কিডনি রোগীর কিডনি যখন সম্পূর্ণ বিকল হয়ে যায়,তখন ডায়ালাইসিস ও কিডনি প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে একজন কিডনি রোগীকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হয়।ডায়ালাইসিসের তুলনায় কিডনি প্রতিস্থাপন অনেক বেশি কার্যকর।এর মাধ্যমে একজন কিডনি রোগীর সবধরনের কাজ পুনঃস্থাপিত হয়।একজন কিডনি রোগীর ব-এঋজ যখন ১০ মিলি/মিনিটের নিচে নেমে যায়,তখন ডায়ালাইসিস কিংবা কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন পড়ে।
আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী কিডনি প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে একমাত্র নিকট আত্মীয়রা কিডনি দান করতে পারেন।২০১৮ সালে আইন সংশোধনের মাধ্যমে কিডনি দাতাদের ক্ষেত্রে মা,বাবা,ভাই,বোন,স্ত্রী ছাড়াও চাচাত,মামাত,ফুফাত ভাই বা বোন,দাদা,দাদি,নানি কিডনি দাতা হিসাবে গৃহীত হয়েছে।তারপরও ক্রমবর্ধমান রোগীর প্রেক্ষিতে কিডনি দাতার সংখ্যা অত্যন্ত অপ্রতুল।তাই দীর্ঘ দিন যাবৎ কিডনি দাতার ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির কিডনি গ্রহণ ও সংযোজন অত্যন্ত জনপ্রিয় হচ্ছে (Cadaveric Transplantation)।
মৃত ব্যক্তির কিডনি গ্রহণে আইসিইউতে ব্রেনডেথ রোগীদের বাছাই করা হয়।ব্রেনডেথ মানে যখন একজন রোগীর মস্তিস্ক সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় এবং রোগী আক্ষরিক অর্থে মৃত ও আই.সি.ইউতে ভেন্টিলেটরে থাকেন।
আমাদের দেশে মৃত ব্যক্তির কিডনি সংযোজনের (ঈধফধাবৎরপ ঞৎধহংঢ়ষধহঃধঃরড়হ) মূল বাধা হচ্ছে ধর্মীয় অনুভূতি।সাধারণত একজন ব্রেনডেথ রোগীর কিডনি দানের বিষয়ে পরিবারের লোকেরা সম্মত হয় না।এখানে উল্লেখ্য যে একজন মৃত ব্যক্তি একাধারে অনেক অঙ্গ দান করতে পারেন,যেমন- ২টি কিডনি,লিভার,২টি ফুসফুস,হৃৎপি ও কার্নিয়া।তবে মৃত ব্যক্তির কিডনি আহরণে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়া যায় ব্রেনডেথ ঘোষণাকে।
এই লক্ষ্যে একটি ব্রেনডেথ কমিটি (ইৎধরহ উবধঃয ঈড়সসরঃঃবব) গঠিত হয়েছে।কমিটি এরই মধ্যে অনেক কাজ এগিয়ে নিয়েছে এবং আশা করা যাচ্ছে যে অতি অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে এই সেবা সস্প্রসারিত হবে এবং কিডনি দাতার সঙ্কট অনেকখানি কেটে যাবে।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মহোদয় অধ্যাপক ডাঃ মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ,জাতীয় ক্যাডাভেরিক কমিটির সভাপতি এবং তার যোগ্য নেতৃত্বে কমিটির অন্যান্য সদস্য কাজ করে যাচ্ছেন।বিএসএমএমইউতে আছেন দক্ষ নেফ্রোলজিস্ট ও দক্ষ ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জনের সমন্বয়ে টিম।যারা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন।বর্তমানে এখানে প্রতি সপ্তাহে একটি করে জীবিত কিডনি দাতাদের কিডনি গ্রহণ করে তা প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে।শুধু নামমাত্র মূল্যে এই হাসপাতালে কিডনি প্রতিস্থাপিত হয়।
একজন কিডনি প্রতিস্থাপনের রোগী ও দাতার রক্ত গ্রুপ ও ঐখঅ-সধঃপযরহম করতে হয়,এছাড়া আরও অনেক পরীক্ষা করার প্রয়োজন পড়ে।ধাপে ধাপে এই পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর রোগীদের কিডনি প্রতিস্থাপন সার্জারি করা হয়।একজন কিডনি প্রতিস্থাপন রোগীকে বেশ দামি ঔষধ গ্রহণ করতে হয়,যাকে ওসসঁহড়ংঁঢ়ঢ়ৎবংংরাব উৎঁমং বলে।যে ঔষধ দ্বারা ভিন্ন লোকের কিডনি অন্যজনের শরীরে গ্রহণের আবহ তৈরি করা হয়,অন্যথায় কিডনি নষ্ট হয়ে যাবে,যাকে বলে জবলবপঃরড়হ।এছাড়া একজন কিডনি প্রতিস্থাপিত রোগীর দেহে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা অনেকাংশে কমে যাওয়ায় তারা নানাবিধ সংক্রমণে ভুগতে পারেন,যাকে বলে Opportunistic infection।তাই একজন কিডনি গ্রহীতাকে অনেকদিন যাবৎ ওংড়ষধঃরড়হ এ থাকতে হয়।
মৃত ব্যক্তির কিডনি নিয়ে প্রতিস্থাপন শুরু হলে অতি শীঘ্রই কিডনি দাতার জটিলতা কমবে এবং আমাদের দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর কিডনি বিকল রোগীদের চিকিৎসা সেবা সম্প্রসারিত হবে।অতি শীঘ্রই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল চালু হবে,যেখানে রয়েছে অনেক আর্ন্তজাতিক মানের মডিউলার অপারেশন থিয়েটার এবং আধুনিক ব্যবস্থা,যার মাধ্যমে অত্যন্ত নিপুণভাবে কিডনি চিকিৎসা দেয়া যাবে এবং আশা করি আগামী দিনগুলোতে দেশেই আর্ন্তজাতিক মানের চিকিৎসা সেবা দেয়া সম্ভব হবে।