জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যানসারের স্ক্রিনিং দেখতে এবার বিদেশ সফর করবেন ৫০ জন কর্মকর্তা। এজন্য ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। প্রত্যেকের পেছনে প্রায় ৪ লাখ টাকা করে ব্যয় হবে। ‘ইলেকট্রনিক ডাটাসহ জনসংখ্যাভিত্তিক জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং কর্মসূচি (ইপিসিবিসিএসপি) শীর্ষক প্রকল্পে এ প্রস্তাব করা হয়েছে।
তবে এটি প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব। এর আগে মূল অনুমোদন এবং প্রথম সংশোধনীতে বিদেশ সফরের কোনো ব্যবস্থাই ছিল না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে ডলার সংকট নিরসনে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে সরকার নানাভাবে কৃচ্ছ সাধনের চেষ্টা চালাচ্ছে। এরই মধ্যে ফাঁকফোকর গলিয়ে অব্যাহত আছে বৈদশিক প্রশিক্ষণের নামের বিদেশ সফরের আয়োজন। আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপন করা হচ্ছে প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাব।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান সোমবার যুগান্তরকে বলেন, এটা তো হওয়ার কথা নয়। আগে থেকে ছিল না তাহলে এখন কেন বিদেশ সফর লাগবে? এই ধরনের অপচয় বন্ধে আমি কঠোর অবস্থান নিয়েছি। কিন্তু তারপরও ফাঁকফোকর গলিয়ে কিছু প্রকল্পে বিদেশ প্রশিক্ষণ থাকছে। এটা দেখার দায়িত্ব পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যদের (সচিব)। কিন্তু তারা সঠিকভাবে দেখছে কিনা তা প্রশ্নসাপেক্ষ। গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য একনেকে উপস্থাপন করা হচ্ছে। কিন্তু ভেতরে যদি এমন প্রস্তাব থাকে সেটি দুঃখজনক। সূত্র জানায়, ২৯ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। এতে বলা হয়, বৈদেশিক প্রশিক্ষণ সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। এছাড়া মধ্যমেয়াদি মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ সুপারিশসহ আরডিপিপিতে (সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব) সংযুক্ত করতে হবে। খুব বেশি আপত্তি উঠানো হয়নি বৈদেশিক প্রশিক্ষণ নিয়ে।
কথা হয় প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের প্রধান মো. মাহবুবুল ইসলামের সঙ্গে। সোমবার তিনি যুগান্তরকে বলেন, অনেক আগে পিইসি হয়েছে। আমার ঠিক মনে নেই প্রকল্পটিতে বিদেশ সফর আছে কিনা। তবে যদি থেকেও থাকে সেটি নিশ্চয়ই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই দেওয়া হয়েছে। কেননা এটি ডাক্তারদের বিষয়। উচ্চ কারিগরি বিষয় জড়িত থাকায় একান্ত প্রয়োজন ছিল বলেই এ খাতে বরাদ্দ রাখা হতে পারে। তিনি আরও বলেন, এখন আর সব প্রকল্পেই বিদেশ সফরের প্রস্তাব রাখা হচ্ছে না। বাস্তব কারণে কেবল প্রয়োজন হলেই দেওয়া হচ্ছে বিদেশ সফরের প্রস্তাব।
সূত্র জানায়, ‘ইলেকট্রনিক ডাটাসহ জনসংখ্যাভিত্তিক জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং কর্মসূচি (ইপিসিবিসিএসপি) প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ৪৯ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। কিন্তু প্রথম সংশোধনীতে এতে ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ৫৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। এখন দ্বিতীয় সংশোধনীতে ১২৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ১৮৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে খরচ বাড়ছে মূল ব্যয়ের তুলনায় ২২৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এদিকে প্রকল্পটি ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ছিল। কিন্তু এতে কাজ শেষ না হওয়ায় প্রথম সংশোধনীতে এক বছর বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এতেও শেষ না হওয়ায় এখন নতুন করে ২ বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)।
সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবায় জরায়ুমুখ এবং স্তন ক্যানসার রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের ঘাটতি আছে। বেসরকারি পর্যায়েও কিছু প্রতিষ্ঠানে এই রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয়, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এজন্য স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে প্রকল্পটি হাতে নেয়। এরপর প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী সম্প্রসারণ, মেয়াদ বৃদ্ধি, ভায়া ও সিবিইকেন্দ্র রেফারাল কেন্দ্র সংস্কার অবকাঠামো উন্নয়ন, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জেলা হাসপাতালে ব্রেস্ট ক্লিনিক স্থাপন, নতুন অঙ্গ অন্তর্ভুক্তি এবং বিদ্যমান অঙ্গ লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দ্বিতীয় সংশোধন করা হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৩৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা। সে অনুযায়ী আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৬৭ দশমিক ১৫ শতাংশ। এছাড়া প্রকল্পের ভৌত কাজের বাস্তব অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৭০ শতাংশ।
বিদেশ সফর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, সুনির্দিষ্টভাবে এ প্রকল্পের বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে যদি বিদেশ সফর থেকে থাকে সেই দায়দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট বিভাগের সদস্যের ওপর বর্তায়। এ নিয়ে সদস্যের (সচিব) কাছে প্রশ্ন করা উচিত। তাহলে তিনি সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারবেন।