পাসপোর্ট জটিলতায় ইতালির রোমে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে প্রবাসী বাংলাদেশি হামলা চালিয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট জটিলতার সমাধান না হলে আত্মহত্যার হুমকিও দিয়েছেন তারা। ইতালিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, পাসপোর্ট জটিলতার বিষয়টি তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছেন। সরকারের নীতি নির্ধারনী পর্যায়ের সিদ্ধান্ত ছাড়া এই জটিলতা নিরসন সম্ভব না।
ইতালিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. শামীম আহসান বুধবার সকালে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘ইতালিতে অনেক বাংলাদেশি অবৈধপথে আসে। এই সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি হবে। অবৈধপথে আসা প্রবাসীদেরই পাসপোর্ট জটিলতায় ভুগতে হয়। তবে গত মঙ্গলবার কমবেশি ৭০-৮০ জন প্রবাসী দূতাবাসে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের বিষয়টা অন্যদের থেকে ভীন্ন। তারা অবৈধপথে ইতালি প্রবেশ করে তাদের প্রকৃত পাসপোর্ট ফেলে দিয়ে বয়স কম দেখিয়ে ইতালির কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে শরণার্থীর ডকুমেন্ট সংগ্রহ করেছে। ওই শরণার্থীর ডকুমেন্ট এ এরা সকলেই কমপক্ষে ৬ থেকে সর্বোচচ ২৫ বছর পর্যন্ত বয়স কম দেখিয়ে নিজেদের নাবালক হিসেবে উপস্থাপন করেছে। বয়স কমিয়ে নাবালক হিসেবে দেখানোর কারণ হচ্ছে ইতালি সরকারের নিয়ম অনুযায়ী নাবালকদের জন্য বিশেষ সুবিধা রয়েছে।
তিনি বলেন, বয়স কম দেখিয়ে ইতালি সরকারের কাছ থেকে যে ডকুমেন্ট সংগ্রহ করেছে তার মেয়াদ ৬ মাসের এবং এটা বসবাসের অস্থায়ী পাস। স্থায়ী হওয়ার জন্য তাদের পাসপোর্ট নিয়ে আবেদন করতে হবে। তারা যখন পাসপোর্টের আবেদন করেছে তখন সেই আবেদনেও বয়স কমিয়ে দেখাচ্ছে। কিন্তু পাসপোর্ট এখন ডিজিটাল এবং তথ্য ভাণ্ডারে সকলের তথ্যই সংরক্ষণ করা আছে। ফলে তাদের আবেদন সিস্টেমে গিয়ে আটকে যাচ্ছে। এর মধ্যে বিষয়টি ইতালির মিশন থেকে বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে উপস্থাপন করলে এমন ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত বয়স কমানোর সুযোগ দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু গত মঙ্গলবার দূতাবাসে যারা অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটিয়েছে তারা সকলেই কমপক্ষে ৬ থেকে সর্বোচ্চ ২৫ বছর পর্যন্ত বয়স কমিয়ে দেখাতে চায়। আর ৫ বছর পর্যন্ত বয়স কমিয়ে দেখানোর সরকারি সুযোগও গত ২৭ এপ্রিল শেষ হয়ে গেছে।’
রাষ্ট্রদূত বলেন, দূতাবাসে অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্য দায়ীরা দেড় মাস আগে এই বিষয়ে মানববন্ধনও করেছিল এবং একাধিকবার শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করেছিল। কিন্তু গত মঙ্গলবার তারা দূতাবাসে আক্রমণ করার চেষ্টা চালায়। আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ায় তারা দূতাবাসের মূল ভবনে প্রবেশ করতে পারেনি। দূতাবাসের মূল ভবনের বাইরের দুইটি গেইটের গ্লাস তাদের আক্রমণে ফেটে যায়। তবে দূতাবাসের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। আমরা দূতাবাসের ৫ জন কর্মকর্তা ওইদিন বিক্ষোভকারীদের শান্ত করে তাদের সঙ্গে দুই ঘণ্টা বৈঠক করে জানিয়েছি যে বয়স কম দেখিয়ে পাসপোর্ট করার এই সমাধান দূতাবাসের পক্ষে করা সম্ভব না। এরই মধ্যে দূতাবাস থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত আসলেই বিষয়টির সমাধান সম্ভব। পরবর্তীতে তারা দুইটি স্মারকলিপি দিয়েছেন এবং ১৫ দিনের মধ্যে সমাধান না আসলে আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছে। বিষয়টি এরই মধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্টদের জানান হয়েছে। দূতাবাস এখন সরকারের নীতি নির্ধারনী পর্যায়ের নির্দেশের অপেক্ষায়।’