। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন বলছে, প্যাট্রুশেভের ছেলে কার্লসবার্গ ও ড্যানোনের মতো খাবারের বিদেশি ফুড চেইন দখল করে নিয়েছেন। এ ছাড়া ১৯৯৯ সাল থেকে রাশিয়ার সামরিক বাজেট প্রতিবছর বেড়েছে। রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য হিসেবে সে খবর তারা কখনই প্রকাশ করেনি।
সামরিক ব্যয় নিয়ে এমন লুকোছাপার কারণে স্থানীয় সমরাস্ত্র প্রস্তুতকারকেরা প্রচুর লাভে পণ্য বিক্রি করছেন। স্বাভাবিক বাজারব্যবস্থায় যা সম্ভব ছিল না। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রথম বছরেই রাশিয়ার সামরিক-শিল্প কারখানা খাতে লাগামহীন ঘুষ আর দুর্নীতির খবর বেরিয়ে আসে।
পুতিনের সমর্থকেরা দাবি করেন, তাঁকে ছাড়া রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে হেরে যাবে। বাস্তবে রাশিয়া হারবে একজন শাসকের অন্যায্য যুদ্ধের কারণে, যে যুদ্ধ একটি অত্যন্ত ব্যক্তিগত, সামরিক শক্তিনির্ভর সরকারের তৈরি; যার একমাত্র উদ্দেশ্য ওই শাসক ও তাঁর সহযোগীদের ক্ষমতা ধরে রাখা এবং আরও ধনী হয়ে ওঠায় সহযোগিতা করা। যদি ইউক্রেন ন্যাটোয় যোগ দেয়, পুতিন ও ভবিষ্যতে তাঁর মতো যে নেতারা আসবেন, তাঁদের পক্ষে সাধারণ মানুষকে বোঝানো কঠিন হবে যে সামরিক খাতে এত ব্যয়ের প্রয়োজন আছে।
ইউক্রেনের ন্যাটোর সদস্যপদ নিয়ে যারা সিদ্ধান্ত নেবে, সেই ইউক্রেন বা তাদের মিত্ররা রাশিয়ার স্বার্থ বিবেচনা করবে না। কিন্তু ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হলে তা রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশের নিরাপত্তা আরও জোরদার করবে। রাশিয়ার সাম্রাজ্যবাদের কফিনে শেষ পেরেকটি পড়লে রাশিয়ার নাগরিকেরা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবে। কারণ, রাশিয়ার নাগরিকেরা পুতিনের এই অমূলক উচ্চাকাঙ্ক্ষার দায় চুকিয়ে যাচ্ছেন।