অভিনেতা-অভিনেত্রীদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। শেষ কয়েক মাসে অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা সরকারের ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও বিপুল আলোচনা হয়েছে। দূরত্ব ঘুচিয়ে আবারও স্বামী রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সংসার করছেন নায়িকা। এক দিকে ব্যক্তিগত সম্পর্কের ‘প্লাস-মাইনাস’ সমীকরণ। অন্য দিকে, প্রতি মুহূর্তে ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকার লড়াই। নতুন ছবি ‘কুরবান’ মুক্তির আগে প্রশ্নের মুখে প্রিয়াঙ্কা।
প্রশ্ন: ব্যস্ততা চলছে খুব?
প্রিয়াঙ্কা: এই মুহূর্তে সত্যিই খুব ব্যস্ত। নভেম্বরে দুটো কাজ মুক্তি পেল। এ ছাড়া দুর্গাপুজো, দীপাবলির সময় তো এমনিই চাপ থাকে আমাদের। ‘ছোটলোক’ ওয়েব সিরিজ়টাও মুক্তি পেল। সেটার প্রচারের কাজও চলছে।
প্রশ্ন: এই যে পর পর আপনার কাজ মুক্তি পাচ্ছে, ছবিগুলো হিট হল না ফ্লপ, এ সব ভাবার বা জানার সময় পান?
প্রিয়াঙ্কা: পর পর কাজ মুক্তি পেলেও চিন্তা করি, না পেলেও করি। যে কোনও পেশাদার অভিনেতার এটা দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তাঁর কাজ দর্শকের গ্রহণযোগ্যতা পেল কি না, সেটা জানা তো খুবই জরুরি। যদি দর্শকের ভাল না লাগে, তার কারণ খুঁজে বার করাও আমাদের কাজের অংশ। এত বছর কাজ করে একটা বিষয় উপলব্ধি করেছি যে, শুধু নিজের চরিত্রটুকু নয়, পুরো কাজটার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রাখা খুবই প্রয়োজনীয়। তবে এই ভাবনার পর্যায় পৌঁছতে সময় লাগে।
প্রশ্ন: ২০ বছর ইন্ডাস্ট্রিতে থাকার পর এখন কি বুঝতে পারেন, কেন পরিচালকেরা আপনাকে পছন্দ করেন?
প্রিয়াঙ্কা: সময়ের সঙ্গে বুঝেছি আমার ধৈর্য অনেক। আমাদের শুটিংয়ে কখন যে কী ঘটে যায়, বোঝা যায় না। সে সময় নিজের ধৈর্য ধরে রাখাটা খুব জরুরি। আমার সঙ্গে যাঁরা কাজ করেছেন তাঁরা নিশ্চয়ই সেটা বুঝতে পেরেছেন। এ ছাড়া কাজ করতে আর একটা জিনিস আমি বুঝতে পেরেছি, আমি খুবই বাধ্য। আমার এই গুণের জন্যই অনেক পরিচালকই হয়তো আমার সঙ্গে কাজ করতে ভালবাসেন।
প্রশ্ন: আপনার নতুন ছবি ‘কুরবান’-এর পরিচালক শৈবাল মুখোপাধ্যায় ইন্ডাস্ট্রিতে একদম নতুন। আনকোরা পরিচালকের সঙ্গে কাজ করার সুবিধা বা অসুবিধা কী?
প্রিয়াঙ্কা:অভিজ্ঞ পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করার অনেক সুবিধা আছে। নতুন পরিচালকের সঙ্গে কাজ করার মজা হল, সম্পূর্ণ এক অন্য চিন্তাধারা। নতুনদের গল্প বলার পদ্ধতি আলাদা। আমি তাই উপভোগ করি নতুনদের সঙ্গে কাজ করতে। কারণ, যাঁরা নতুন, তাঁরা নিজেদের কাজে ১০০ শতাংশ দেন। সেটাই আরও ভাল লাগে। আমি হলফ করে বলতে পারি ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’ ছবির জন্য আমি যা শ্রম দিয়েছিলাম, তা এখন আর দিই না। বয়স এবং সময়ের সঙ্গে একটা চাকরির মতো হয়ে গিয়েছে। নতুনদের মধ্যে একটা উদ্যম রয়েছে।
প্রশ্ন: অনেক অভিনেত্রীই ইদানীং বলেন, তাঁরা চিত্রনাট্য বাছাই করেন সন্তানদের কথা ভেবে। আপনি কি সহজের কথা মাথায় রেখে কাজের বিষয়বস্তু বাছেন?
প্রিয়াঙ্কা: না একেবারেই আমি এটা করি না। এটা খুবই বাজে অভ্যাস বলে আমার মনে হয়। সহজকে এটা বুঝতে হবে আমি যেমন ওর মা, তেমনই এক জন আলাদা মানুষও। আর সহজকে আমি বিভিন্ন পরিস্থিতিতে এক্সপ্লোর করতে চাই। টেক্নোলজির দৌলতে এমনিতেই এখনকার শিশুরা অনেক এগিয়ে। মা হিসাবে আমার দায়িত্ব ওকে সব ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন করা। তবেই ও খাঁটি মানুষ হয়ে উঠতে পারবে। এমন কাজ করতে চাই, যেটা আগামী দিনে ওর দেখলে ভাল লাগবে। মা বলে আমি এটা করব না ওটা করব না, এই চিন্তাভাবনা ভাঙা দরকার।
প্রশ্ন: বক্স অফিসে সাফল্য না কি সমালোচকদের প্রশংসা, কোনটা আপনার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ?
প্রিয়াঙ্কা: কী করে বলি! কোনও একটা বললে তো ভুল বলা হবে। আসলে তো অভিনেতাদের কাছে দুটোই খুব গুরুত্বপূর্ণ। এখানেই মন দিয়ে ভালবেসে কাজের প্রসঙ্গ উঠে আসে। আমার দুটোই চাই। দুটো বিষয়ই আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই ভাবে বাছতে পারব না।
প্রশ্ন: ৬ বছর পর আবার স্বামী রাহুলের সঙ্গে আবারএক ছাদের নীচে। এত বছর পর পুরনো সংসারকে নতুন করে গোছাতে কেমন লাগছে?
প্রিয়াঙ্কা: আমি ১৩ বছর বয়স থেকে রাহুলকে চিনি। তখন ও আমার কাছে অরুণোদয়দা ছিল। আমরা নানা ধরনের পর্যায় দিয়ে গিয়েছি। এত বছরে সব পর্যায়েই আমি রাহুলকে বন্ধু হিসাবে পেয়েছি। যখন ছোট ছিলাম তখন আমার ভাল লাগত অন্য কাউকে, আর ও (রাহুল) ছিল অন্য সম্পর্কে। নিজেদের ভাল লাগা, সম্পর্ক নিয়ে সে সময় আলোচনা করতাম। তার পর ধীরে ধীরে প্রেম হল আমাদের। প্রচন্ড ঝামেলা করেছি। দম্পতি হিসাবে হয়তো সম্পর্কটাকে ঠিক ভাবে সেই মুহূর্তে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারিনি। কিন্তু পরস্পরের প্রতি সম্মান ছিল। অনেকেই প্রশ্ন করছেন, ৬ বছর পর আবার একসঙ্গে পুজো কাটাচ্ছেন, কিন্তু এটা ঠিক নয়। কারণ, এই কয়েক বছরেও আমরা পুজো কাটিয়েছি। এখানেই সহজের প্রসঙ্গ চলে আসে। একটা সময় একে অপরকে দোষারোপ করেছি। কিন্তু আমি বুঝেছি যে, আমারও কিছু ভুল ছিল। এখন সেই ভুলগুলো আর না করার চেষ্টা করছি। রাহুলও অনেক পরিণত হয়েছে। তাই ওকে আর একটা সুযোগ দিতে রাজি।
প্রশ্ন: এই পরিস্থিতিতে সহজ কতটা ‘সহজ’?
প্রিয়াঙ্কা: সহজ ভীষণ সহজ। আমাদের জন্য এটা খুব চাপ। কারণ, ও খুব পরিণত। তাই ওর পছন্দ-অপছন্দ, মতামতকে সম্মান দেওয়ার চেষ্টা করি।