ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ ও আমানতে সুদহারের ব্যবধান এ-যাবত্কালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান বা স্প্রেড নেমেছে ১ দশমিক ১৪ শতাংশে। গত বছরের একই মাসে যা ছিল ৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ।
সামপ্রতিক কোনো মাসে স্প্রেড এত কম ছিল না। মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে ঋণের সুদ ব্যাপক কমালেও আমানতে সেভাবে কমাতে পারছে না। যে কারণে দুয়ের মধ্যে ব্যবধান দ্রুত কমছে।
ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করে গত ১৮ এপ্রিল সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত বছরের ১ জুলাই থেকে এসব প্রতিষ্ঠান ঋণে সর্বোচ্চ ১১ শতাংশ এবং আমানতে ৭ শতাংশ সুদ নিতে পারে। পুরোনো ঋণেও এ সুদহার কার্যকর হয়েছে। আর নতুন আমানতে এ রকম সুদ কার্যকর হলেও পুরনো আমানতে মেয়াদ পূর্তির পর কার্যকর করতে হবে। শুরুর দিকে এ নির্দেশনা মানতে অনীহা থাকলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর অবস্থান এবং জোরালো তদারকির ফলে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান তা কার্যকর করেছে। এতে করে স্প্রেড এভাবে কমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানতের গড় সুদহার ছিল ৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ। আর ঋণের গড় সুদহার দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এতে স্প্রেডও কমেছে।
নির্দেশনা কার্যকরের আগের মাস গত জুনে আমানতে গড়ে ৭ দশমিক ৪৯ শতাংশের বিপরীতে ঋণের গড় সুদহার ছিল ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ। ফলে তখন স্প্রেড ছিল ২ দশমিক ৩৬ শতাংশ। আর গত বছরের জানুয়ারি মাসে ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশের বিপরীতে ঋণের সুদহার ছিল ১০ দশমিক ৫৯ শতাংশ। তখন স্প্রেড ছিল ৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ম মেনে চলছে কিনা, কঠোরভাবে তা তদারক করা হচ্ছে। কোনো প্রতিষ্ঠান আমানত আনতে কোনো অনৈতিক খরচ যেন না করে, সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সক্ষমতা না থাকলেও উচ্চ সুদ কিংবা নানা প্রলোভন দেখিয়ে আমানত এনে ফেরত দিতে না পারার অভিযোগ যেন শুনতে না হয়, সে জন্যই এ পদক্ষেপ।
২০২০ সালের ১ এপ্রিল থেকে ব্যাংকগুলোর ঋণে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদহার নির্ধারিত আছে। আর ২০২১ সালের ৮ আগস্ট থেকে ব্যক্তি পর্যায়ের মেয়াদি আমানতে গড় মূল্যস্ফীতির কম সুদ না দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে সামপ্রতিক সময়ে মৌখিক নির্দেশনার মাধ্যমে আমানতের সুদ নির্ধারণের বিষয়টি ব্যাংকের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আর ব্যক্তিঋণ এবং গাড়ি কেনার ঋণে ১২ শতাংশ পর্যন্ত সুদ নেওয়া যাবে বলা হয়েছে। আগে থেকেই ক্রেডিট কার্ডে ২০ শতাংশ সুদহারের সীমা দেওয়া আছে।
গত জানুয়ারি মাসে মুদ্রানীতি ঘোষণা অনুষ্ঠানে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ভোক্তাঋণে ব্যাংকগুলো ১২ শতাংশ পর্যন্ত সুদ নিতে পারবে। ক্রেডিট কার্ডে সুদহারের কোনো সীমা নেই। এ নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়েছেন ব্যাংকাররা। কেননা সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা আরোপের নির্দেশনা লিখিত সার্কুলারের মাধ্যমে দেওয়া হলেও মৌখিকভাবে তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। আবার সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে মৌখিক নির্দেশনা দেওয়ার সময় ভোক্তাঋণের মধ্যে কেবল গাড়ি ও ব্যক্তিগত ঋণে ১২ শতাংশ পর্যন্ত সুদ নিতে পারার কথা বলা হয়। ফলে বিভ্রান্তি বেড়েছে ব্যাংকগুলোতে। বিষয়টি পরিষ্কার করে সার্কুলার দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানালেও তা করা হয়নি।