ও পলাশ ও শিমুল কেন এ মন মোর রাঙালে
জানি না জানি না
আমার এ ঘুম কেন ভাঙালে…
গানের মতোই পলাশ ও শিমুল ফুলের সৌন্দর্য প্রকৃতিপ্রেমীদের ঘুম কেড়ে নেয়! মুগ্ধ নয়নে তারা এই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করে।
টাঙ্গাইলের সখীপুরে গ্রামের পথে-প্রান্তরে এখন দেখা মিলছে শিমুল-পলাশের। সেই সাথে পাখ-পাখালি আর মৌমাছিদের আনাগোনা দৃশ্য বাড়তি পাওনা। কিন্তু কালের পরিক্রমায় ইট-পাথরের রাজত্বে অপরূপ সাজে সজ্জিত শিমুল, পলাশ গাছ ও ফুল এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে।
মাঘের শেষ, আর এরই মধ্যে প্রকৃতিতে বইতে শুরু করেছে বসন্তের হাওয়া। ঋতুরাজ বসন্ত তার ঐতিহ্য নিয়ে উপস্থিত দ্বারে দ্বারে। বছর ঘুরে প্রকৃতি তার নানা পরিবর্তন পেরিয়ে আবার সেজেছে নতুন রূপে। সাধারণ মানুষ এ গাছকে তুচ্ছ মনে করে সামান্য প্রয়োজনে কিংবা অপ্রয়োজনে কেটে ফেলছে। অন্যান্য গাছের মতো এ গাছ কখনো কেউ শখ করে লাগায় না, নেয়া হয় না কোনো যত্ন। কোনো নার্সারিতেও পাওয়া যায় না এর চারা। তারপরও অযত্ন অবহেলায় ঝোঁপে ঝাড়ে যে কয়েকটি গাছ বেড়ে উঠছে সে গাছগুলোও থাকছে না মানুষের প্রয়োজনে।
অথচ এ মূল্যবান গাছটির কাঠ দিয়ে নির্মাণ কাজে শাটারিংয়ের কাঠ, জ্বালানি, ইটভাটা ও ম্যাচ ফ্যাক্টরিতে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে শিমুল গাছ শতাব্দীর পর শতাব্দী পর্যন্ত বেঁচে থাকে। বসন্তে শিমুল ও পলাশ গাছে ফুল ফোঁটে। শিমুল এর ফল থেকে পাওয়া যায় মূল্যবান তুলা। একটি বড় আকারের শিমুল গাছ থেকে বছরে প্রায় আট হাজার টাকার তুলা পাওয়া যায়। শিমুল গাছ থেকে শুধু তুলাই পাওয়া যায় না ফুলে মৌমাছি বসে মধুও সংগ্রহ করে থাকে।
সরকারি এবং বেসরকারিভাবে রাস্তার পাশে সারি সারি বনজ ও ফলজ গাছ রোপণ করলেও দৃষ্টিনন্দন ওই শিমুল ও পলাশ গাছ রোপণে নেই কোনো কর্মসূচি। সখীপুরে ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে আবহমান গ্রামবাংলার প্রকৃতিকে রাঙিয়ে অনেক ফুল ফুটলেও এখন আর তেমন চোখে পড়ে না রক্তলাল নয়নাভিরাম শিমুল ও পলাশ ফুল। কিন্তু কালের বিবর্তনে সখীপুরে আগুন ঝরা ফাগুনে চোখ ধাঁধানো গাঢ় লাল রঙের অপরূপ সাজে সজ্জিত শিমুল ও পলাশ গাছ এখন বিলুপ্ত প্রায়।
বিগত এক-দেড় যুগ আগেও উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের অধিকাংশ বাড়ির আনাচে কানাচে আর রাস্তার পাশে অনেক শিমুল ও পলাশ গাছ দেখা যেত। প্রতিটি গাছে গাছে প্রস্ফুটিত শিমুল ও পলাশ ফুলই স্মরণ করিয়ে দিতো বসন্ত। শীতের পরেই ঋতুরাজ বসন্ত আগমনের সাথে সাথে প্রকৃতিতে লেগেছে তার ছোঁয়া। প্রতিটি গাছেই আসতে শুরু করেছে নতুন পাতা। প্রকৃতিতে দক্ষিণা বাতাসে আম্রমুকুলের মৌ মৌ ঘ্রাণে মুগ্ধ চারিদিক। কোকিলের সুমিষ্ট কুহুতালে ফাগুনের উত্তাল বাসন্তী হাওয়া দিচ্ছে দোলা। গাছে গাছে জেগে উঠেছে সবুজ পাতা। মুকুল আর শিমুল ফুল দেখে বোঝা যায় শীত বিদায় নিয়ে এসেছে ফাগুন। শিমুল গাছের শাখাগুলো বসন্তের আগমনে লাল শাড়ির ঘোমটা পরা গ্রাম্য নববধূর সাজে সজ্জিত হতে দেখা যায়, যা দর্শনে হতাশ প্রেমিকের মনেও জাগিয়ে তোলে আশা।
অন্যান্য গাছের তুলনায় শিমুল গাছ অনেক উঁচু হওয়ায় বহু দূর থেকে এ মনোরম দৃশ্য চোখে পড়ে। জোয়ার এনে দেয় কবির কল্পনার জগতে।
কেবল সৌন্দর্যই বিলায় না শিমুল গাছের রয়েছে নানা উপকারিতা ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব। অথচ বর্তমানে মানুষ এ গাছকে তুচ্ছ মনে করে কারণে অকারণে কেটে ফেলছে। অতীতে ব্যাপকহারে নির্মাণ কাজসহ নানা ধরনের প্যাকিং বাক্স তৈরি ও ইটভাটার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হলেও সেই তুলনায় রোপণ করা হয়নি। ফলে আজ বিলুপ্তির পথে।
শিমুল গাছ উজাড় হওয়ার ফলে পরিবেশের ওপরে পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব। এ গাছ অনেক উঁচু হওয়ায় কাক, কোকিল, চিলসহ বিভিন্ন ধরনের পাখি বাসা বেঁধে বসবাস করত। এ গাছ উজাড় হওয়ার ফলে এসব পাখিরা আবাসস্থল হারিয়ে পড়েছে অস্তিত্ব সঙ্কটে। গাছ না থাকায় আবাসস্থলের অভাবে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে এসব পাখি।