ইরানের ব্যাপক অংশজুড়ে অসন্তোষ বাড়ছে এবং সরকার বিরোধী বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ ক্রমেই আরও সহিংস হয়ে উঠছে।
সরকার বিরোধী বিক্ষোভকারীরা পশ্চিম ইরানে কুর্দি সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি শহরের বড় অংশ বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে দখল করে রেখেছিল বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। তারা বলছে, শহরটি থেকে অনেক সরকারি কর্মকর্তা পালিয়ে গেছেন এবং নিরাপত্তা বাহিনী সেখান থেকে পিছু হটছে।
গত রাতের ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, ইরাক সীমান্তের নিকটবর্তী ওশনাভিয়েহ শহরের বেশিরভাগ অংশ বিক্ষোভকারীদের নিয়ন্ত্রণে। শহরের মানুষের কাছে তিনি জানতে পেরেছেন, শহরটি থেকে অনেক সরকারি কর্মকর্তা পালিয়ে গেছেন এবং নিরাপত্তা বাহিনী সেখান থেকে পিছু হটছে।
ওশনাভিয়েহ শহরের বিক্ষোভকারীরা দাবি করছেন কয়েকদিন ধরে সহিংস সংঘাতের পর নিরাপত্তা বাহিনীকে তারা শহরছাড়া করেছেন। যদিও সরকারি একটি সংবাদ সংস্থা বলছে শহরের নিয়ন্ত্রণ এখনও সরকারি বাহিনীর হাতেই রয়েছে।
সবশেষ পাওয়া খবরে জানা গেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী আবার শহরে তাদের নিয়ন্ত্রণ কায়েম করেছে।
কুর্দিস্তানের সীমান্তবর্তী ওশনাভিয়েহ শহর থেকে সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে বিক্ষোভকারীদের বিশাল দল শহরের রাস্তা দিয়ে মিছিল করে যাচ্ছে, সেখানে কোন পুলিশ নেই এবং জোর বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে।
অসন্তোষ বাড়ছে
ইরানে ৮০টির বেশি শহর জুড়ে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে। সরকার বিরোধী বিক্ষোভকারী এবং পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ ক্রমেই আরও সহিংস হয়ে উঠছে।
ইরানের এক সংবাদদাতা জানাচ্ছেন বিক্ষোভের সপ্তম দিনে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা অনেক ভিডিওতে পুলিশকে বিক্ষোভ সমাবেশের ওপর সরাসরি গুলি চালাতে দেখা গেছে।
কোন কোন ভিডিওতে উত্তর পশ্চিমের পিরানশাহর, মাহাবাদ আর উর্মিয়া শহরে নিরাপত্তা বাহিনীকে বিক্ষোভকারীদের ওপর তাজা গুলি চালাতে দেখা গেছে।
রাজধানী তেহরানে হাজার হাজার মানুষ, যাদের বেশিরভাগই নারী নিরাপত্তা বাহিনীকে চ্যালেঞ্জ করতে দেখা যাচ্ছে এবং তারা দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেইর বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছেন।
নিরাপত্তা হেফাজতে মাশা আমিনি নামে এক তরুণীর মৃত্যুর পর থেকে ইরান জুড়ে বিক্ষোভ চলছে, এই তরুণী পোশাক সংক্রান্ত বিধিনিষেধ ভঙ্গ করেছিল বলে অভিযোগ করা হয়েছিল। পুলিশি হেফাজতে থাকার পর হাসপাতালে এই তরুণীর মৃত্যু ঘটে এবং পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে তাকে মারধরের অভিযোগ করা হয়, যে অভিযোগ কর্তৃপক্ষ অস্বীকার করেছে।
ঘটনায় ক্ষুব্ধ বহু ইরানি আজ টানা অষ্টম দিন দেশব্যাপী প্রতিবাদ বিক্ষোভ করছে।
ইরানের সরকারি গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলা বিক্ষোভে এপর্যন্ত ৩৫ জন নিহত হয়েছে।
পুলিশ বলছে, প্রতিবাদ শুরু হবার পর থেকে সারা দেশে সাতশ’য়ের ওপর মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যারা তার ভাষায় দেশের নিরাপত্তা ও শান্তি বিঘ্নিত করছে তাদের দমন করা হবে। কিন্তু সেটা হয়ত কঠিন হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
ইন্টারনেট ও সামাজিক মাধ্যম বন্ধ
ইরান জুড়ে ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যাপকভাবে বিঘ্নিত হওয়ায় দেশটির আন্দোলনকারীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বাসিন্দারা সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম ব্যবহার করতে পারছেন না।
ইন্টারনেট সেবা পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা নেটব্লকস বলছে ইরানে যে দুটি সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে – ইনস্টাগ্রাম এবং হোয়াটসঅ্যাপ- দুটির ব্যবহারই সীমিত করে দেয়া হয়েছে। এই দুটি প্ল্যাটফর্মই দেশটিতে যোগাযোগের সবচেয়ে বড় মাধ্যম।
হোয়াটসঅ্যাপ জানিয়েছে তারা ইরানি নাগরিকদের যোগাযোগ সচল রাখতে পদক্ষেপ নিচ্ছে।
মেটা মালিকানাধীন এই দুটি প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেন লাখ লাখ ইরানি এবং সাম্প্রতিক কয়েক বছরে ইরানি কর্তৃপক্ষ ফেসবুক এবং টুইটারসহ অন্যান্য যোগাযোগের প্ল্যাটফর্ম ব্লক করে দেবার পর এই দুটি প্ল্যাটফর্মের জনপ্রিয়তা ইরানে বেড়েছে এবং তারা যোগাযোগের জন্য ইনস্টাগ্রাম এবং হোয়াটসঅ্যাপ-এর ওপর খুব বেশি নির্ভরশীল।
টেলিগ্রাম, ইউটিউব এবং টিকটকও ইরানে বিভিন্ন সময়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
মাশা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দেশ জুড়ে প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর ইন্টারনেট প্রায় সময়ই বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে বলে জানাচ্ছে নেটব্লকস।
ইনস্টাগ্রামের প্রধান অ্যাডাম মোসেরি এক টুইট বার্তায় বলেছেন “ইরানের মানুষকে অনলাইন অ্যাপস এবং সেবা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে এবং আমরা আশা করব তাদের অনলাইন ব্যবহারের অধিকার দ্রুত ফিরিয়ে দেওয়া হবে।”
তবে অনেকেই যোগাযোগ প্রযুক্তি সংস্থা মেটার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে যে তারা ইরানি জনগণের যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার বন্ধ করে দেবার প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করছে।