রাশিয়ায় ওয়াগনার বাহিনীর বিদ্রোহে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ভয় পেয়ে লুকিয়েছিলেন বলে মনে করছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। পুতিনকে ইঙ্গিত করে জেলেনস্কি বলেন, ‘ক্রেমলিনের লোকটি অবশ্যই অনেক ভয় পেয়েছেন।’
ইউক্রেনের স্থানীয় সময় শনিবার রাতে এক ভিডিওবার্তায় এ কথা বলেন জেলেনস্কি।
জেলেনস্কি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে তিনি (পুতিন) আর মস্কোতে নেই। তিনি নিজেই এ হুমকি তৈরি করেছেন।’
এদিকে শনিবার গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে, ওয়াগনার বাহিনীর বিদ্রোহের খবর পাওয়ার পর পুতিন রাজধানী ছেড়ে গেছেন। এবং তিনি কোথায় গেছেন, তা জানা যায়নি।
এ ছাড়া ওয়াগনার বাহিনী বিদ্রোহ স্থগিতের ব্যাপারে প্রকাশ্যেও কোনো মন্তব্য করেননি পুতিন।
গত বছর ইউক্রেনে রুশ অভিযান শুরু হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং তার কয়েকজন একান্ত সহকারী প্রায় দুই মাস একটি বাঙ্কারের মধ্যে লুকিয়ে ছিলেন বলে গুঞ্জন ওঠে। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছিল লন্ডনের টাইমস পত্রিকা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, রাশিয়ার অভিযান শুরু হলে জেলেনস্কি দুই সপ্তাহের জন্য বাঙ্কারে থাকার পরিকল্পনা নেন। পরে তিনি প্রাণভয়ে দুই মাস বাঙ্কারে অবস্থান করেন। এ সময় তাকে মারাত্মক রকমের কষ্টের মধ্য দিয়ে সময় পার করতে হয়েছে।
রক্তপাত এড়াতে স্থানীয় সময় শনিবার যোদ্ধাদের মস্কোর দিকে অগ্রসর হওয়া স্থগিত করে ওয়াগনার গ্রুপ। এক অডিও বার্তায় এ ঘোষণা দেন ওয়াগনারপ্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিন। তিনি জানান, যোদ্ধারা সেনাশিবিরে ফিরে আসছেন।
এর কিছুক্ষণ আগে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো জানিয়েছিলেন, ওয়াগনার বাহিনীর মস্কো অভিমুখী পদযাত্রা স্থগিত করতে তিনি প্রিগোজিনের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। আলোচনায় প্রিগোজিন তার প্রস্তাব গ্রহণে সম্মত হন বলেও জানায় লুকাশেঙ্কোর কার্যালয়।
তবে প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগুকে ক্ষমতাচ্যুত করার দাবিতে ক্রেমলিন রাজি হয়েছে কিনা, সে সম্পর্কে কিছু জানাননি প্রিগোজিন। এ বিষয়ে ক্রেমলিন থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে আলজাজিরা।
শনিবার রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের শহর রোস্তভ-অন-দন দখলের পর রাজধানী মস্কোর দিকে অগ্রসর হচ্ছিল ওয়াগনার বাহিনী। মস্কো অভিমুখী পথের অর্ধেকের বেশি অতিক্রমও করে তারা। রুশ সেনারা তাদের গতিরোধ করতে চাইলেও তেমন সুবিধা করতে পারেনি। এরই মধ্যে মস্কোমুখী যাত্রা স্থগিতের কথা জানালেন প্রিগোজিন।
গত শুক্রবার রাশিয়ার সামরিক নেতাদের উৎখাত করার হুমকি দেন ওয়াগনারপ্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিন। এরপর রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের একটি সেনা সদরদপ্তরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কথা জানায় ওয়াগনার। ওয়াগনারের বিদ্রোহকে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ সংকট বলে মনে করেছিলেন বিশ্লেষকরা। সাড়ে ২৪ বছরের ক্ষমতায় পুতিন এ ধরনের সংকটের মুখোমুখি হননি।
ওয়াগনারপ্রধানের এ বিদ্রোহের পর পর জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সেখানে বিদ্রোহের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনার ঘোষণা দেন তিনি। পুতিন বলেন, ‘যা কিছু ঘটছে, তা বিশ্বাসঘাতকতা। এটি দেশের জনগণের পিঠে ছুরি চালানোর শামিল।’