পদ্মা সেতুর উদ্বোধন আগামীকাল শনিবার। উদ্বোধনী আয়োজন ঘিরে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বাংলাবাজার ঘাট এলাকায় চলছে নানা প্রস্তুতি। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর এখানেই জনসভা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নান্দনিকভাবেই বানানো হচ্ছে এই জনসভার মঞ্চ। ১১টি পিলারের ওপর দশটি স্প্যান বসিয়ে পদ্মা সেতুর আদলে তৈরি করা হয়েছে একটি ছোট প্রতীকী সেতু। এর ঠিক ওপরেই বসানো হয়েছে উদ্বোধনী মঞ্চ। মঞ্চের ঠিক সামনে পানিতে ভেসে থাকতে দেখা যাবে বিশাল আকৃতির একটি নৌকাসহ কয়েকটি ছোট নৌকা। সভায় উপস্থিত প্রত্যেকে যেন পুরো কর্মসূচি দেখতে ও শুনতে পারেন, সে জন্য স্থাপন করা হয়েছে মাইক ও এলইডি মনিটর। কঠোর নিরাপত্তার জন্য সতর্ক রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থা।
সরেজমিন জনসভা মঞ্চ এলাকায় দেখা যায়, পদ্মা সেতুর আদলে তৈরি করা প্রতীকী সেতুটির দৈর্ঘ্য ২০০ ফুট ও প্রস্থ ৮ ফুট। উদ্বোধনী মঞ্চের সামনে পানিতে যে বড় নৌকা ভেসে থাকতে দেখা যাবে, সেটি ৬০ ফুট লম্বা। থাকবে আরও কয়েকটি ছোট নৌকা। জনসভাকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রায় ১৫ একর জমির ওপর তৈরি করা হয়েছে সভাস্থল। ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৪০ ফুট প্রস্থের বিশাল মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে মাঠের পূর্বদিকে। নিরাপত্তার জন্য মঞ্চের ভেতরে ও বাইরে বসানো হয়েছে ছয়টি ওয়াচ টাওয়ার। থাকবে দেড় শতাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা। র্যাব, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি ইউনিট, সেনাসদস্য, এসএসএফসহ নানা বাহিনীর তৎপরতায় এটি এক ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানে রূপ নেবে বলে আশা করছেন সংশ্নিষ্টরা। এ জনসভায় দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত ১০ লাখ মানুষের সমাগম হবে। সভাস্থলে ৫০০ অস্থায়ী শৌচাগার, ভিআইপিদের জন্য আরও ২২টি শৌচাগার, সুপেয় পানির লাইন; এ ছাড়া ২০ শয্যার একটি এবং ১০ শয্যার দুটিসহ মোট তিনটি ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্র খোলা হয়েছে। থাকবে অ্যাম্বুলেন্স ও নারীদের জন্য বসার আলাদা ব্যবস্থা। শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান জানান, সেতু উদ্বোধন ঘিরে পদ্মাপাড়ের এ অঞ্চলে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এসব অনুষ্ঠান যেন নির্বিঘ্নে হয়, সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক রহিমা খাতুন জানান, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে জনসভায় ১০ লাখ মানুষের সমাগম হবে। তাঁদের সব ধরনের সুবিধা দিতে জেলা প্রশাসন সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে।
সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান এমপি বলেন, জাতির পিতার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়ে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সহজ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পদ্মা পাড়ি দিতে গিয়ে পদ্মার বুকে কাউকে আর প্রাণ দিতে হবে না।
শরীয়তপুরে দেয়াল লিখন ও ছবি প্রদর্শনী: শরীয়তপুর প্রতিনিধি জানান, ‘পদ্মা সেতু দেয়ালে খেয়ালে’- এই প্রতিপাদ্যে শরীয়তপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে সড়কের পাশে উন্মুক্ত দেয়ালে অনুষ্ঠিত হচ্ছে তিন দিনব্যাপী দেয়াল লিখন ও ছবি প্রদর্শনী। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে জেলা প্রশাসক মো. পারভেজ হাসান এর উদ্বোধন করেন। এতে শরীয়তপুর সদর উপজেলার প্রতিটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেছে।
বরিশালে তিন দিনের উৎসব: বরিশাল ব্যুরো জানায়, পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠান স্মরণীয় করে রাখতে বরিশালে ২৫ থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত বিভিন্ন উৎসব কর্মসূচি পালন করা হবে। এর মধ্যে থাকবে- বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, আতশবাজি ও লেজার শো, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতা। বরিশালের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) প্রশান্ত কুমার দাস এ তথ্য জানান।