আরিফা পারভিন জামান মৌসুমী, লাক্স ফটোসুন্দরী নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে শোবিজে পা রাখা এই তারকা একাধারে মডেল, অভিনেত্রী, গায়িকা এবং পরিচালক। চলতি বছর ক্যারিয়ারের তিন দশক পূর্ণ করেছেন প্রিয়দর্শিনী খ্যাত এই চিত্রনায়িকা। লম্বা এই ক্যারিয়ারে অসংখ্য হিট সিনেমা উপহার দিয়েছেন তিনি। কুড়িয়েছেন দর্শকের প্রশংসা, ভালোবাসা ও সম্মান। তবে এক সময়ের তুমুল ব্যস্ত এই অভিনেত্রী আগের মতো কাজ করছেন না। স্বামী, সন্তান আর সংসার নিয়েই এখন বেশি ব্যস্ত সময় কাটছে তার।
এই তো কেটে যাচ্ছে বেশ ভালোই। আপনারা জানেন আমি আর আগের মতো কাজ করি না। কাজের চেয়ে সংসারেই বেশি মনোযোগ এখন। এছাড়া আমার ‘মৌসুমী ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন’-এর কার্যক্রমও পরিচালনা করতে হচ্ছে। তারপরও কয়েকদিন পর পর অভিনয়ের প্রস্তাব আসে। মূলত গল্প আর চরিত্র পছন্দসই পাচ্ছি না। গতানুগতিক গল্প আর চরিত্রে অভিনয় করতে চাই না। চাই একেবারেই ভিন্ন ধারার কিছু কাজ।
হাতে থাকা সিনেমা… সিনেমার কথা বলতে গেলে, হাতে তেমন উল্লেখযোগ্য কাজ নেই। ওই যে বললাম, কথাবার্তা চলছে। আর বর্তমানে মুক্তির অপেক্ষায় আছে জাহিদ হোসেনের ‘সোনার চর’ সিনেমাটি। এই সিনেমাটি নিয়ে আমার অনেক প্রত্যাশা। এটি একটি জীবন-ঘনিষ্ঠ সিনেমা। দর্শকের মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো গল্প। এক্সেল ফিল্মসের ব্যানারে এই ছবিতে আমার সঙ্গে অভিনয় করেছেন ওমর সানী, জায়েদ খান শহীদুজ্জামান সেলিম, শবনম পারভীন, আবুল হোসেন মজুমদার, শাওন আশরাফ, পাপিয়া মাহি, শিখা কর্মকার, শিউলী, স্নিগ্ধাসহ অনেকেই।
ক্যারিয়ারের তিন দশক সত্যি কথা বলতে, এতগুলো দিন কীভাবে যে কেটে গেল, বুঝতেই পারিনি। সময় খুব দ্রুত চলে যায়। সেই যে ১৯৯৩ সালের ২৫ মার্চ মুক্তি পায় আমার প্রথম অভিনীত সোহানুর রহমান সোহান ভাই পরিচালিত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমাটি। এই ছবির কথা আসতেই সোহান ভাইয়ের কথা মনে পড়ে গেল। গত ১৩ সেপ্টেম্বর তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে। বিষয়টি আমি এখনও মেনে নিতে পারছি না। একদিন আগে স্ত্রীর মৃত্যু, পরেরদিনই সোহান ভাইয়ের চলে যাওয়াÑ কেমন যেন মেলাতে পারছি ন। এই মানুষটিই আমাকে নায়িকা বানিয়েছেন, মৌসুমী বানিয়েছেন। যাই হোক মৃত্যু কখনো বলে কয়ে আসে না। মৃত্যুর উপর কারো হাত নেই। আমি তার আত্মার শান্তি কামনা করছি। আল্লাহ তাকে বেহেস্ত নসিব করুন, আমিন।
প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি এক জীবনে অনেক পেয়েছি। দর্শকের প্রশংসা, ভালোবাসা ও সম্মান- সবই পেয়েছি। এদিক থেকে আমার কোনো অপ্রাপ্তি নেই। তবে প্রাপ্তি না থাকলেও অতৃপ্তি আছে। একজন সত্যিকারের শিল্পীর মনে সবসময়ই নতুন নতুন চরিত্রে কাজ করার আকাক্সক্ষা রয়ে যায়। আমারও সেই অতৃপ্তি আছে, চ্যালেঞ্জিং আরও নতুন চরিত্রে কাজ করার ক্ষুধা আছে। শিল্পীমন এমনই। যে বয়সে যে চরিত্রে কাজ করা প্রয়োজন তা করতে না পারলেও আজীবন ক্ষুধা থেকে যায়। তবে পূর্ণতা পাবে যদি দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য, সমাজের অসহায় মানুষের জন্য কিছু করতে পারি।
ভবিষ্যৎ ভাবনা… আমার জীবনে অনেক কিছুই পাওয়ার কথা ছিল না, অথচ আমি তা পেয়েছি। এ কারণে আমার কোনো আক্ষেপ নেই। নিজেকে সংসার জীবনে এবং ক্যারিয়ারেও একজন সফল স্ত্রী, সফল মা এবং সফল নায়িকা-অভিনেত্রী মনে করি। আমরা আর ক’দিনই-বা বাঁচব। তাই কোনো কিছুর জন্য আক্ষেপ করে তো লাভ নেই। এখন আমার একটাই ইচ্ছা হজ করার। আমি যেন সুস্থ শরীর মন নিয়ে হজ করতে পারি, এই দোয়া চাই সবার কাছে।