পরপারে বসেই হয়তোবা দেখতে হতো কাতার বিশ্বকাপের সতীর্থদের খেলা। তবে সৃষ্টিকর্তা এতোটাও নিষ্ঠুর নন। ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে মাঠের মধ্যেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন ডেনমার্কের তারকা ক্রিস্টিয়ান এরিকসেন। সেখান থেকেই ফিরেছেন লড়াই করে। শুধু ফিরেছেন বললেও ভুল হবে, মেডিকেল সাইন্সকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন ফুটবলের সবুজ গালিচাতেও। সেই এরিকসেন আজ মাঠে নামবে নিজের দেশ ডেনমার্কের হয়ে। বিশ্ব শ্রেষ্ঠত্বের কাতার বিশ্বকাপের মঞ্চটা প্রস্তুত যেন তার জন্যই।
তিউনিশিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে আজ গ্রুপ-ডি’তে নিজেদের বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু করবে ডেনমার্ক। এবারের বিশ্বকাপ আসরের ডেনিশ দলটি আগের যেকোনো আসরের তুলনায় কিছুটা হলেও ভিন্ন। এর একমাত্র কারন ইতিহাসে অন্যতম বড় একটি দূর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেয়ে দলটির মধ্যে একাত্মতা আরো শক্তিশালী হয়েছে।
ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপে মাঠের ভিতরেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণ থেকে ফিরে আসা ডেনিশ ফরোয়ার্ড ক্রিস্টিয়ান এরিকসেনের জন্যই শুধু নয়, এ যেন পুরো দলের জন্যই নতুন এক জীবন ফিরে পাওয়া। কাতারে খেলতে এসেও ডেনমার্কের পুরো আকর্ষণই কেড়ে নিয়েছেন এরিকসেন। ঐ ঘটনা শুধুমাত্র ডেনমার্ককে নয়, পুরো ফুটবল বিশ্বকেই হতবাক করে দিয়েছিল।
বিশ্বকাপের দলেও শেষ মুহূর্তে ইনজুরি থেকে ফিরে জায়গা করে নিয়েছেন এরিকসেন। এ নিয়ে তিনি নিজেই বলেন, ‘বিশ্বকাপ দলে ফিরতে পেরে দারুণ খুশি আমি। সবাই জানে এই বিশ্বকাপটা আমার জন্য কতটা স্পেশাল। এর আগেও আমি বিশ্বকাপে খেলেছি, কিন্তু এবারেরটা সত্যিই ভিন্ন। আমরা কতদূর যাবো তা সময়ই বলে দিবে। তবে হ্যা, একটি বিষয় নিশ্চিত আমরা বড় কিছুরই স্বপ্ন দেখছি। সে কারণেই ম্যাচ বাই ম্যাচ আমরা এগিয়ে যেতে চাই।’
গত বছর ইউরোপীয়ান আসরের প্রথম ম্যাচেই সতীর্থকে মাঠে গড়িয়ে পড়তে দেখে পুরো দল মুষড়ে পড়েছিল। কিন্তু তারপরও সবাই ঐক্যবদ্ধ থেকে ম্যাচটি শেষ করার পাশাপাশি যেভাবে সেমিফাইনাল পর্যন্ত খেলেছিল তাতে তাদের দৃঢ়তার প্রশংসার ছিল সর্বত্র।
আকস্মিক এই ঘটনায় পুরো দল যেন এক হয়ে শুধুমাত্র এরিকসেনের জন্যই খেলেছে। ২০২২ সালেও সেই যাত্রা অব্যাহত রেখে বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে একটি ম্যাচ ছাড়া বাকি সবকটিতে জিতেছে ডেনমার্ক। ন্যাশনস লিগে শক্তিশালী ফ্রান্সকে দুইবার পরাজিত করেছে।
এরিকসেনদের কোচ ক্যাসপার হালমান্ড জানিয়েছেন, ‘শুধুমাত্র ইউরোতে নয়, ২০২১ সালে অনেক কিছুই ঘটেছে। এ সময়ে আমরা ১৮টি ম্যাচ খেলেছি, সবগুলোতে আমরা ভালবাসা ও শ্রদ্ধা আদায় করে নিয়েছি। বাছাইপর্বের যাত্রাটাও ছিল অসাধারণ, ইউরোর ফলাফল বাড়তি অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে আমাদের।’
ডেনিশ অধিনায়ক সিমন কায়ের, গোলরক্ষক ক্যাসপার স্মাইকেল, কোচ হালমান্ড এরিকসেনকে ছাড়া যেভাবে জাতীয় দলকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন তাতে যেকোন স্কোয়াডই অনুপ্রেরণা খুঁজে নিতে পারে। আর এতেই উজ্জীবিত হয়ে এরিকসেনও নিজেকে ধীরে ধীরে ক্লাব ও জাতীয় দলে ফিরিয়ে এনেছেন। রক্ষণভাগে কায়েরের নেতৃত্বে আটালান্টার উইং-ব্যাক জোয়াকিম মায়েলেসহ মধ্যমাঠে এরিকসেনের মত খেলোয়াড় নিয়ে যেকোন কোচই গর্ববোধ করতে পারেন।
জীবন যুদ্ধে জয়ী হয়ে ফেরা এরিকসেন বলেন, ‘আমাদের খেলার মধ্য সবসময়ই ছন্দ ছিল। আমি মনে করি সার্বিকভাবে আমাদের দল এখন পুরোপুরি পাল্টে গেছে যা আমরা মাঠে প্রমাণ করতে চাই।’
ডেনমার্কের গ্রুপের অন্য দুটি দল হলো অস্ট্রেলিয়া ও বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। ফ্রান্সের পরে ডেনমার্ক যদি গ্রুপ রানার্স-আপ হয়ে পরের রাউন্ডে উঠে তবে সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ হিসেবে আর্জেন্টিনাকে পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
এদিকে ষষ্ঠবারের মত বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বের টিকিট পাওয়া উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিশিয়া কঠিন গ্রুপে পড়লেও প্রথমবারের মত নক-আউট পর্বে খেলার লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামবে। ১২ বছর পর বিশ্বকাপে খেলতে এসে পরপর দুটি আসরেই তারা বাছাইপর্ব উতরে মূল পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে।
মূলত ঘরোয়া লিগ খেলা খেলোয়াড়দের নিয়েই সাজানো হয়েছে তিউনিসিয়ার দল। দলে সুপারস্টার না থাকলেও তিউনিশিয়া নিজেদের এমন একটি দল হিসেবে প্রমাণ করেছে যাদের হারানো কঠিন।
নতুন কোচ জালের কাদরির অধীনে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচে শক্তিশালী চিলি ও জাপানকে হারিয়েছে তিউনিশিয়ানরা। দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ খেলোয়াড় সান্ডারল্যান্ড, সেইন্ট-এতিয়েন। ফরাসি ক্লাব মন্টিপিলিয়ারে খেলা খাজরির নেতৃত্বেই টানা দ্বিতীয়বারের মত বিশ্বকাপে খেলতে নামবে তিউনিশিয়া।