বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বা বিবিএস প্রকাশিত বাংলাদেশের দারিদ্র্য মানচিত্রে বলা হচ্ছে কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলা দেশটির সবচেয়ে দরিদ্র এলাকা।
রবিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘পভার্টি অ্যান্ড আন্ডারনিউট্রিশন ম্যাপস বেজড অন স্মল এরিয়া এস্টিমেশন টেকনিক’ শীর্ষক এক সেমিনারে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়।
বিবিএস ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিওএফপি) যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে।
বাংলাদেশের ৫৭৭টি উপজেলার দারিদ্র্য পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দারিদ্র্যের এই মানচিত্র তৈরি করেছে বিবিএস।
কুড়িগ্রামের রাজিবপুর এলাকাটিতে ৭৯ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ দরিদ্র।
প্রায় ৮০ শতাংশের কাছাকাছি দারিদ্র্য সীমার হার কেন চর রাজিবপুরে?
ভৌগলিকভাবে বিচ্ছিন্ন
উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামে যে নয়টা উপজেলা রয়েছে তার মধ্যে চর রাজিবপুর একটি।
এই উপজেলাটি ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিভক্ত।
অর্থাৎ ভৌগলিক ভাবে এই উপজেলাটি কুড়িগ্রাম সদরের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন।
এই উপজেলার তিন দিকে নদী। একদিকে রৌমারি উপজেলা।
এখানকার সাধারণ মানুষ প্রতিদিন নদী পার হয়ে কুড়িগ্রাম শহরে আসেন।
কুড়িগ্রামের রাজিবপুরের বাসিন্দা সালমা বেগম বলেন, “যেকোন কাজের জন্য নৌকায় করে নদী পার হয়ে আমাদের জেলা শহরে যাওয়া লাগে। আমাদের এই উপজেলা মনে হয় না যে কুড়িগ্রামের কোন অংশ।”
সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত অনেকে
ভৌগলিক ভাবে বিচ্ছিন্ন থাকার ফলে অনেক রকম সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে এখানকার বাসিন্দারা মনে করেন।
তাদের একজন আছিয়া খাতুন। তিনি বলেন, “আমরা এমন এক প্রত্যন্ত এলাকায় বাস করি যে সরকারি-বেসরকারি কোন সুযোগ থাকলেও সেটার খবর আমাদের কাছে এসে পৌঁছাতে সময় লাগে। ততক্ষণে হয়ত ঐ জিনিস শেষ হয়ে যায়।”
তিনটি ইউনিয়ন নিয়ে এই উপজেলার জনসংখ্যা প্রায় দেড় লক্ষের মত।
তাদের মূল পেশা কৃষি কাজ এবং মাছ ধরা।
তবে বছরের এক সময়ে চর জেগে উঠে এবং আবার বন্যা বা বর্ষার সময় পানি বেড়ে চর ডুবে যায় ।
তাই মানুষ সব সময় এখানে ঠিক স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারেন না।
বাজেট বরাদ্দ ঠিক মত ব্যবহার না করার অভিযোগ
কুড়িগ্রামের রেল, নৌ, যোগাযোগ এবং পরিবেশ উন্নয়ন গণ কমিটির সাংগাঠনিক সম্পাদক শাহ মো. আব্দুল মোমেন বলেন এই উপজেলায় উন্নয়নের ক্ষেত্রেও বৈষম্য আছে।
“এখানে উন্নয়নের জন্য ঠিক মত বরাদ্দ আসে না। যে বরাদ্দ আসে সেটাও ঠিকভাবে ব্যবহার করা হয় না। একারণে মানুষের যে পরিমাণ সেবা বা যেসব প্রয়োজনীয় জিনিস পাওয়ার কথা সেটা তারা পায় না। ফলে এখানকার মানুষের জীবন অনুন্নত। এখানে যেসব বেসরকারি সংস্থা আছে তারা যে টার্গেট করে কাজটা করবে সেটাও চোখে পড়ে না। সেটা খুব কম এবং ঘাটতি আছে,” বলেন তিনি।
এছাড়া অতিবৃষ্টি, বন্যা, খরা এধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে মানুষের ভোগান্তি রয়েছে।
কুড়িগ্রামের রেল, নৌ, যোগাযোগ এবং পরিবেশ উন্নয়ন গণ কমিটি বলছে গেল নির্বাচনের আগে তারা কুড়িগ্রামের রাজিবপুর এবং রৌমারি উপজেলার উন্নয়নের জন্য আট দফা দাবি নিয়ে যান এবং একটা গণ-শুনানি করেন।
কিন্তু সেসবের বাস্তবায়ন হয়নি।
তবে বরাদ্দ ঠিক ভাবে ব্যবহার না করার অভিযোগ তা নাকচ করে দিয়েছেন চর রাজিবপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত চক্রবর্তী বলেন নদী ভাঙ্গন এই এলাকার মানুষের দারিদ্র্যের আরেকটা কারণ।
তিনি বলেন “নদী ভাঙ্গনের ফলে মানুষ একেবারে সর্বস্বান্ত হয়ে যায়। তবে তাদের উন্নতির জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।”
তিনি বলেন ২০২১ সালের শেষের দিকে রাজিবপুরের মানুষের ভাগ্য কীভাবে উন্নয়ন করা যায় এমন কিছু বিষয় উল্লেখ করে তারা প্রধানমন্ত্রীর কার্যলয়ে জানিয়েছেন।
“কৃষিক্ষেত্রে আধুনিক কৃষি যন্ত্র দেয়া হয়েছে কৃষকদের। কারণ এখানকার মানুষ ঘোড়া গাড়ি দিয়ে চাষাবাদ করে। তাদের ছোট ছোট চায়ের দোকান করে দেয়া হয়েছে, হাস-মুরগি পালন এই ধরনের বেশ কিছু কাজ তারা যাতে করতে পারে সেটার ব্যবস্থা করা হচ্ছে,” বলেন তিনি।
মি. চক্রবর্তী বলেন এই বছরের ১৫ থেকে ২১শে জুন যে জনশুমারি এবং জনগণনা করা হবে সেখানে রাজিবপুরের অবস্থান গত ১০ বছরের তুলনায় অনেক ভাল অবস্থানে থাকবে বলে তিনি আশা করছেন।
তিনি বলেন, “২০১১ সালে যে তথ্য ছিল এখন সেটার অনেক পরিবর্তন দেখা যাবে।”
মানচিত্রে দেখা যায়, বাংলাদেশে সবচেয়ে কম দরিদ্র মানুষের বাস রাজধানীর গুলশানে।
অভিজাত এলাকাটির মাত্র দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ দরিদ্র।
সেমিনারে জানানো হয়, বাংলাদেশে গড় দারিদ্র্য হার ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ।
মানচিত্র তৈরিতে ২০১৬ সালের তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করা হয়েছে।
মূল – bbcbangla -https://www.bbc.com/bengali/news-61546893
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বা বিবিএস প্রকাশিত বাংলাদেশের দারিদ্র্য মানচিত্রে বলা হচ্ছে কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলা দেশটির সবচেয়ে দরিদ্র এলাকা।
রবিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘পভার্টি অ্যান্ড আন্ডারনিউট্রিশন ম্যাপস বেজড অন স্মল এরিয়া এস্টিমেশন টেকনিক’ শীর্ষক এক সেমিনারে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়।
বিবিএস ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিওএফপি) যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে।
বাংলাদেশের ৫৭৭টি উপজেলার দারিদ্র্য পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দারিদ্র্যের এই মানচিত্র তৈরি করেছে বিবিএস।
কুড়িগ্রামের রাজিবপুর এলাকাটিতে ৭৯ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ দরিদ্র।
প্রায় ৮০ শতাংশের কাছাকাছি দারিদ্র্য সীমার হার কেন চর রাজিবপুরে?
ভৌগলিকভাবে বিচ্ছিন্ন
উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামে যে নয়টা উপজেলা রয়েছে তার মধ্যে চর রাজিবপুর একটি।
এই উপজেলাটি ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিভক্ত।
অর্থাৎ ভৌগলিক ভাবে এই উপজেলাটি কুড়িগ্রাম সদরের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন।
এই উপজেলার তিন দিকে নদী। একদিকে রৌমারি উপজেলা।
এখানকার সাধারণ মানুষ প্রতিদিন নদী পার হয়ে কুড়িগ্রাম শহরে আসেন।
কুড়িগ্রামের রাজিবপুরের বাসিন্দা সালমা বেগম বলেন, “যেকোন কাজের জন্য নৌকায় করে নদী পার হয়ে আমাদের জেলা শহরে যাওয়া লাগে। আমাদের এই উপজেলা মনে হয় না যে কুড়িগ্রামের কোন অংশ।”
সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত অনেকে
ভৌগলিক ভাবে বিচ্ছিন্ন থাকার ফলে অনেক রকম সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে এখানকার বাসিন্দারা মনে করেন।
তাদের একজন আছিয়া খাতুন। তিনি বলেন, “আমরা এমন এক প্রত্যন্ত এলাকায় বাস করি যে সরকারি-বেসরকারি কোন সুযোগ থাকলেও সেটার খবর আমাদের কাছে এসে পৌঁছাতে সময় লাগে। ততক্ষণে হয়ত ঐ জিনিস শেষ হয়ে যায়।”
তিনটি ইউনিয়ন নিয়ে এই উপজেলার জনসংখ্যা প্রায় দেড় লক্ষের মত।
তাদের মূল পেশা কৃষি কাজ এবং মাছ ধরা।
তবে বছরের এক সময়ে চর জেগে উঠে এবং আবার বন্যা বা বর্ষার সময় পানি বেড়ে চর ডুবে যায় ।
তাই মানুষ সব সময় এখানে ঠিক স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারেন না।
বাজেট বরাদ্দ ঠিক মত ব্যবহার না করার অভিযোগ
কুড়িগ্রামের রেল, নৌ, যোগাযোগ এবং পরিবেশ উন্নয়ন গণ কমিটির সাংগাঠনিক সম্পাদক শাহ মো. আব্দুল মোমেন বলেন এই উপজেলায় উন্নয়নের ক্ষেত্রেও বৈষম্য আছে।
“এখানে উন্নয়নের জন্য ঠিক মত বরাদ্দ আসে না। যে বরাদ্দ আসে সেটাও ঠিকভাবে ব্যবহার করা হয় না। একারণে মানুষের যে পরিমাণ সেবা বা যেসব প্রয়োজনীয় জিনিস পাওয়ার কথা সেটা তারা পায় না। ফলে এখানকার মানুষের জীবন অনুন্নত। এখানে যেসব বেসরকারি সংস্থা আছে তারা যে টার্গেট করে কাজটা করবে সেটাও চোখে পড়ে না। সেটা খুব কম এবং ঘাটতি আছে,” বলেন তিনি।
এছাড়া অতিবৃষ্টি, বন্যা, খরা এধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে মানুষের ভোগান্তি রয়েছে।
কুড়িগ্রামের রেল, নৌ, যোগাযোগ এবং পরিবেশ উন্নয়ন গণ কমিটি বলছে গেল নির্বাচনের আগে তারা কুড়িগ্রামের রাজিবপুর এবং রৌমারি উপজেলার উন্নয়নের জন্য আট দফা দাবি নিয়ে যান এবং একটা গণ-শুনানি করেন।
কিন্তু সেসবের বাস্তবায়ন হয়নি।
তবে বরাদ্দ ঠিক ভাবে ব্যবহার না করার অভিযোগ তা নাকচ করে দিয়েছেন চর রাজিবপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত চক্রবর্তী বলেন নদী ভাঙ্গন এই এলাকার মানুষের দারিদ্র্যের আরেকটা কারণ।
তিনি বলেন “নদী ভাঙ্গনের ফলে মানুষ একেবারে সর্বস্বান্ত হয়ে যায়। তবে তাদের উন্নতির জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।”
তিনি বলেন ২০২১ সালের শেষের দিকে রাজিবপুরের মানুষের ভাগ্য কীভাবে উন্নয়ন করা যায় এমন কিছু বিষয় উল্লেখ করে তারা প্রধানমন্ত্রীর কার্যলয়ে জানিয়েছেন।
“কৃষিক্ষেত্রে আধুনিক কৃষি যন্ত্র দেয়া হয়েছে কৃষকদের। কারণ এখানকার মানুষ ঘোড়া গাড়ি দিয়ে চাষাবাদ করে। তাদের ছোট ছোট চায়ের দোকান করে দেয়া হয়েছে, হাস-মুরগি পালন এই ধরনের বেশ কিছু কাজ তারা যাতে করতে পারে সেটার ব্যবস্থা করা হচ্ছে,” বলেন তিনি।
মি. চক্রবর্তী বলেন এই বছরের ১৫ থেকে ২১শে জুন যে জনশুমারি এবং জনগণনা করা হবে সেখানে রাজিবপুরের অবস্থান গত ১০ বছরের তুলনায় অনেক ভাল অবস্থানে থাকবে বলে তিনি আশা করছেন।
তিনি বলেন, “২০১১ সালে যে তথ্য ছিল এখন সেটার অনেক পরিবর্তন দেখা যাবে।”
মানচিত্রে দেখা যায়, বাংলাদেশে সবচেয়ে কম দরিদ্র মানুষের বাস রাজধানীর গুলশানে।
অভিজাত এলাকাটির মাত্র দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ দরিদ্র।
সেমিনারে জানানো হয়, বাংলাদেশে গড় দারিদ্র্য হার ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ।
মানচিত্র তৈরিতে ২০১৬ সালের তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করা হয়েছে।
মূল – bbcbangla -https://www.bbc.com/bengali/news-61546893