রোববার বিকেল চারটা। দৌড়ে মিরপুর ১২ নম্বরে আড়ং ভবনের লিফটে উঠছিল সাফুরা। এটাই তার নিয়মিত রুটিন। ঈদের দিনেও রুটিনের ব্যতিক্রম নেই। দেশের একটি স্বনামধন্য কল সেন্টারে কাজ করেন তিনি। কল নেওয়ার পর ডাক বিভাগের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস নগদ সম্পর্কে বিভিন্ন অনুসন্ধানের জবাব দেন। ছকবাঁধা ছুটি ছাড়া এটাই তার নিয়মিত কাজ।
সাফুরার মতো আরো কয়েকশ ছেলে-মেয়ে কাজ করেন এই কল সেন্টারে। নগদ-এর মতো বিভিন্ন কোম্পানির হয়ে তথ্য দিয় থাকেন তারা। তবে আগে যা কখনো ঘটেনি রোববার ঈদুল-আজহার দিন ঘটেছে সেই ঘটনা। সাফুরার দৃষ্টিতে যা অভূতপূর্ব; অকল্পনীয়ও বটে।
যে কোম্পনির তথ্য তিনি গ্রাহকদের জানান সেই কোম্পানির খোদ প্রতিষ্ঠাতা এবং ব্যবস্থাপক তানভীর এ মিশুক হাজির হয়েছেন সাফুরাদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে। সঙ্গে নিয়ে এসেছেন কেক। সবাইকে নিয়ে কেক কাটলেন তিনি। নিজে সিটে বসে গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে নগদ সম্পর্কে নানান তথ্যও তাদের জানালেন মিশুক। এসব কিছুই সাফুরাদের কাছে ছিল স্বপ্নের মতো।
সাফুরা বলেন, আসলেই এই ঈদটা আমার কাছে বিশেষ কিছু হয়ে থাকবে। অনেকদিন মনে থাকবে দিনটার কথা। অবশ্যই মিশুক ভাইয়ের কথাও বহু দিন মনে থাকবে।
কথা বলতে গিয়ে সাফুরার সহকর্মী মোস্তাফিজুর রহমান সাগর অনেকটা আবেগ তাড়িত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, ঈদের দিন পরিবার ছেড়ে এমন কাজ করাটা আমাদের অভ্যেস হয়ে গেছে। ভেবেছিলাম, এবারও এভাবে নিজেদের সময় কাটবে। কল্পনাও করতে পারিনি তানভীর স্যার আমাদের কাছে চলে আসবেন ঈদ করতে। এখন মনে হচ্ছে, এই ঈদটা আসলেই খুশীর দিন ছিলো।
এর আগে রোববার দুপুর গড়ানোর পর ওই কল সেন্টারের সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে স্বশরীরে ওই কল সেন্টারে উপস্থিত হন তানভীর এ মিশুক।
নিজের ডেস্কে বসে সাফুরা-সাগররা যখন একটার পর একটা ফোন রিসিভ করছিলেন তখনই নীরবে তাদের পেছনে দাঁড়ান মিশুক। অনেকে তখনো টের পাননি যে, নগদ-এর প্রধান ব্যক্তি তাদের জন্যে এক বুক আনন্দ নিয়ে হাজির হয়েছেন।
এক পর্যায়ে এক এজেন্টের চেয়ারে বসে একেবারেই অপরিচিত এক নগদ গ্রাহকের সঙ্গে আলাপ শুরু করলেন মিশুক। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই নিজেকে একজন দক্ষ এজেন্টে পরিণত করে ফেলেন তিনি। গ্রাহকের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পর তার সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছাও বিনিময় করেন তিনি। কয়েক মিনিট পর যখন চেয়ার ছেড়ে উঠলেন, তখন মিশুকের মুখে অন্যরকম এক তৃপ্তির ছোঁয়া।
হেসে বললেন, ‘গ্রাহকের সাথে আগে অনেকবার কথা বলেছি। কিন্তু কল সেন্টারে বসে অচেনা গ্রাহকের সাথে এভাবে এই প্রথম কথা বললাম। এটা দারুণ এক অনুভূতি। গ্রাহককে ঈদ শুভেচ্ছা জানাতে পেরে খুবই ভালো লাগছে।’
মিশুকের বিবেচনায়, এই অ্যাটেন্ডেন্টরাই নগদ-এর ফ্রন্টলাইনারা। তিনি বলেন, সারা বছর এই মানুষগুলোর কণ্ঠই দেশের কোটি মানুষের কাছে ‘নগদ’-এর প্রতিনিধিত্ব করে। এই মানুষগুলোই ২৪ ঘণ্টা সচল রাখেন নগদ-এর কণ্ঠস্বর। আর ঈদের ছুটিতে নিজেও পরিবারের সাথে সময় না কাটিয়ে তারা নগদ-এর হয়ে কাজ করছে। সে কারণে তাদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ বিনিময় করতে এসেছি।
তিনি আরও বলেন, ঈদ তো পরিবারের সাথে কাটানোর উৎসব। আর এরাই তো আমার পরিবার। আজ নগদ যে অবস্থানে এসেছে, তার পেছনে বড় একটা অবদান এই মানুষগুলোর। ওনারাই কিন্তু নগদ নিয়ে সব কথার জবাব দেন মানুষকে। ওনারা আমাদের ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা। আজ এই খুশির দিনে তাদের সাথে একবার দেখা করতে পেরে আমিই খুশি।