‘আমার কাছের মানুষগুলো যখন অভিনন্দন জানাচ্ছিলেন তখন আমি নিশ্চিত হলাম যে সত্যি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারটি পাচ্ছি। প্রথমে অবশ্য বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। হাত-পা কাঁপছিল। এমন সাফল্য সত্যিই অনেক বড় প্রাপ্তি। ছোটবেলা থেকে অল্প অল্প করে কাজ করছি। রাষ্ট্রের এই স্বীকৃতি আজীবন মাথার মুকুট হয়ে থাকবে। এ অর্জনের কৃতিত্ব আমি আমার পুরো টিমকে দিতে চাই।’—জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার অনুভূতি জানতে চাইলে এভাবেই কথাগুলো বলেন অভিনেত্রী রিকিতা নন্দিনী শিমু।
সম্প্রতি ঘোষণা করা হয়েছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০২২ বিজয়ীদের নাম। আর সেখানেই দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসানের সঙ্গে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জয় করলেন শিমু।
জয়ার মতো একজন অভিনেত্রীর সঙ্গে যৌথভাবে সেরা হওয়া প্রসঙ্গে শিমু আরও বলেন, ‘বিষয়টি কতটা উপভোগ করছি তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। জয়া আপু আমার প্রিয় অভিনেত্রী। তার কাজগুলো সব সময়ই প্রেরণা দেয়। তার সঙ্গে কাজও করেছি আমি। যখন দেখলাম জয়া আপুর সঙ্গে আমার নাম তখন অন্যরকম একটা আনন্দ অনুভূত হলো। ওনার মতো অভিনেত্রীর সঙ্গে নিজেকে কোনো অর্জনের তালিকায় খুঁজে পাওয়াটা স্পেশাল।’
ক্যারিয়ারে খুব কম সিনেমায় অভিনয় করলেও এরইমধ্যে তারেক মাসুদ, রুবাইয়াত হোসেন ও আদিত্য বিক্রম সেনগুপ্তের মতো অনেক নির্মাতার চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। তার অভিনীত ‘রানওয়ে’, ‘মাটির প্রজার দেশে’, ‘আন্ডার কনস্ট্রাকশন’ ছবিগুলো একাধিক আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছে।
২০১৯ সালের ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ চলচ্চিত্রে নাম লেখান। এই ছবির আরেক নাম ‘শিমু’। এর নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন তিনি। এমনকি ছবিটিতে অনবদ্য অভিনয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ ফ্রান্সের সেইন্ট জঁ দ্য-লুজ চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতে নেন রিকিতা। এবার এই ছবির জন্য পাচ্ছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর (যৌথ) স্বীকৃতি।
এদিকে শিমু ক্যারিয়ারে যে ক’টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন তার সবগুলোতেই তাকে গ্ল্যামারহীন চরিত্রে দেখা গেছে। অথচ বেশিরভাগ অভিনেতা-অভিনেত্রীদের ক্ষেত্রে এর সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায়।
নিজেকে এই ভিন্নরূপে উপস্থান কেন?—এমন প্রশ্নে রিকিতা বলেন, ‘দেখুন, আমি একজন অভিনয়শিল্পী হতে চাই। এই বিষয়টিই খুব গুরুত্বপূর্ণ আমার কাছে। গল্প ও চরিত্র যখন মনে ধরে তখন সেই কাজটি আমি করার চেষ্টা করি। গ্ল্যামার থাকা না থাকা কোনো বিষয় নয়। তাছাড়া গ্ল্যামারাস তারকা হওয়ার জন্য আমার কোনো মোহ নেই। আমি কেবল ভালো অভিনয় করে যেতে চাই।’
অন্যদিকে ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই অনেক বেছে বেছে সিনেমায় যুক্ত হচ্ছেন শিমু। যে কারণে ক্যারিয়ারের বয়স অনেক বছর হলেও কাজের সংখ্যা হাতেগোনা বলা চলে। এবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার পর এই ধারাবাহিকতায় পরিবর্তন আসবে কি-না জানতে চাইলে শিমু আরও বলেন, ‘আমি আস্তে-ধীরে কাজ করতেই পছন্দ করি। তাছাড়া আমি বরাবরই সংখ্যা নয়, মানে বিশ্বাসী। যে কারণে ভালো কাজের অপেক্ষায় থাকি। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার সেই দায়বদ্ধতা আরও বাড়িয়ে দিলো। সামনে আরও ভালো কিছু কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে চাই। নতুন কাজের অফার পাচ্ছি না, বিষয়টি তেমন নয়। বেশ কয়েকটি ভালো কাজের কথা চলছে। সবকিছু মিলে গেলে আসছে বছর শুটিং শুরু করবো।’