আগামী সেপ্টেম্বরে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন চালু হওয়ার কথা রয়েছে। তবে টানা এক সপ্তাহের ভারী বর্ষণে নির্মাণাধীন এ রেললাইনের বিভিন্ন অংশে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় রেললাইনের নিচ থেকে মাটি ও পাথর সরে গিয়ে কোনো কোনো অংশ দেবে গেছে। এ অবস্থায় আগামী সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন চালু নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা।
বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) রেলওয়ের কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইন পরিদর্শন করেছেন। তারা জানান, প্রায় এক কিলোমিটার এলাকার রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগামী তিন-চার সপ্তাহের মধ্যে সংস্কার করে নির্ধারিত সময়ে ট্রেন চালু করা হবে।
জানা যায়, বন্যার পানিতে গত সোমবার সন্ধ্যা থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার তেমুহনী এলাকার রেললাইন পানিতে ডুবে যায়। বুধবার থেকে বন্যার পানি কমতে শুরু করলে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি নজরে আসে স্থানীয়দের। প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকার অন্তত ১০টি অংশে রেললাইন থেকে মাটি ও পাথর সরে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে রেললাইন দেবে গেছে, কিছু কিছু অংশে রেলবিটও উঠে গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, আদার মা মাজার থেকে মৌলভীর দোকান পর্যন্ত দুই কিলোমিটার রেললাইনজুড়ে মাত্র দুটি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। আবার এসব কালভার্টের নিচ দিয়ে খুবই ধীর গতিতে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতে আশেপাশের বসতবাড়িতে পানি উঠে যাচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এমন ভয়াবহ বন্যা তারা কখনো দেখেননি। রেললাইন নির্মাণের কারণে পানিনিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যায়। এতে পানি আটকে তাদের বাড়িঘর ডুবে গেছে। পর্যাপ্ত কালভার্ট বা সেতু নির্মাণ করা হলে এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতো না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অপরিকল্পিতভাবে রেললাইন নির্মাণের কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পানিনিষ্কাশনের জন্য যেসব ছোট ছোট কালভার্ট করা হয়েছে সেগুলো যথেষ্ট নয়।
প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, সম্ভাব্যতা যাচাইসহ সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও আগামী ১০০ বছরের বন্যার বিষয়টি মাথায় রেখেই এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। রেললাইনের যে অংশ বন্যার পানিতে ডুবে গেছে, সে অংশ প্রায় ২০ ফুট উঁচু ছিল। অস্বাভাবিক বৃষ্টির কারণে রেললাইন ডুবে গেছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, পানি নিষ্কাশনের জন্য যথেষ্ট ব্যবস্থা ছিল। রেললাইনের কারণে যদি বন্যা হতো, তাহলে এক পাশে পানি থাকত, অন্য পাশে থাকত না। কিন্তু এবার দুই পাশেই সমান সমান পানি ছিল।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, আগামী সেপ্টেম্বরে রেললাইন চালু হওয়ার সম্ভাব্য সময়। এর আগেই সংস্কারকাজ শেষ করতে হবে। এ জন্য ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইন ঠিক করতে অন্তত পাঁচশ থেকে এক হাজার বাড়তি জনবল যুক্ত করতে হবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ এম শামসুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনে যেসব ছোট ছোট কালভার্ট করা হয়েছে তা পানি নিষ্কাশনের জন্য পর্যাপ্ত নয়। এ অঞ্চলের পাহাড়ি এলাকার ঢল দ্রুত নেমে সাগরে গিয়ে পড়ে। পানিনিষ্কাশনের পথে রেললাইনের হওয়ায় পানি নামতে পারেনি। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগামী এমন বৃষ্টি আরও হবে। তখন রেললাইন আবারও ডুবে যাবে।