বখতিয়ার রহমানঃ-
মানুষ দুই ভাবে পরিচালিত হয়, প্রথমত আইন আর দ্বিতীয়ত নিতি-নৈতিকতা। যারা নীতি-নৈতিকতার ধার ধারে না তাদের আইন দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।
কিছু মানুষ থাকে যাদের সমাজের বিবেক মনে করা হয়, তারা সমাজের মানদণ্ড নির্মাণ করেন তারা হয়ে থাকেন সমাজের পূজনীয়, সমাজ তাদের দেখানো পথেই হাটে। তাদের অনেকেই সে নৈতিকতা হারিয়ে গর্হিত কাজ করে আবার অনেককে অনৈতিক ভাবে অপদস্থ করা হয়। দেখা যাক ড. ইউনুস কোন দলে পড়েন?
পৃথিবীজুড়ে সবার কাছে সম্মানিত নোবেল জয়ী প্রফেসর ড. ইউনুস, তিনি যেমন সারা বিশ্বে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের বোর্ড সদস্য তেমন তার নামে অনেক অভিযোগ তুলেছে বাংলাদেশ সরকারের বেশকিছু প্রতিষ্ঠাণ। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলাই যায়, তবে দেখতে হবে সে অভিযোগ প্রমানের জন্য তারা কোন পদ্ধতি প্রয়োগ করে।
প্রথম কথা তার আইনজীবি বলেছেন এই মামলাগুলো খুব দ্রুত গতিতে এগিয়েছে, এটা স্বাভাইক না তাই আমাদের কাছে এটা সন্দেহজনক প্রক্রিয়া অবলম্ভন করা হয়েছে বলে আমাদের মনে হচ্ছে । পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে তথ্য সংগ্রহ না করে কোন সিদ্ধান্ত নিলে সেখানে ভুল হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে, এই ক্ষেত্রে কী সে পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে? দেখে মনে হয়েছে এখানে খুব তাড়াহুড়ো করা হয়েছে! আদালতে চলমান কোন মামলা নিয়ে সরকার থেকে যদি একমুখী মন্তব্য আসে তবে সে মামলা নিয়ে অবশ্যই সন্দেহ দেখা দেয়।
ড. ইউনুস এর ভাষ্য মতে তিনি কোন প্রতিষ্ঠান থেকেই লভ্যাংশ নিচ্ছেন না, সম্মানীও নিচ্ছেন না। তিনি নিতি নির্ধারণে কোন ভূমিকা রাখেন না শুধু পরামর্শ দিচ্ছেন, তার পরামর্শ তারা ফলো নাও করতে পারেন। তা হলে প্রতিষ্ঠাণ অনিয়ম করলে তার দায়তো প্রতিষ্ঠাণের নিতিনির্ধারকদের, কম্পানি যদি অপরাধ করে তবে মামলা হবে পরিচালনা পর্ষদের নামে নির্দিষ্ট চারজনের নামে কেন?
এতো গেলো আইনের কথা কিন্তু নৈতিকতা কী বলে?
যারা সমাজে সম্মানিত স্থানে চলে যায় তাদের নৈতিকতায় ঘাটতি থাকা উচিত না। তাদের নৈতিক চরিত্র এমন হওয়া উচিত যেন তার কাছে আইন প্রবেশ করতেও লজ্জা পায়। অনেক সময় লোভ সেই নৈতিকতা ধ্বংস করে, কোন লোভে ড. ইউনুস তার বিশ্বব্যাপি উচ্চ অবস্থানে কলঙ্ক মাখাল! আমাদের মনে হয় কোন কিছুর বিনিময়েই তার সরকারের সাথে ফাইট করা উচিত হয়নি, সরকার যখন ফাইট শুরু করেছে তখন তার সেখান থেকে বেরিয়ে যাওয়া উচিত ছিলো, যদি তাই যেতেন তবে আজ এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়তো হতো না।
তিনি সারা বিশ্বে বহু প্রতিষ্ঠাণের কর্ণদার, সেগুলো চালালেই পারতেন। এখানে তাকে নিয়ে যখন এতো বিতর্ক শুরু হয়েছে তখন তিনি কেন গো ধরে এখানে চেপে বসে থাকলেন? তবে কি আমরা ধরে নিব তিনি রাজনৈতিক চাল চেলে কুটিল পথে ফল আদায় করতে এসব করেছেন? তিনি কী সরকারকে বিশ্বের কাছে অপদস্থ করার মিশনেই ছিলেন?
তার নিজের হাতে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠাণ যদি অনিয়ম করে তবে কী তার দায়ভার তিনি এড়াতে পারেন? যতই বলেন না কেন তার পরামর্শ তারা মানে না বা তারা মানতে বাধ্য না সেটা কতটা যুক্তিযুক্ত কথা সে প্রশ্ন থেকেই যায়।
কোর্টে তার আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ ছিলো, তিনি যদি নিজেকে নির্দোষ মনে করেন তবে সে সুজোগে তা প্রকাশ করতে পারতেন। কেন সেই সুযোগ গ্রহন করলেন না? গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে তিনি কী প্রমান করতে চান? এতো এক রকম পালিয়ে বাঁচার চেষ্টার মত ব্যাপার হয়ে গেলো, তিনি কোর্ট থেকে পালালেন কেন? সত্যি যাই হোক তার তা প্রকাশ করা উচিত ছিলো। তিনি যদি তার কথা কোর্টে বলতেন তবেতো গণমাধ্যম এমনিতেই প্রচার করতে বাধ্য ছিলো কিন্তু তিনি তা না করে বাঁকা পথে গেলেন! আমি মনে করি এখনো তার যে মামলাগুলো আছে সেখানে সত্যি কথা বলে আসল ঘটণা জানিয়ে তার নৈতিক অবস্থানকে আবার সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে যাওয়া উচিত যে স্থানে তিনি আগে ছিলেন।
বিপদের সময় নিজের প্রতিষ্ঠান যেহেতু সরকারের হাতে তুলে দিয়েছেন সেহেতু প্রফেসর ইউনুস গ্রামীন ব্যাংককে যদি এখন নিজের বলে দাবি করতে চায় তবেতো সেটা অন্যায় আবদার হয়ে যায়। তার মত একজন মানুষ যদি নিতি ভুলে নিজের চাওয়াকে বড় করে দেখতে চান তবেতো সেটা শোভোন হয় না। তাকে নিজের জেদ থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে যদি তিনি সার্বজনিন ভাবে অনুকরনীয় হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়।
দেশের আইনে আছে ৫৮ বছর পরে সরকারী পদে থাকা যাবে না, যেহেতু গ্রামীন ব্যাংক সরকারী প্রতিষ্ঠান সেহেতু সেখানেও সেই আইন কার্যকর হবে সে কথা কী তিনি জানতেন না? অবশ্যই জানতেন, তবে নিজে থেকে সেখান থেকে সরে গেলেন না কেন? বুঝলাম তিনি মনে করেছিলেন তার হাতে জন্ম নেয়া প্রতিষ্ঠাণ অন্যের হাতে গেলে হয়ত ঠিক ভাবে পরিচালিত হবে না। কিন্তু তার বোঝা উচিত ছিলো প্রতিষ্ঠান যেহেতু সরকারের তাই সেটা কোন নিয়মে চলবে সেটা তারাই দেখবে, ব্যাক্তি বিশেষের তা নিয়ে ভাবনার কোন সুযোগ নাই।