খাদ্য নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ বাড়তে থাকায় বেশ কিছুদিন ধরে এই চুক্তির জন্য তুরস্ক এবং জাতিসংঘ রাশিয়া ও ইউক্রেনের ভেতর মধ্যস্থতা করছিল। শেষ পর্যন্ত আজ শুক্রবার (২২ জুলাই) তুরস্কের ইস্তাম্বুলে একটি চুক্তি হয়েছে যাতে রাশিয়া ও ইউক্রেন ছাড়াও জাতিসংঘ এবং তুরস্ক সই করেছে।
ইস্তাম্বুলে গিয়ে রাশিয়ার হয়ে চুক্তিতে সই করেন তাদের প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রতিরক্ষামন্ত্রী শোইগু। ইউক্রেনের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন সে দেশের অবকাঠামো বিষয়ক মন্ত্রী ওলেকসান্দার কুবরাকভ।
চুক্তির ফলে আওতায় রাশিয়া কৃষ্ণসাগরে তাদের অবরোধ শিথিল করবে যাতে ইউক্রেন থেকে জাহাজে করে খাদ্য রপ্তানি হতে পারে। তুরস্ক বলছে, এই চুক্তির ফলে শুধু ইউক্রেন নয়, কৃষ্ণসাগর দিয়ে রাশিয়ার খাদ্য রপ্তানিও সহজ হবে।
পাঁচ মাস আগে যুদ্ধ শুরুর পরপরই রাশিয়া ইউক্রেনের উপকূলের কাছে কৃষ্ণসাগরে নৌ অবরোধ দিলে ইউক্রেনের রপ্তানি মুখ থুবড়ে পড়ে।
ইউক্রেন জুড়ে বিভিন্ন গুদামে প্রচুর খাদ্যশস্য মাসের পর মাস রপ্তানির জন্য পড়ে রয়েছে। কৃষ্ণসাগর তীরবর্তী ওডেসা বন্দরে গুদামেই এখন দুই কোটি টনের মত খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে।
এগুলো এখন আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন যেসব দেশে খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে সেখানে রপ্তানি করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যে মাত্রায় অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে তাতে এই চুক্তি শেষ পর্যন্ত কতটা কাজ করবে এবং কতদিন তা টিকবে তা নিয়ে পর্যবেক্ষকদের মধ্যে যথেষ্ট আশংকা রয়েছে।
বিবিসির কূটনৈতিক সংবাদদাতা পল অ্যাডামস বলছেন, কাগজে কলমে চুক্তি সবার জন্য অত্যন্ত সুখবর। পাঁচ মাস বাদে ইউক্রেন খাদ্য রপ্তানির সুযোগ পাচ্ছে। ফলে, যেসব দেশে ইউক্রেনের গম ও তেল বীজের ওপর নির্ভরশীল তারা কিছুটা হলেও হাফ ছেড়ে বাঁচবে।।
চুক্তি হতে যাচ্ছে তা নিশ্চিত হওয়ার পরপরই বিশ্ব বাজারে গমের দাম বেশ কিছুটা পড়ে গেছে।
তার নিজের খাদ্য রপ্তানিতে রাশিয়ারও কিছু অসুবিধা দূর হবে। সবচেয়ে বড় কথা, খাদ্যকে রাশিয়া অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে এবং বহু দেশে দুর্ভিক্ষের কারণ হচ্ছে বলে যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে তা খণ্ডনের একটি সুযোগ রাশিয়া পাবে।
কিন্তু পল অ্যাডামস বলছেন, এমন অনেক ঝুঁকি রয়েছে যাতে যে কোনো সময় এই চুক্তি ধসে পড়তে পারে।
প্রথম কথা, রাশিয়া যাতে সাগর পথে সৈন্য সমাবেশ না করতে পারে তার জন্য কৃষ্ণসাগরে উপকূলের কাছে বিশাল এলাকায় মাইন পেতে রেখেছে ইউক্রেন। জাহাজ বন্দরে ভেড়ার জন্য এখন তাদেরকে সাগরে মাইন-মুক্ত ‘সেফ প্যাসেজ’ নিশ্চিত করতে হবে।
ইউক্রেনের ভয়, সেটা করলে ভবিষ্যতে রাশিয়ার সেনাবাহিনী ভবিষ্যতে তার সুযোগ নিতে পারে।
এক বিবৃতিতে বৃহস্পতিবার রাতে ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলের নিরাপত্তার গ্যারান্টি এবং কৃষ্ণসাগরে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর ‘শক্ত সামরিক অবস্থান’ অব্যাহত রাখার গ্যারান্টি দেয়া হলেই তারা এই চুক্তিতে সই করবে।
অন্যদিকে, রাশিয়ার শর্ত যে খাদ্য রপ্তানির সূত্রে ইউক্রেন যেন কোনোভাবেই সাগর পথে অস্ত্র নিয়ে না আসতে পারে।
শিপিং কোম্পানিগুলো ইউক্রেনের বন্দরগুলোতে যেতে কতটা আগ্রহী হবে সেটা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। কারণ, সাগরে কোনও একটি জাহাজে একটি বিস্ফোরণ হলেই এই চুক্তি ভেস্তে যাবে। এরপর কোনও জাহাজই আর ধারে কাছে ভিড়বে না।