বিভিন্ন দেশ থেকে ইউরোপের দেশগুলোতে আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদন বেড়েছে। গত বছর প্রায় ৬ লাখ ৪৮ হাজার ব্যক্তি আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন, যা ২০২০ সালের তুলনায় ৩৩ শতাংশ বেশি। শীর্ষ ছয় আবেদনকারী দেশের তালিকায় বাংলাদেশও রয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের আশ্রয়প্রার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইইউএএ) প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। ৩৮৫ পৃষ্ঠার বার্ষিক প্রতিবেদনটি সংস্থার ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে।
ইইউএএ ২০২১ সালের পরিস্থিতির পাশাপাশি ২০২২ সালের প্রথমদিকের পরিস্থিতি, বিশেষ করে ইউক্রেনে রুশ হামলার প্রভাবে সৃষ্ট পরিস্থিতি তুলে ধরেছে। ইউরোপে গত ৩০ বছরের মধ্যে প্রথম স্থলযুদ্ধের প্রভাব বিশ্বের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত আবেদনকারীর হার মোটামুটি স্থিতিশীল ছিল। সেপ্টেম্ব্বর থেকে নভেম্বরের দিকে সংখ্যাটি বাড়তে থাকে। বিশেষ করে আফগানিস্তান ও সিরিয়ার মানুষের আবেদনের হার বেড়ে যাওয়ায় এই সংখ্যা হঠাৎ বৃদ্ধি পায়।
এতে বলা হয়, আশ্রয়প্রার্থীর আবেদনের তালিকার শীর্ষে রয়েছে সিরিয়া। দেশটি থেকে ১ লাখ ১৭ হাজার মানুষ আশ্রয়ের আবেদন করেছেন। এর পরের অবস্থান যথাক্রমে- আফগানিস্তান (১ লাখ ২ হাজার), ইরাক (৩০ হাজার), পাকিস্তান ও তুরস্ক (২৫ হাজার করে) এবং বাংলাদেশ (২০ হাজার)।
ইইউর বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে ৬ লাখ ৪৮ হাজার আশ্রয়প্রার্থীর আবেদনের মধ্যে ৫ লাখ ৩৫ হাজার আবেদন প্রাথমিকভাবে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ১ লাখ ১৮ হাজার ব্যক্তিকে শরণার্থীর মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। সম্পূরক সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে ৬৪ হাজার আবেদনকারীকে। আশ্রয় চেয়ে সবচেয়ে বেশি আবেদন পড়েছে ফ্রান্সে (১ লাখ ৯১ হাজার), স্পেনে (৬৫ হাজার) ও ইতালিতে (৫৩ হাজার)। আবেদনকারীদের ৭০ শতাংশই পুরুষ। ৬ লাখ ৪৮ হাজার আবেদনকারীর অর্ধেকের বয়স ১৮ থেকে ৩৪ বছর। সঙ্গীহীন কিশোরের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশের বয়স ১৬-১৭ বছর।প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬ থেকে ‘২০ সাল- এই পাঁচ বছরে ইউরোপের দেশগুলোতে বাংলাদেশি আশ্রয়প্রার্থীর আবেদন প্রতিবছর ১১ হাজারের বেশি। করোনা সংক্রমণ শুরুর বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে সংখ্যাটি ছিল ১১ হাজার ৫৭০। এ ছাড়া ২০১৬ থেকে ‘১৯ সাল পর্যন্ত চার বছরে আবেদনের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১৫ হাজার, ১৮ হাজার ৮৬৫, ১৩ হাজার ৭৪০, ১৫ হাজার ৮৪৫ এবং ১১ হাজার ৫৭০। আর ২০২১ সালে ২০ হাজার ১১০টি আবেদন পড়েছে।
সঙ্গীহীন কিশোর-কিশোরীদের আবেদনকারী শীর্ষ তিন দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম আছে। গত বছর আফগানিস্তান, সিরিয়া ও বাংলাদেশ থেকে আবেদনকারীর সংখ্যা যথাক্রমে- ১২ হাজার ৫৭৫, ৩ হাজার ৮৬০ ও ১ হাজার ৩৪০। ইউরোপের দেশগুলোতে আশ্রয়ের আবেদন করে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে এমন শীর্ষ পাঁচ দেশের তালিকায়ও রয়েছে বাংলাদেশ। সিরিয়া, পাকিস্তান, কলম্বিয়া, নাইজেরিয়া ও বাংলাদেশের সংখ্যা যথাক্রমে- ২৩ হাজার ৯৮৫, ২০ হাজার ৮৭৫, ২০ হাজার ৪৫০, ১৬ হাজার ৯১০ ও ১৫ হাজার ৯৩৫।
ইইউএএর নির্বাহী পরিচালক নিনা গ্রেগোরি বলেছেন, তিনটি কারণে আবেদনপ্রার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ওপর বেলারুশ সরকারের নিপীড়ন, আফগানিস্তানে তালেবানের ক্ষমতায় ফেরা ও ইউক্রেন যুদ্ধ।