ইউরোপের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র জাপোরিজ্জার পরমাণু চুল্লির জ্বালানি সঞ্চয়কারী ভবনের ছাদে আঘাত করেছে ইউক্রেনের আর্টিলারি শেল।
ইউক্রেনীয় সেনাদের এই হামলায় শেলের আঘাতে ভবনের ছাদ ভেঙে পড়েছে এবং হামলার সময় চুল্লির জন্য জ্বালানি তেল মজুত করা হচ্ছিল।
জাপোরিজ্জা অঞ্চলে রাশিয়ার নিয়োগকৃত মুখপাত্র ভ্লাদিমির রোগভ সোমবার টেলিগ্রামে শেলের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত জ্বালানি সঞ্চয়কারী ভবনের ছবি পোস্ট করেছেন- যেখানে দেখা যায় শেলের আঘাতে ভবনের ছাদ ফুটো হয়ে গেছে।
তবে রোগভের টেলিগ্রাম পোস্টে ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত জানানো হয়নি।
কামিকাজি ড্রোন (আত্মঘাতী ড্রোন) ও আমেরিকার দেয়া আর্টিলারি অস্ত্র দিয়ে পারমাণবিক প্রকল্পে এবং এর নিকটবর্তী শহর এনারগোদায় হামলা চালাচ্ছে ইউক্রেনীয় সেনারা- এমন প্রমাণ জাতিসংঘের কাছে সরবরাহ করার দাবি করেছে ক্রেমলিন।
এদিকে এই প্রথমবারের মতো জাপোরিজ্জা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের আশপাশের এলাকায় ইউক্রেনীয় বাহিনী হামলা করে থাকতে পারে বলে স্বীকার করে নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের এক জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা। তবে তিনি একই সঙ্গে জোর দিয়ে বলেছেন, এমনটা হতে পারে কেবল রাশিয়ার হামলার প্রতিক্রিয়ায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কর্মকর্তা বলেন, আমি নিশ্চিত জানি যে রুশ সেনারা প্ল্যান্টের চারপাশ থেকে গুলি চালাচ্ছে এবং আমি এও বলতে চাই না যে ইউক্রেনীয়রা এর জবাবে গুলি করেনি। আমি মনে করি, তাদের থাকার (ইউক্রেনীয় সেনাদের গুলি করার) সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে একই সঙ্গে সেই কর্মকর্তা দাবি করেন, ইউক্রেনীয়রা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে হামলার সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে খুবই সচেতন।
গত মার্চেই রুশ সেনারা জাপোরিজ্জা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। রাশিয়ার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, তারা পারমাণবিক প্রকল্প এলাকা সুরক্ষিত করেছেন এবং ইউক্রেনীয় কর্মীরাও সেখানে নির্বিঘ্নে কাজ করছেন।
যদিও কিয়েভের দাবি, রাশিয়া পারমাণবিক প্রকল্প এলাকাকে সামরিক ঘাঁটিতে পরিণত করেছে এবং সেখান থেকে ইউক্রেনীয় সেনা অবস্থানে হামলা চালাচ্ছে।
কিয়েভ বলছে, রাশিয়াকে অবশ্যই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ ইউক্রেনের হাতে তুলে দিতে হবে এবং অন্ততপক্ষে এর আশপাশের ৩০ কিলোমিটার এলাকা নিরস্ত্রীকরণ করতে হবে।
সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবিও নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান জানিয়েছেন।
তবে রাশিয়া বলছে ইউক্রেনের হামলাই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে হুমকিতে ফেলছে।
গত ১১ আগস্ট জাতিসংঘে রাশিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা পরিষদে বলেছিলেন, কিয়েভের বেপরোয়া কর্মকাণ্ড বিশ্বকে বড় পারমাণবিক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
তিনি সে সময় বলেন, ‘আমরা বারবার আমাদের পশ্চিমা সহকর্মীদের সতর্ক করে দিয়েছি যে, তারা কিয়েভের সঙ্গে কথা বলতে ব্যর্থ হলে এটি সবচেয়ে জঘন্য ও বেপরোয়া পদক্ষেপ নেবে, যার পরিণতি ইউক্রেনের বাইরেও পড়বে।’
ভ্যাসিলি এ সময় পশ্চিমাদের উদ্দেশে বলেন, যেকোনো পারমাণবিক বিপর্যয়ের জন্য কিয়েভের পশ্চিমা সমর্থকদেরই দায় বহন করতে হবে।
তার মতে, পারমাণবিক অবকাঠামোতে কিয়েভের অপরাধমূলক আক্রমণ বিশ্বকে একটি পারমাণবিক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিচ্ছে, যা চেরনোবিলের মতো ঘটনার জন্ম দেবে এবং ইউরোপকে সবচেয়ে বড় তেজস্ক্রিয় দূষণের দিকে নিয়ে যাবে। এর প্রভাব রাজধানী কিয়েভসহ অন্তত আটটি ইউক্রেনীয় অঞ্চলকে প্রভাবিত করতে পারে।
এ ছাড়া লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক ছাড়াও মলদোভা, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া ও বেলারুশেরও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।