শেখ কামাল যুব গেমসের ১০০ মিটার স্প্রিন্টে দ্রুততম তরুণ, খুলনার দীঘলিয়ার ছেলে নাইম শেখ। শনিবার বিকালে ঢাকায় আর্মি স্টেডিয়ামে দ্রুততম তরুণের খেতাব অর্জন করেছেন তিনি। দ্রুততম মানব হওয়ার পর তাকে নিয়ে বেশ আলোচনা। বাবা হারানো এই তরুণের পেছনে জীবন কাহিনী অনেকটাই সিনেমার গল্পের মতো।
বাবা হারায়নি, বাবা চলে গিয়েছেন। নাইম শেখ বলছেন কোথায় গেছেন তা আমি জানি না। শুনি ভারতে গেছেন। প্রায় এক যুগ দেখা নেই। বাবা ইমদাদ শেখ নেই, পরিবার চলে খুব কষ্টে। বাবার জন্য এখন আর আফসোস করেন না নাইম শেখ। বললেন, ‘ওকথা বাদ দেন। উনি বিয়ে করেছেন কি না, সেটা আমার জানা নাই। আমাদেরকে রেখে চলে গিয়েছেন। আমরা ছয় ভাইবোন। চার বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। আর দুই ভাই আমরা। এক ভাই ফ্লেক্সি লোডের ব্যবসা করেন। তার আয় দিয়ে সংসার চলে। বাবার সঙ্গে দেখা হয় না প্রায় ১২ বছর। উনার খোঁজ নাই। এসব প্রসঙ্গ বাদ দেন। এখন অন্য কথা বলেন।
খুলনায় দীঘলিয়ায় নাইম শেখের বাড়ি। শনিবার রাতেই আর্মি স্টেডিয়াম থেকে পদক গলায় নিয়ে বাড়ি চলে যান। গতকাল বিকালে তার বাড়িতে নাইম শেখকে খুঁজতে গিয়েছেন অনেকেই। সংবাদমাধ্যমে নাইমের ছবি দেখেছেন। পাশের বাড়ির ছেলেটি যুব গেমসের দ্রুততম মানবের খেতাব জয় করে ফিরেছে। তাকে নতুন করে দেখার আগ্রহ বেড়ে গেল প্রতিবেশীদের। বিএল কলেজে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। ফাতেমা মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয় হতে এসএসসি পাশ করেছেন নাইম শেখ।
খেলার প্রতি তার ভীষণ আগ্রহ। অভাবের সংসারে জন্ম হলেও খেলাপাগল ছেলেটি অর্থসংকটে খেলতে পারছিলেন না। কেডস কিনতে হয়। পোশাক দরকার হয়। অনুশীলন করতে হয়। এক-আধটু ভালো খাবারও খেতে হয়। কে কিনে দেবে কেডস। পোশাক। টাকা আয় করা পথ খুঁজে পেলেন। কাউকে কিছু না বলে দিনমজুরের কাজ করেছেন বলে জানালেন নাইম শেখ। টাকার প্রয়োজনে স্কুল শিক্ষার্থী নাইম শেখ ইট-বালি-সিমেন্ট হাতে তুলে নিয়েছিলেন।
খুলনা থেকে ফোনে নাইম শেখ বললেন, ‘খুলনার সোনাডাঙ্গায় কাজ করতাম। আমি ইট- বালি এগোয় দিতাম। সহকারী হিসেবে কাজ করেছি। কখনো সাড়ে ৪০০ টাকা পেতাম। কখনো ৪৭০ টাকা পেতাম। সব সময় এই কাজ করতাম না। সপ্তাহে এক দিন কাজ করতাম। না করেও উপায় নেই। বাসা থেকে টাকা দিতে পারত না। মা জানত আমি কিছু একটা করছি। আর সেই টাকা দিয়ে খাবার কিনে খেতাম। খেলতে গেলে ভালো কিছু খাওয়া লাগে। একটা চাকরি পেলে বেঁচে যেতাম।’