কৈশোরে দৈহিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য প্রয়োজন পুষ্টিকর খাদ্য। এ সময় শরীরে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তনের কারণে পুষ্টিকর খাদ্যের চাহিদার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ছেলেদের শরীর থেকে যখন বীর্যপাত ঘটতে শুরু করে, তখন তাদের আগের তুলনায় বেশি পরিমাণ পুষ্টিকর খাদ্যের প্রয়োজন হয়। এতে তাদের শরীরের ওজন ও উচ্চতা সঠিকভাবে বৃদ্ধি পায়। মেয়েদের ক্ষেত্রে ঋতুস্রাবের সময় তাদের শরীর থেকে অনেক রক্ত বের হয়। এতে তাদের মাথা ঘোরানো ও নানা অস্বাভাবিক অনুভূতি হতে পারে। এ জন্য তাদের সঠিক পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত। সঠিক পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
অতিরিক্ত ওজনসম্পন্ন শিশুদের বয়ঃসন্ধিকালে দ্রুত প্রবেশের সম্ভাবনা বেশি থাকে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত ওজন অনেক ছেলে-মেয়ের বয়ঃসন্ধিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে বাধা দেয়। বয়ঃসন্ধির অগ্রগতি পুষ্টি দ্বারা প্রভাবিত। এ সময় সুষম খাবারের (শর্করা, প্রোটিন, চর্বি, ভিটামিন, মিনারেল ও পানি) পাশাপাশি আয়রন, জিংক, ফোলেট ও ক্যালসিয়াম-জাতীয় খাবারের পরিমাণ বাড়ানো দরকার।বয়ঃসন্ধিকালে কিশোরদের ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৮০০ কিলোক্যালরি এবং কিশোরীদের ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ২০০ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি প্রয়োজন।
অস্বাস্থ্যকর খাবারের পরিবর্তে শাকসবজি, ফলমূল, বাদাম ও বিচি জাতীয় খাবার খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে বয়ঃসন্ধিকালে। সকালের নাশতা বেশির ভাগ ছেলে-মেয়ে খেতে চায় না। এ জন্য বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর খাবার, যেমন রুটি, সবজি ও ডিম বা ওটস, দুধ, বিভিন্ন ফল বা স্মুদি খাওয়া যেতে পারে।
খাদ্যতালিকায় স্বাস্থ্যকর চর্বিও রাখতে হবে। এ ধরনের চর্বি ত্বক ও চুল ভালো রাখে। ভিটামিন এ, ডি, ই, কে চর্বিতে দ্রবণীয়। সেগুলোর কার্যকারিতা ঠিক রাখতেও চর্বি প্রয়োজন। বাদাম ও বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের চমৎকার উৎস, যা মস্তিষ্কের বিকাশ সঠিকভাবে করতে কার্যকর।
সূর্যের আলোতে বেড়ে ওঠা হাঁস-মুরগির ডিম, গরুর দুধ ভিটামিন ডি-এর উৎস। পাশাপাশি দুধ ও দুধ জাতীয় খাবার সামগ্রিক ক্যালসিয়ামের উৎস। এগুলো হাড় ও দাঁত মজবুত রাখতে সাহায্য করে। মাছ, মাংস, ডিম, বাদাম, বিচি-জাতীয় খাবার, কলিজা, বৃক্ক ইত্যাদি ফলিক অ্যাসিড, আয়রন ও জিংকের উৎস। রক্তে ফলিক অ্যাসিডের পরিমাণ কমে গেলে একধরনের রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। ফলে রক্তে লোহিত কণিকার পরিমাণ কমে যায়। বহুদিন ধরে জিংকের অভাব হলে কৈশোরে ছেলে-মেয়েদের দৈহিক বৃদ্ধি ও পরিণতি লাভ ব্যাহত হয়। আয়রনের অভাব হলে দেহে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। কিশোরদের মাংসপেশির গঠন ও মেয়েদের মাসিকের সময় শরীর থেকে বের হয়ে যাওয়া আয়রনের ঘাটতি পূরণ করতে আয়রন জাতীয় খাবার খেতে হবে।
এ বয়সে নিয়মিত ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট ব্যায়াম করতে হবে। এতে রক্তসঞ্চালন প্রক্রিয়া ঠিক থাকবে। নিয়মিত ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে এবং প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করা বা তরল খাবার খাওয়া বাধ্যতামূলক করতে হবে। এতে শরীর থেকে বিষাক্ত উপাদান বের হয়ে যাবে। এ ছাড়া মানসিক চাপমুক্ত থাকতে হবে।