খাবার সুস্বাদু করতে অপরিহার্য উপকরণ বিভিন্ন পদের মসলা। দেশে বিভিন্ন ধরনের মসলার ব্যবহার এবং চাহিদা বাড়ছে। প্রায় ৫০ ধরনের মসলার ব্যবহার আছে দেশে। এর মধ্যে চাষ হয় মাত্র সাত ধরনের। অর্থাৎ চাহিদার বেশিরভাগই আমদানি করতে হয়। বছরে প্রায় এক হাজার ২০০ কোটি টাকা মসলা আমদানিতে ব্যয় হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে দামবৃদ্ধি, সরবরাহ সংকট, ডলারের দামের ওঠানামাসহ বিভিন্ন কারণে প্রায়ই মসলার বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। এতে বিপাকে পড়েন ভোক্তারা।
এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে দেশেই উন্নত জাতের মসলার চাষ এবং প্রযুক্তি সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ১১০টি উপজেলা এবং ২৫টি হর্টিকালচার সেন্টারে এ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। আধুনিক এবং টেকসই প্রযুক্তি ও উৎপাদান ব্যবস্থার সম্প্রসারণের মাধ্যমে মসলা জাতীয় ফসলের উৎপাদন বাড়ানো এবং জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত পরিবেশে টিকে থাকার সক্ষমতাসম্পন্ন জাতের কথাও এতে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে মসলার প্রক্রিয়াকরণ ও মূল্য সংযোজনের মাধ্যমে কৃষকের আয় বাড়ানোর লক্ষ্যও রয়েছে।এ-সংক্রান্ত একটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আজ মঙ্গলবার এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করার কথা রয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করেছে পরিকল্পনা কমিশন। কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগ বলেছে, মসলা জাতীয় ফসলের বিপুল চাহিদা রয়েছে দেশে। উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে এ চাহিদার প্রায় পুরোটাই মেটানো সম্ভব। এতে আমদানি ব্যয় কমবে।
সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় থাকা মসলার মধ্যে পেঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ, ধনিয়া, হাইব্রিড মরিচ, গোলমরিচ, দারুচিনি, জিরা অন্যতম। এসব মসলার একটা বড় অংশ আসে, চীন, ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম থেকে। যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ডস এবং সিঙ্গাপুর থেকেও মসলা আমদানি করা হয়।
‘মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১২০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) প্রকল্পটি অননুমোদিত নতুন প্রকল্প হিসেবে তালিকাভুক্ত রয়েছে। একনেকে অনুমোদন পেলে আগামী মাসেই কাজ শুরু হবে। ২০২৭ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা।
জানা গেছে, বাংলাদেশ মসলা গবেষণা কেন্দ্র এ পর্যন্ত ২৩ ধরনের মসলা জাতীয় ফসলের ৪৮টি জাত উদ্ভাবন করেছে। এসব ফসল পোকামাকড় এবং বিভিন্ন বালাই থেকে সুরক্ষায় এবং সংরক্ষণে বিভিন্ন প্রযুক্তিও উদ্ভাবন হয়েছে। প্রকল্পের মাধ্যমে এসব জাত এবং প্রযুক্তি মাঠ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যাবে।